শহুরে বৃদ্ধির প্রবণতা অনুযায়ী করেকটি উল্লেখযোগ্য পৌরক্ষেত্র(Trends in urban growth and some notable urban area):
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত গ্রামীণ সাধারণ জনপদগুলি নগরায়ণের দীর্ঘকালীন পরিমার্জন এবং পরিবর্ধন প্রক্রিয়ায় ক্রমশ একটি উন্নত সম্প্রসারিত জনপদে উপনীত হয়েছে। এপ্রসঙ্গে Harold MacLean Lewis বলেছেন-"the trends in urban growth can be visualized through population estimates," অর্থাৎ "জনসংখ্যার অনুমানের মাধ্যমে শহুরে বৃদ্ধির প্রবণতাগুলি কল্পনা করা যেতে পারে"। বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি শহুরে এলাকাকে তার নিজস্ব পরিসরগত ব্যাপ্তি, জনসংখ্যা এবং পরিসেবাভিত্তিক একাধিক কার্যক্রমের নিরিখে বিজ্ঞানসম্মত একটি অনুক্রমিক ধারায় বিতরণ বা বিন্যস্ত Shotion Y77 শহুরে অধস্তন একটি ক্ষেত্র আরেকটি উর্ধ্বতন শহুরে শ্রেণির সঙ্গেঙ্গ গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কিত থেকে পরস্পরকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ শহর সেখানকার কৃষিকাজ এবং গ্রামীণ পেশাগুলির সাধারণরূপ পরিবর্তিত হয়েই আধুনিক শিল্পভিত্তিক শহুরে সভ্যতায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এক্ষেত্রে, নগরায়ণ হল এমন একটি কাঙ্খিত তথা রূপান্তরশীল পরিকল্পিত ঘটনা, যার প্রভাবে ঐতিহ্যবাহী পৌর জনপদগুলি ধীরে ধীরে আরও উন্নত উৎপাদনমুখী এবং পরিসেবাভিত্তিক গতিশীল জনপদে উপনীত করেছে।
O. P. Singh তাই যথার্থই বলেছেন, "Urbanization in simple term refers to the proportion of total population living in urban area. The term urbamzation also refers to the process of changes of residence from rural to urban culture অর্থাৎ "সাধারণ অর্থে নগরায়ণ বলতে নগর এলাকায় বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার অনুপাতকে বোঝায়। নগরায়ণ শব্দটি গ্রামীণ ক্ষেত্র থেকে শহরে সংস্কৃতিতে বসবাসের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকেও বোঝায়।"
এখানে 15.9 নং ধারণাচিত্রে নগরাঞ্চলের ধারাবাহিকতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পৌরক্ষেত্র উদ্বর্তনের পরিচয় দৃষ্টান্ত সহকারে উপস্থাপন করা হল।
ধারণা (Concept): কোনও নগরের বৃহত্তম রূপ হল মহানগর, যেখানে আধুনিক এবং বুচিশীল সভ্যতা পরিপূর্ণভাবে বিকাশিত হয়। তাছাড়া, এখানকার জনসংখ্যা 10 লক্ষ বা তার বেশি হয়ে থাকে। "মহানগর (Metropolis)" ধ ধারণাটির অন্যতম প্রবর্তক Lewis Mumford মনে করেন, এটি পৌর অনুক্রমের তৃতীয় পর্যায়ে গঠিত সর্বাধিক পরিসেবা প্রদানকারী বিশেষ এমন একটি পরিসর, যেখানে সুগঠিত অর্থনীতি, উচ্চমানের সংস্কৃতি এবং বর্ধিত জনসংখ্যার প্রভাবগত দিক থেকে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কখনও কখনও এই মহানগরগুলি হল দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক সদর দফতর, যেটি রাজনৈতিক ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্রস্থলরূপে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে থাকে।
বর্তমানে বিভিন্ন ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী "Metropolitan" শব্দটিকে পরিমার্জিতভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে, যেমন-
ও সাধারণ অর্থে মেট্রোপলিটন এলাকা হল এমন একটি ঐতিহ্যবাহী ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে কেন্দ্র, যেখানে উন্নত। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলের সর্বাধিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
• বিশেষজ্ঞদের চিন্তাধারায় মহানগরের ধারণা কিছুটা আলাদা। যেমন-
R.E.Dickinson তাঁর "City and Region' গ্রন্থে কোনো একটি দেশের আঞ্চলিক রাজধানীকেই (Regional Capital) মহানগররূপে চিহ্নিত করেছেন।
•1922 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ক্যানাডিয়ান অধ্যাপক N.S.B.Gras বলেছেন- একটি নগরকে তখনই মহানগর বলা যাবে, যখন পার্শ্বস্থ জেলাগুলির থেকে সমস্ত উৎপন্ন সামগ্রী ব্যাবসা ও রপ্তানির জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হবে। এখানে, যাবতীয় আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য লেনদেনের মুখ্য কেন্দ্রভূমি গড়ে উঠবে।
• Hudson বলেছেন, মহানগর হল "The large city, dominating a number of small towns and village.
জনসংখ্যাগত ধারণা ভারত-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে মহানগরের ধারণায় জনসংখ্যাকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন-আমাদের দেশে 10 লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যার বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন পৌরক্ষেত্রকে বলা হয় মহানগর।
মহানগরের বৈশিষ্টা (Characteristics of Metroplis)
মহানগরের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(i) প্রতীকী দিক থেকে মহানগর মাত্রই একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নত শিল্পকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেটি বিশেষ কোনও শিল্পের উৎপাদন দ্বারা চিহ্নিত। যেমন- জাপানের ওসাকা বস্ত্রশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ।
(ii) মহানগরগুলি অত্যন্ত জনবহুল হয়ে থাকে। যেমন-ভারতের আদমশুমারি অনুযায়ী মহানগরের জনসংখ্যা প্রায় 10 লক্ষ।
(iii) মহানগরগুলিতে অর্থনৈতিক কেন্দ্রের পাশাপাশি শ্রমবিভাজন, সম্পদের সুষম যোগান, সর্বোত্তম বন্টন প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায়।
(iv) প্রতিটি মহানগরের সাথে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক লেনদেনের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ় হয়ে থাকে। যেমন- কলকাতার সাথে পার্শ্ববর্তী হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আন্তঃসংযোগ যথে ষষ্ট মজবুত।
(v) মহানগরগুলিতে বহু মানসিকতা এবং বহু বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সমাবেশ গড়ে ওঠে।
(vi) সাধারণত মহানগর বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্রের সাথে বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক অথবা উচ্চমানের পরিসেবাভিত্তিককার্যাবলীর প্রত্যেক্ষ সংযোগ থাকে।
(vii) প্রায় বেশিরভাগ মহানগর উচ্চ সংস্কৃতিসম্পন্ন ভাবধারা বা কৃষ্টিশীলতা, সাংস্কৃতিক আন্তঃসম্পর্ক এবংৎকর্ষজীবন যাত্রার সুবাদে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে থাকে।
(viii) উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র, উন্নত স্বাস্থ্য পরিসেবা, বিনোদন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকলা, পার্ক, অফিস, আদালত, বিমা প্রতিষ্ঠানের একাধিক সুযোগসুবিধাগুলি সমস্ত মহানগরে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
(ix) বিশ্বের অধিকাংশ মহানগরগুলির মধ্যে ছোটো-বড়ো উপনগরী, গ্রাম্য পৌর এলাকা, ছিটমহল, এমনকি একাধিক শহরতলির অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
মহানগরীয় এলাকা (Metropolitan area) :
মহানগরকেন্দ্রিক যে বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসন, শিল্পাঞ্চল, শহুরে পরিসেবামূলক কেন্দ্র, উন্নত অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং প্রায় একই ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে তাকেই মহানগরীয় এলাকা হয়। কখনও কখনও, একটি সুবিস্তৃত মহানগরীয় এলাকার মধ্যে দুই বা ততোধিক বড়ো শহর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
মহানগরীয় অঞ্চল (Metropolitan region):
ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে, একটি দেশের সুবিস্তৃত এলাকার যতদূর পর্যন্ত কোনো মহানগরের সক্রিয় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেটি মহানগরীয় অঞ্চল নামে পরিচিত। কার্যগত এবং প্রভাবগত দিক থেকে একাধিক মহানগরীয় এলাকা প্রত্যক্ষভাবে মহানগরীয় অঞ্চলের নিজস্ব সীমানার মধ্যেই বিরাজ করে (All metropolitan areas are functionally and effectively within the metropolitan region)। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই ধরনের মহানগর অঞ্চলগুলি সাধারণত পৌরপুঞ্জ বা পৌরমহাপুঞ্জ আকারে বিন্যস্ত থাকে। যে সমস্ত নগরীয় পরিসরগুলিকে আজ আমরা নগর এলাকারূপে জানি, সেগুলিই আবার ভবিষ্যতে মহানগর অঞ্চলে উপনীত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
অবশ্য, অনেক সময় প্রাচ্যের কিছু নগরাঞ্চলে এই ধারণাটি খাটেনা। কারণ, এখানকার নগরাঞ্চলগুলিতে অতি নিবিড়ভাবে জমির ব্যবহার এবং অতি ঘিঞ্জি বস্তি এলাকার প্রভাবে নগরাঞ্চলগুলি স্থানিকভাবে কেন্দ্রীভূত না থেকে ক্রমশ বাইরের দিকে অবিন্যস্তভাবে বৃদ্ধি পায়।
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমসুমারী অনুযায়ী এখানে সেই ধরনের এলাকাকেই "Standard Metropolitan Area" বা "Metropolitan Statistical Area (MSA)"-রূপে মান্যতা দেওয়া যায়) এবশ, পরবর্তীকালে এবং বসতি ঘনত্বের দিক থেকে প্রতি বর্গমাইলে কমপক্ষে 1.0K) জনসংখ্যার বাস। অবশ্য, পরবর্তীকালে 1950 খ্রিস্টাব্দের মার্কিন আদমশুমারিতে "Metropolitan district"-এর ধারণাটিতে পৌর এলাক্যাম্য অন্তত ২ লক্ষের অধিক জনসংখ্যা এবং ঘনত্বের বিচারে প্রতি বর্গমাইল এলাকায় 1500 জনের অধিক মানুষের বসবাসকে প্রামাণ্য ধরা হয়েছে।
• বিশেষত্ব (Particularity): একটি মহানগরীয় অঞ্চলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন -
(i)কোনও একটি নগরের প্রভাবশীল অংশের গঠনগত এবং কার্যকরী একটি বিস্তীর্ণ প্রভাবক্ষেত্র হল মহানগরীর অঞ্চল।
(ii) সাধারণত, একটি মহানগরীয় অঞ্চলের জনবহুল প্রধান কেন্দ্রটি হল সবচেয়ে উন্নত অঞ্চল, এবং তার আশেপাশের কম জনবহুল এলাকাগুলি সাধারণত উপ-নগরীয় ক্ষেত্র হিসেবে অবস্থান করে।
(iii) মহানগরীয় অঞ্চলের সাথে তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য নগর বা পৌর উপকণ্ঠ এলাকাগুলির মধ্যে একটি গভীর আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
(iv) মহানগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অংশটি সেখানকার মানুষের জীবনধারাকে সর্বাধিক প্রভাবিত করে থাকে।
(v) সমস্ত মহানগরীয় অঞ্চল তার নিজস্ব উৎপাদন, ব্যবসা, পরিষেবা, সাংস্কৃতিক উপাদান এবং মানুষের সমৃষ জীবনধারাকে একসূত্রে বেঁধে আঞ্চলিক সুষম উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। সেই কারণে, মহানগরীয় অঞ্চলগুলি কোনও একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি চালিকা শক্তি।
বিশ্ব মহানগরীয় অঞ্চলের উদ্ভব সংক্রান্ত দৃষ্টান্ত (Pardigms on the origin of the world metropolitan regions):
বিভক্ত, যথা- বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের মেট্রোপলিটন অঞ্চলগুলিকে তাদের উদ্ভবের সময়কালের দৃষ্টান্তের নিরিখে চারটি পর্যায়ে
প্রথম পর্যায়ে উদ্ভূত মেট্রোপলিটন অঞ্চল (The first metropolitan area to emerge): ইউরোপ মহাদেশের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্ত বরাবর কেন্দ্রীভূত।কতীয় পর্যায়ে উত্তর মোটামাটি (The third metropolitan area to emerge): পূর্ব এশিয়ার জাপান, কোরিয়া, মাঞ্চুরিয়া ফিলিপাইন্স, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় কেন্দ্রীভূও চতুর্থ পর্যায়ে উদ্ভূত মেট্রোপলিটন অল (The forth metropolitan area to ) ভারত পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়নমারে কেন্দ্রীভূত।
মহানগরীয় অঞ্চলের উৎপত্তি (Origine of Metropoliton Region):
মহানগরীয় অঞ্চলের উৎপত্তিকে কোনো বৃহদায়তন পৌরক্ষেত্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের একটি দীর্ঘা ক্রমপুরিভূত ধারা বলা যেতে পারে। বিখ্যাত খ্রিক নগর পরিকল্পনাবিদ Constantinos Apostolos Doxiadis যুদ্ধ দিয়ে বলেছিলেন মহানগর সৃষ্টির দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়াটি সভ্যতার এমন একটি বিবর্তনশীল অংশ যা শেষ পর্যন্ত বিশ্বাশরে বা "ইকুমনপলিস”-এ উপনীত না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। এপ্রসঙ্গে Hudson উল্লেখ করেন, বিশ্বের প্রায় সমস্ত স্থানে নির্দিষ্ট যে-কোনও পরিসেবাকেন্দ্রিক অনুকূল পরিবেশকে অবলম্বন করেই মহানগরীয় অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে। ঠিক সেই কারণেই, যেমন কৃষি অধ্যুষিত ভারত, বাংলাদেশ, চীন প্রভৃতি দেশে মহানগরীয় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে, একইভাবে উন্নত শিল্প-পরিকাঠামোসমৃদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশেও মহানগরীয় অঞ্চল লক্ষ্য করা যায় ।
প্রশাসনিক প্রভাব (Administrative impact): প্রাথমিকভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যে কয়েকটি মহানগর গড়ে উঠেছিল তার মুখ্য কারণ ছিল বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মধারার একত্রীকরণ। অতীতে, প্রশাসনিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত স্থানগুলিতেই শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সর্বাধিক সুযোগ বিকশিত হয়। এরফলে, সংশ্লিষ্ট পরিসেবা এবং সার্বিক নিরাপত্তার কারণে স্থানটি এমন একটি প্রভাব বলয়ে পরিণত হয়, যা ক্রমেই সেটিকে মহানগরীয় অঞ্চলে উপনীত করে।
• যেমন-ব্রিটিশ শাসিত ভারতে কলকাতা ছিল ইংরেজদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষেত্র তথা ভারতের রাজধানী। আবার, স্বাধীনোত্তর ভারতেও কলকাতাকে প্রশাসনিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে সেটিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে উপনীত করা হয়। বর্তমানে, এটি পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের একটি অন্যতম মহানগরীয় অঞ্চল
• জনাধিক্যতার প্রভাব (The impact of overpopulation): কোনও একটি পৌরক্ষেত্র যখন আর্থ-সামাজিক পরিসেবার প্রধান আকর্ষণস্থল হয়ে ওঠে, সেখানে কর্মসংস্থান, পরিব্রাজন বা শরণার্থীদের ভিড়ে জনাধিক্যতা একলাফে যথেষ্ট বেড়ে যায়। ফলে, সংশ্লিষ্ট পৌর ক্ষেত্রটি ক্রমেই মহানগরীয় অঞ্চলে পরিণত হয়।
• যেমন-1960 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী শহুরে জনসংখ্যার মোট পরিমাণ ছিল 34%, সেটি 2014 খ্রিস্টাব্দে 54% বৃদ্ধি ঘটে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, 2050 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শহরে জনসংখ্যার 66% বৃদ্ধিতে সমস্ত দেশেই মহানগরের সংখ্যাও অনেকটা বেড়ে যাবে (সূত্র-UNDESA, 2014খ্রিঃ)।
• শিল্পায়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাব (Impact of industrialization and commercialization): শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই নিত্যনতুন যন্ত্রের উদ্ভাবনা, বাষ্পশক্তির বিকাশ এবং উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে বিপুল পুঁজি নিবেশের ফলে পশ্চিমি দেশগুলিতে নতুন শিল্পস্থাপন এবং বাণিজ্যিকীকরণের নয়া নীতি যথেষ্ট গতি এনে দিয়েছে। বিশেষকরে, উৎপাদনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পশহরগুলিতে কর্মসংস্থান, বাণিজ্যিক লেনদেন, পণ্য বন্টন, শ্রমিক গতিশীলতা এবং জনঘনত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে এখানে অসংখ্য মহানাল্লীর ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক এই কারণেই, Dickinson উল্লেখ করেন, মহানগরীয় অঞ্চল সৃষ্টির মূলে রয়েছে মানুষের বহুবিধ অর্থনৈতিক কর্মধারা কারলেট, তুংকা, সাংহাই, ম্যানচেস্টার, মুম্বাই প্রভৃতি মহানগরকেন্দ্রিক বৃহৎ পরিসরগুলি এইভাবেই গড়ে উঠেছে।
• নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রভাব (Impact of civic comfort): সাধারণ গ্রামীণ এলাকার চেয়ে কোনও পৌর এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত, ডাকঘর, আধুনিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা, এমনকি একাধিক বিনোদনমূলক স্থান যেমন-পার্ক, খেলার মাঠ, সিনেমা হল, থিয়েটার প্রভৃতি, ব্যক্তিগত বা সম্প্রদায়গত নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের সুযোগ-সুবিধাগুলি অনেক বেশি থাকে। ফলে, এই ধরনের পৌরক্ষেত্রটি ক্রমেই পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চলের মুখ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে সেখানকার জনসমাগম ক্রমেই বাড়িয়ে চলে। এইভাবে, সংশ্লিস্ট পরিসরটি কোনো একসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগরীয় অঞ্চলে উপনীত হয়। • যেমন-পশ্চিম ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মহানগরীয় অঞ্চল সৃষ্টির ক্ষেত্রে নাগরিক স্বাচ্ছন্দের প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কাজ করেছে।
• সুযোগ-সুবিধার প্রভাব (The impact of Opportunity): বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ পৌর এলাকা মানুষের জন্য বেশ কিছু স্বতন্ত্র সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই ধরনের বিশেষ পরিসেবা প্রদানকারী এলাকাগুলি যখন উন্নয়ন এবং খ্যাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থলে উপনীত হয়, তখন সেখানে জনসমাগম দ্রুত বেড়ে গিয়ে ক্রমেই মহানগরীয় অঞ্চল। গড়ে তোলে।
• যেমন-ভারতের বেঙ্গালুরুতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পের সহাবস্থানগত সুযোগ-সুবিধা, মার্কি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে চলচ্চিত্র নির্মাণের শিল্প উপযোগী সুযোগসুবিধা, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে শিক্ষাসক্রান্ত সুযোগসুবিধা সংশ্লিষ্ট নগরাঞ্চলগুলির বিকাশের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
উল্লিখিত প্রভাবকগুলি ছাড়াও, পৃথিবীতে এমন কিছু পৌরক্ষেত্র বা নগর রয়েছে, যেগুলি অতীতের গৌরবময় বিভিন্ন ঐতিহ্যের কারণে ক্রমেই একটি জনপ্রিয় মহানগরীয় অঞ্চলে উপনীত হয়েছে। তবে, বর্তমানে মহানগরের অধীনস্থ বহু অঞ্চলই স্বাধীন সত্ত্বাবিশিষ্ট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নগরীয় ক্ষেত্ররূপে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। যেমন-ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, গ্লাসগোর মত উল্লেখযোগ্য নগরাঞ্চলগুলি এখন আর আর্থিক দিক থেকে লন্ডনের মুখাপেক্ষী নয়। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের নগরগুলিও আর্থিক বা সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ নিউইয়র্ক মহানগরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না। যদিও, এই সমস্ত মহানগরীয় অঞ্চলের কোনোটাই লন্ডন বা নিউইয়র্কের সঙ্গে তুলনীয় নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের উৎপত্তিতে কিছু স্বাতন্ত্র্য প্রেক্ষাপট বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
মহানগরীয় অঞ্চলের গঠন (Structures of Metropoliton Region):
প্রতিটি নগরাঞ্চলেরই গঠনগত কিছু স্বকীয়তা রয়েছে। সাধারণত, অধিকাংশ নগরাঞ্চলের বিন্যাস কাঠামো অত্যন্ত জটিল হলেও, সেখানে দুটি প্রধান অংশকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়, যার একটি হল নগরের কেন্দ্রস্থল এবং অপরটি হল পারিপার্শ্বিক অঞ্চল। নগরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় অংশটি হল এমন একটি উচ্চ পরিকল্পিত এলাকা, যেখানে সারিবদ্ধ উচ্চ আটলান্টিকা বিশিষ্ট আবাসন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনগত প্রশাসনিক দপ্তর, ব্যাছ-বীমা পরিসেবার কার্যালয়, আমোদ-প্রমোদের জন্য স্থান, পার্কিংলট এবং উচ্চ গমনযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতি মার্জিতভাবে গড়ে ওঠে। নগরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পর থেকে সংলগ্ন এবং পারিপার্শ্বিক বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিসরটি বেশ কয়েকটি বলয়ের ন্যায় অবস্থান করে। যেমন, কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে ঘিরে প্রথমেই থাকে আবাসন এলাকা, যেটি মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন বিত্তদের সাধারণ বসতি এলাকা। এরপর, থাকে বিভিন্ন শহরতলী, যেখানে হাল্কা তথা ভারী বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠে। এই এলাকাগুলি সাধারণত রেলপথ বা সড়কপথের মাধ্যমে নগরের প্রান্তীয় অঞ্চলের সাথে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শহরতলিগুলিতেও বিনোদনমূলক সুযোগসুবিধাযুক্ত আন্তীয় বাণিজ্য এলাকাগুলিকে গড়ে উঠeে দেখা যায়। শহরতলীর পরবর্তী এলাকাটিকে নিতা যারী কয় (Commuter zone) বলা হয়। এই ধরনের প্রান্তিক এলাকা থেকেই অধিকাংশ মানুষ শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় নগরের অভিমুখে যাতায়াত করে। অবশ্য, নিত্যযাত্রী এলাকাগুলি প্রকৃতপক্ষে একটি আধাপৌর এলাকা, যেখানে মাঝে-মধ্যে দু-একটি গ্রাম্যপৌর উপকণ্ঠ এলাকাকে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গাত উল্লেখ্য, কোনও মহানগরীয় অঞ্চলের গাঠনিক অংশ বিবেচনায় মূলত দুটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যথা-
• মহানগরীয় অনন্তলের প্রভাবশীল বলয় (sphere of metropolitan influence): মহানগরীয় প্রভাবশীল বলয় শব্দটিকে সর্বপ্রথম Ralph Northam প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তীকালে Canter সেই ধারণাটিতে সহমত পোষণ করেন। অধিকাংশ ভৌগোলিক মনে করেন, আর্থসামাজিক দিক থেকে প্রভাবশীল এবং উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্ররূপে এই অঞ্চলটিকে ঘিরে কোনও একটি নগরের সমজাতীয় কর্মপ্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকে। স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং জার্মানির ভূগোলবিদদের কাছে এই ধরনের নগরীয় ক্ষেত্রটি উমল্যান্ড নামেও পরিচিত।
সমস্ত নগর কেন্দ্রগুলির প্রভাব বলয়ের সঙ্গে আশেপাশের ভূদৃশ্যের এমন একটি অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গড়ে ওঠে, যেখান থেকে আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসেবাগুলি অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কাজেই, কোনও মহানগর। সংলগ্ন যে প্রভাবশীল এলাকায় বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবা সরবরাহ ঘটে থাকে, এমনকি প্রাপ্ত পরিষেবাগুলিকে গ্রহণ করার জন্য হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বাজার, শ্রমসংস্থানকেন্দ্রিক বিপুল জনসমাগম হয়, সেটিই আসলে মহানগরীয় প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের মহানগরীয় প্রভাবগত এলাকাটির তীব্রতা দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়, কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনো কখনো জনসংখ্যার আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ এখানকার যাবতীয় কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ভৌগোলিকদের মতে, কোনো প্রভাবশীল মহানগরের আয়তন সেখানকার পরিসেবার সংখ্যা বা পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক হয়ে থাকে। যেমন-মুম্বাই মহানগরীর প্রভাবশীল এলাকাটি লখনউয়ের থেকে বড়ো, কারণ মুম্বাই সবচেয়ে বেশি পরিষেবা প্রদান করে।
অবশ্য, কোনও একটি নগর বা মহানগরের কাল্পনিক প্রভাব বলয়টি নির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা বা সীমাবদ্ধ রাখার সার্বিক প্রচেষ্টা খুব একটা সহজ বিষয় নয়। তবে, নগরটির বিভিন্ন পরিসেবার কার্যকারিতার প্রকৃতি অনুধাবণের বিশেষীকরণ দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা সীমানা সংক্রান্ত এই মানদণ্ডটিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন- ভারতের বারাণসী নগরের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আর. এল. সিং 1956 খ্রিস্টাব্দে এখানকার প্রভাব বলয়টির জন্য িেট মানদণ্ড ব্যবহার করেন:
(৯) চাহিদাভিত্তিক অন্তপ্রবাহের মানদণ্ড: (1) সবজি সরবরাহ (৪ কিমি দূরত্ব দ্বারা নির্ধারিত)। দুধ সরবরাহ (i) শস্য সরবরাহ।
(b) সরবরাহভিত্তিক বহিঃপ্রবাহের মানদণ্ড:
(1) বাস পরিষেবা (2) সংবাদপত্র বিতরণ (3) প্রশাসন
মহানগরীয় অঞ্চলের বৃদ্ধি বা বিস্তার সংক্রান্ত গতিপ্রকৃতি (The nature of growth or expansion of Metropoliton Region):
পৃথিবীর প্রতিটি মহানগরীয় অঞ্চল মাত্রেই উন্নত সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। বিখ্যাত নগর-সমাজবিদ রডরিক
ডি. ম্যাকেঞ্জি 1933 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম তাঁর "The metropolitan community "নামক গ্রন্থে মেট্রোপলিটন অঞ্চল বৃদ্ধির সার্বিক প্রবণতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে, মহানগরীয় অঞ্চলের বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটগুলি সমগ্র বিংশ শতাব্দী জুড়ে সমাজ বিন্যাসের একটি উন্নত ধারারূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উন্নত কেন্দ্রীয় আধিপত্য অঞ্চলরূপে যেখানে বৃহত্তর মেট্রোপলিটান গুলির সামান্য উত্থান দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মানুষের বহুকেন্দ্রিক কর্মধারা, বিকেন্দ্রীভূত গতিশীল অর্থনীতি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেটি আরও চরম পর্যায়ে উপনীত হয়।
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে 1950-এর দশকের শেষের দিকে শুরু হওয়া জাতীয় আন্তঃরাজা মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক সংস্কার, বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, জাতিগত সংমিশ্রণ, আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন, নগর পরিকল্পনার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি মহানগরীয় অঞ্চলগুলির বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইন্ধন জুগিয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে, দুটি নগর পাশাপাশি অবস্থান করার সুবাদেও কোনও এক সময় এরা পরস্পর মিলিত হয়েও মহানগরীয় অঞ্চলের বৃদ্ধিকে অনিবার্য করে তলে। এক্ষেত্রে, কলকাতা ও হাওড়ার যৌথ নগরাঞ্চল সৃষ্টির প্রসঙ্গটি বিশেষভাবে তুল্যনীয়।
আবার, অনুন্নত কৃষিপ্রধান দেশগুলিতে প্রথাগত কৃষিব্যবস্থায় থাকা প্রান্তিক গ্রামগুলি বহুসংখ্যক মানুষের ভার বহনে প্রায় অক্ষম হয়ে পড়লে, সেইসব এলাকার উদ্ধৃত্ত জনসংখ্যা ক্রমশ পার্শ্ববর্তী নগরগুলিতে এসে ভিড় জমায়। এইভাবে, কার্যক্ষেত্রে বিভিন্ন মহানগরীয় ক্ষেত্রগুলি পরিসরগত দিক থেকে আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে যথেষ্ট ফুলে ফেঁপে ওঠে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, 1975 থেকে 2015 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র বিশ্বে প্রায় 4,000টিরও বেশি নতুন মেট্রোপলিটন এলাকা ঠিক এই কারণে আবির্ভূত হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় 40 বছর যাবৎ ওই সময়কালে সমগ্র পৃথিবীতে বিদ্যমান মেট্রোপলিটন এলাকার 40% এরও বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে শুধুমাত্র নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের (সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) দেশগুলোতে।
বর্তমানে, বিশ্বে সব মিলিয়ে প্রায় 9000 টিরও বেশি মেট্রোপলিটন এলাকা রয়েছে, যেখানে প্রায় এ বিলিয়ন মানুষের ( বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র 20%) বসবাস করছে। অবশ্য, এই ধরনের মেট্রোপলিটন এলাকাগুলির প্রায় 70% স্থান জুড়ে কমপক্ষে 50,000 থেকে 250,000 জন বাসিন্দা পরিলক্ষিত হয়। বিপরীতে, সমগ্র বিশ্বের মাত্র 1% মেট্রোপলিটন অঞ্চলে সর্বাধিক 5 মিলিয়নেরও বেশি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। আবার, মাত্র 94টি মেট্রোপলিটন এলাকায় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার 26% বসবাস করে থাকে। 2000 থেকে 2015 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়া ব্যতীত বিশ্বের প্রায় সমস্ত অঞ্চলের প্রধান মেট্রোপলিটন এলাকায় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষকরে, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়।
• ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা/প্রভাব (Spill over effect/tendency): মহানগরীয় অঞ্চলগুলির বর্ধিত জনসংখ্যা এবং যাবতীয় পরিসেবা সেখানকার মূল এলাকা থেকে আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ওই মহানগরটির প্রভাব বিস্তৃতকরণকেই "Spill over effect/ tendency" বলা হয়।
প্রতিদিনের মহানগরীয় জীবনযাত্রায় বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক এবং পরিসেবাগত ক্রিয়াকলাপের নিত্যনতুন সুযোগ সুবিধায় সুব্যবস্থা বা অন্য কোনো
প্রতিকূল পরিস্থিতির কেন্দ্রীভূত অথবা বিকেন্দ্রীভূত প্রভাব এই ধরনের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা তৈরি করে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দ্রুত শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিণামস্বরূপ গ্রামাঞ্চলগুলি থেকে ক্রমশ অধিক সংখ্যক মানুষ বড়ো উপনগরীকরণ কোনো শহর ও নগরের অভিমুখে পরিবেশগত সংযোগ স্থানান্তরিত হয়েছিল। আবার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংস্কার।
নয়া বিনিয়োগ, এবং নতুন নতুন শিল্পতালুকের সম্প্রসারণকে ঘিরে মহানগরীয় অঞ্চলগুলির পুনরায় দ্রুত বিকাশ ঘটাতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে, অসমভাবে বিকশিত মহানগরীয় অঞ্চলগুলির ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যাকে ক্রমেই প্রধান মহানগর থেকে সংলগ্ন শহরতলিগুলির বাইরের দিকে অথবা আরও দূরে কোনও স্থানে সরে যেতে বাধ্য করে। আবার, কখনো কখনো কেন্দ্রীয় মহানগরীয় অঞ্চলগুলির ঘিঞ্জি ও যানজটপূর্ণ বসতি অঞ্চল থেকে উচ্চবিত্তরা প্রান্তিক কোনো আধাপৌর এলাকা গুলিতে এসেও নতুন বসতি গড়ে তুলতে থাকে। এছাড়াও, নগরসংলগ্ন ট্রান্স-বর্ডার এলাকাগুলিও ক্রমশ মূল নগরাঞ্চলের সাথে অর্থনৈতিক দিক থেকে সংয়ের বিস্তুতির ক্রমিক মাত্রা বৃহৎ আকারে দুরবর্তী বাইরের অঞ্চলের দিকে ধারাবাহিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
মামেগালে অধিকাংশ ভৌগোলিক মনে করেন, মহানগরীয় ক্ষেত্রগুলো এমন এক প্রকার ইতিবাচক “ইঞ্জিন" বৃদে বর্তমানে উন্নয়নের প্রভাবগুলিকে চারপাশের অঞ্চলে আরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। আরণ, এই দরনের পারুমন্ডলের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিসেবা সংক্রান্ত ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াগুলি সরাসরি "spill over effect অনিবার্য ইঙ্গিতবাহী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো একটি দেশে মহানগরীয় অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আবার নির্ভর করে সেখানকার বেশকিছু আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশগত সংযোগশীল প্রভাবকের ওপর। এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রভাবক হল
(1) গ্রামীণ-শহুরে অভিবাসন, (ii) প্রতি-নগরায়ণ, (ii) উপনগরীকরণ, (iv) যাতায়াত (১৩) মানব পুঁজি, (vi) সামাজিক সংযোগ, (vii) সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় সুবিধার প্রতি আকর্ষণ, (vii) বিনোদনমূলক সুবিধাগুলির যৌথ ব্যবহার, (ix) বিস্তৃত বাজার, (২) উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে সমষ্টিগত অংশগ্রহণ, (xi) সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, (xii) উৎপাদনশীল পরিসেবা, (xiii) নতুন জমি অধিগ্রহণ নীতি, (xiv) নিতাযাত্রীর সংখ্যা, (xv) মহানগরীয় পরিবেশগত অবক্ষয় প্রভৃতি। যেহেতু, এই সংযোগ প্রভাবকগুলির মাত্রাগত তীব্রতা মহানগরের দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়, সেই কারণে "spill over effect"- এর পরিবর্তনশীল দিকটি বিবেচনা করে কোন নগর বা নগর অঞ্চলের উন্নয়নের সংক্রান্ত যাবতীয় পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে উপস্থাপন সম্ভব।
মহানগরীয় অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ (Determining the boundaries of the metropolitan area):
আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে সামনে রেখে কোনও মহানগরীয় অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ খুব একটা সহজ বিষয় নয়। কারণ, মহানগরের কেন্দ্রস্থল থেকে যত দূরবর্তী স্থানে যাওয়া যায় ততই আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো এবং যাবতীয় পরিসেবার প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকে। যদিও দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে প্রধান মহানগরীয় ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক প্রভাব কিছুটা হলেও বিদ্যমান, কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনো কখনো আশেপাশের অন্য কোনও মহানগরের প্রভাব অনিবার্যভাবেই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রবল। এরফলে, সংশ্লিষ্ট মহানগরীয় অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণে ভৌগোলিকদেরকে প্রায়শই বিভিন্ন অসুবিধায় পড়তে হয়।
ঠিক সেই কারণে, মহানগরীয় অঞ্চলের প্রভাব বলয়ের সীমানা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারকের সহায়তা নেওয়া হয়, যেমন-
• গুণগত পদ্ধতি (Qualititative method): মহানগরের প্রভাব ক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণের গুণগত পদ্ধতিতে সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া প্রাথমিক-গৌণ তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ এবং আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা বা স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে স্থির করা বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে যে তথ্যগুলি নগরাঞ্চলের উপযুক্ত সীমানা নির্ধারকরূপে সর্বাধিক মান্যতা পায়, সেগুলি হল-
৫) নগরকেন্দ্রিক বহুমুখী
(৯) জনসংখ্যাগত বৃদ্ধি, (b) জনবসতির বণ্টন বা গতিপ্রকৃতি, (২) শিল্পকেন্দ্রগুলির বৃদ্ধি,
(৫) প্রাথমিক-মাধ্যমিক এবং উত্য কার্যাবলীর এলাকা, (২) নাগরিক উন্নত পরিসেবা ক্ষেত্রের বিস্তার, (৫) শহূরীকরণের মাত্রা শিক্ষাকেন্দ্রগুলির অবস্থা, (৮) বিভিন্ন বাজারকেন্দ্রিক পরিসেবাম্বল, দূরত্বভিত্তিক ভূমি ব্যবহার প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধরনের মানদণ্ডগুলিকে ব্যাবহার দ্বারা অধ্যাপক R.L.Singh, Kabhal প্রমুখ ভারতের বারানসী, এলাহবাদ, কানপুর, লখনউ, আগ্রা প্রভৃতি নগরগুলির সাধারণ সীমানা নির্ধারণ করেছিলেন।
• পরিমাণগত পদ্ধতি (Quantitative method): মহানগরের সীমানা সংক্রান্ত বিষয়টি জ্যামিতিক এবং পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিতেও নির্ধারিত হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির দুটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োগমূলক রূপ হল-
(1) দিগন্ত রেখা পদ্ধতি (Skyline method): সাধারণত ভৌগোলিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো একটি মহানগরীয় অঞ্চলের পণ্য ও পরিসেবার মাত্রাগত পরিসর গণনা করা হয়। এখানে, বিভিন্ন পণ্য ও পরিসেবা প্রদানকারী সমস্ত সরবরাহ এলাকাকে বিন্দু (-) মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করে সীমানা নির্ধারণে প্রয়োগ করা সম্ভব
প্রথমে একটি মহানগরীয় অঞ্চলের প্রভাবশীল পরিসর অনুযায়ী কয়েকটি অনিয়মিত বহুভুজ গঠন দ্বারা সেখানকার প্রতিটি এলাকাকে একটির সাথে অপরটিকে কার্যকারীতার ভিত্তিতে প্রতিস্থাপিত (Overlapping) করা প্রয়োজন। এখানে, সবচেয়ে বাইরের দিকের সামগ্রিক ক্ষেত্রটিকে নগর বা মহানগরীয় প্রভাব বলয়ের সীমানারূপে বিবেচনা করা হয়। তবে, বহুমুখী কার্যাবলীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কোনো বৃহৎ মহানগরগুলির ক্ষেত্রে সীমায়িত করণের এই পদ্ধতিটি যথেষ্ট অসুবিধাজনক ।
নিকটস্থ পদ্ধতি (Proximal Method): সাধারণত এই ধরনের পদ্ধতিতে কোনও একটি নগরের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলিকে তাদের পারস্পরিক সান্নিধ্যতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি মানচিত্রের উপর থিসেন পলিগনরূপে প্লট করা হয়ে থাকে। এরপর সংশ্লিষ্ট নগর বা মহানগরের পালগনরূপে। মধ্যবিন্দুগুলিকে নির্দিষ্ট সরলরেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয়। এইভাবে, একটি সমতল পৃষ্ঠের উপর এক বা একাধিক অনিয়মিত বহুভুজ গড়ে ওঠে, যা মূল নগর বা মহানগরের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।
• পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি (Statistical method): পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধরনের শহর, নগর বা মহানগরের সীমানা নির্ধারণে পরিসংখ্যা মডেলটিকেই সর্বজনীনভাবে ব্যবহার করা হয়। এখানে, মহানগরীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের পছন্দ তথা চাহিদা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য উপাদানের সাহায্যে গ্রাভিটি অ্যানালগ মডেল আকারে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। যেমন-
• প্রথম পদ্ধতিঃ ধরা যাক এখানে a এবং ৮ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরকেন্দ্র, যাদের মধ্যেবর্তী অনুভূ মিক দূরত্ব 18 কিলোমিটার এবং সংশ্লিষ্ট পৌর কেন্দ্রের জনসংখ্যার আকার যথাক্রমে 4500 এবং 5000 জন। এখানে, সংশ্লিষ্ট দুটি পৌরকেন্দ্রের মোট জনসংখ্যাকে ভর হিসাবে ধরে নিয়ে প্রতিটি শহরের আন্তঃসম্পর্কের মাত্রা সহজেই অনুধাবন করা হয়। সাধারণত, এক্ষেত্রে পৌরক্ষেত্রের টান অনুমান করার জন্য গ্রাভিটি অ্যানালগ পদ্ধতিটিতে অনেকসময় বিরতি বিন্দু (Break point)-গুলির সাহায্য নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট দুটি পৌরকেন্দ্রের টান বা গ্রাভিটি সংক্রান্ত সমীকরণটিকে দ্বারা প্রকাশ করা যেতে পারে।
P + * P_{b} / d_{b} এই পদ্ধতিতে ধরে নেওয়া প্রতিটি বিরতি বিন্দু সর্বদা প্রদান করে থাকে।
• উল্লিখিত ধারণা চিত্রের ভিত্তিতে এ এবং ৮ নগরটির মধ্যবর্তী একটি বিরতি বিন্দু স্থির করা হয়েছে। এখানে, এ এবং ৮-এর মধ্যেবর্তী বিন্দুটিতে এ নগরের প্রভাবগত টান সর্বাধিক কার্যকর হবে বলে মনে করা হয়।
• ধারণাচিতে প্রদর্শিত বিরতি বিন্দু (dx) =d * / sqrt 1+(P * /P k ) সূত্রানুসারে, dx = 18/(1 + sqrt(4500)) = 4.5km
ওপরের সমীকরণ বলা যায়, এ নগরটিতে পার্শ্বস্থ অঞ্চলের মানুষজন সর্বাধিক 4.5km দূরত্ব থেকে আসবে। সংশ্লিষ্ট পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে, আশেপাশের প্রতিটি শহর, নগর বা মহানগরের একাধিক বিরতি বিন্দুগুলিকে সরলরৈখিক দূরত্বে উপস্থাপিত হয়। এইভাবে, নগরাঞ্চলের বিরতি বিন্দুগুলির সাহায্যে তার সামগ্রিক পরিসরকেই খুব সহজে সীমায়িত করা সম্ভব।
• দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ সাধারণত পাইকারি ব্যবসার সাথে যুক্ত কোনও একটি নগর বা মহানগরের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেইলি প্রস্তাবিত (1931 খ্রি:) মডেলটিকে দ্বিতীয় পদ্ধতিরূপে এখানে অনুসরণ করা হয়।
a বা b শহর বা নগরের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণের অনুপাত, বিশেষ করে, পণ্য এবং পরিসেবার জন্য সংশ্লিষ্ট শহরে ভ্রমণকারী লোকের সংখ্যা নির্ধারণে নিম্নলিখিত সমীকরণের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। যেমন- Mki/MkjPi/Pjx (dkj/dki)²=40000/5000 × (6/12)²=2:1
উপরের সমীকরণ অনুসারে-
Mk = নগরের জনসংখ্যার ভর/k থেকে ৯-এর দিকে বাণিজ্য প্রবাহ
Pa = a শহরের জনসংখ্যা
daka এবং k মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বকে বোঝানো হয়েছে।
উপরের সমীকরণ থেকে পাওয়া 2:1 অনুপাতটি নির্দেশ করে, ৮ বিন্দু থেকে এ বিন্দুতে যদি দুজন মানুষ যায়, সেখানে ৮ তে একজন মানুষ আসবে। এর ফলে, এ নামক পৌরক্ষেত্রে সর্বাধিক জনসমাগম দ্বারা সেখানকার পরিসরগত সীমা ক্রমশ বৃদ্ধি ঘটাবে। অর্থাৎ, এখানে একটি শহরের বৃহৎ জনসংখ্যা মানেই তার আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি থাকবে। অবশ্য, বিশ্বের উন্নত দেশগুলি ছাড়া এই পদ্ধতিটিকে নগরাঞ্চলের সীমানা চিহ্নিতকরণে খুব একটা প্রয়োগ দেখা যায় না।
• আচরণগত মডেল (Behavioural model): প্রায় প্রতিটি শহর, নগর বা মহানগরের যেমন কিছু বিশেষত্ব থাকে, একইভাবে সেখানকার বসবাসকারী মানুষজনের মধ্যেও নির্দিষ্ট কিছু আচরণগত স্বাতন্ত্র্যতা পরিলক্ষিত হয়। তাই, পৌর ক্ষেত্রগুলির সীমানা নির্ধারণে অনেকসময় মানুষের আচরণ সম্পর্কে একাধিক তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের সাপেক্ষে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। আচরণগত ম্যাট্রিক্স-এর ধারণাটিকে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেছিলেন প্র্যাট।
দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আমাদের দেশের National Capital Region (NCR) সীমানা নির্ধারণ বা গঠনের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আচরণগত ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিটির সর্বাধিক ব্যবহার ঘটানো হয়েছে। যারফলে, দিল্লির সম্প্রসারিত শরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথের এলাকাগুলিকে বাইরে রেখেই NCR প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশ্য, উন্নত পশ্চিমি দেশগুলিতে এর বিপরীত অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
*অনেক সময়, মানুষের জটিল আচরণগুলিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে, সময় এবং পরিস্থিতির সাপেক্ষে মানুষের পছন্দ, স্বাদ, আবেগ, মূল্যবোধ প্রভৃতিকে পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় (তাছাড়া, তথাগত দিক থেকে মানুষের আচরণকেন্দ্রিক একাধিক অসঙ্গতি থাকায়, এগুলিকে নির্দিষ্ট কোনও মডেলে উপস্থান্স। করাও যায় না
তবে, এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, যেহেতু শহর, নগর এমনকি মহানগর একটি বিমূর্ত গতিশীল ধারণা, তাই পরিমাণগত পদ্ধতির তুলনায় গুণগত পদ্ধতিতে এদের সীমানা নির্ধারণ করলে বেশ কিছুটা ত্রুটি এড়িয়ে নগরের সীমানা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি উপাদানের সম্ভাব্যমান খুঁজে বার করা আরও সহজ হয়ে ওঠে।
মহানগরীয় অঞ্চলের গুরুত্ব (Importance of metropolitan region): প্রত্যকটি দেশের মহানগরীয় এলাকাগুলির স্বাতন্ত্র্য বেশ কিছু গুরুত্বকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। এ প্রসঙ্গে, 1970 খ্রিস্টাব্দে BJ. Barry এবং EF. Horton তাঁদের রচিত "Geographic Perspectives on Urban System" নামক গ্রন্থে মহানগরীয় এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে দৃষ্টান্তমূলক উপস্থাপনা করেছেন। তাঁদের ধারণাকে সামনে রেখে এখানে মহানগরীয় এলাকার কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক তুলে ধরা হল-
(১) প্রতিটি মহানগর হল উন্নয়নের এমন একটি বাস্তব এবং কার্যকর স্থান যেখানে নাগরিক পরিসেবার সমস্ত হাতিয়ারগুলি সক্রিয়ভাবে মজুত থাকে।
(১) একটি মহানগরীয় ক্ষেত্র তার আশেপাশের সংলগ্ন একাধিক শহর বা গ্রামীণ অঞ্চলগুলির জন্যে আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক একাধিক সুযোগ তৈরী করে দেয়।
কোনও একটি মহানগরের কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রটি তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রনের জনা সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
(iv) মহানগরীয় ক্ষেত্র হল এমন একটি বিকশিত অঞ্চল, যেখানে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং বেঁচে থাকার সমস্ত পরিসেবাগত সুযোগসুবিধা সুলভে পাওয়া যায়।
(V) যে কোনও মহানগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংযোগ এতটাই প্রবল হয়ে থাকে, যাকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ন্ত্রিত হয়।
(৫) মহানগরীয় এলাকাগুলি হল মানব সভ্যতাগত ঐতিহ্যর অন্যতম ধারক ও বাহক।
(vn) একটি মহানগরের বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলে থাকে।
মহানগরীয় এলাকার সমস্যা (The problem of metropolitan areas):
সাধারণত, মহানগরীয় ক্ষেত্রগুলি আকারে যত বড়ো, তাদের জটিলতা এবং যাবতীয় সমস্যাও তত বেশি হয়ে থাকে। ক্রমবর্ধমান দ্রুত নগরায়ণের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মেট্রোপলিটন বা মহানগরীয় অঞ্চল যে ধরনের বহুমুখী সমস্যা তথা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, সেগুলি সম্পর্কে এখানে সুস্পষ্ট আলোকপাত করা হল।
• বাসস্থান সংক্রান্ত সমস্যা (Accommodation problems): প্রায় সমস্ত মহানগরীয় এলাকা তার বর্ধিত জনসংখ্যা দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে এবং যার অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ বাসস্থানজনিত একাধিক সমস্যা ডেকে আনে। মহানগরগুলিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার নীতির ফলে এই সমস্যা দিনে দিনে যথেষ্ট চরম আকার ধারণ করে চলেছে। বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে সমস্যাটি এতটাই ভয়াবহ, যার জন্য এখানকার সরকারকে জোরপূর্বক বহুসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসন দিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (1.2 বিলিয়ন) নগরকেন্দ্রীক মানুষ নিরাপদ আবাসনকেন্দ্রিক বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এর ফলে বার্ষিক বাজেটের একটা বড়ো অংশ প্রভাবশীল দেশগুলিতে নতুন আবাসন নির্মাণ কাঠামোয় ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে 2025 খ্রিস্টাব্দে নাগাদ বিশ্বের প্রায় 1.6 বিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন নগর বা মহানগর গুলিকে সাশ্রয়ী পর্যাপ্ত এবং নিরাপদ আবাসনের পরিসেবা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবে।
রাস্তাঘাট ও যান চলাচলের सुरक्षा (Disruption of roads and traffic): একটি মহানগরীয় এলাকার 30% থেকে ৩০% এলাকা রাস্তাঘাট তথা পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, রাস্তাঘাটগুলিতে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা অতিরিন্তু যানবাহনের চাপ সড়কপথের ধারণ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এর ফলে, একদিকে যেমন পার্কিং সমস্যা ও। যানজটের যন্ত্রনা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে রাস্তাঘাটগুলিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও অবহেলার মাত্রা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে মহানগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তাঘাট স্থানে স্থানে বসে যাওয়া, গর্ত বা ফাটল সৃষ্টি, পিচের আস্তরণ উঠে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সড়ক দুর্ঘটনা, সড়কপথ অবরোধের ঘটনাগুলি দিনে দিনে যথেষ্ট শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছায়।
• পর্যাপ্ত জলের ঘাটতি (Adequate water shortage): দৈনন্দিন জীবনে জল একটি অতি মূল্যবান সংরক্ষণযোগ্য জীবনদায়ী সম্পদ। কিন্তু, মহানগরগুলিতে বর্ধিত জনসংখ্যার দ্বারা ব্যবহৃত জলের অপচয় অতি তীর গতিতে বেড়ে চলায়, মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পর্যাপ্ত জল-পরিসেবা ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের দুই বিলিয়নেরও বেশি শহুরে মানুষজন বিশুদ্ধ জল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত এবং সেই সাথে আনুমানিক প্রায় 250 মিলিয়ন শহরে বাসিন্দাদের যথাযথ স্যানিটেশন পরিসেবার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। 2050 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চীন, ভারত এবং সাব-সাহারন। আফ্রিকার একাধিক বড়ো নগরগুলিতে পর্যাপ্ত জলের চাহিদা মাত্রাধিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এই পরিস্থিতিতে, ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহার বা ওভারড্রাফটিং, অযাচিতভাবে জল অপচয় এবং ভৌমজলের দূষণ প্রভৃতি মানুষের বেঁচে থাকাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আমাদের দেশে শুধুমাত্র দিল্লি শহরেরই প্রতিদিন আনুমানিক 3300 মিলিয়ন লিটার জল প্রয়োজন, কিন্তু ব্যবহারের জন্য এখানে মাত্র 2000 মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ করা হয়, যাতে করে প্রায় ৪০ শতাংশের ঘাটতি রয়ে যায়। এই ঘাটতি দূর করতে দিল্লি সরকার ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত জল তুলতে বাধ্য থাকে। এর ফলে, কয়েক দশকে সমগ্র দিল্লি শহর জুড়ে ভূগর্ভস্থ জলস্তর প্রায় 20-30 মিটার হ্রাস পেয়েছে।।
• বিদ্যুৎ সমস্যা (Electricity problems): বৈদ্যুতিক পরিসেবা হল সমস্ত মহানগরীয় অঞ্চলগুলিতে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। কারণ, নগরকেন্দ্রিক বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র, আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এমনকি গৃহস্থালির প্রতিটি কাজকর্মকে সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে মহানগরগুলিতে জনসংখ্যার পরিমাণ এবং নাগরিক কাজকর্মের পরিধি যেভাবে বেড়েছে, তাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পরিসেবাতে যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইউনিট প্রতি শক্তি ব্যবহারের ন্যূনতম বা সামগ্রিক খরচ আগের তুলনায় লাগাম ছাড়াভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের নগরাঞ্চলে মাথাপিছু প্রায় 940 KWhs বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার করে, যা পশ্চিমী উন্নত দেশগুলিতে ব্যবহৃত 15000KWhs বিদ্যুতের চেয়ে খুবই নগণ্য। তা সত্ত্বেও, এদেশের অধিকাংশ নগরাঞ্চলে লোডশেডিং বা বিদ্যুতের ঘাটতি একটি চিরায়ত সমস্যা হিসেবে রয়েই গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের প্রায় প্রতিটি নগরাঞ্চলে ভবিষ্যতে ক্রয়সাধা বিদ্যুতের নাগালের মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা আরও হ্রাস পাবে।
স্বাস্থ্য সমস্যা (Health problem): বর্তমানে প্রায় সমস্ত নগরগুলি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যার কারণে ভীষণভ জর্জরিত হচ্ছে। আসলে, বর্ধিত জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে নগরাঞ্চলের খিস্তি-অগোছালো পরিবেশ, পয়ঃপ্রণালীর অব্যবস্থা, নোংরা-আবর্জনা, ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, দূষণের মাত্রা প্রভৃতি শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যে বিষক্রিয়া, অ্যালার্জি, হাঁপানি, কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা, শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব এবং অন্যান্য একাধিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
ভারতের অধিকাংশ মহানগরে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালে পয়ঃপ্রণালীর জমা জলের সমস্যার কারণে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং HINI ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক লক্ষ্য করা যায়। এরফলে, এখানকার শহুরে দরিদ্র শ্রেণির অধিকাংশ মানুষের জীবন স্বাস্থ্য অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাছাড়া, কোভিড-19 মহামারি শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী মহানগরগুলিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি আরও বেশি করে অনুভুত হয়েছে।
• দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি (Increased incidence of disasters)। অতি ভোগবিলাসিতা এবং নগরীকরণকে অবলম্বন করে আমরা যত উন্নততর সভ্যতার দিকে এগোচ্ছি, ততই জল-স্থল-বাতাসের স্বাভাবিকত্বে নেতিবাচক বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটিয়ে নগরাঞ্চলগুলিকে দুর্যোগমুখী ভয়ানক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বিশেষকরে, মহানগরগুলিতে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভূমির ওপর চাপ বৃদ্ধি, ব্যাপক পরিবেশ দূষণ, শহুরে তাপ দ্বীপের কুপ্রভাব প্রভৃতি জলবায়ুগত পরিবর্তনকে প্ররোচিত করে অতিবৃষ্টি-কন্যা, অনাবৃষ্টি-খরা, ভূমি অবনমন, ভূমিধ্বস, ভূমিকম্প এমনকি বিভিন্ন জৈব একাধিক প্রকোপকে অনিবার্য করে তুলেছে।
মহানগরের উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্তগুলি কিভাবে আমাদের বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেটিকে Global Facility for Disaster Resduction and Recovery (JDRR) তাদের সাম্প্রতিক প্রকাশিত "The Making of a Riskier Future নামক একটি প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করেছিলেন যে 21000 সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে প্রায় 1.5 ফুট বাড়বে। কিন্তু সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে, এই বৃদ্ধি সম্ভবত 2 ফুটের কাছাকাছি হতে পারে। কারণ, 1901 থেকে 1971 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমুদ্র জলতলের বৃদ্ধির হার প্রায় তিনগুণেরও বেশি হয়েছে। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় শহুরে এলাকায় বসবাসরত প্রায় 250 মিলিয়ন মানুষ কন্যা সংক্রান্ত বিপন্নতায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ দুর্যোগ প্রভাবিত শহুরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা 630 মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি, IPCC-র জলবায়ু-সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বন্যার ক্ষতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় মেগাসিটির তালিকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কলকাতা, মুম্বাই, ঢাকা এবং গুয়াংজুর মতো একাধিক নাম উঠে এসেছে। তুমি অবনমনজনিত সমস্যার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে অসংখ্য শহর এবং সেইসাথে ফিনিক্স, ডেনভার এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো মার্কিন শহরগুলিতে ভৌম জলের স্তর অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে।
• অপরাধপ্রবণতা এবং সামাজিক অবক্ষয় (Crime tendencies and social degradation): কোনও মহানগরীয় এলাকায় উন্নত পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানকে ঘিরে মানুষের ভিড় যত বাড়তে থাকে, পাশাপাশি কর্মী ছাঁটাই এবং বেকারত্বের হার তত বেশি হয়। আবার, এই পরিস্থিতিতে উপলভ্য কর্মক্ষেত্রগুলিতে যোগ্যতা বা সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে দক্ষ কর্মীসংস্থান সেভাবে দেখা যায় না। এরফলে, মহানগরীয় অঞ্চলের আশেপাশে সুবিধাবন্বিত কিছু মানুষ চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, গাড়ি হাইজ্যাকিং, ধর্ষণ, অন্তর্কলহ, পতিতাবৃত্তি, যৌন শোষণ, মাদকের অপব্যবহার এবং সংগঠিত অপরাধের মতো একাধিক অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে ।
অতিনাতায়নের অবস্থ্যা (The state of over urbanization): অতি নগরায়ণের ধারণাটি বিংশ শতকের প্রথমার্ধে শিল্পবিপ্লবের পরিণামস্বরূপ উঠে এলেও, বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী Josef Gugler, Kingsley Devia, Hilde Golden প্রমুখ এটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন। অতি নগরায়ণ এমনই একটি অবস্থা যেখানে কোনও একটি দেশ তার প্রত্যাশিত নগরায়ণের চেয়েও যথেষ্ট উচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়ে, পৌর গুণসম্পন্ন অতি সক্রিয় আধুনিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়ে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, যোগাযোগের ব্যক সমাজ গড়ে সুযোগসুবিধা, অত্যধিক প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং আধুনিক ভোগ-বিলাসী জীবনযাত্রাই হল এই ধরনের অতি নগরায়ণের পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে অন্যতম কারণ।
এই অবস্থাটিকে কোনও কোনও ভৌগোলিক Ecamonopolis এর প্রাক অবস্থারূপেও আখ্যায়িত করেছেন। এটি এমন একটি অনিবার্য পরিস্থিতি যেখানে, বিশ্বের প্রতিটি বসতিই পৌরক্ষেত্রে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। আসলে, এটি হল পৌরায়ণের একেবারে শেষ পর্যায়। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ক্রমশ অতি নগরায়ণের নিকে হাঁটছে। অনুমান করা হয়, 2050 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত অংশজুড়েই এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
সমাজবিজ্ঞানী John Shandra অত্যধিক নগরায়ণের কারণগুলি সম্পর্কে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি প্রদান করেছিলেন।