welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পরিব্রাজনের তত্ত্বসমূহ (Theories of Migration)

পরিব্রাজনের তত্ত্বসমূহ (Theories of Migration)


বিভিন্ন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পরিব্রাজন ঘটে। প্রত্যেক পরিব্রাজনের ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে, যেগুলি পরিব্রাজনের তীব্রতা ও স্বায়িত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে।

পরিব্রাজন সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হল-

(1) র‍্যাভেনস্টাইন মডেল (Ravenstein's Model).

(2) মহাকর্ষ মডেল (Gravity Model).

(3) লির মডেল (Lee's Model),

(4) লুই-ফি-রেনিস মডেল (Lewis-Fei-Ranis Model)।

■ (1) ব‍্যাভেনস্টাইন মডেল (Ravenstein's Model): Ernest George Ravenstein 1885 খ্রিস্টাব্দে পরিগ্রাজন সংক্রান্ত কিছু নিয়মনীতি ব্রিটেনের 'Journal of the Statistical Society'-তে প্রকাশ করেন। তাঁর মতবাদের মূল বিষয়বস্তুগুলি হল

(1) পরিব্রাজন দূরত্ব:"even in the case of countries of dispersion which have a population to spare for other countries, there takes place an inflow of migrants across that border which lies furthest away from the great centers of absorption" (1885: 191)

র‍্যাভেনস্টাইনের মতে বেশির ভাগ পরিব্রাজন স্বল্পদূরত্বে সংগঠিত হয়। ব্যাবসাবাণিজ্যের কেন্দ্রেই পরিব্রাজনকারী জনসংখ্যাকে গ্রহণ করে। দূরত্ব যত বৃদ্ধি পায় পরিব্রাজনে জনসংখ্যার পরিমান কমে যায়।

(ii) পর্যায়ক্রমিক পরিব্রাজন: "The more distance from the fountain head which feeds them, the less swiftly do these currents flow." (1885 191)একটি বিকাশশীল শহরকেন্দ্রকে নির্ভর করে গ্রামের জনসংখ্যা ওই পৌরকেন্দ্রের দিকে চলে আসে। ফলে পৌরকেন্দ্রের চারপাশে গ্রামীণ জনসংখ্যার সমাগম ঘটে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যন্ত গ্রামের দিকেও পরিব্রাজন-এর ধারা এগিয়ে চলে।

(iii) গ্রামীণ ও পৌরবসতির মধ্যে পরিব্রাজনগত পার্থক্য: "In forming an estimate of Displacements we must take into account the number of natives of each county which furnishes the migrants, as also the population of the... districts which absorb them". (1885: 198), অর্থাৎ, কোনো দেশ থেকে যত সংখ্যক পরিব্রাজনকারী অন্যদেশে বা অঞ্চলে চলে যান তত সংখ্যক ব্যক্তিই অন্য কোনো অঞ্চল গ্রহণ করে থাকে। We have "Proved that the great body of our migrants only proceed a short distance". (1885: 198)

(iv) "Migrants enumerated in a... center of absorption will... grow less with the distance proportionally" অর্থাৎ, কোনো কেন্দ্র পরিব্রাজনকারীদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। তবে কেন্দ্র থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গ্যে সঙ্গ্যে পরিব্রাজনকারীর সংখ্যা হ্রাস পায়।

(v) "The process of dispersion is the inverse of that absorption, and exhibits similar features. (1885 199)

(vi) "Each main current of migration produces a compensating counter current." (1885: 199) অর্থাৎ, পরিব্রাজনের প্রতিটি মূল স্রোত একটি প্রতিস্রোত সৃষ্টি করে।

(vii) "Countries having an extended boundaries in proportion to their area, naturally offer greater facilities for an inflow... than others with a restricted boundary." (1885 175) অর্থাৎ, কোনো দেশের আয়তন অপেক্ষা যদি বিস্তীর্ণ আন্তর্জাতিক সীমানা থাকে তবে ওই দেশে পরিব্রাজনের inflow বেশি হবে। স্বল্পসীমানার দেশে এই হার কম হবে।

(viii) (Migration streams) Sweep along with them many of the natives of the counties through which they pass and deposit, in their progress, many of the migrants they have jomed them at their origin (1885 191)

(x) "Migratory currents flow along certain well defined geograntical channel (1889: 284). অর্থাৎ, পরিব্রাজনের স্রোত নির্দিষ্ট ভৌগোলিক চ্যানেল মাধ্যামে প্রবাহিত হয়।

■(2) মহাকর্ষ মডেল (Gravity Model): বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মাথারে সূত্রের ওপর নির্ভর করে জন স্টুয়ার্ট জনপ্রবাহের সঙ্গো মহাকর্ষ সূত্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন।মহাকর্ষ সূত্রের মূল বক্তব্য হল এই যে, "বিশ্বের দুটি বস্তুকণা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আসাদ বলের মাত্রা আয়ের করের সমানুপাতিক এবং তাদের দূরত্বের বর্ণের ব্যস্তানুপাতিক।" এই সূত্রটি মানুয়ের রাজনের ক্ষেত্রেও প্রমোরায় মডেল অনুসারে, দুটি স্থানের মধ্যে পরিব্রাজনের পরিমাণ ওই দুটি খানের পরিব্রাজনের প্রযোজ্য। জনসংখ্যার গুণফলের আনুপাতিক এবং স্থানটি দুটির দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক হয়।

M_{i} = K * (P_{i}*P_{i})/(d ^ 2)

যেখানে, M_{1} = পরিব্রাজন সূচক (Migration Index) K = অনুপাতের ধ্রুবক (Proportionality Constant)

P_{1} = প্রথম স্থানের জনসংখ্যা।

P_{2} = দ্বিতীয় স্থানের জনসংখ্যা।

d = বসতিকেন্দ্র দুটির মধ্যে দূরত্ব।

গ্র্যাভিটি মডেলে মানুষের পরিব্রাজনের ক্ষেত্রে দুটি পৌর অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয় কাজ করে। কোনো একটি অঞ্চলের আকর্ষণ শক্তি নির্ভর করে ওই অঞ্চলটি আয়তনে কতটা বড়ো এব এর অর্থনৈতিক শক্তি কতটা তার ওপর। দুটি অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব যত বৃদ্ধি পায় পরিব্রাজনকারী ব্যক্তির সংখ্যা যেমন হ্রাস পায় তেমনি পরিব্রাজনের তীব্রতা কমে যায়। দুটি স্থানের মধ্যে পরিব্রাজনের হার হয় ওই স্থান দুটির দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

মহাকর্ষ মডেলটির অনেক সমালোচনা হয়েছে। হ্যারিসের মতে, মহাকর্ষ মডেলে সামাজিক সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়িত হয়নি।

পিটারসেন এই মডেলের সমালোচনা করে বলেন যে, মহাকর্ষ মডেলটিতে পরিব্রাজনকারীদের বয়স ও লিঙ্গ-কাঠামোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

টেলর এই মতবাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি একটি অশোধিত ভৌত বিশ্লেষণ। এর কোনে সামাজিক ভিত্তি নেই।

■ (3) লি-র মডেল (Lee's Model): E. S. Lee 1965 খ্রিস্টাব্দে পরিব্রাজন সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর মতবাদট প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, মানুষের পরিব্রাজন প্রক্রিয়াটি তিনটি নিয়ন্ত্রক দ্বারা নির্ধারিত হয়। এগুলি হল-

(a) পরিব্রাজনের উৎসস্থল (Places of origin of migration).

(b) গন্তব্যস্থল (Destination) এবং

(c) ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, বাধ্যবাধকতা (Intervening obstacles as visualised by the individual)

পরিব্রাজনের আয়তন সম্পর্কিত লির হাইপোথিসিস (Lee's hypothesis on volume on migration): লি-র মতে, পরিব্রাজনের প্রকৃতি ব্যক্তিবিশেষের আর্থসামাজিক পটভূমির ওপর নির্ভর করে।

(i) পরিব্রাজনের আয়তন নির্ভর করে কোনো অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের ওপর। অঞ্চলটির বৈচিত্র্য যত বাড়বে পরিব্রাজনের মাত্রাও তত বৃদ্ধি পাবে।

(ii) মানুষের বৈচিত্র্যের ওপরও পরিব্রাজনের আয়তন নির্ভরশীল যেখানে মানুষের জাতিগত, নৃতাত্ত্বিক, প্রথা, শিক্ষা, অর্থ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সমতা বা মিল রেশি থাকে সেখানে পরিব্রাজনের হার কম হয়।

(iii) পরিব্রাজনের আয়তন নির্ভর করে উৎস অঞ্চল থেকে গন্তব্যস্থলের মধ্যে কতটা বাধা আছে এবং সেই বাধা মানুষ কীভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম তার ওপর।

(iv) পরিব্রাজনের আয়তন আর্থিক অবস্থার ওঠা-নামার ওপর নির্ভর করে। আর্থিক সংগতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এর আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক মন্দার ফলে পরিব্রাজনের আয়তন হ্রাস পায়।

(v) পরিব্রাজনকে নিয়ন্ত্রণ না করলে সময়ের সঙ্গেঙ্গ সঙ্গে এর হার এবং আয়তন পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

(vi) অনুন্নত অঞ্চল অপেক্ষা উন্নত অঞ্চলের মানুষ বেশি পরিব্রাজন করে।

(4) লুই-ফি-রেনিস মডেল (Lewis-Fei-Ranis Model): সমাজবিজ্ঞানী লুই-ফি এবং রেনিস-এর নাম অনুসারে তাঁদের পরিব্রাজনের তত্ত্বটিকে লুই-ফি-রেনিস মডেল বা L-F-R Model বলা হয়।

এই তত্ত্বে গ্রামীণ উদ্বৃত্ত শ্রমিক কীভাবে শহরে স্থানান্তরিত হয় তার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যেমন-ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে বহু শ্রমিক ছদ্ম বেকারে (Disguise unemployee) রূপান্তরিত হয়। এদের প্রান্তিক উৎপাদন শূন্য এমনকি ঋণাত্মকও হয়ে থাকে। শহরে শ্রমিকের মজুরি বেশি বাল এরা অধিক সংখ্যায় শহরে যাতায়াত করে এবং সেখানে কর্মে যোগদান করে। লুই-এর মতে, গ্রাম ও শহরের শ্রমিকের মজুরি একরকম না হওয়া পর্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে পরিব্রাজন চলতে থাকে।

ফি এবং রেনিস একই ধরনের মত পোষণ করে দেন। তাঁদের মতে, গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত শ্রম শহরের বিভিন্ন অংশে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত শহরে চলে আসে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে গ্রামীণ ক্ষেত্রে শ্রমের দক্ষতা বাড়বে। শহরের মজুরির সঙ্গে গ্রামীণ মজুরি সমান হবে। একে টার্নিং পয়েন্ট বলা হয়। গ্রামীণ ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত শ্রম শক্তি স্থানান্তরে যাওয়ায় কৃষকের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। শ্রমিক আর শহরমুখী হয় না। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে শ্রমের জোগানে ভারসাম্য তৈরি হয়। এই অবস্থায় পরিব্রাজনের মাত্রা হ্রাস পায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01