welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূ-গাঠনিক ও স্তরায়ণতাত্ত্বিক বিন্যাস এবং ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ, নদ-নদী(Tectonic and Stratigraphie Provinces and Physiographic Divisions, Drainage System)

ভূ-গাঠনিক ও স্তরায়ণতাত্ত্বিক বিন্যাস এবং ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ, নদ-নদী(Tectonic and Stratigraphie Provinces and Physiographic Divisions, Drainage System)


ভূ-গাঠনিক ও স্তরায়ণতাত্ত্বিক বিন্যাস: ভূ-তাত্ত্বিক বিচারে ভারতীয় ভূখণ্ড হল একটি 'ক্র্যাটন' (Craton)। 'ক্র্যাটন' বলতে মহাদেশ-এর একটি সুস্থিত অংশকে বোঝায়, যার অতীত সেই সুদূর প্রিক্রান্তিয়ান যুগে (৫৪ কোটি বছরেরও আগে) বিস্তৃত এবং যুগ যুগ ধরে অবিকৃত থেকে গেছে। ভারতীয় ক্ল্যাটন প্রাচীন অখন্ড অতিকায় মহাদেশ প্যাক্তিয়ার একটি অংশ যা ভূ-ত্বকে একটি স্বতন্ত্র শিলাপাত হিসেবে রয়েছে। প্রায় ৯ কোটি বছর আগে ভারতীয় পাত মাদাগাস্কার থেকে পৃথক হয়ে নিরক্ষরেখা অভিমুখে অগ্রসর কালে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে টেথিস সাগরের বিলুপ্তি ও কালক্রমে আল্পস্-হিমালয় পর্বতশ্রেণির উত্থান সংঘটিত হয়েছে।
ভূ-গাঠনিক ও স্তরায়নতত্ত্ব আলোচনার জন্য ভারতবর্ষকে বিভিন্ন ভূ-তাত্ত্বিক যুগের নিরীখে পর্যালোচনা করতে হবে। এগুলি হল- ১. আর্কিয়ান যুগ, ২. প্রোটেরোজোয়িক যুগ, ৩. প্যালিওজোয়িক যুগ, ৪. মেসোজোয়িক যুগ, ৫. সেনোজোয়িক যুগ। (তথ্যসূত্রঃ জিওলজিক্যাল ফরমেশন অফ ইন্ডিয়া, বালাসুরাহানিয়াম এ.. সেন্টার ফর এ্যডভান্স স্টাডিজ ইন আর্থ সায়েন্স, মহিশুর বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল রিপোর্ট, মার্চ ২০১৭)।
আর্কিয়ান যুগ (Archean Era): পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে ২৫০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত বিস্তৃত যে

ভূ-তাত্ত্বিক সময়কালে শিলার স্তরায়ন ঘটেছিল তা আর্কিয়ান যুগ শিলাবিন্যাস। ভূগাঠনিক বিবর্তনের প্রাচীনতম সময় এটি যখন পৃথিবী শীতল ও কঠিন হয়ে ভূ-ভাগের ওপরের স্তরটি গঠন করে। এর নিদর্শন উপদ্বীপীয় ভারতে দেখা যায় গ্রানাইট ও নীসের উদ্বেধ-এ। ভারতীয় ক্ল্যাটন-এর অন্তঃভাগ এই শিলাসমূহ দ্বারাই গঠিত। ভূ-বিজ্ঞানী ডানা (Dana J.D. 1872) ক্যাম্ব্রিয়ান পূর্ববর্তী এই ভূ-তাত্ত্বিক গঠন-এর নামকরণ করেছেন আকিয়ান।

আর্কিয়ান শিলা গঠন কালে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিশেষ ছিল না। সুতরাং মূলতঃ আগ্নেয় ও রূপান্তরিত এই যুগের শিলাস্তরসমূহ। গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট বিভিন্ন পরিবেশে পরিবর্তীত হয়ে রূপান্তরিত শিলা গঠন করেছে। শিলাসমূহের মধ্যে মুখ্যতঃ রয়েছে- গ্রানাইট, নীস, গ্রীনস্টোন, এমফিবোলাইট, কোয়ার্টজাইট ও শিষ্ট ইত্যাদি।

ভারতীয় শীল্ড অঞ্চলে আকিয়ান শিলা গঠন দেখা যায় প্রধানতঃ দক্ষিণ ভারতে এবং পূর্ব ভারতের মেঘালয় মালভূমি অংশে। ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানেও আর্কিয়ান যুগের শিলা রয়েছে।

আকিয়ান যুগের শিলার ভূ-তাত্ত্বিক পর্যায়ক্রমিক গঠন অনুসারে ধারওয়ার সিস্টেম প্রাচীনতম, এরপর নবীনতম যথাক্রমে গণ্ডালাইট, চার্নোকাইট এবং সর্বপ্রাচীন অ-শ্রেণীভুক্ত কেলাসিত শিলাসমূহ।

ধারওয়ার সিস্টেমের অন্তর্গত সিস্ট জাতীয় শিলাসমূহ ভারতীয় ক্র্যাটন এর প্রাচীনতম শিলা। কর্ণাটক রাজ্যে এর অবস্থান রয়েছে। ধারওয়ার শিলা আবার নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ ধারওয়ার শিলায় বিভক্ত।

নিম্ন ধারওয়ার শিলার অন্তর্ভুক্ত শিস্ট, নীস, রাওলাইট, ফেলসাইট, কোয়ার্টজ, পরফাইরি ইত্যাদি।

মধ্য ধারওয়ার-এর অন্তর্গত ক্ষারকীয় (Basic) ও অতি ক্ষারকীয় (Ultrabasic) আগ্নেয় শিলাসমূহ এবং গ্রানাইট, পরফাইরি ইত্যাদি।

উচ্চ ধারওয়ার সিস্টেম-এর অন্তর্ভুক্ত-পরবর্তীকালে অগ্ন্যুৎপাত ও আগ্নেয় উদ্বেধ জনিত ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট শিলাস্তূপ, চার্নোকাইট শিলাসমূহ গঠিত হয়। এছাড়াও পরবর্তীকালে বিভিন্ন অ-শ্রেণিভুক্ত শিলা দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বভারতে বিভিন্ন স্থান অধিকার করে।

আকিয়ান যুগের প্রসিদ্ধ শিলা গঠনের মধ্যে রয়েছে চার্নোকাইট (Charnockites)। কৃষু গ্রানাইট (Black granite) নামে পরিচিত এই শিলা দেখা যায় তামিলনাড়ুর নীলগিরি ও শেভ্রয় পার্বত্য অঞ্চলে এবং তামিলনাডুর উত্তর ও দক্ষিণের কিছু অংশে। পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলেও চার্নোকাইট এর নিদর্শন রয়েছে।

খণ্ডালাইট (Khondalites) পূর্বঘাটে প্রাপ্ত আকিয়ান শিলা হল খন্ডালাইট। এই শিলা বিক্ষিপ্তভাবে
দেখা যায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা অঞ্চলে; ওড়িশার কেওনঝার, জ্যেপুর, সম্বলপুর অঞ্চলে; ঝাড়খণ্ডের সিংভূম অঞ্চলে; মধ্যপ্রদেশের নাগপুর, ভান্ডারা, জব্বলপুর অঞ্চলে; ছত্তিশগড়ের বাস্তার, বিলাসপুর অঞ্চলে; গুজরাটের ভাদোদরায়; মেঘালয় মালভূমির গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ি অঞ্চলে এবং পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

২. প্রোটেরোজোয়িক যুগ (Proterozoic Era):

পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় ২৫০ কোটি বছর পূর্ব থেকে ৫৭ কোটি বছর আগে পর্যন্ত সৃষ্ট ভারতীয় ভূ-তাত্ত্বিক গঠন প্রোটেরোজোয়িক যুগ-এর অন্তর্গত। ভারতে এই ভূ-তাত্ত্বিক শিলা গঠন পুরানা শ্রেণি গঠন (Purana Group Formation) নামেও পরিচিত। প্রাচীনতম আর্কিয়ান গঠন থেকে এটি একটি সুস্পষ্ট ছেদ (Unconformity) দ্বারা পৃথক হয়েছে যাকে এপার্কিয়ান ছেদ (Eparchaean Unconformity) বলা হয়।
প্রোটেরোজোয়িক যুগ বিভক্ত হয় (১) আরাবল্লী-দিল্লী সিস্টেম (২) কুড্ডাপ্পা সিস্টেম (৩) বিন্ধ সিস্টেম ও (৪) বহিঃ উপদ্বীপীয় অঞ্চলে।

(১) আরাবল্লী-দিল্লী সিস্টেম (Aravalla-Delhi System) 

আরাবল্লী পর্বতমালা প্রোটেরোজোয়িক যুগের প্রথমদিকে সৃষ্ট আরাবল্লী-দিল্লী পার্বত্য অঞ্চলের অবশিষ্টাংশ। রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চলে এটি ক্ষয়জাত পর্বতের অংশবিশেষ হিসেবে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছে। ছোটো ছোটো আগ্নেয় উদবেধ, ভাঁজ ও চ্যুতি এবং রূপান্তরিত শিলা গঠন দ্বারা প্রথম পর্যায়ের পর্বত গঠন প্রক্রিয়াটি চিহ্নিত। দ্বিতীয় পর্যায় পর্বতের অবনমন ও ধারওয়ার শ্রেণির পাললিক স্তরের বক্রতা দ্বারা চিহ্নিত। এই পললের গঠনে আগ্নেয় কার্যকলাপ-এর নিদর্শন লক্ষ করা গেছে। প্রাচীন গ্রানাইট শিলা দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের উত্তরাংশে, ওড়িশার দক্ষিণভাগে, অস্ত্রপ্রদেশের উত্তরাংশে ও কর্ণটিকের অংশবিশেষে।

এই সময়ে সৃষ্ট অর্থকরী খনিজ হল লোহা, চুনাপাথর, কেওলিন ও ইউরেনিয়াম ইত্যাদি। দিল্লী সিস্টেমটি আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি থেকে শুরু হয়ে উত্তরে আজমের ও মেওয়ার-এর দক্ষিণে উদার ও পালানপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই শিলা গঠনের গভীরতা ৬ কিলোমিটার। নীস, ফিলাইট, কোয়ার্টজাইট, গ্রিট উল্লেখযোগ্য শিলাস্তর।

(২) কুড্ডাপাহ সিস্টেম (The Cuddapah System)
আরাবল্লী গঠনের দীর্ঘকাল পর কুড্ডাপাহ্ সিস্টেম গঠিত হয়। দাক্ষিণাত্যের প্রাচীন ক্ষয়প্রাপ্ত ভূ-পৃষ্ঠে বেলেপাথর, কোয়ার্টজাইট, চুনাপাথর ও শ্লেট শিলা বিন্যাস গড়ে ওঠে। শিলাস্তর গঠনের গভীরতা প্রায় ৬ কিলোমিটার। ছত্তিশগড়ে উর্ধ মহানদী উপত্যকায়, বিহারের শোন নদী উপত্যকায় ও আরাবল্লীর দিল্লী অংশে এই গঠন দেখা যায়। বিক্ষিপ্তভাবে এটি ছত্তিশগড়ের দক্ষিণাংশে, অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নল জেলায়, ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে, ওড়িশার কেওনঝাড় ও কালাহান্ডি জেলায়ও দেখা যায়।
এই সময়ে সৃষ্ট অর্থকরী খনিজগুলির মধ্যে রয়েছে লোহা, তামা, ম্যাঙ্গানীজ, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি।

(৩) বিন্ধ সিস্টেম (The Vindhyan System):
বিন্ধপর্বতের নামানুসারে এই বিন্ধ সিস্টেম নামকরণ। সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পাললিক শিলা গঠিত এই সিস্টেম। স্থানে স্থানে ৪ কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত বিন্ধ সিস্টেমটি মধ্যভারতের প্রায় ১ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গঠিত হয়েছে। বেলেপাথর, চুনাপাথর ও শেল এই শিলা গঠনের বৈশিষ্ট্য। বিদ্ধ অঞ্চলের শিলা গঠন লৌহ বর্গীয় ধাতব খনিজ বর্জিত। এটি দু'ভাগে বিভক্ত-

ক. নিম্ন বিন্ধ সিস্টেম- ১০০ কোটি বছরের প্রাচীন শিলাগঠন পর্যায়।

খ. উর্ধ বিন্ধ সিস্টেম- ৬০-১০০ কোটি বছরের প্রাচীন শিলা গঠন পর্যায়।

গ. কুড্ডাপ্পা সিস্টেমের সমধর্মী গঠন হল গোয়ালিয়র সিস্টেম ও বিজাওয়ার (Bijawar) গঠন।

(৪) বহিঃ উপদ্বীপীয় অঞ্চলের গঠন:
হিমালয় পর্বতের কোনো কোনো অংশে কুড্ডাপ্পা ও দিল্লি সিস্টেমের সমধর্মী শিলা গঠন পাওয়া গেছে। যেমন, পাঞ্জাবের আটক্-এ শ্লেট গঠন, কাশ্মীরে ডোগ্রা শ্লেট, হিমাচলপ্রদেশের চেইল ও সিমলা শ্লেট, কুমায়ুন হিমালয়ে হৈমন্ত সিস্টেম (Haimanta System)-এর শিলাশ্রেণী অনুরূপ গঠন বিশিষ্ট।

৩. প্যালিওজোয়িক যুগ (Palacozoic era) 
দ্রাবিড় শিলা বিন্যাস (Dravidian System) নামে পরিচিত এই শিলাগঠনের যুগকাল ভারতে ৫৭কোটি থেকে ২৪.৫ কোটি বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। মূলতঃ বহিঃ উপদ্বীপীয় অঞ্চলে এই শিলা গঠিত হয়। বিভিন্ন ভূ-তাত্ত্বিক সময়কালে বিস্তৃত শিলাবিন্যাস সমূহের মধ্যে রয়েছে- ক. ক্যামব্রিয়ান সিস্টেম খ. অর্ডোভিসিয়ান সিস্টেম গ. সিলুরিয়ান সিস্টেম ঘ. ডেভোনিয়ান সিস্টেম ঙ. নিম্ন কার্বনিফেরাস সিস্টেম চ. গণ্ডোয়ানা সিস্টেম ছ. উর্ধ কার্বোনিফেরাস সিস্টেম ও জ. পার্মিয়ান সিস্টেম।

ক. ক্যামব্রিয়ান সিস্টেম ভারতে ক্যামব্রিয়ান সিস্টেমের অন্তর্গত সিরিজ গুলি হল- (i) হিমালয়ে সল্টরেও (ii) স্পিটি অঞ্চল ও (iii) কাশ্মীর উপত্যকার শিলা গঠন। ক্যামব্রিয়ান উপযুগের শিলাগঠনে প্রচুর জীবাশ্ম দেখা যায়। শিলাস্তরে প্রবাল, স্পঞ্জ, ফোরামিনিফেরা, গ্যাসট্রোপড, ট্রাইলোবাইট ও ব্র্যাকিওপোড-এর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা যায়। উল্লেখযোগ্য শিলাস্তর সমূহের মধ্যে রয়েছে বেলেপাথর, কোয়ার্টজাইট, শ্লেট, শেল, ডলোমাইট প্রভৃতি।

খ. অর্ডোভিসিয়ান সিস্টেম উত্তর কুমায়ুন সিমলা অঞ্চলে এবং কাশ্মীরের লিডার উপত্যকায় গঠিত হয়েছে। শেল এই সিস্টেমের মুখ্য শিলা।

গ. সিলুরিয়ান উপযুগের শিলা গঠন দেখা যায় হিমাচলের স্পিটি অঞ্চলে, কাশ্মীরের লিডার উপত্যকায়। গ্রীসবাক্ (Griesbach) ও জাসকর (Zaskar) রেঞ্জের লাল চুনাপাথর (Red Crinoidal Limestone) উল্লেখযোগ্য শিলা।

ঘ. ডেভোনিয়ান উপযুগের শিলাবিন্যাস রয়েছে স্পিটি উপত্যকায়, কাশ্মীর ও কুমায়ুন হিমালয়ে। চুনাপাথর ও কোয়ার্টজাইট-উল্লেখযোগ্য শিলা। চুনাপাথরে প্রবাল ও ব্র্যাকিওপড-এর জীবাশ্ম দেখা যায়।

ঙ. নিম্ন কার্বনিফেরাস উপযুগের শিলা কাশ্মীর হিমালয়ের অল্প কয়েকটি স্থানে দেখা যায়। প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম সমৃদ্ধ চুনাপাথর ও শেল সঞ্চয় দেখা যায় এই অঞ্চলে।

চ. গন্ডোয়ানা সিস্টেম এর পাললিক শিলা গঠনে নদী ও হ্রদ সঞ্চয়জাত গঠনের প্রমাণ মেলে এবং এটি উক্ত সময়ের হৈমবাহিক অবস্থাকে নির্দেশ করে। এই শিলায় কয়লা স্তরের উপস্থিতি উক্ত অঞ্চলে ক্রান্তীয় বনভূমির প্রমাণ দেয়। এই সিস্টেম বিস্তৃত রয়েছে উপদ্বীপীয় অঞ্চলের পূর্ব উপকূলের উত্তরাংশে গোদাবরী উপত্যকা থেকে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত। নর্মদা, শোন ও দামোদর উপত্যকায়, মহানদী উপত্যকার দক্ষিণাংশে, কাশ্মীর, অসম, ভূটান হিমালয় পাদদেশীয় অংশে।
উল্লেখযোগ্য কয়লা সঞ্চয় হল বরাকর, ঝরিয়া, রাণীগঞ্জ, পাঞ্চেত, রাজমহল, মহাদেব ও জব্বলপুর সঞ্চয়।

ছ. উর্ধ কার্বনিফেরাস ও জ. পার্মিয়ান সিস্টেম -এ রয়েছে প্রচুর উদ্ভিদ ও প্রানীর জীবাশ্ম। এগুলি হিমালয়ের কুমায়ুন, স্পিটি ও এভারেস্ট অঞ্চলে, কাশ্মীর পাঞ্জাল, সিমলা-গাড়ওয়াল-ক্রল সিরিজে এবং পূর্ব হিমালয় সিকিমে উন্মোচিত রয়েছে।

৪. মেসোজোয়িক যুগ (The Mesozoic Era):
মেসোজোয়িক ভূ-তাত্ত্বিক গঠন সময়কালের বিস্তার ২৪.৫ কোটি থেকে ৬.৬ কোটি বছর পর্যন্ত। ট্রায়াসিক, জুরাসিক ও ক্রিটেশাস উপযুগ জুড়ে এই ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের বিস্তার।

(i) ট্রায়াসিক সিস্টেম হল মেসোজোয়িক-এর প্রাচীনতম উপযুগ। এই সময়কাল উদ্ভিদ ও প্রানীর বৈচিত্রে সমৃদ্ধ ছিল তার প্রমান পাওয়া যায় অসংখ্য প্রকার জীবাশ্ম থেকে। অমেরুদন্ডীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্র্যাকিওপড (Brachiopods), মোনয়েড (Ammonoids), ক্লিনয়েড (Crinoids) একিনয়েড (Echinoids), সেরাটাইট (Ceratites) প্রমুখ। মেরুদন্ডীর মধ্যে মৎস্য উল্লেখযোগ্য।
ভারতে ট্রায়াসিক সিস্টেম-এর ভূ-তাত্ত্বিক গঠন হল স্পিটি-র লিলাং সিস্টেম (Lilang System), উত্তর কুমায়ুন, কালাপানি চুনাপাথর ইত্যাদি।

(ii) জুরাসিক সিস্টেম-এর শিলা গঠনের নিদর্শন স্পিটি শেল, কুমায়ুনের লাপটাল সিরিজ (Laptal series)-এ, এভারেস্ট অঞ্চলে, গারোয়াল অব-হিমালয় এবং পশ্চিম ভারতে রাজস্থান ও গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে। এতদ অঞ্চলের সমুদ্র মধ্য থেকে উত্থান-এর প্রমান দেয় জুরাসিক সিস্টেম ভূতাত্ত্বিক গঠন।

(iii) ক্রিটেশাস সিস্টেম (Cretaceous System)-এর ভূ-তাত্ত্বিক গঠন দেখা যায় হিমালয় পর্বতশ্রেণিতে, তিব্বতের মধ্যভাগে, কচ্ছ অঞ্চলে, নর্মদা উপত্যকায়, দক্ষিণ ভারতের তিরুচিরাপল্লী, রাজমুন্দ্রি প্রভৃতি অঞ্চলে। চুনাপাথর, শেল ও বেলেপাথর উল্লেখযোগ্য শিলাস্তর। এই সময়ের সামুদ্রিক সঞ্চয়ের নিদর্শন মেলে শিলার মধ্যে প্রোথিত জীবাশ্মে।
মেসোজোয়িক যুগের সমাপ্তিপর্বটি উল্লেখযোগ্য হল এই সময়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উদ্‌গীরিত লাভার সঞ্চয়। ভারতের দক্ষিণ, পশ্চিম ও মধ্যভাগে এই লাভার ব্যাপক সঞ্চয় ঘটে। প্রায় ৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ব্যাসল্ট গঠিত মালভূমি অঞ্চলের সৃষ্টি হয় ও ডেকানট্রাপ গঠিত হয়। এর গভীরতা অনেকক্ষেত্রে ২ কিলোমিটারের বেশি।
আগ্নেয় শিলাস্তরে উল্লেখযোগ্য ও মূল্যবান খনিজ সঞ্চয়ের মধ্যে রয়েছে কোয়ার্টজ, এমেথিস্ট, এগেট, ওনিক্স (Onyx) ও জেমস্টোন সমূহ।

৫. সেনোজোয়িক যুগ- সেনোজোয়িক ভূ-তাত্ত্বিক গঠন-এর সময়কাল ৬.৬ কোটি বছর পূর্ব থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত। এর অন্তর্গত (i) টার্শিয়ারী, (ii) এয়োসিন, (iii) ওলিগোসিন, (iv) মায়োসিন (v) প্লায়োসিন ও (vi) প্লায়েস্টোসিন সিস্টেম সমূহ।

(i) টার্শিয়ারী উপযুগে ভারতে হিমালয় পর্বতোত্থান শুরু হয়। ডেকানট্রাপ অঞ্চলের আগ্নেয় কার্যকলাপও এই সময় চালু ছিল। জম্মু, পাঞ্জাব, অসম প্রভৃতি হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চল, সল্টরেঞ্জ ও পাটওয়ার মালভূমি প্রভৃতি হল টার্শিয়ারী উপযুগের ভূ-তাত্ত্বিক নিদর্শন।

টার্শিয়ারী ভূ-তাত্ত্বিক ক্রম বিস্তৃত হয়েছে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, পূর্ব উপকূল এবং আন্দামান দ্বীপ ভূখণ্ডে। এছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে পশ্চিম উপকূল, কেরালা, কর্ণটিকে, গুজরাট উপকূলে। উল্লেখযোগ্য খনিজ সঞ্চয় হল পেট্রোলিয়াম ও কয়লা।

(ii) এয়োসিন (Eocene) সিস্টেমের ভূতাত্ত্বিক গঠন দেখা যায় কাশ্মীরে, হিমাচল প্রদেশের সিমলায়, রাজস্থানে, গুজরাট ও অসমে, তামিলনাড়ুর কাবেরী ও পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা অববাহিকা প্রভৃতি অঞ্চলে।

(iii) ওলিগেসিন সিস্টেম উপস্থিত রয়েছে রাজস্থানে, গুজরাটের কচ্ছ, তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকায়, হিমাচলপ্রদেশের সিমলা হিমালয়, অসম প্রভৃতি অঞ্চলে।

(iv) মায়োসিন সিস্টেমও উপস্থিত কচ্ছ, কাবেরী অববাহিকা, সিমলা, অসম ও রাজস্থানে।

(V) প্লায়োসিন সিস্টেমও উক্ত অঞ্চলসমূহের অনেকাংশে দেখা যায় এবং এই সিস্টেমে প্রচুর জীবাশ্মের স্বাক্ষর রয়েছে।

(vi) প্লায়েস্টোসিন সিস্টেম এর ভূ-তাত্ত্বিক গঠন হল উঃ পঃ ভারতের শিবালিক, অসমের টিপং ও দিহিং (Tipang and Dihing), কাথিয়াওয়ার এর দ্বারকা শিলাস্তর, কচ্ছের খর (Khar), কেরালার ভারকালা স্তর (Varkala Beds), অস্ত্রপ্রদেশের রাজমুন্দ্রি বেলেপাথর ও তামিলনাড়ুর কুড্ডালোর বেলেপাথর শিলাস্তর ইত্যাদি। সিন্ধু-গাঙ্গেয় উপত্যকায় উর্বর পলি সঞ্চয়ও ঘটেছিল এই সময়।

উল্লেখযোগ্য খনিজ হল পেট্রোলিয়াম, লিগাইট, কেওলিন, চুনাপাথর, শেল, বেলেপাথর প্রভৃতি।

কোয়াটারনারী (Quaternary) পর্বের ভূ-তাত্ত্বিক নিদর্শন ব্রহ্মপুত্র, কৃষ্ণা, কাবেরী, মহানদী প্রভৃতি নদী অববাহিকার নবীন পলি সঞ্চয় ।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01