welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা(Soils of West Bengal)

পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা(Soils of West Bengal)


পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর তারতম্যে মৃত্তিকার বিন্যাসেও তারতম্য দেখা যায়। প্রধান শ্রেণির মৃত্তিকাগুলো হল-(১) হিমালয় পার্বত্য মৃত্তিকা, (২) পশ্চিমের ল্যাটেরাইট ও লাল দোআঁশ মৃত্তিকা, (৩) সমভূমির পলি মৃত্তিকা এবং (৪) সুন্দরবনের লবণাক্ত মৃত্তিকা।

(১) হিমালয় পার্বত্য মৃত্তিকা: দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এবং জলপাইগুড়ির পাহাড়ী এলাকায় কাঁকর মেশানো অগভীর এই মাটির স্তর পাহাড়ের ঢালে গড়ে ওঠে। সাধারণভাবে অনুর্বর হলেও তৃণ ও পচা পাতার জৈব পদার্থ পচে মাটির উর্বরতা কিছুটা বৃদ্ধি করে। লৌহ-মিশ্রিত এই মৃত্তিকা কিছুটা অম্লধর্মীও। চা, কমলালেবু, আলু প্রভৃতি চাষের উপযুক্ত মৃত্তিকা।

(২) উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের মৃত্তিকাঃ হিমালয় থেকে আগত নদীবাহিত কাঁকর, বালি, পলি ও কাদামিশ্রিত এবং সচ্ছিদ্র। জৈবপদার্থ ও লৌহমিশ্রিত ডুয়ার্স অঞ্চলের মৃত্তিকা চা চাষের উপযোগী।

তরাই অঞ্চলের মাটি তিস্তা, মহানন্দা, তোর্সা, জলঢাকা ও তাদের অসংখ্য উপনদীসমূহ হিমালয়ের প্রায় ১০,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে পদার্থ বহন করে এনে হিমালয়ের পাদদেশে ২০০-৩০০ ফুট উচ্চতায় বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে সঞ্চয় করেছে। এই সঞ্চয় বালুময়, জৈব পদার্থের আধিক্য বিশিষ্ট এবং গাঢ় কালো থেকে ধূসর বাদামী বর্ণের। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলায় এক বিস্তৃর্ণ অংশ নিয়ে এই মৃত্তিকা অঞ্চল। হাল্কা গ্রথন ও উচ্চ সচ্ছিদ্রতা এই মাটির বৈশিষ্ট্য। বর্ষায় বৃষ্টি বাড়লে উচ্চ প্রবেশ্যতার কারণে এই মাটি জলসিক্ত হয়ে পড়ে।

ধৌত প্রক্রিয়ার প্রাধান্য ও জৈব পদার্থের আধিক্যে এই মাটি আম্লিক ধরনের (p" ৪.৭-৫.৮) নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সার ব্যবহার করে এই মাটির উর্বরতা বাড়ানো যায়। এটি ধান উৎপাদনের উপযোগী।

(৩) পশ্চিমে ল্যাটেরাইট ও লাল দোআঁশ মৃত্তিকা: পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার পশ্চিমদিকে তরঙ্গায়িত ভূমিতে ল্যাটেরাইট ও লাল দোআঁশ মৃত্তিকার প্রাধান্য। এই অঞ্চলের ভূমিভাগ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা দ্বারা বর্ষায় প্লাবিত হয়। ভূমিভাগের ঢাল যথেষ্ট থাকায় মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা রয়েছে। স্থানে স্থানে মৌচাক গঠন বিশিষ্ট ল্যাটেরাইট স্তর ভূমিদেশের উন্মোচিত থাকে। এই মৃত্তিকায় ক্যালসিয়াম, ফসফেট ও জেব পদার্থের অভাব রয়েছে। উপরের স্তরের মাটি ধৌত প্রক্রিয়ার অভাবে লৌহের অভাবমুক্ত, কিন্তু অন্তঃস্তরে লৌহ জমে থাকে। মাটির p" ৫.৫-৬.৫ অর্থাৎ মাটি অম্লধর্মী।

নাইট্রোজেন, ফসফেট প্রভৃতি সার প্রয়োগে কৃষির উপযোগী হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে অনুর্বর হলেও জলসেচের ব্যবস্থা করলে ধান, আখ, তৈলবীজ ইত্যাদি জন্মায়।

(৪) সমভূমির পলি মৃত্তিকা: উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গে বিস্তৃত দীর্ঘ সমভূমি অঞ্চল নদীর পলিগঠিত। খাদার- নদীর কাছাকাছি অঞ্চল নবীন পলি গঠিত, অত্যন্ত উর্বর। একে খাদার বলে। এই মৃত্তিকা কালসিয়াম সমৃদ্ধ, মুক্ত ক্যলসিয়ামের অবস্থান রয়েছে মাটির পৃষ্ঠস্তরে গভীরে ২-৩ ফুটের মধ্যে। গঙ্গা নদী বাহিত পলল ও কাদার সঞ্চয় ঘটে কারণ নদী ও তার উপনদীগুলি প্রচন্ড বাঁক সৃষ্টি করে প্রবাহকালে প্রায়ই কুল প্লাবিত করে নদীতীরবর্তী নিম্নভূমিগুলিকে পলি দ্বারা ভরাট করে। নাইট্রোজেন সার প্রয়োগে এই মাটিতে ধান ভাল হয়। গাঙ্গেয় নিম্নভূমিতে অবতলভূমি অঞ্চলে মৃত্তিকা ভারী কাদা মিশ্রিত বালু, পলি এবং সূক্ষ স্থল বালির সংমিশ্রণে এই মৃত্তিকা গঠিত এবং বছরের বেশিরভাগ সময় জলপৃষ্ঠ কাছে থাকে বলে এই মাটি কিছুটা আঠালো। তবে, শীতকালে বিশেষতঃ চৈত্র মাসে শুকিয়ে যায় বলে এই মাটি ফেটে যায়।

গঙ্গা নদী গঠিত সমভূমি মৃত্তিকা নবীন পলিমাটি মূলতঃ অত্যন্ত উর্বর। বিভিন্ন গভীরতা বিশিষ্ট পলল সঞ্চয় ঘটেছে। মাটির প্রবেশ্যতা খুব বেশি এবং মৃত্তিকার সু-জলনিকাশিসম্পন্ন। এই মাটিতে সরষে, তরমুজ, আখ, পাট ও শন এবং আমন-আউস ধান ভালো উৎপন্ন হয়।

মৃত্তিকায় সমান পরিমাণে পটাশ ও ফসফেট থাকে, তবে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম। মৃত্তিকায় বালুর ভাগ বেশি থাকায় শিকড় নিম্নে বিস্তার ঘটাতে পারে ভৌমজল সংগ্রহের জন্য।

ভাঙ্গর-নদী-উপত্যকায় কিছুটা দূরে প্রাচীন পলিমাটি অপেক্ষাকৃত কম উর্বর। একে ভাঙ্গর বলে। এই মাটিতে মাঝারি মাত্রায় কাদা ও অন্তস্তরে উচ্চ মাত্রায় চুন থাকে। পৃষ্ঠস্তরথেকে ক্রমাগত ক্যালসিয়ামের সরণে এইরূপ ঘটে। মাটিতে ফসফেট, নাইট্রোজেন ও পটাশের পরিমান অপেক্ষাকৃত কম। সার প্রয়োগে এই মাটিতেও ধান চাষ ভালো হয়। প্রাচীন পলিমাটি কিছুটা বাদামি বর্ণ এবং বালুকা মিশ্রিত। মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ কম। দোঁআশ মৃত্তিকা গঠন এ মাটির বৈশিষ্ট্য। তবে, সূক্ষ বালুকার পরিমাণ কাদামাটির তুলনায় এই মাটিতে বেশি।

ধান, পাট, আখ, তৈলবীজ চাষে এই সমভূমি অঞ্চল সমৃদ্ধ। মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ স্থান নবীন পলি দ্বারা গঠিত।

(৫) সুন্দরবনের লবণাক্ত মাটি: সুন্দরবন অঞ্চলে সমুদ্রের জোয়ারের জল প্রবেশ করে যে সকল জায়গায় সেখানকার মাটি পলি গঠিত হলেও লবণাক্ত। নারকেল ভাল জন্মালেও অন্যান্য ফল চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী নয়। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশে এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পূর্বদিকে উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটিতে লবণতার সমস্যা বেশি। মূলত জোয়ারের জলবাহী সঞ্চয়ে এই মাটি গঠিত। বৃষ্টির জল ধরে রেখে মাটির লবনতা খানিকটা দূর করা যায়। মাটির উপবিভাগ করলে এরূপ দাঁড়ায়-




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01