ভারতের মৃত্তিকা(Soils of India)
মৃত্তিকা যে কোনো দেশের পক্ষেই মূল্যবান সম্পদ। মৃত্তিকার গুণাগুণের ওপর কোন দেশের কৃষিকাজের সাফল্য নির্ভর করে। মৃত্তিকার উর্বরতা নির্ভর করে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ, জলধারণ ক্ষমতার তারতম্য, অম্ল বা ক্ষারকীয়তার পরিমাণ, বালি বা কাদার পরিমাণ ইত্যাদির ওপর। এইভাবে মৃত্তিকার তারতম্যে দেশের কৃষিজ সম্পদেরও যথেষ্ট তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ : ভারতের মৃত্তিকাকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে নিম্নলিখিত ভাবে বিভক্ত করা যায়। যথা-
(১) পলল বা পাললিক মৃত্তিকা : উত্তর ভারতের নদী-বিধৌত বিশাল সমভূমি অঞ্চলে এবং দক্ষিণ ভারতে নদী তীরবর্তী সমভূমিতে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। যেমন- সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের নদীবাহিত পলল সমভূমি। পর্বত বা মালভূমি অঞ্চল থেকে নদী যে সকল শিলাচূর্ণ বয়ে এনে পলল আকারে সমভূমিতে সঞ্চয় করে তাকেই পলল বা পাললিক মৃত্তিকা বলে। দু-ধরনের পলল মৃত্তিকা দেখা যায়- (ক) নদী থেকে দূরে সমভূমির অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশে প্রাচীন পলিমাটিকে 'ভাঙ্গর' (খ) নদীর কাছে নদীর উভয় তীরবর্তী অঞ্চলে গঠিত নবীন পলিমাটিকে 'খাদার' বলে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথীর পশ্চিমে রাঢ় অঞ্চলে প্রাচীন পলিমাটি এবং পূর্বদিকে নবীন পলিমাটি দেখা যায়। প্রাচীন পলিমাটি ভাঙ্গর দীর্ঘকাল ধরে ক্ষয়িত হওয়ায় উর্বরতা কম। এ ছাড়া ধৌত প্রক্রিয়ার ফলে এদের মাঝে মাঝে চুনজাতীয় পদার্থের আধিক্য দেখা যায়। খাদার মৃত্তিকা মূলত নবীন পলিমাটি বলে অত্যন্ত উর্বর, ধান ও পাট চাষের পক্ষে আদর্শ। ভারতের অধিকাংশ কৃষিকার্য পলল মৃত্তিকা অঞ্চলেই হয়ে থাকে। উত্তর ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের অংশবিশেষে অত্যধিক জলসেচের কারণে মাটির নিম্নস্তরের লবণ অনেক সময় শুদ্ধ ঋতুতে কৈশিক প্রক্রিয়ায় উর্ধ্বগামী হয় এবং মাটির উপর এক বিশেষ ধরণের মৃত্তিকার আবরণ সৃষ্টি করে থাকে যাতে লবণের একটি আস্তরণ দেখা যায়। এটি ফসল উৎপাদনের পক্ষে ক্ষতিকর হয়। তবে সাধারণভাবে পলল মৃত্তিকা অঞ্চল অত্যন্ত উর্বর বলে ভারতের অধিকাংশ শস্য উৎপাদন এই অঞ্চল থেকেই আসে।
(২) কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর: দাক্ষিণাত্যের লাভা অঞ্চলে যেমন- মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমে এবং গুজরাট, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে এই মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। এটি প্রধানতঃ লাভাগঠিত ব্যাসাল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। শিলার আবহবিকারের ফলে এরূপ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কৃষ্ণ মৃত্তিকা খুবই উর্বর এবং তুলা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। এই মৃত্তিকার জলধারণ করার ক্ষমতা বেশি বলে কৃষিকাজে জলসেচের বেশি প্রয়োজন হয় না। গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা ইত্যাদি এই মৃত্তিকা অঞ্চলের অন্যান্য ফসল।
(৩) লোহিত মৃত্তিকা: কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলের বাইরে দাক্ষিণাত্যের মালভূমির অধিকাংশ অঞ্চল ছাড়াও পূর্বে সাঁওতাল পরগণা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চলেও লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায়। এই মৃত্তিকায় লোহার ভাগ বেশি বলে মৃত্তিকার রং লাল। বালির ভাগ বেশি বলে মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম এবং ধান, ইক্ষু, তুলা প্রভৃতি চাষ করতে জলসেচের প্রয়োজন হয়। গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ইক্ষু, তুলা, তামাক এই মৃত্তিকা অঞ্চলে উৎপন্ন হয়।
(৪) ল্যাটেরাইট: এই মৃত্তিকা দেখতে ইটের মত লাল বলে (গ্রিক Later ইট) একে ল্যাটেরাইট বলে। পশ্চিমঘাট পর্বতের কর্ণাটক ও মালাবারে অধিক উচ্চতায়, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার স্থানে স্থানে, ছোটনাগপুরের মালভূমির পূর্ব ঢালে ও অসমের পার্বত্য অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এই মৃত্তিকায় বৃষ্টিপাতের ফলে ধৌত প্রক্রিয়ায় সিলিকা মৃত্তিকার নিম্নস্তরে চলে যায় এবং ওপরের স্তরে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। এই মৃত্তিকা কৃষিকাজের প্রায় অনুপযোগী। তবে পলি সঞ্চিত হলে চাষবাস করা যায়। বাড়ি বা রাস্তা তৈরি করতে ল্যাটেরাইটের ব্যবহার দেখা যায়।
(৫) ব-দ্বীপ অঞ্চলের মৃত্তিকা: গঙ্গা, গোদাবরী, কুয়া ও কাবেরী নদীর ব-দ্বীপ নদী-বাহিত সুক্ষ্ম পলল মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। এটি অত্যন্ত উর্বর এবং ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।
(৬) উপকূলের পলল মৃত্তিকা : সমুদ্রোপকূলের সমভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। সমুদ্রজলের প্রভাবে এই মৃত্তিকায় লবণের ভাগ কিছু বেশি এবং ধান চাষের বিশেষ উপযোগী। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় এবং পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলভাগে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। নারকেল ও সুপারি গাছ এই মৃত্তিকায় ভাল জন্মায়।
(৭) মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা: রাজস্থানের শুদ্ধ মরুপ্রায় অঞ্চলে বালুকার ন্যায় এক ধরনের শুষ্ক মৃত্তিকা দেখা যায়। এটি 'সেরোজেম' নামে পরিচিত। উদ্ভিদের অভাবে এতে জৈব পদার্থ কম এবং বৃষ্টির অভাবে মৃত্তিকার লবণ ওপরে থেকে যায়। জলাভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। তবে ভাক্রা-নাঙ্গাল প্রকল্পে খাল কেটে এবং রাজস্থান খালের সাহায্যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বর্তমানে জলসেচের সাহায্যে কৃষিকাজ করা হচ্ছে। গম ও তুলা এই অঞ্চলের প্রধান উৎপন্ন ফসল।।
(৮) তরাই অঞ্চলের মৃত্তিকা: শিবালিক মরু অঞ্চলের মৃত্তিকায় জলাভাবে কৃষিকাজ ব্যহত হয়।
পর্বতের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে হিমালয় থেকে আগত নদীগুলির বালু ও ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড সঞ্চয়ে এই বিশেষ ধরনের মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই মৃত্তিকা আবার দু-প্রকার- (ক) সূক্ষ্ম বালুকাপূর্ণ মৃত্তিকা তরাই এবং (খ) ছোটো প্রস্তরখণ্ডপূর্ণ মৃত্তিকা ভাবর নামে পরিচিত। হিমালয়ের পাদদেশে এক ধরনের সূক্ষ্ম বালুকাপূর্ণ মৃত্তিকা গড়ে ওঠে যা 'তরাই' নামে পরিচিত। ছোটো ছোটো প্রস্তরখণ্ডপূর্ণ হলে এরূপ অঞ্চল 'ভাবর' নামে পরিচিত হয়। নিম্নভূমিতে এরূপ প্রস্তরখণ্ডপূর্ণ অঞ্চলে অনেক নদী এসে তাদের প্রবাহ হারিয়ে জলাভূমি সৃষ্টি করে। ঘাস ও জঙ্গলাকীর্ণ এই অঞ্চল বহু পশুপাখির আশ্রয়স্থল। পশ্চিমবঙ্গে এই অঞ্চলকে 'ডুয়ার্স' বলে। মাটি মোটামুটি উর্বর হওয়ায় এই অঞ্চলে বসতি ও চাষাবাস গড়ে উঠেছে। পর্বত পাদদেশে ঢালু অঞ্চলে ডুয়ার্সে চা-এর চাষ হয়ে থাকে।
(৯) পার্বত্য অরণ্য মৃত্তিকা : হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যের প্রভাবে এই মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে।স্বাভাবিকভাবেই এতে জৈব পদার্থের আধিক্য দেখা যায়। পশ্চিম হিমালয়ে জৈব পদার্থে আম্লিক ভাব (Acidity) বেশি থাকায় (পডজল নামে পরিচিত) কৃষিকাজের অনুপযোগী। পূর্ব হিমালয়ে জৈব পদার্থে অম্লতা কম থাকায় (ধূসর বাদামী অরণ্য মৃত্তিকা নামে পরিচিত) মোটামুটি উর্বর এবং কমলালেবু ইত্যাদি টক রস জাতীয় ফল চাষের উপযোগী। এই অঞ্চলে মাঝে মাঝে ধাপ কেটে ধান চাষ করা হয়।
(১০) পার্বত্য তৃণভূমির মৃত্তিকা : কাশ্মীরের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে এই মৃত্তিকা গড়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত কম বলে অরণ্যের পরিবর্তে তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলে পশুপালন করা হয়। কিছু গম, বার্লি, আলু প্রভৃতির চাষ মাঝারি উর্বর এই মৃত্তিকায় করা হয়।
(১১) হিমবাহ সৃষ্ট মৃত্তিকা : হিমালয় পর্বতের অতি উঁচু অংশে হিমবাহ বাহিত পদার্থ দ্বারা এই মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে। এই মৃত্তিকার উর্বরতা খুব কম এবং কৃষিকাজের বিশেষ উপযোগী নয়। তবে স্থানে স্থানে কিছু বালির চাষ হয়। কাশ্মীরে এই মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়।
ভারতে অর্থনৈতিক কাজকর্মের ওপর মৃত্তিকার প্রভাব:
(১)কৃষিকাজের ওপর মৃত্তিকার প্রভাব: মাটির গুণাগুণের ওপরে নির্ভর করে কৃষিকাজের সাফল্য।গঙ্গা, রহ্মপুত্র, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদী অববাহিকা ও ব-দ্বীপে পলল সমৃদ্ধ উর্বর মৃত্তিকায় কৃষিকাজে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মহানদী উপত্যকা ও ব-দ্বীপ ধান, গম, আখ, পাট, তুলা, তৈলবীজ উৎপাদনে; কৃষ্ণা-কাবেরী-গোদাবরী ব-দ্বীপে ধান, তুলা, আখ, তৈলবীজ, তামাক উৎপাদনে উন্নতি করছে। দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে তুলা চাষে সমৃদ্ধির জন্য কৃষ্ণ তুলা মৃত্তিকা অঞ্চল (Black Cotton Soil Region) নামে পরিচিতি পেয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সমভূমির পলল মৃত্তিকা অঞ্চল পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ ধান উৎপাদক অঞ্চল। নিম্নগঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি (বাংলাদেশ ধরে) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদক অঞ্চল। উপকূলের পলল মিশ্রিত লবণাক্ত মৃত্তিকায় ধান, নারকেল ভাল জন্মে।
(২) বনজসম্পদ সংগ্রহে যেখানে মৃত্তিকা কৃষিকাজের উপযোগী নয় সেখানে বনভূমি অঞ্চল রয়ে গেছে। এখানে কাঠ সংগ্রহ ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। সুন্দরবনের লবণাক্ত মৃত্তিকার ম্যানগ্রোভঅরণ্য, পশ্চিম হিমালয়ের পডজল মৃত্তিকাঞ্চলে সরলবর্গীয় অরণ্য, পূর্ব হিমালয়ের ও মালভূমি অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাঞ্চলে চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী অরণ্য প্রভৃতি এর উদাহরণ।
(৩) পশুচারণে: বৃষ্টিপাত কম এরূপ অনুর্বর মৃত্তিকা অঞ্চল তৃণভূমি হিসেবে থেকে গেছে। এই তৃণভূমিতে পশমের জন্য মেষ (কাশ্মীর), মাংস ও দুধের জন্য গবাদি পশু, মাংসের জন্য মেষ ও ছাগ পালন (দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের মালভূমি অঞ্চলে) করা হয়।
(৪) খনিজ সংগ্রহে ল্যাটেরাইট ও বক্সাইট মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
▲ ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা ও সংরক্ষণ ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা ক্রমবর্ধমান। মৃত্তিকা ক্ষয়ের জন্য নানাবিধ কারণ দায়ী থাকলেও মানুষের কার্যকলাপই মৃত্তিকার চিন্তাজনক হ্রাসের জন্য দায়ী। জনবসতি ক্রমবর্ধমান এবং বহু বনভূমি কেটে ফেলে বসতি বিস্তার করায় ও খাদ্যের যোগান দিতে বহু কৃষিজমি বনভূমি কেটে ফেলে তৈরি করায় মৃত্তিকা ক্ষয় বেড়ে গিয়েছে। মানুষের ক্রিয়া-কলাপের পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই জলধারা কর্তৃক, বায়ুপ্রবাহ কর্তৃক মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হয়। ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা সর্বত্র সমান নয়, তবে রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে এই সমস্যা বিশেষ ভাবে দেখা যায়। ভূমিক্ষয়ের ফলে বহু ছোট বড় নালী বা খাদের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং মাটি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মৃত্তিকার ওপরের আবরণ টপ সয়েল জৈব পদার্থ এবং খনিজে সমৃদ্ধ যা অপসৃত হওয়ায় মৃত্তিকা অনুর্বর হয়ে পড়ে। পশ্চিবঙ্গে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় মালভূমির প্রান্তদেশে ভূমিক্ষয়ের সমস্যা খুব রয়েছে। মৃত্তিকা ক্ষয় সমস্যা রোধের জন্য অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং বনভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে।
যে সকল ব্যবস্থাপনা সংরক্ষণে কার্যকরী হচ্ছে তা হলঃ
১. বনসৃজন- বনসৃজন এর মাধ্যমে গাছের শিকড় গুলো মাটির কণাগুলোকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। এর জন্য প্রতি বছর বনমহোৎসব পালন করা হচ্ছে। সামাজিক বনসৃজন উৎসব হচ্ছে।
২. ভূমি ডাল অনুযায়ী কর্মণ- এটি করা জরুরী, কারণ, ধাপ চাষ মৃত্তিকা ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ করলে মৃত্তিকা ক্ষয় কিছুটা আটকানো যায়।
৩. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ- অনিয়ন্ত্রণ পশুচারণ যাতে না হয় সেদিকে নজর রাখা এবং পশুপালক অধিবাসীদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
৪. অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষছেদন নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। আগে ঠিকাদারি প্রথায় বৃক্ষ কাটার ব্যবস্থা থাকায় বনভূমির ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক। যারা গাছ কাটার বরাত পেতেন সেই বহু ঠিকাদাররা সততার সঙ্গে গাছ না কাটায় অনেক বন অনেক দামী দামী বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়ছিল। বর্তমানে সরকার গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় যৌথ বন ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হয়েছেন। এর ফলে অরণ্য রক্ষার মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় রক্ষনেও সদর্থক ফল পাওয়া যাচ্ছে।
৫. মৃত্তিকা কর প্রবণ ভূমিতে গাছকে আটকে রাখে এরকম শিকড় বিশিষ্ট গাছ উৎপাদন মৃত্তিকা সংরক্ষণে সাহায্য করে।
ভারত সরকারের বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এবং পরবর্তীকালেও বিভিন্ন নদী অববাহিকা প্রকল্পে মৃত্তিকা ক্ষয় নিবারণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মালভূমির পাদদেশ অঞ্চলেও নদী কর্তীত খাদযুক্ত ভূমিভাগগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা। এছাড়া দেশের বহু অঞ্চঞ্চলের মাটি অতিরিক্ত জলসেচের জন্য অথবা সমুদ্রের জল ঢুকে লবণাক্ত হয়ে পড়ায় কৃষিকাজে অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। সেগুলি পুনরুদ্ধার করে কৃষির উপযোগী করার প্রচেষ্টা বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে। বিভিন্ন নদী উপত্যকায় গৃহীত মৃত্তিকা সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোকে কার্যকরী করার লক্ষ্যে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রকল্পের কার্যকারিতার অগ্রগতি নিরূপণ করা ও তদারকি করার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষিজীবীদের বৈজ্ঞানিকভাবে ধাপ চাষ এবং যেসকল অঞ্চলে এখনও ঝুম চাষ বা স্থানান্তর কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত সেখানে স্থানান্তর কৃষিজীবীদের স্থায়ী কৃষিজীবীতে পরিণত করা, অরন্যসংলগ্ন গ্রামগুলিতে অরণ্য যাতে পিছিয়ে না যায় সেজন্য অরণ্য সৃজন করে প্রান্তিক বনভূমি তৈরিতে গ্রামবাসীদের উৎসাহ দেওয়া ইত্যাদি ভারতের মৃত্তিকা সংরক্ষণে সহায়ক হবে।