ক্ষুদ্রায়তন ও কুটির শিল্পোদ্যোগ(Small and Cottage based Industries)
রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগে নিযুক্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের শিল্প পুরানো প্রথায় পরিচালিত হলেও বর্তমানে অনেক উদ্যোগী আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন।
চাল কল: চাল কলগুলি গৃহভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়। সারা রাজ্যের মানুষই আয় এখন মেশিনে ছাঁটা চাল খেতে অভ্যন্ত। আধুনিক চালকলগুলিতে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান থেকে চাল বার করবার পর রাইস ব্র্যান থেকে ভোজ্য তেল এবং অবশিষ্টাংশ থেকে সার ও পশুখাদ্য তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের সর্বত্রই বিশেষ করে বর্ধমান, মুরশিদাবাদ, হুগলি, মালদহ প্রভৃতি জেলায় বেশ কয়েকটি আধুনিক চাল কল স্থাপিত হয়েছে।
তাঁতবস্ত্র বয়ন: কুটির শিল্পের মধ্যে সর্বপ্রধান উদ্যোগ হল তাঁতবস্ত্র বয়ন। পশ্চিমবঙ্গে তন্ত্রজীবীদের সংখ্যা যেমন বেশি, তাদের তৈরি তাঁতবস্ত্রও তেমনি উৎকৃষ্ট মানের। নদিয়া জেলায় শান্তিপুর, ফুলিয়া, হুগলি জেলার ধনেখালি, রাজবলহাট, মেদিনীপুর জেলার অমর্ষি, রামজীবনপুর এবং বাঁকুড়া ও বিন্ধুপুরের তাঁতবস্ত্র বিখ্যাত।
রেশম শিল্প: গুটিপোকা পালন করে রেশম সংগ্রহ করা হয় এবং তা দিয়ে রেশম সুতো প্রস্তুত ও বজ্রবয়ন করা হয়। মুরশিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় রেশমকীট প্রতিপালন, তুঁত গাছের চাষ এবং রেশম উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। মুরশিদাবাদের রেশমবস্ত্রের দেশে-বিদেশে খ্যাতি রয়েছে।
মৃৎ শিল্প: মুর্তি নির্মাণে কলকাতার কুমোরটুলি, কৃমুনগরের ঘূর্ণি এবং বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির কাজ উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের সব জেলাতেই মৃৎশিল্প মূর্তি নির্মাণে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (হাঁড়ি, কলস, ভাঁড়) প্রস্তুতে ব্যাপৃত আছে।
বিড়ি শিল্প: এটি একটি উল্লেখযোগ্য শ্রমনির্ভর শিল্প। রাজ্যের অসংখ্য গ্রাম ও শহরের কয়েক লক্ষ লোক বিড়ি বাঁধার কাজে নিযুক্ত আছে। মুরশিদাবাদ জেলার ঔরঙ্গাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় এই শিল্প উল্লেখযোগ্য।
গুড় শিল্প: আখের রস কিংবা খেজুর ও তালের রস জাল দিয়ে আখের গুড়, নলেন গুড় ও তাল গুড় প্রস্তুত হয়। এ কাজে কয়েক হাজার লোক আংশিক বা পূর্ণ সময়ে নিযুক্ত আছেন।
বিভিন্ন লৌহদ্রব্য: ছুরি, কাঁচি, ছেনি, হাতুড়ি, দা, কাস্তে, নিড়ানি প্রভৃতি লৌহদ্রব্য রাজ্যের সব জেলাতেই কুটির শিল্প মাধ্যমে তৈরি হয়।
স্বর্ণ শিল্প: কলকাতার স্বর্ণ শিল্প ভারতবিখ্যাত। বৌবাজার পশ্চিমবঙ্গের স্বর্ণ শিল্পের মূল কেন্দ্র। বৌবাজার ও সিথি অঞ্চলে স্বর্ণ শিল্পের সঙ্গে লক্ষাধিক শ্রমিক যুক্ত রয়েছে।
প্রকাশনা শিল্প: পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনা শিল্পের মূল কেন্দ্রীভবন ঘটেছে কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলা সংলগ্ন অঞ্চলে। রাজ্যের অধিকাংশ পুস্তক ও সংবাদপত্র এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয়।