welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বসতি[Settlement]

বসতি[Settlement]

ভূমিকা (Introduction):

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই সামাজিক ভাবেই মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সবাস করতে গিয়ে বসতির উৎপত্তি ঘটিয়েছেন। সামাজিক ও মানবীয় ভূগোলের অন্যতম একটি ক্ষেত্র হল 'বসতি ভূগোল' (Settlement Geography)

প্রাচীন অরণ্যভূমি থেকে শুরু করে বর্তমানের নগর সভ্যতার বিবর্তন ও বিকাশ কীভাবে ঘটেছে তা গ্রলোচনা করাই বসতি ভূগোল পাঠের প্রধান উদ্দেশ্য।


সংজ্ঞা (Definition):

The branch of Geography dealing with the study of settlements is known as Settlement Grography.' অর্থাৎ, ভূগোলের যে শাখায় জনবসতি, বাসস্থান বা বসতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাই বসতি ভূগোলের অন্তর্গত।


উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু (Scope and Content):

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য তিনটি বিষয় একান্ত প্রয়োজন। এগুলি হল অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। সামাজিক ভূগোলের অংশ হিসেবে বসতি (Settlement) ভূগোল তাই বর্তমানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানে, কীভাবে বসতির উদ্ভব ঘটে, কীভাবে তার বিবর্তন ঘটে তা আলোচনা করা ও সম্যক জানার জন্য বসতি ভূগোল পাঠ করা একান্ত জরুরি।

বসতি ভুগোলের কেন্দ্রবিন্দু হল মানুষ ও তার আশ্রয়স্থল এবং পরিবেশের সঙ্গে তার পারস্পরিক সম্পর্ক। কোন্ ধরনের পরিবেশে কোন বসতির উদ্ভব ঘটে, কেনই বা তার আকৃতি কিংবা বিস্তারের ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রকৃতি লক্ষ করা যায় তার কারণ অনুসন্ধান করা হয় ভুগোলের এই শাখার। গ্রামীণ কিংবা শহর বসতির কর্মধারা, অবস্থান, বিবর্তন প্রভৃতির সঙ্গে মানুষ ও পরিবেশ কীভারে সম্পর্কিত তা আমরা বসরি ভুগোল পাঠের মাধ্যামে জানতে পারি। কীভাবে আধুনিক নগর, মহানগরের বিবর্তন ঘটেছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ কীভাবে মানুষের বসতিকে প্রভাবিত করছে তার কারণ নির্দেশ করাই আবাসন ভূগোলের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ভূগোলবিদগণ সমগ্র বসতিকে একটি সম্পূর্ণ অংশ হিসেবে বিচার, বিশ্লেষণ করেন। তেমনি গৃহসজ্জা, গৃহের আকার, রাস্তাঘাট, গৃহগুলির অবস্থানের ধরন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। বসতিগুরিত বিন্যাসগত পার্থক্য, সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা এই বিষয় পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। কারণ, বসতির গুণগত মান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটায়। বসতির অধিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যও আমরা জানতে পারি।


বসতি (Settlement):

জীবনধারণের জন্য মানুষের যে তিনটি প্রাথমিক চাহিদার প্রয়োজন, সেগুলি হল- অন্ন, বাসস্থান এবং বস্তু। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্নের পরেই বাসস্থান অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রধানত প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা এবং সামাজিক জীবনের প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। বর্তমান সভ্যতায় জনবসতির যে রূপ আমরা দেখি তা অতীতের বিবর্তিত রূপ।

সাধারণভাবে বসতি বলতে একগুচ্ছ বাসগৃহ (a group of houses)-কে বোঝায়। সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে মানুষ একত্রে বসবাস করে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কোনো অঞ্চলের স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করতে গিয়ে একত্রে কিছু মানুষ বসবাস করলে একটি বসতি গড়ে ওঠে। যৌথভাবে সম্পদ সৃষ্টি করা এবং সম্পদ ব্যবহার করার আকাঙ্ক্ষই বসতি সৃষ্টির প্রাথমিক শক্তি (basic force)। এই কারণে কোনো অঞ্চলে প্রাপ্ত সম্পদের প্রকৃতি এবং ধরনের ওপরে নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কী ধরনের বসতি গড়ে উঠবে।


সংজ্ঞা (Definition):

(৫) ভৌগোলিক Smith-এর মতে, স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য মানুষের তৈরি আবাসস্থলকে বসতি বলা হয়।

(ii) Dicken এবং Pitts (1963 খ্রি.)-এর মতে, ছোটোগ্রাম, গ্রাম এবং শহরের মানুষ এবং আবাসস্থলের সমষ্টিকে বসতি বলে উল্লেখ করা যায়।

(iii) অধ্যাপক Stone বসতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, কোনো এক স্থানে এক কিংবা একাধিক মানুষের বসবাসই হল বসতি।

(iv) ব্লুনহেসের (1947 খ্রি.) মতে, বসতি হল ঘরবাড়ি এবং রাজপথ এই দুই মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে এবং সজ্জারীতির ভূপৃষ্ঠীয় বহিঃপ্রকাশ। (Settlement is the topographic expression of the grouping and arrangement of two fundamental elements-houses and high-ways.)

(v) Finch (1977 খ্রি.)-এর মতে, বসতি বলতে বোঝায় মানুষের বসবাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য নির্মিত গৃহ এবং যাতায়াতের জন্য নির্মিত রাস্তাঘাটের একটি সুসংগঠিতরূপ। সুতরাং, কোনো নির্দিষ্ট একটি সংজ্ঞায় বসতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়া খুবই কঠিন বিষয় বলে মনে হয়।


বসতির বিবর্তন (Evolution of Settlements):

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষের সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, মানুষের সংস্কৃতি চাহিদা ও পরিবেশের প্রভাবেই বসতির বিবর্তন ঘটেছে।

প্রজাতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে কতগুলি সুস্পষ্ট স্তর লক্ষ করা যায়। সেগগুলি আমরা সংক্ষেপে আলোচনা 


(1) ফলমূল সংগ্রহের যুগ (Stage of Food Gathering): মানবসভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ প্রতিভাবে বসবাস করত না। ফলমূল সংগ্রহ, পশু ও মৎস্য শিকার ছিল সেই সময়ের মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রতিভাবে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থান থেকে ঘুরে বেড়াত। অস্থায়ীভাবে কোনো গৃহা কিংবা কোনো লতাপাতা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী বাসগৃহে বাস করত। অল্প সংখ্যক মানুষ তখন প্রভাবে বড়ো অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে খাদ্য এবং পানীয় সংগ্রহ করত। কারণ সম্পদ সৃষ্টি করা কিংবা সম্পদের বাগবিতা বৃদ্ধি করার মতো বুদ্ধি এবং প্রযুক্তি তখনকার দিনের মানুষের আয়ত্তে ছিল ।


(3) কৃষি ও পশুপালনের যুগ (Stage of Agriculture and Animal Domestication): পরবর্তীকালে এর কৃষিকাজ এবং পশুপালন শুরু করে। প্রায় 11,000 বছর পূর্বে নিওলিথিকযুগে (Neolithic Age) মানুষ তারণ্যা পরিত্যাগ করে উর্বরভূমির সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। উর্বর ভূমি থেকে প্রাপ্ত সম্পদের ওপর নির্ভর করে জলসায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। এই যুগ প্রস্তরযুগ রূপেও খ্যাত ছিল। অবশ্য এই যুগে স্থায়ী বসতির উৎপত্তি প্রায় সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। অনেক সমাজবিজ্ঞানীর মতে, নির্দিষ্ট জমিতে কৃষিকাজের প্রচলন থা িবসতি গড়ে ওঠার একমাত্র কারণ। আবার অন্য দিকে কেউ কেউ মনে করেন কৃষি ছাড়াও পশুপালন কাষ্ঠাহরণ মৎস্য শিকার প্রভৃতি কার্যকলাপও স্থায়ী বসতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে।


(3) ধাতুর যুগ (Age of Metals): ধাতুযুগে প্রথমে তামা, পরে ব্রোঞ্জ এবং সবশেষে লোহার ব্যবহার গ্রহয়। এসব ধাতুর ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজের চরিত্র দ্রুত পালটাতে থাকে। জমি পিছু এবং মাথা বন্ধু সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অধিকাংশ মানুষ শস্য উৎপাদনে নিজেদের নিয়োজিত রাখলেও আানা অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। ব্যাবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে উর্বর এইক্ষেত্র অধ্যুষিত অঞ্চলের বুকে কোথাও কোথাও নগর গড়ে উঠতে থাকে। গ্রামীণ বসতিগুলিও নাগরিক গতির নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে লাগল। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনুন্নত বহু গ্রামীণ প্রতি প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং যাতায়াতের অনুন্নয়নের জন্য অপরিবর্তিত থেকে গেল।


(4) শিল্পবিপ্লব এবং শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগ (Phase of Industrial Revolution and Post-Industrialimalation): শিল্পবিপ্লব মানব বসতির বিস্তার এবং চরিত্রের ওপর অত্যন্ত শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার হরছিল। শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে শুরু করল। ফলে স্বল্প সংখ্যক মানুষ আধুনিক সৃষ্টি এবং কলাকৌশলের সাহায্যে অধিক পরিমাণ শস্য উৎপাদনে সমর্থ হল। অধিক সংখ্যক মানুষ শহর



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01