welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের নদ-নদী(Rivers of India)

ভারতের নদ-নদী(Rivers of India)


ভারতের নদ-নদীগুলিকে প্রধানতঃ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ (১) হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদ-নদী যা উত্তর ভারতের নদ-নদী রূপে পরিচিত এবং (২) উপদ্বীপ অঞ্চলের বা দক্ষিণ ভারতের নদ-নদী।

উত্তর ভারতের নদ-নদী:

এই অঞ্চলের নদীগুলির মধ্যে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এই তিনটি নদীই প্রধান।

সিন্দু (২,৯০০ কি. মি.): সিন্ধুনদ তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের ১০০ কি. মি. উত্তরে কতকগুলি প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত অতিক্রম করে ভারতের কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে। কাশ্মীরে সিন্ধু দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে দীর্ঘ পথ প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে এবং অবশেষে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে। ভারতে সিন্ধুর মোট দৈর্ঘ্য ৭০৯ কি. মি.। সিন্ধুর উপনদীগুলির মধ্যে ঝিলাম, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রু এই পাঁচটি নদী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই পঞ্চনদের সবগুলিই পশ্চিম হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে কিছুটা পথ ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিন্দুর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য উপনদী শতদ্রু। পার্বত্য অংশে শতদ্রুর উপত্যকা অতি সংকীর্ণ ও গভীর। শতদ্রু নদীতে ভাকরা-নাঙ্গাল প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। ভারতে শতদ্রুর দৈর্ঘ্য ১০৫০ কি. মি.।

গঙ্গা (২,৫১০ কি. মি.): ভারতের সর্বপ্রধান নদী গঙ্গা। উত্তরপ্রদেশ হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অংশে ৬,৬০০ মি. উচ্চতায় গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী (যা-গঙ্গা নামেও পরিচিত) দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সাথে মিলিত হয়েছে। এই দুটি নদীর মিলিত ধারাই গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়েছে। দেবপ্রয়াগের পর গঙ্গা আরও ৭০ কি. মি. পথ দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নাগাটিম্বা ও শিবালিক পাহাড়কে ছেদ করে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে নেমেছে। হরিদ্বারের পর গঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ববাহিনী হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে মধ্য দিয়ে ১,২০০ কি. মি. পথ অতিক্রম করে দক্ষিণমুখী হয়েছে এবং রাজমহল পাহাড়ের পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে গঙ্গা দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে ওবং অপর শাখা ভাগীরথী-হুগলী নামে প্রবাহিত হয়ে সাগর দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরেই মিলিত হয়েছে। গঙ্গা এই অংশে এক বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে এবং এই ব-দ্বীপ পৃথিবীতে বৃহত্তম।

গঙ্গার সঙ্গে বহু উপনদী এসে মিলিত হয়েছে। গঙ্গার বামতীরে প্রথম উল্লেখযোগ্য উপনদী হল রামগঙ্গা। এলাহাবাদের (প্রয়াগ) নিকট গঙ্গার ডানতীরে অপর একটি উল্লেখযোগ্য নদী হল যমুনা। বারানসীর কিছু পূর্বে গোমতী এবং ঘর্ঘরা (সরযু) গঙ্গার বামতীরে মিলিত হয়েছে। এর কিছু পরেই মধ্যভারতের উচ্চভূমি থেকে আগত শোন নদী গঙ্গার ডানতীরে এসে মিলিত হয়। আরও পূর্বে গঙ্গার বামতীরে পার্টনার কাছে মিলিত হয়েছে গন্ডক। পাটনা ও রাজমহলের মধ্যবর্তী অংশে উত্তরদিক থেকে আরও তিনটি উপনদী বুড়ীগন্ডক, বাগমতী ও কোশী গঙ্গার বামতীরে মিলিত হয়েছে। ভাগীরথী-হুগলীর ডানতীরে পশ্চিম থেকে আগত কতকগুলি উপনদী এসে মিলিত হয়েছে। এদের মধ্যে ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভাগীরথীর পূর্বতীরে বহু শাখ নিদী দক্ষিণে প্রবাহিত। এদের মধ্যে ভৈরব, জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী, গড়াই প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জলঙ্গী নবদ্বীপের কাছে ভাগীরথীর বামতীরে মিলিত হয়েছে।

যমুনা (১,৩০০ কি. মি.): গঙ্গার উপনদীগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য যমুনা। গঙ্গার উৎসস্থলের কিছু পশ্চিমে যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার পশ্চিমে গঙ্গার প্রায় সমান্তরালে ৬৭০ কি.মি. পথ প্রবাহিত হয়ে যমুনা এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সাথে মিশেছে। মধ্যভারতের উচ্চভূমি থেকে আগত চম্বল, সিন্দ, বেতওয়া, ধসন প্রভৃতি যমুনার প্রধান উপনদী।

ব্রহ্মপুত্র (মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কি. মি., ভারতে ৮৮৫ কি. মি.): ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের ১০০ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্বে ৫,১৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চেমায়ুং দুং নামক হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। সাংপো নামে তিব্বতের দক্ষিণ দিয়ে পূর্বদিকে ১.৬৯৫ কি. মি. পথ প্রবাহিত এই নদী নামচাবারওয়ার সংকীর্ণ ও গভীর গিরিখাতের মধ্য দিয়ে হিমালয় পর্বতকে অতিক্রম করেছে এবং ডিহং নামে সাদিয়ার উত্তর প্রান্তে ভারতে প্রবেশ করেছে। এই অংশে উত্তর দিক থেকে ডিবং ও পূর্বদিক থেকে লোহিত এই দুটি নদী ডিহং নদীর সাথে রগ্নকুন্ডে মিলিত হয়েছে। তিনটি নদীর মিলিত ধারাই ব্রহ্মপুত্র। অসম উপত্যকার মধ্য দিয়ে ক্রমাগত পূর্বদিক থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে। এই অংশে উল্লেখযোগ্য উপনদীগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরদিক থেকে আগত সুবণসিরি, কামেং ও মানস এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত বুড়িডিহং, ডিসাঙ, কোপিলি ও ধনসিরি প্রভৃতি। ব্রহ্মপুত্র অসম উপত্যকা অতিক্রম করে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ধুবড়ীর কাছে দক্ষিণে বেঁকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং যমুনা নামে প্রবাহিত হয়েছে। অসমে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রায়ই বন্যা হয়। ব্রহ্মপুত্রের নদীখাতে পলি ও বালি সঞ্চিত হয়ে বহু চড়ার সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে মাজুলির বালুচর ভারতে বৃহত্তম।

দক্ষিণ ভারতের নদ-নদীঃ

দক্ষিণ ভারতের নদ-নদীগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) বঙ্গোপসাগরে পতিত পূর্ববাহিনী নদী ও [২] আরব সাগরে পতিত পশ্চিমবাহিনী নদী।

[১] পূর্ববাহিনী নদীঃ

মহানদী (৮৪২ কি.মি.): সাতপুরা পর্বতের অমরকন্টকের কাছ থেকে মহানদী উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বৈতরণী ও ব্রাহ্মণী মহানদীর দুটি প্রধান উপনদী।

সুবর্ণরেখা (৪৩৩ কি. মি.): ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বিহার ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বালেশ্বরের কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদীর উচ্চপ্রবাহে রাঁচীর কাছে হুডু জলপ্রপাত বিখ্যাত।

গোদাবরী (১,৫৬২ কি. মি.): দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলে অভিহিত গোদাবরী পশ্চিমঘাট পর্বতে ১,৬০০ মিটার উচ্চতায় উৎপন্ন হয়ে মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্র প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রাজমুদ্রির কাছে গৌতমী, বশিষ্ঠ ওবং বৈতনেয় এই তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে অবশেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ইন্দ্রাবতী, প্রাণহিতা ও মন্ত্রিরা উল্লেখযোগ্য উপনদী।

কৃষ্ণা (১,৪০০ কি. মি.); কৃষ্ণা নদী উৎপন্ন হয়েছে মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর নামক শৈলশিখর থেকে। কৃষ্ণা পূর্ববাাহিনী হয়ে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও অস্ত্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কৃষ্ণার উপনদী ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, বেদবতী উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণা নদীর মোহনায় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।

কাবেরী (৮০৫ কি. মি.): কাবেরী নদী কর্ণাটক রাজ্যের কুর্গ জেলার ব্রহ্মগিরি (১,৩৪১ মি.) পাহাড়ে উৎপন্ন হয়ে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কাবেরী নদীর শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য। হিমবতী, বেদবতী, সিমসা ও ভবানী কাবেরীর উপনদী। কাবেরী মোহনায় ব-দ্বীপ রয়েছে।

পূর্ববাহিনী অন্যান্য নদীগুলির মধ্যে পেন্নার, পালার, তাম্রপণী, ভাইগাই প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই নদীগুলির দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে কম।

[২] পশ্চিমবাহিনী নদীঃ

নর্মদা (১,৩১২ কি. মি.): অমরকন্টক (১,০৫৭ মি.) পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্য অবস্থিত গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ভারুচ বন্দরের কাছে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে। নর্মদা জব্বলপুরের কাছে মার্বেল পাহাড় ভেদ করে গভীর খাদ কেটে প্রবাহিত হয়েছে। এই পাহাড় থেকে নামার সময় নর্মদা সুন্দর একটি জলপ্রপাতের (মার্বেল ফলস) সৃষ্টি করেছে।

তাপী বা তান্তী (৭২৪ কি.মি.): মহাদেব পাহাড় (৭৬২ মি.) থেকে উৎপন্ন হয়ে সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমে সুরাটের কাছে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে।

সবরমতী (৪১৪ কি. মি.): আরাবল্লী পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে গুজরাট সমভূমির মধ্য দিয়ে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে।

লুনি (৪৫০ মি.) ভারতের মরু অঞ্চলের একমাত্র উল্লেখযোগ্য নদী। রাজস্থানের আজমীরের দক্ষিণ-পশ্চিমে নাগ পাহাড়ের কাছে আনাসায়ার হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে বালতোরার কাছে হঠাৎ দক্ষিণে বেঁকে কচ্ছের রণে পড়েছে। বর্ষা ছাড়া অন্য সময় লুনির জল কচ্ছের রণে পৌঁছাতে পারে না।

পশ্চিম উপকূলে পতিত অন্যান্য নদীগুলির মধ্যে উত্তরে কঙ্কণে রয়েছে বৈতর্ণ, উলহাস, বশিষ্ট ও সাবিত্রী এবং উত্তর কর্ণাটকে সরাবতী, কালিন্দী, সরস্বতী ও নেত্রবতী বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01