Risley -কৃত ভারতের জনজাতির শ্রেণীবিভাগ (Risley's Classification of Indian Races)
স্যার Risley ছিলেন ১৯০১ সালের ভারতের সেন্সাস এর সুপারিনটেনডেন্ট এবং তিনি ভারতের চমৎকার জাতি- বিন্যাস করেন।
১. ইন্দো-আর্য (Indo-Arian)- ইন্দো-আর্য উপজাতি ভারতে মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল, বর্তমানে তারা জম্মু কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও রাজস্থানে বসবাস করে। লম্বা, দীর্ঘবাহু, চওড়া কাঁধ, সুগঠিত দীর্ঘদেহী, পরিষ্কার গাত্রবণ, উন্নত নাসিকা তাদের বৈশিষ্ট্য।
২. দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী- এরা দক্ষিণ ভারতে বসবাস করেন। অস্ত্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কেরালা প্রভৃতি রাজ্য ছাড়াও ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণভাগ, ওড়িশা ও রাজস্থানের দক্ষিণ ভাগে এাদের দেখা যায়। নীলগিরির টোডাগণ, বস্তারের গোল্ড উপজাতি, ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল উপজাতি, রাজস্থানের ভিল ইত্যাদি দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী, এর উত্তরসুরী। তারা আর্যগণের আগমনের পূর্ব থেকেই ভারতবর্ষে রয়েছেন এবং পরবর্তীকালে আর্যদের সঙ্গে সংমিশ্রণে নতুন প্রজন্ম আর্বিভাব হয়।
৩. মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠী- হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে দেখা যায়, জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখ থেকে সিকিম হয়ে উত্তর পূর্ব পাহাড়ি রাজ্য অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে দেখা যায়। এরা অপেক্ষাকৃত খর্বকায়, হরিদ্রাভ গাত্রবর্ণ, মুখাবয়ব চ্যাপ্টা, বাঁকা চোখ ও কিছুটা চাপা নাকবিশিষ্ট। দাজিলি-এর লেপচা, সিকিমের ভুটিয়া উপজাতিগণ মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠী।
৪. আর্য দ্রাবিড়- আর্য-দ্রাবিড়দের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এই জনগোষ্ঠী রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে মূলত দেখা যায়। এরা হালকা বাদামী থেকে কৃষণদ্বর্ণ গায়ের রঙ এবং লম্বা মুখবয়ব, আকৃতিতে খর্বকায় ও মাঝারি উচু নাসিকা এদের বৈশিষ্ট্য।
৫. মোঙ্গল-দ্রাবিড়- এই জনগোষ্ঠী মঙ্গালয়েড এবং দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে উদ্ভূত। পশ্চিমবঙ্গ ও গুড়িশায়, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায়। এদের চওড়া মস্তক, গাত্রবর্ণ চাপা, চ্যাপ্টা নাক এবং মাঝারি থেকে খর্বকায় গঠন ও ঘন চুলবিশিষ্ট এরা।
৬. সিথো-দ্রাবিড় এরা সিথিয়ান ও দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে উদ্ভূত। এরা, মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে এসেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। ভারতে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশে এদের বসবাস। উচ্চবর্ণের মধ্যে সিথিয়ো বৈশিষ্ট্য এবং নিম্ন বর্ণের মধ্যে দ্রাবিড় নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট। লক্ষণীয়। মহারাষ্ট্রের মারাঠা জনগোষ্ঠী সিথিয়ান-দ্রাবিয়ান নৃ-তাত্ত্বিক জাতিভুক্ত। এদের দীর্ঘ মস্তক, খর্বকায় মাঝারি নাক, হালকা বাদামি থেকে পরিষ্কার গাত্রবর্ণ রয়েছে।
৭. তুর্ক- ইরানিয়ান ইরানিয়ান গোষ্ঠী বর্তমানে ভারতবর্ষে নেই বলা চলে। অভিবক্ত ভারতে ভারতীয় উপমহাদেশে বালুচিস্তান ও আফগানিস্তানে এদের বসবাস। পাঠান জনগোষ্ঠী তুর্ক ইরানিয়ান বংশভুক্ত। সুগঠিত শরীর, দীর্ঘদেহী, পরিষ্কার গাত্রবর্ণ এবং মাঝারি থেকে উন্নত নাসিকা এদের বৈশিষ্ট্য।