ভূ-প্রকৃতি ও ভূ-তত্ত্ব (Relief and Geology)
পশ্চিমে মধ্য হিমালয় বা নেপাল হিমালয় ও পূর্বে ভুটান হিমালয়ের মধ্যবর্তী অংশে দার্জিলিং হিমালয় অবস্থিত।
ভূতত্ত্ব (Geology)
দার্জিলিং হিমালয় পাললিক শিলাস্তর গঠন মধ্যে রয়েছে গ্রানাইট নীসের উদ্বেধ। এই অঞ্চলের ৩টি ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ।
১. শিবালিক অবহিমালয় (The Siwalik Sub-Himalaya) টার্সিয়ার যুগে শিবালিক স্তর গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে বেলেপাথর, কাদাপাথর, সিল্টস্টোন প্রভৃতি। শিবালিকের উত্তরে রয়েছে গন্ডোয়ানা কয়লা বাহিস্তর, বেলেপাথর এবং কিছু চুনাপাথর।
অবহিমালয় মধ্যে তরাই ও পাদদেশীয় অঞ্চল প্রায় অনুভূমিক অসংগঠিত বালি, পলি, নুড়ি প্রভৃতির স্তর। এটি শিবালিক সঞ্চয়ে গঠিত। শিবালিক শিলাস্তরের নতিকোন ৩০০ থেকে ৬০০-এর মধ্যে।
২. দামুদা সিরিজ (Damuda Series) স্থূল দানা বেলেপাথর, কোয়ার্টজাইট, শেল ও স্লেট শিলাগঠন এই সিরিজের অন্তর্গত। নিম্ন গন্ডোয়ানা কয়লাবাহী স্তর দামুদা সিরিজের অন্তর্গত। চ্যুতি অঞ্চল এখানে প্রায় ৬০০-৭০০ খাড়া কোনে উত্তরদিকে নেমে গেছে। এই চুতিরেখা অনেকটাই হিমালয়ের প্রধান সীমানাচ্যুতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। স্কুলদানা বেলেপাথর এবং কোয়ার্টজাইট, শেল, স্লেট ও কয়লাস্তর এই সিরিজের বৈশিষ্ট্য। তিস্তা উপত্যকা বরাবর এটি সর্বাধিক ২.৫ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং গভীরতা সর্বাধিক ১০০০ মিটার।
৩. ডালিংসিরিজ (Daling Series) আরো উত্তরে দার্জিলিং নিস-এর জায়গা করে নিয়েছে প্রাক-ক্যাম্বিয়ান ডালিং সিরিজের শিলাস্তর। স্লেট, ফিলাইট, মাইকা-সিস্ট ও নীস নিয়ে প্রধানতঃ গঠিত এই সিরিজ। ভূমিরূপ এখানে প্রায় খাড়াভাবে উত্তরদিকে নেমে গেছে।
দার্জিলিং নীস রয়েছে অধিকাংশ অঞ্চলে। অধিক উচ্চতায় নীস প্রায়শই দেখা যায়। দার্জিলিং জাতীয় সড়ক বরাবর এই নীস বহু স্থানে দেখা যায়। শিলাস্তরের নতিকোন মোটামুটি ৪০০ থেকে ৭০০-এর মধ্যে। রূপান্তর প্রক্রিয়ায় এগুলি খুবই পত্রায়িত হয়েছে।
ভূপ্রকৃতি (Physiography)
হিমালয় পর্বত সমতল থেকে দ্রুত উচ্চতা লাভ করেছে। সমতলের মাত্র ১৫০মিটার সমন্নতিরেখার উঃ পঃ-এ এটি সান্দাকফুর কাছে ৩৬৩০ মিটার সমোন্নতিরেখার মান অতিক্রম করেছে। দুটি শৈলশিরা (Transverse Range) উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত হায়ে পশ্চিমে সিংগলিলা ও পূর্বে ডংকিয়াকে প্রায় বেষ্টন করে রেখেছে। এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ভূ-তত্ত্ব ও ভূমিরূপ প্রক্রিয়ার পরস্পরিক ক্রিয়ায় এক বিশিষ্ট ররূপ পেয়েছে। অসংখ্য ছোটো বড় নদী বিন্যাস অঞ্চলটিকে কর্তৃত করে অতি বন্ধুর করেছে। শৈলশিরা ও উপত্যকার সমন্বয়ে ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় ও শোভামণ্ডিত ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে।
সমগ্র অঞ্চলটিকে ক. তিস্তার পশ্চিম দিকের পার্বত্য অঞ্চল ও খ. তিস্তার পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়।