welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আদিবাসী জনজাতির সমস্যা (The Problems of Tribal Population)

আদিবাসী জনজাতির সমস্যা (The Problems of Tribal Population)


ভারতবর্ষে আদিবাসী জনজাতি এখনও জনজীবনের মূলস্রোত থেকে প্রায়শই বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার মধ্যে ভারতীয় উপজাতি সমাজের জীবনচক্র সংঘটিত হয়। ভারতের উপজাতি সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি বহুবিধ। নিম্নে এগুলি আলোচনা করা হল।

অর্থনৈতিক সমস্যাদি (Problems related to Economy):

• (১) জীবিকার সমস্যা (Problems of means of livelihood): ভারতীয় আদিবাসীরা মূলত অরণ্যের সন্তান। কোন কোন উপজাতি বনের ফলমূল সংগ্রহ করে। কোন কোন উপজাতি বন পরিষ্কার করে অথবা বনের ফাঁকা জমিতে কৃষিকাজ করে খাদ্য উৎপাদন করে। কিন্তু বর্তমানে অরণ্য হ্রাস পাওয়ায় এবং নতুন করে অরণ্য ছেদনে বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই উপজাতিদের অরণ্য থেকে জীবিকা সংগ্রহের সুযোগ প্রায় চলে গেছে।

কিন্তু অরণ্যের বাইরে কৃষিজমির অভাবে, সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরী শিক্ষার অভাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলধন ও নৈপুণ্যের অভাবে উপজাতি সমাজের কাছে জীবিকার সমস্যা প্রবলাকার ধারণ করেছে।

• (২) ভূমিহীনতা (Landlessness): ভূমিহীনতা থেকে জীবিকার সমস্যা সৃষ্ট হলেও ভূমিহীনতার অন্যান্য সমস্যাও রহিয়াছে। অনিশ্চিত বাস্তুভিটা, বাইরে থেকে খাদ্য ক্রয় করবার ক্ষমতার অভাবে উপজাতি সমাজের দৈনন্দিন জীবনযাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের আদি বাসিন্দা অর্থাৎ আদিবাসীরা ভূমিপুত্র হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে তাদের অধিকাংশই ভূমিহীন, দিনমজুর। কেউ কেউ এখনও সংগ্রাহক জীবনযাত্রায় নিযুক্ত। ভূমিসংস্কার আইন সংশোধন করে ভূমির পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যে সরকার কিছুটা উদ্যোগী সহজ ও সরল আদিবাসীদের মধ্যে এখনও প্রবল। আদিবাসীদের বন্ধনা, অশিক্ষা ও অজ্ঞতা দূর করতে না পারলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

 • (৩) সঠিক প্রকল্প রূপায়ণের অভাব (Lack of implementation of proper planning): উপজাতি উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশ ও মানুষ এই দুই-এর স্বাভাবিক সম্পর্কের উপর নির্ভর সুর পরিকল্পনার রূপায়ণ প্রয়োজন। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির অভিযোজনের স্বাভাবিক সম্পর্কটি পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ প্রয়োজন। সাধারণ পরিকল্পনা বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা উপজাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। যেমন, যেখানে অধিকাংশ উপজাতি ভূমিহীন, সেইস্থানে ভূমিহীনতার সমস্যা দূর না করে কেবল উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কৃষি ঋণ দিলেই উপজাতি উন্নয়ন সম্ভব হবে না। সেইস্থানে ভূমিসংস্কার বা ভূমির পুনর্বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। আবার ভূমির পুনর্বণ্টনের নামে কৃষির অযোগ্য, অনুর্বর, কাঁকরময় জমি উপজাতি মানুষদের হাতে তুলে দিলেও তাদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

• (৪) অশিক্ষা (Illiteracy): উপজাতীয়দের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। যদিও বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উপজাতি জনগণের শিক্ষার জন্য বহু কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু ভাষাগত কারণে, দারিদ্রের জন্য, মাদকাশক্তির কারণে, সচেতনতার অভাবে তাদের শিক্ষার হার খুব একটা বৃদ্ধি করা যায়নি। বস্তুত সমস্যার মূলে যে অভাব, দারিদ্র্য তা দূর করতে না পারলে, শিক্ষার দিকে তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করা বেশি সংখ্যায় সম্ভব নয়। স্ত্রী-পুরুষ নাবালক নির্বিশেষে যাদের সারাদিন পরিশ্রম করেও দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান সব সময় সম্ভব হয় না, তারা বিদ্যালয়ে পড়তে যাবার আগ্রহ বা সময় পাবে কীভাবে?

বৃত্তিমূলক বা হাতে কলমে শিক্ষা, পিতামাতার বুটি-রোজগারের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করবার পাশাপাশি আদিবাসী অঞ্চলে বিদ্যালয় স্থাপন, আদিবাসী ছেলেমেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভারের দায়িত্ব সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।

• (৫) অপুষ্টি ও স্বাস্থহীনতা (Malnutrition and ill-health): পুষ্টিহীন খাবার, অর্ধাহার,অনাহার আদিবাসীদের নিত্যসঙ্গী। সুষম খাদ্য তারা পায় না। সুচিকিৎসারও অভাব রয়েছে। ফলস্বরূপ অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যহীনতা বর্তমান প্রজন্মের আদিবাসীদের মধ্যে এক কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বনির্ভরতা প্রকল্পের রূপায়ণ, বাস্তবমুখী আর্থিক প্রকল্প গ্রহণ, চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি, ইত্যাদি এই সমস্যার সমাধানে কার্যকরী হতে পারে।

• (৬) উপজাতি অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব (Lack of communication with tribal areas): ভারতে উপজাতি সমাজের সহায়সম্বলহীনতা ও অপেক্ষাকৃত উন্নত সমাজের চাপে তারা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে সরে গেছে। উন্নত সমাজের সঙ্গে অভিযোজনে অক্ষমতা বা উন্নত সমাজের অবজ্ঞার মনোভাব তাদের অবচেতন মনে যে একাকীত্ব বোধ তৈরি করে তা তাদের কিছুটা দূরত্বে ঠেলে দেয়। ফলস্বরূপ, একদিকে যেমন উন্নত সড়কপথের অভাবে তারা আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে, তেমনি তথাকথিত সভ্য সমাজের মধ্যে থেকেও মানসিক দিক থেকে তারা এখনও অনেকাংশে সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

আদিবাসী অঞ্চলগুলিকে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা দ্বারা যুক্ত করতে দেশব্যাপী একটি সুসংবদ্ধ পরিকল্পনা কার্যকরী হতে পারে। সৌভ্রাতৃত্বের বাতাবরণ ও সহমর্মিতা আদিবাসীদের মানসিক দূরত্ব ঘোচাতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01