welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের অধিক জনসংখ্যার সমস্যা (Problems of overpopulation in India)

 ভারতের অধিক জনসংখ্যার সমস্যা (Problems of overpopulation in India)


দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সেই দেশের জনসংখ্যার আয়তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ভারতের জনসংখ্যা অধিক, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও অধিক। ফলে দেশের উন্নয়নের হার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারছে না।

ভারতের জন্মহার অধিক, মৃত্যুহার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চ জন্মহার এবং ক্রমহ্রাসমান মৃত্যুহার ভারতে প্রকৃতপক্ষে জনবিস্ফোরণ (Population explosion) ঘটিয়েছে। জন্মহার কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। অন্যদিকে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কারণে শিশু মৃত্যু ও প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

1. নিম্ন উৎপাদন হার (Low Production rate): ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জনসংখ্যা দেখলে দেখা যায়, জন্মহার অধিক হওয়ায় মোট জনসংখ্যা অধিক। আবার মোট জনসংখ্যার মধ্যে শিশু ও কিশোরদের সংখ্যা অধিক। শিশু এবং কিশোরেরা উৎপাদনে যুক্ত থাকতে পারে না। ফলে দেশে মাথাপিছু উৎপাদন এবং মাথাপিছু আয় কম হয়। এর ফলে দেশের আর্থিক উন্নতির হার ব্যাহত হয়।

2. বেকারিত্ব (Unemployment): ভারতের অধিক জনসংখ্যার কারণে বেকারি একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিল্প বিকাশের হারের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনো সংগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির অভাবে অধিক বেকারি ভারতীয় অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।

3. ছদ্মবেকারিত্ব (Disguised unemployment): ভারতের জনসংখ্যা অধিক। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বহু কর্মক্ষম মানুষ এমন সব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদেরকে নিযুক্ত করতে বাধ্য হয়, যা যথেষ্ট লাভজনক নয়। ভারতের কৃষিক্ষেত্রে ছদ্মবেকারি বেশি লক্ষ করা যায়। একখণ্ড জমিতে পরিবারের সকল কর্মক্ষম সদস্য সফল উৎপাদনের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে। কিন্তু ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্পায়নের বিস্তৃতি ঘটলে কৃষিতে নিয়োজিত মানুষ শিল্প কিংবা ব্যাবসাবাণিজ্যে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারত।

4. দারিদ্র্য ও অপুষ্টি (Poverty and Malnutrition): ভারতের অধিক জনসংখ্যা এই দেশের দারিদ্রদ্র্য ও অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। ভারতে মাথাপিছু আয় কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪০% দারিদ্রদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করে। দরিদ্র মানুষজন চিকিৎসার সুযোগ পান না। নানাবিধ অসুখ-বিসুখে ভোগেন।

5. শ্রমনিবিড় উৎপাদন (Labour intensive production): অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে মূলধনী দ্রব্য (Capital goods), যেমন- যানবাহন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির জোগান হ্রাস পায়। সেক্ষেত্রে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদনের পরিবর্তে শ্রমনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণমান ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। ভারতবর্ষে শিল্পে এবং কৃষিতে এখনও শ্রমনিবিড় (Labour intensive) কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থা বিদ্যমান।

6. মূলধন গঠনের নিম্নহার (Low rate of Capital Accumulation): অধিক জনসংখ্যার কারণে ভারতে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান প্রভৃতি খাতে জাতীয় আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করতে হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি আপাত উৎপাদক খাতে ব্যয় বেশি হতে থাকলে, দেশে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ হ্রাস এবং বিনিয়োগ ও মূলধন গঠনের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

7. উচ্চ শিশুমৃত্যুর হার (High infant death rate): দারিদ্র্য এবং অপুষ্টির জন্য ভারতে শিশুমৃত্যুর হার অধিক লক্ষ করা যায়। শহর অপেক্ষা গ্রামাঞ্চলের মধ্যেই শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলে অত্যধিক দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, অপুষ্টি এবং বিভিন্ন জটিল রোগের প্রভাবে শিশু মৃত্যুর হার বেশি হয়। হাসপাতাল ও চিকিৎসার অন্যান্য পরিকাঠামোর অভাবও শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01