welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জনসংখ্যা ও সম্পদে ভারসাম্যের সমস্যা (Problem of Balance of Population and Resource):

জনসংখ্যা ও সম্পদে ভারসাম্যের সমস্যা (Problem of Balance of Population and Resource):


সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে থাকলে জনসংখ্যা ও সম্পদে ভারসাম্য নষ্ট হয়। বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ পড়ে কৃষিজমির ওপর, বাড়ে দারিদ্র ও বেকারত্ব, সমস্যা হয় বাসস্থানের। খাদ্যের যোগানে ঘাটতি পড়ে।

1. ভূমিহীনতার সমস্যাঃ ভারতের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি প্রকট। ভারতের জমির ব্যক্তিগত মালিকানা থাকায় জমির পরিমাণ স্থির থাকলে পরিবারের সদস্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনপ্রতি জমির পরিমাণ উত্তরাধিকার সূত্রে হ্রাস পায়। কৃষিজমি হয় খণ্ডিত, ক্ষুদ্রাকৃতি। কৃষিজমির বন্টনে অসাম্য থাকায় ভূমিহীন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। আবার জনসংখ্যা বাড়ার ফলে বহু কৃষিজমি বাস্তুজমিতে পরিবর্তিত হয়। পৌর জনসংখ্যার বৃদ্ধি নগরায়নের বিস্তুর ঘাটায় গ্রামের কৃষি জমির সংকোচন ঘটিয়ে। ফলে কৃষিজমির পরিমাণও কমে। দেশের এক চতুর্থাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। গ্রামীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও বেশি। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সৃষ্টি করে এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ভূমিহীন জনসংখ্যা। কৃষিকার্যের উন্নয়নের সুফল বোঝা যায় না, কারণ হেক্টর পিছু কৃষি উৎপাদন বাড়লেও কৃষি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনপ্রতি উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পায় না। কখনও তা হ্রাস পায়।

এই সমস্যা নিরসনকল্পে ভূমির পুনর্বণ্টন (Re-distribution of land-holdings) কর্মসূচি গ্রহণ ও সঠিক রূপায়ন প্রয়োজন। গ্রামীন 'পরিবার কল্যান কর্মসূচি' গ্রহণ ও সার্থক রূপায়ন প্রয়োজন। গ্রামীন 'পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি' রূপায়নে অধিকাংশ জনসংখ্যার যোগদান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ফসল উৎপাদনের প্রকৃতি (Crop Pattern)-র পরিবর্তন ঘটানো এবং কৃষিসহ গ্রামীণ সম্পদ উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে ভূমিহীনতার সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।

2. বেকারত্বের সমস্যা (Problem of Unemployment): কৃষিজমির উপর বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সৃষ্টি করে এক উদ্বৃত্ত শ্রমিক জনসংখ্যা। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কৃষি শ্রমিক শ্রমের মজুরি হ্রাস করে। জনপ্রতি আয় হ্রাস পায়। এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জনসংখ্যা কাজের সন্ধানে শহরমুখী হয়। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। গ্রামীন বেকারত্ব যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি শহরেও শিল্প ব্যবসার উন্নতির গতি মন্থর হয়। পৌর জনসংখ্যার বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়। আদম সুমারী অনুসারে দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা কর্মক্ষম (১৫-৬০)-এর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কর্মনিযুক্তির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১/৩ ভাগ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্মে নিযুক্ত। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়মিত উপার্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ, গ্রামীণ বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পৌর এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি, বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরিকাঠামোর সৃষ্টি ও প্রসার, শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও উন্নততর প্রযুক্তির সুযোগ গ্রহণ, নতুন নতুন উদ্যোগ স্থাপন বেকারত্বে সমস্যার হ্রাসে কার্যকরী হতে পারে।

3. বাসস্থানের সমস্যা (Problem of Housing): চিনে বাসস্থানের সমস্যা তীব্র। ভারতেও এই সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গ্রামে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস ও ভূমিহীনের সংখ্যাধিক্য গ্রামীন বাসস্থানের সমস্যা সৃষ্টি করে। শহরে জমির উচ্চমূল্য ও গৃহের উচ্চভাড়া শ্রমিক জনসংখ্যাকে বস্তিতে বসবাসে বাধ্য করে। কলকাতার ফুটপাথ-এও বসবাস করতে দেখা যেত বহু লোককে। এখন রেল লাইনের ধারে বা পয়ঃপ্রণালীর খাল পারে মাথাগুঁজতে বাধ্য হয়েছে বহু লোক। দিল্লি, মুম্বাই প্রভৃতি শহরেও বাসস্থানের সমস্যায় বস্তির কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেখানেও স্থানাভাব। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পৌরাঞ্চলে বাসস্থানের সমস্যার কারণ। যথেষ্ট আলো বাতাসযুক্ত গৃহের অভাব, নিম্নমানের পয়ঃপ্রণালী, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব পৌরাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পে উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবৃত্তের আয় অনুযায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কৃষি ও অন্যান্য প্রাথমিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হলে গ্রামীণ উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব হলে বাসস্থানের সমস্যারও কিছুটা সমাধান সম্ভব হবে। দেশে প্রতিবছর যে প্রায় ২০ লক্ষ বাড়ির অভাব ঘটছে তা দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। কিন্তু এ জন্য ঋণ গ্রহণকারীর উপার্জনের সুযোগ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন। যাতে সে ঋণ শোধ দিতে সক্ষম হয়। সকলকে আবাসন দিতে গেলে বর্তমানে প্রায় ১.৫ থেকে ২ কোটি গৃহের প্রয়োজন।

4. খাদ্য সমস্যা (Food Problem): খাদ্য যোগানের সমস্যাই কেবল নয়, এর বিলি-বণ্টন ব্যবস্থায়ও পরিকল্পনার অভাব দেখা যায়। উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন হয় এমন রাজ্য বা জেলায় যেখানে অনাহারে লোকের মৃত্যু হয়। উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদিত হলে গুদামজাতকরণের সুযোগের অভাবে কৃষক কম দামে ফসল বেচে দিতে বাধ্য হয় এবং লোকসানের সম্মুখীন হয়। কোনো বছর উৎপাদন কম হলে যে খাদ্য সংকট দেখা দেয় দেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুত থাকলে এবং বিলি-বন্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও খাদ্য সংকটের মোকাবিলা করা সম্ভব হত।

দেশে প্রতি বছর যে বর্ধিত জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে তাদের খাদ্যের চাহিদার যোগান দিতে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লক্ষ মেঃ টন করে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন যোগ করে যেতে হবে। এই হিসেব অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরের মধ্যে খাদ্যের চাহিদা প্রায় ২৫ কোটি টন অতিক্রম করবে, যেখানে বর্তমানে দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ১০ কোটি টনের কাছাকাছি। অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি করে মেটানো হবে। কিন্তু এতে যে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পড়বে তার চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বহু মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। ফলে অপুষ্টি, অর্ধাহার, অনাহার-ক্লিষ্ট জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটবে।

কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন পরিবার কল্যাণ কর্মসূচিতে সাফল্য অর্জন যাতে ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার খাদ্য যোগানে ভারসাম্য আনা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01