welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

শক্তি সম্পদ খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম (power Resources Mineral Oil or Petroleum)

6 min read

শক্তি সম্পদ খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম (power Resources Mineral Oil or Petroleum)


ভূমিকা: পেট্রোলিয়ামও একটি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং দেশের শিল্প অর্থনীতির উন্নতির পক্ষে একটি অপরিহার্য শক্তিসম্পদ। ভারতকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার খনিজ তেল আমদানি করতে হয়।

পেট্রোলিয়ামের উৎপত্তি: গ্রিক 'Petra' অর্থে 'শিলা', Oleum-এর অর্থ তেল অর্থাৎ খনিজ তেল তোলা হল শিলা মধ্যে প্রাপ্ত তেল। কার্বন ও হাইড্রোজেন-এর মিশ্রণে গঠিত বলে একে হাইড্রোকার্বনও বলে। সামুদ্রিক অবক্ষেপের সঙ্গে প্রাণীদেহ চাপা পড়ে ও ওপরের শিলাস্তরের চাপে এবং ভূ-গর্ভের তাপে ক্রমশ তরল পদার্থে পরিণত হয়ে অবশেষে, খনিজ তেল-এ পরিণত হয়েছে। সেজন্য একে জীবাশ্ম জ্বালানিও (Fossil Fuel)-ও বলে।

উপজাত দ্রব্যসমূহ: খনি থেকে যে তেল উত্তোলন হয়, তাকে অপরিশোধিত তেল বা কৃড তেল (Crude oil) বলে। এই তেল শোধনাগারে পরিশোধনের সময় বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আছে-ভাস, ন্যাপথা, বা পেট্রোল, গ্যাসোলিন ডিজেল, কেরোসিন, পিচ্ছিলকারক তেল (Lubricating oil), মোম, অ্যাসফাল্ট, ভেসলিন,প্যারাফিন ইত্যাদি।

গুরুত্ব ও ব্যবহার: সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হল- পরিবহন ব্যবস্থায়। পেট্রোলিয়াম পরিশোধন দ্বারা পাওয়া যায় পেট্রোল ও ডিজেল। সড়ক, রেল, জল ও আকাশ পরিবহন-এর অপরিহার্য জ্বালানি এ পেট্রোল ও ডিজেল। শিল্পেও এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। পিচ্ছিলকারক তেল কেবল গাড়ির চাকাই সচল রাখে না, কলকারখানার যন্ত্রপাতিকেও চালু রাখে। এ ছাড়া বহু কলকারখানায় শক্তি ও বিদ্যুৎ পাওয়া যায় পেট্রোলিয়াম থেকেই। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলে ডিজেলে। কেরোসিন-এর ব্যবহার জ্বালাতে ও রান্নার কাজে। ভেসেলিন ও প্যারাফিন ব্যবহৃত হয় মোমবাতি ও ওষুষ প্রস্তুতে। পিচ বা অ্যাসফাল্ট রাস্তা পাকা করতে ব্যবহৃত হয়। পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্পের কাঁচামাল খনিজ তেল থেকেই পাওয়া যায়। কৃত্রিম তন্তু। কৃত্রিম রাবার। প্লাস্টিক। রাসায়নিক সার। কীটপতঙ্গ বিনষ্ট করার ওষুধ এ থেকেই প্রস্তুত হয়।

খনিজ তেল আবিষ্কারঃ স্বাধীনতার আগে ভারতে কেবলমাত্র অসমের ডিগবয় খনি অঞ্চল থেকে তেল পীওয়া যেত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে জরিপযোগ্য তৈলবাহী পাললিক স্তরের আয়তন প্রায় ৩,৬২,০০০ কিলোমিটার। স্বাধীনতা লাভের পর পরিকল্পনাকালে ONGC (Oil and Natural Gas Corporation) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন উপকূলবর্তী অঞ্চল, গাঙ্গোয় অববাহিকার নিম্ন ও ব-দ্বীপ অংশ এবং অগভীর সমুদ্রে খনিয় তেলের সন্ধান করছে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশন বা ONGC ছাড়াও 'অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড' (OIL) ঊর্ধ্ব অসম ও অরুণাচল প্রদেশের কিছু অশ্বলে অনুসন্ধানকার্য চালায়। রাশিয়া ভারতে তেল অনুসন্ধানের কাজ বিশেষ কারিগরি সাহায্য দিয়েছে। পরিকল্পনাকালে অর্থাৎ স্বাধীনতার পর যে সকল তেলের খনিগাল আবদ হয়েছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

• গুজরাটের কাম্বে অঞ্চল: আংকেলেশ্বর, কালোল, লুনেজ, নওগাঁ, ধোলকা, কাদি, বাকরোল, মেখানা, সাখোল। মহারাষ্ট্রের উপকূলের নিকটে বোম্বাই দরিয়া: তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকা ও• অরুণাচলপ্রদেশ।

• খনিজ তেলের সঞ্চয়: ভারতে সঞ্চিত খনিজ তেলের পরিমাণ খুব কম, মাত্র ৫২ কোটি টন। নতুন ভান্ডার আবিষ্কারের জন্যে অনুসন্ধান চলছে।

• খনিজ তেলের উত্তোলক অঞ্চলঃ স্বাধীনতার আগে কেবল অসমে তেল উত্তোলিত হত। স্বাধীনতার পদ Oil and Natural Gas Corporation (ONGC) এবং Oil India Limited (OIL)-এর প্রচেষ্টায় নতুন নতুন তৈলগরি আবিষ্কৃত হয়েছে। নতুন ও পুরাতন খনিগুলি যেগুলি থেকে বর্তমানে তেল উত্তোলন করা হয়, নীচে সেই বিষয়ে আ লোচনা করা হলঃ

(১) অসমঃ ডিগবয় ভারতের প্রাচীনতম তেলের খনিকেন্দ্র। অসমের ডিব্রুগড় জেলার ডিগবয়, বামাপ্তং ও হাসাপুং নামক তিনটি স্থান থেকে ডিগবয়ের তেল উত্তোলন করা হয়। সুরমা উপত্যকায় বদরপুর, মাসিমা ও পাখরিয়া অঞ্চলেও খনিজ তেল পাওয়া যায়। নাহারকাটিয়ায় মোরান, লাকওয়া, গেলেকি, বড়জোলা, হা মখুঁড়ি, রুদ্রসাগর অপর উল্লেখযোগ্য তেলের খনি। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে খনিজ তেল উত্তোলনে অসমের সম ছিল তৃতীয়।

(২) গুজরাট: কাম্বে অববাহিকায় আংকেলেশ্বর, কালোল, লুনেজ, নওয়াগম, ধোলকা, কাদি, বাকরোল, মেযানা, সাথোল প্রভৃতি খনি থেকে বর্তমানে প্রচুর খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে খনিজ তেল উত্তোলনে গুজরাটের স্থান ছিল তৃতীয়।

(৩) বোম্বে হাইঃ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই উপকূলে বোম্বাই দরিয়ায় (Bomby High) প্রায় ২০০০ বর্গ কিমি, ব্যাপী বিস্তৃত তেলের ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীকালে সংলগ্ন অঞ্চলে আ রও তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে ১৯৩ ভারতের সর্বাধিক তেল সম্মিত আছে। সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ নামে দুটি ভাসমান তেলের কুলখননকারী জাহাজের সাহায্যে কূপ খনন করা হয়। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চল থেকে ভারতের সর্বাধিক ১.৯ কোটি টন তেল উত্তোলন করা হয়।

(৪) রাজস্থান : রাজমান, নব আবিষ্কৃত তৈলক্ষেত্র। মাঙ্গালায় সর্বাধিক তেল উত্তোলন হয়। ভাগ্যম, ঐশ্যর্থ্য, তেল উত্তোলন হচ্ছে। মোমপুর, যায়। আাগাম, ঐশ বিকানির, নাগাউর প্রভৃতি নব আবিষ্কৃত তৈল উত্তোলন ক্ষেত্র।

(৫) তামিলনাড়ুঃ ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে কাবেরী নদী অববাহিকায় প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এই তারা তেলের রূপগুলি খননের রা হয়েছে ভূবনগিরি, কোভিলামাল ও নরিমানাম এ এবং সমুদ্রে। এছাড়া তিরবার শহরের কাছে নাগ্নিলামেও তেল পাওয়া গেছে। 

(৬) অস্ত্রপ্রদেশঃ অগ্রপ্রদেশের তেল উত্তোলন হয় রাজোল এবং কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী বদ্বীপ

(৭) অরুণাচল প্রদেশঃ এই রাজ্যের নিংগুর অঞ্চলে তেলের খনি রয়েছে।

ওপরের তালিকা থেকে দেখা যায় যে, ভারতের অধিকাংশ খনিজ তেল বোম্বাই দরিয়া থেকে উত্তোলন করা হয়। অবশিষ্ট তেল অসম, গুজরাট এবং সামান্য পরিমাণে অরুণাচল প্রদেশ ও তামিলনাড়ু থেকে উত্তোলন করা হয়।

সম্ভাবনাময় অঞ্চলসমূহঃ কাসে। উর্ধ্ব অসম। বোম্বাই মরিয়ার বর্তমানে তৈলবাহী স্তর সংলছ।অহনা সম্ভাবনাময় কাদেরীর কৃমা-গোদাবরী: গাভোয়-অববাহিকা ডোপামান। পশ্চিমবঙ্গও হিমালয়ের পাদদেশে এবং ত্রিপুরা নাগাল্যান্ড অঞ্চলে। শুদ্ধ-সৌরাষ্ট্র: কেরালা-কোজান এবং মহানলী উপত্যকাকে ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে খনিজ তেলের সম্ভাবনাময় অঞ্চল মনে করা হয়।

খনিজ তেল উত্তোলনঃ ভারতে ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে ৩-৭ কোটি মেঃ টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়। যা বিশ্বে মোট উৎপাদনের মাত্র ১%।

খনিজ তেল শোধনাগার (Oil Refineries): বর্তমানে ভারতে শতাধিক শোধনাগার রয়েছে। এর মধ্যে বৃহৎ শোধনাগারের সংখ্যা প্রায় ২০টি। ভারতের শোধনাগারগুলিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়ঃ

(ক) উপকূলীয় শোধনাগারঃ আমদানিকৃত ও উপকূল-সংলগ্ন অঞ্চলে উত্তোলিত তেল পরিশোধন করে। মহারাষ্ট্রেরও মুম্বাই-এর কাছে ট্রঙ্গেতে দুটি কেরলের কোচি।ও তামিলনাড়ুর চেন্নাই ও কৃষ্ণালোর অপ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম। ওড়িশার পারা দ্বীপ পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া। কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর।ও গুজরাটের জামনগর (পৃথিবীর বৃহত্তম শোধনাগার) তামিলনাড়ুর নরিমানাম-এ এগুলি অবস্থিত।

(খ) অভ্যন্তরীণ শোধনাগারঃ প্রধানত অসম ও গুজরাটের তেল শোধন করে থাকে। এগুলি থেকে  অসমের ডিগবয়, নুনমাটি (গুয়াহাটি), নুমালিগড় ও বঙ্গাইগাঁও। বিহারের বারাউনি। মধ্যপ্রদেশের বিনা  উত্তরপ্রদেশের মথুরা এবং হরিয়ানার পানিপথ।

খনিজ তেলের বাণিজ্যঃ ভারতে প্রয়োজনের ১/৩ ভাগের কিছু বেশি খনিজ তেল উত্তোলন হয়। বাকি তেল প্রধানত পারস্য উপসাগরের দেশসমূহ, যথা ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমীর শাহী প্রভৃতি দেশসমূহ এবং রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ভারত প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের অপরিশোধিত তেল ও তৈলজাত দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। ভারত থেকে সামান্য তৈলজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি হয়।

OPEC (Organization of Petroleum Exporting Countries): মূলত আরব দুনিয়ার খনিজ তেল উৎপাদক দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত প্রধান সংগঠন যা তেল উৎপাদন ও বিক্রয়-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করে। ভারত OPEC দেশগুলি থেকে প্রচুর তেল আমদানি করে।

খনিজ তেল উৎপাদনে ভারতের বর্তমান অবস্থাঃ ভারত খনিজ তেল উৎপাদনে একেবারেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কারণ দেশের নিজস্ব তৈলক্ষেত্র থেকে ভারতের মোট খনিজ তেলের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি মেটে। বাকি প্রায় দুই তৃতীয়াংশ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে মেটাতে হয়।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ভারতে তেলের উৎপাদন ছিল সামান্যই। ১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দে যেখানে মাত্র ২-৫ লক্ষ টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়, ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩.৭ কোটি টন।

ভিসন ২০২৫ (VISION 2025): খনিজ তেল অনুসন্ধান জোরদার করা ও উত্তোলন সর্বাধিক করার লক্ষ্যে ভারত সরকার ভিসন ২০২৫ নামে একটি প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছেন (Source: India Reference Annual)

সম্ভাবনাময় অঞ্চলসমূহ: (i) কাম্বে, (ii) ঊর্ধ্ব অসম, (iii) বোম্বাই দরিয়ার বর্তমানের তৈলবাহী স্তর-সংলগ্ন অঞ্চল, (iv) রাজস্থান, (v) কাবেরী, (vi) কুয়া-গোদাবরী, (vii) গাঙ্গেয় অববাহিকা, (viii) আন্দামান, (ix) পশ্চিমবঙ্গা, (x) হিমালয়ের পাদদেশ, (xi) ত্রিপুরা-নাগাল্যান্ড অঞ্চল, (xii) কেরালা-কঙ্কন এবং (xiv) মহানদী উপত্যকাকে ভূ-তাত্ত্বিক দিক থেকে খনিজ তেলের সম্ভাবনাময় অঞ্চল মনে করা হয়।

খনিজ তেল উত্তোলন: ভারতে ২০১৫-১৬ সালে ৩-৭ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়।

• খনিজ তেল শোধনাগার: ভারতের উল্লেখযোগ্য শোধনাগারগুলি-

উপকূলীয় শোধনাগার: প্রধানত আমদানিকৃত ও উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে উত্তোলিত তেল পরিশোধন করে থাকে। যেমন-(১ ও ২) মুম্বাই-এর কাছে টুম্বোতে দুটি, (৩) কোচিন, (৪) চেন্নাই, (৫) বিশাখাপত্তনম, (৬) হলদিয়ায় এগুলি অবস্থিত। (খ) আভ্যন্তরীণ শোধনাগারঃ প্রধানত অসম ও গুজরাটের তেল শোষন করে থাকে। এগুলি হল- (১-৩) অসমের ডিগবয়, নুনমাটি (গুয়াহাটি) ও বঙ্গাইগাও, (৪) গুজরাটে কয়ালি (ভারতের বৃহত্তম শোধনাগার), (৫) বিহারের বারাউনি এবং (৬) উত্তরপ্রদেশের মথুরা।

সমস্যা ও সম্ভাবনা: ভারতকে প্রতিবছর যে লক্ষাধিক কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা খনিজ তেল আমদানি করতে ব্যয় হয় তা দেশের অর্থনীতির পক্ষে একটা বিরাট সমস্যা। এ সমস্যা দূর করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খনিজ তেলের অনুসন্ধান জোরদার করা হয়েছে। আশা করা যায়, ভারত তৈল সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।





এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01