welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পশ্চিমবঙ্গের বন্দর (Ports of West Bengal)

পশ্চিমবঙ্গের বন্দর (Ports of West Bengal)


কলকাতা বন্দর

অবস্থান : হুগলি নদীর পূর্বতীরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বন্দরটি অবস্থিত।

• বন্দর গড়ে ওঠার কারণসমূহ:

(১) ঐতিহাসিক কারণ: 

ইংরেজ বণিকেরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধায় এক সময় এই বন্দর গড়ে তুলেছিল। কলকাতা ছিল তখন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী (১৯১১ সাল পর্যন্ত)। এক কথায় কলকাতা জলপথে পূর্ব ভারতের প্রবেশ দ্বার। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি তখন কলকাতাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।

(২) ভৌগোলিক কারণ:

[i] প্রশস্ত নিত্যবহা হুগলি নদী: হুগলি নদীতে একসময় বড়ো বড়ো জাহাজ বিনা বাধায় সমুদ্র থেকে পণ্য নিয়ে ঢুকতে পারত। ড্রেজারের কোনো প্রয়োজন ছিল না।

[ii] সমুদ্র নৈকট্য: নদী বন্দর হলেও কলকাতার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র থেকে সমুদ্রের দূরত্ব জলপথে মাত্র ১১২ কিলোমিটার।

[iii] পশ্চাদ্‌ভূমি: কলকাতা বন্দরের পশ্চাদ্‌ভূমি কৃষি, খনিজ ও শিল্প-সমৃদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের কৃষিসহ শিল্পাঞ্চল, ছোটোনাগপুরের খনিজ ও শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোটো ছোটো রাজ্যগুলি ওড়িশা, সিকিম, ভুটান এবং উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাবের অংশবিশেষ ও নেপাল কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমি।

[iv] উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা: কলকাতা বন্দর চমৎকার রেল, সড়ক ও জলপথে পশ্চাদ্‌ভূমির সঙ্গে যুক্ত।

[v] শ্রমিক: ঘনবসতিপূর্ণ এই রাজ্যে এবং প্রতিবেশি বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত সুলভশ্রমিকের প্রাচুর্য রয়েছে।

[vi] মূলধন, কারিগরি সুবিধা: কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা চলে। এখানে মূলধন ও কারিগরি সুবিধার অভাব হয় না।

[vii] প্রশস্ত উপত্যকা: প্রশস্ত নদী উপত্যকায় জেটি ও ডক নির্মাণের সুবিধা রয়েছে।

• পশ্চিমবঙ্গের সম্পদোন্নয়নে কলকাতা বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

১. শিল্পোন্নয়ন-যন্ত্রপাতি আমদানি, শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি। ২. কৃষির উন্নতি-সার, কীটনাশক, প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি। উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য এই বন্দর দিয়ে প্রেরণ রপ্তানির সুবিধা। ৩. খনিজ উন্নয়ন-রপ্তানির সুবিধা থাকায় ভারতে ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ-আকরিক, কয়লা উত্তোলন বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪. বৈদেশিক মুদ্রা-রপ্তানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়। ৫. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। ৬. পরিবহনে উন্নতি। ৭. আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের প্রসার উপকূলীয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।

আমদানি দ্রব্য: যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল, খাদ্যশস্য, রাসায়নিক ও অন্যান্য বিবিধ শিল্পজাত দ্রব্য প্রধান।

রপ্তানি দ্রব্য: চা, পাটজাত দ্রব্য, কয়লা, লৌহ আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, চর্ম ও চর্মজাত দ্রব্য, চিনি, বস্তু প্রভৃতি। কলকাতা বন্দর দিয়ে ভারতের সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয়।

• কলকাতা বন্দরের সমস্যা ও তার সমাধান:

১. হুগলি নদীতে পলি জমার সমস্যা-বড়ো জাহাজগুলি বন্দরে ঢুকতে পারছে না। ২. বহু নদীবাঁক-বাঁক-বহুল হুগলি নদীতে বড়ো জাহাজের দ্রুত চলাচলে অসুবিধা। ৩. পশ্চাদ্‌ভূমির সংকোচন-নতুন নতুন বন্দর গড়ে ওঠায় পশ্চাদ্‌ভূমির সংকোচন ঘটেছে। ৪. যানজট-খারাপ রাস্তাঘাটের জন্য যানজটের সমস্যায় পরিবহনে সময় ও অর্থ ব্যয় দুই-ই বাড়ে। ৫. বন্দরে স্থানাভাব-দাঁড়াতে পারে না। ৬. ড্রেজিং-এ খরচ বৃদ্ধি-পলি অপসারণের খরচ খুব বেশি। ৭. অধিক শুল্কহার-এর প্রতিকূল প্রভাব বাণিজ্য পণ্যের ওপর পড়ে। ৮. রাজনৈতিক কারণ-শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের বিরোধে মাঝে মাঝে পণ্য বোঝাই ও খালাসে বিঘ্ন ঘটে যা বন্দরের উন্নতির অন্তরায়।

সমস্যা সমাধানকল্পে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ:

(১) ফারাক্কা বাঁধ: ভাগীরথী-হুগলিতে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে গঙ্গানদী বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে।

(২) বন্দরের পরিষেবার উন্নতি: দ্রুত পণ্য খালাস ও বোঝাই-এর ব্যবস্থা হচ্ছে।

(৩) আধুনিকীকরণ: পণ্য বোঝাই ও খালাস সহ সমগ্র পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।

(৪) ড্রেজিং-এর নিয়মিত ব্যবস্থা হচ্ছে।

(৫) হলদিয়া বন্দর: বড়ো জাহাজ যেগুলি কলকাতা বন্দরে ঢুকতে পারবে না সেগুলি হলদিয়ায় মাল খালাস করে এবং ছোটো ছোটো জাহাজে ঐ মাল কলকাতা বন্দরে অথবা সড়কপথে কলকাতায় প্রেরণ করা হয়।।

(৬) যানজট সমস্যা নিরসনে সড়কপথের উন্নতিতে সরকার সচেষ্ট আছে।হলদিয়া বন্দর পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব-মেদিনীপুর জেলায় বঙ্গোপসাগরের অদূরে হলদি নদী যেখানে হুগলি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে সেখানে এই বন্দরটি গড়ে উঠেছে। একে কলকাতা বন্দরের পরিপূরক বন্দর বলা হয়। এটি সড়কপথে কলকাতা থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে এবং জলপথে প্রায় ১২২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

• হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার কারণ:

(১) কলকাতার পরিপূরক বন্দর হিসাবে গড়ে ওঠা: কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলি নদীর নাব্যতা কমে আসায় বড়ো বড়ো জাহাজ ঢুকতে পারে না। এজন্য এবং কলকাতা বন্দরের উপর চাপ কমানোর জন্য হলদি ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে বঙ্গোপসাগরের অদূরে হলদিয়া গড়ে উঠেছে। (১) বন্দরের গভীরতা বেশি হওয়ায় বড়ো জাহাজ বন্দরে আসতে পারে। (৪) বঙ্গোপসাগরের নিকটেই অবস্থিত হওয়ায় জাহাজ চলাচলে সুবিধা হয়। (১) কলকাতা বন্দরের বিশাল পশ্চাদভূমির সুবিধা হলদিয়া ভোগ করে। (iv) পশ্চাদভূমি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা যুক্ত। (৬) আধুনিক যান্ত্রিক পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা এবং (vi) সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য রয়েছে।

• হলদিয়া বন্দরকে কেন্দ্র করে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণ:

১. বন্দরের অবস্থান, ২. শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ নীতি, ৩. কাঁচামাল-পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে কাঁচামালের যোগানের হলদিয়া তৈল শোধনাগারের গুরুত্ব।

• বন্দরভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প:

১. খনিজ তেল পরিশোধন-ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন হলদিয়ায় তৈল শোধনাগার। ২. খনিজ তৈলভিত্তিক শিল্প-এল.পি.জি. মোটর গ্যাসোলিন, ন্যাপথা, কেরোসিন, পিচ্ছিলকারক তেল, বিটুমিন প্রভৃতি খনিজ তৈলভিত্তিক শিল্পোৎপাদন। ৩. পেট্রোকেমিক্যালস কমপ্লেক্স-প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু, কৃত্রিম রবারসহ পেট্রোলিয়াম উপজাত দ্রব্যভিত্তিক সার উৎপাদন।

• হলদিয়া বন্দরের বর্তমান সমস্যা ও সমাধান:

(১) পলি জমার সমস্যা: বন্দরের কাছাকাছি নদীবক্ষে পলি জমার ফলে বড়ো বড়ো জাহাজের যাতায়াতে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য ব্যয়বহুল ড্রেজিং-এর প্রয়োজন হচ্ছে। (২) পরিচলনগত সমস্যা: পণ্য বোঝাই ও খালাসি শ্রমনিয়োগকারী সংস্থাগুলির সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের মতবিরোধের ফলে বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। উভয়পক্ষে সহযোগীতা ও আন্তরিকতায় এর সমাধান হবে। (৩) অধিক শুদ্ধ হারঃ বন্দরের বাণিজ্য পণ্যের শুল্কহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রতিকূল প্রভাব বাণিজ্যিক পণ্যের ওপর পড়ে। সরকারী দৃষ্টি আকর্ষণ করে শুল্ক হ্রাস করা সম্ভব।

পরিবহন ও যানজট সমস্যা-খারাপ রাস্তাঘাটের জন্য যানজটের সমস্যায় পরিবহনে সময় ও অর্থ ব্যয় দুই-ই বাড়ে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01