ভারতে জনসংখ্যা নীতি(Population Policy of India)
ভারতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রগতির সুফল বিশেষ বোঝা যাচ্ছে না। তাই বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়নে।
ভারতে জনসংখ্যা নীতি: ২০০০-০১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণীত হয়েছে যাতে জন্ম হার কমানো এবং এর মধ্যে দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষা ১৪ বছর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা, স্কুল ছুটদের সংখ্যা ২০%-এর নীচে কমিয়ে আনা, শিশু মৃত্যুর হার ৩%-এর নিচে নিয়ে আসা এবং মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার ১%-এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচির উপরে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। সন্তানের জন্ম যাতে প্রশিক্ষিত হাতে হয় এবং শতকরা ৮০ ভাগ তা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে, যাতে শিশু মৃত্যুর হার ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার কমে। জন্ম, মৃত্যু এবং বিবাহ শতকরা ১০০ ভাগ রেজিস্টিভুক্ত করার লক্ষ্য স্থির হয়েছে। ছোটো পরিবার বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর লক্ষ্যে কাজ করতে বলা হয়েছে। পরিবার কল্যাণ কর্মসূচিতে জোর দিতে বলা হয়েছে। শিশু কল্যাণ এবং শিশু ও মায়ের জন্ম কালীন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এই লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য জাতীয় জনসংখ্যা নীতিতে বলা হয়েছে:-
পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ বিকেন্দ্রীভূত করতে বলা হয়েছে।
• নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে লক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে।
•গ্রামাঞ্চলে শিশু ও মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে।
• পরিবার কল্যাণ পরিষেবা সুযোগ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে।
• শিশুর যত্ন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
• স্বাস্থ্য সুবিধা বিভিন্ন ভাবে তৈরি করতে বলা হয়েছে এবং যাতে স্বাস্থ্য প্রকল্প কর্মসূচি আদিবাসী পাহাড়ি দুর্গম এলাকায়, পৌর অঞ্চলে বস্তিবাসীদের কাছে পৌঁছায়, বস্তিবাসীদের জন্য রূপায়িত হয় সেদিকে লক্ষ দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গুলো এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। গর্ভনিরোধক প্রযুক্তি উন্নয়ন ও গবেষণার এবং শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। তথ্য ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে।
► পরিকল্পনা নীতি ও তার রূপায়ন (Policy and its Implementation):
• পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি রূপায়নে রাষ্ট্রকর্তৃক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার হয়। সম্প্রদায়ের সামাজিক রীতি-নীতি বা আকারকে উপেক্ষা করা যায় না। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি যদি জোর করে আরোপ করা হয় তবে তার পরিণতি বিপজ্জনক হওয়া সম্ভব। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে প্রচলিত। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গেলে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরী। তাই রাষ্ট্রের ইচ্ছার প্রয়োজন জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি কোনো সরকারই আর নিতে চায় না। ভারতের ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সরকার কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেন বলে অভিযোগ। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র জনসাধারণের কাউকে কাউকে অত্যুৎসাহে বা বলপূর্বক বা চাতুরীপূর্বক নির্বীজকরণ করার জন্য বাড়াবাড়ি করার ফলে সৃষ্ট জনরোষ একসময় আন্দোলনের চেহারা নেয়। জরুরী অবস্থা চলাকালে আইন রূপায়নের মতোই জনসংখ্যা নীতিতেও বলপ্রয়োগের ফলে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের হাত শক্ত হয়। যে গণ-আন্দোলন শুরু হয় তাতে ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের পতন ঘটে। যদিও ১৯৭০-৭৬ সালে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে যে সাফল্য এসেছিল পরবর্তীকালে নির্বাচনে জয়ী দলগুলি সরকার গঠন করার পর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণে আর অত্যুৎসাহ দেখাতে আগ্রহ হননি। পরবর্তীকালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যে পিছিয়ে পড়ে।
• ভারতের দরিদ্র জনসাধারণ যারা পরিবার পরিকল্পনার সুযোগ নিতে আসেন তাদের মধ্যে জন্মপ্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহ দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু সরকারি সামান্য যে আর্থিক অনুদান তার প্রভাব এতে আছে বলে মনে করা হয়। তবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিধা আছে এতে বাস্তবিকই এই ব্যবস্থা তবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কতটা ফলপ্রসূ হবে।
• একটি উল্লেখনীয় বিষয় যে ভারতে যে বয়সের নারী পুরুষ নির্বীজকরণের জন্য আসেন তারা যদি এই বয়সে তা না করাতেন তবে সাধারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে তার বিশেষ প্রভাব পড়ত কিনা সন্দেহ। এরূপ বয়সী লোকেদের গড় বয়স ৩৫-এর ওপর যারা আসলে প্রায় সকলেই ইতিমধ্যে দুই বা ততোধিক সন্তানের পিতামাতা।
• ভারতে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বিবাহের বয়স খুব কম। শিক্ষার অভাব কুসংস্কার ও অজ্ঞতা-জন্মনিয়ন্ত্রণে অনীহা ইত্যাদি দম্পতি পিছু সন্তান সংখ্যা অধিক হওয়ার জন্য দায়ী। শিক্ষিত জনসাধারণের এবং পৌরবাসীদের বর্ধিত সচেতনতা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আগ্রহ তাদের বিবাহের বয়স পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। বিবাহের বয়স পিছিয়ে ফেলে নারীর প্রজননক্ষম সময় সংক্ষিপ্ত হয় ফলে সন্তান সম্ভাবনা কমে।