উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি (Population growth in developing countries)
পৃথিবীর অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হয়। আফ্রিক এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গড়ে প্রতি মহিলা পিছু প্রজনন হার হল 7 জন।
■ জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণ:
(i) অত্যধিক দারিদ্রতার কারণে অনেকে ভাবেন অধিক সন্তান থাকলে বেশি রোজগার হবে। তারা অধিক সন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়।
(ii) বহু বিবাহ এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব অনেকক্ষেত্রে পরিবার পিছু সন্তানের সংখ্যা বেশি
(iii) স্ত্রীশিক্ষার অভাব, অধিক পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে জন্মন্না জনসংখ্যা দুটোই বেশি হয়।
(iv) পরিবার পরিকল্পনার দুর্বলতা, মৃত্যুহার কমে যাওয়া, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি কারণেও জনসংখ্যা ভূর বাড়ছে।
পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্ধারণ (Determinants of World Population Growt)
বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা 700 কোটি (2012) অতিক্রম করেছে। জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্ব জুড়েই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই হারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে 2025 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের জন্য 825 কোটি এবং 2050 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর জনসংখ্যা 830 কোটি অতিক্রম করে যাবে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তার মতো জনবিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।
তাই দেখা যায় যে, পৃথিবীর জনসংখ্যার বৃদ্ধি কিংবা গতিপ্রকৃতির কতগুলি নির্ধারক আছে। বিশ্ব জনসা গতি প্রকৃতির নির্ধারকগুলি হল-
(i) জনসংখ্যার গঠন (Population Structure): জনসংখ্যার গঠনের (নারী-পুরুষ অনুপাত্র অনুসারে নারী-পুরুষ গঠন) ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকাংশে নির্ভর করে। পৃথিবীর যে সমস্ত 18 থেকে 35 বছরের নারী-পুরুষের জনসংখ্যা বেশি ওই সমস্ত দেশগুলিতে জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি কারণ এই সময়টা মানব জীবনে সন্তান উৎপাদন বা জন্ম দেওয়ায় সেরা সময়। কোনো দেশের মোট জনসা বেশির ভাগ যদি শিশু ও বয়স্ক জনসংখ্যা হয় তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক কম হয়।
(ii) অর্থনীতি (Economy): নিবিড় জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষিব্যবস্থায় ফসল উৎপাদনের জন্য। পরিমাণে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই কৃষিতে উন্নত এবং কৃষিকাজে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে ধরনের অঞ্চলে কৃষক পরিবার শ্রমিকের প্রয়োজনে প্রচুর সন্তানের জন্ম দেয়। এজন্য দেখা যায় যে. পূর্ব এশিয়ার কৃষি অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি।
যেসব অঞ্চলের অর্থনীতি ব্যাবসাবাণিজ্য কিংবা পরিসেবামূলক সেখানে শ্রমিকের প্রয়োজন কম তাই এই সমস্ত অঞ্চলে পরিবার প্রতি জনসংখ্যা কম হয়।
(iii) সামাজিক নিয়ম (Social Rituals): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মের প্রচলন দেখা যায়। কোথাও বাল্যবিবাহ, কোথাও একাধিক বিবাহের প্রচলন থাকায় স্বাভাবিক সেইসব অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হয়। একদা বাল্যবিবাহ ভারতে প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমান আইন করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে।
(iv) শিক্ষা (Education): শিক্ষা মানুষের মধ্যে চেতনা আনে। শিক্ষার প্রভাবে মানুষ অধিক জনসংখ্যার কুফল সম্পর্কে অবহিত থাকেন। শিক্ষা বিাহের বয়স পিছিয়ে দেয়। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে। শিক্ষার প্রভাবে মানুষ তার জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটায়। শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে পরিবার ছোটো রাখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফলে বেশি সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা জাগে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে শিক্ষার অভাবে জনবিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।
(v) দারিদ্র্য ও অপুষ্টি (Poverty and Malnutrition): আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার ofteগুলিতে অপুষ্টির হার খুব বেশি। ফলে এরা তাড়াতাড়ি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং শেষে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। বাবা-মা এর ফলে অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। এই কারণে ছেলে-মেয়েরা বড়ো হয়ে বাবা-মাকে দেখাশুনা করবে এই আশাতে তাঁরা সন্তানদের মানুষ করতে থাকেন।
(vi) শিক্ষা, দারিদ্র্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্ক কোন দেশের মানুষের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটা নির্ভরশীল। শিক্ষা মানুষকে সচেতন ও প্রগতিশীল করে গড়ে তোলে। শিক্ষিত ব্যক্তি অধিক বয়সে বিবাহ করেন। ফলে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। আবার শিক্ষিতব্যক্তি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন হন। ফলে শিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে ছোট পরিবারের ওপর আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। অধিক সন্তান ধারণ করলে স্বাস্থ্যহানি, এমনকি মৃত্যুরও সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মনিযুক্তি এবং কর্মক্ষেত্রে অতিবাহিত সময়ের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। মাতা যদি চাকুরিজীবি হন তা হলে তাঁকেও একইভাবে প্রায় সারাদিন কর্মে নিযুক্ত থাকতে হয়। ফলে ওই পরিবারে পিতা-মাতার মধ্যে সাক্ষাতের সময় অনেক কমে যায় যা কম সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এইজন্য পৃথিবীর যেসব দেশে শিক্ষার হার খুব বেশি সেইসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি খুব ধীর গতিতে হয়। কিন্তু অশিক্ষিত সমাজব্যবস্থায় কিংবা স্বল্প শিক্ষিত সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি।
একইভাবে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্ভরশীল। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় অশিক্ষিত এবং দরিদ্র পিতা-মাতা ভাবেন যে, তাঁদের বেশি সন্তান থাকলে বেশি অর্থ আয় করে গৃহে নিয়ে আসবে। এই ধ্যান ধারণা থেকে তাঁদের বেশি সন্তান নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আবার যেসব অনুন্নত। ও দরিদ্রদ্র্য দেশে মৃত্যু হার বেশি সেইসব দেশের পিতা-মাতা মনে করেন অধিক সন্তানের জন্ম দিলে তাঁদের মৃত্যুর সময় কোন একজন সন্তান অনন্ত জীবিত থাকবে। ফলে ঐ সন্তান পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করবে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি দারিদ্র্যের কারণ নয়। দারিদ্র্যই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন অনেকে করতে সক্ষন হন না। ফলে দেখা যায় যে, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে দারিদ্র্য সমস্যা যেমন প্রকট, তেমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও এইসব দেশে বেশি। কেনিয়া, জিম্বাবোয়ে, উগান্ডা, সোমালিয়া প্রভৃতি দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্য জনিত সমস্যা প্রকট।
(vii) পুত্র সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতের হিন্দু সমাজে হিন্দুদের মধ্যে বাবা-মায়ের পারলৌকিক কাজ ছেলে করে। এর ফলে মানুষ পুত্রসন্তান লাভের আশায় বারবার সন্তানের জন্ম দেন.
নারীদের সামাজিক গুরুত্ব প্রদান: হিন্দু এবং ইসলাম সমাজে নারীদের সামাজিক মর্যাদা অনেক কম। কারণ এখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রচলিত আছে। নারীশিক্ষার অনগ্রসরতা এখানে সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নারীদেরকে কেবল সন্তান লালন পালনের কাজ হিসেবেই দেখা যায়। এসব ঘটনা সমাজে পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
(viii) জনবসতির ধরন: গ্রাম্য এবং শহুরে দুই ধরনের বসতি হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের বসতিতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি হয়। কিন্তু শহরে স্থানের অভাব, অর্থনৈতিক কারণ, শিক্ষার প্রভাব, বেকারত্ব প্রতীয়মা
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হয়। সংখ্যা রমিও মৃত্যু হারের পার্থক্য (Differences between Birth and Death Rate) দিভিঃ জয় ও সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম নির্ধারক হল জন্ম ও মৃত্যুহার। উচ্চ জন্মহারের ফলে মেখে
মুক্তিশোর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 2001 খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, উগান্ডা, রোয়ান্ডা প্রভৃতি প্রতি তাজারে ১০ জন জন্মহার ছিল। ভারতে এই সময় জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে 24 জন। কিন্তু খুলতে পোর্তুগাল, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশগুলিতে এই সময়ে জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে 15 জনের মতো। বদায়হার ও মৃত্যুহারের মধ্যে পার্থক্য যত বেশি হবে জনসংখ্যার তত বৃদ্ধি ঘটে। কারণ বর্তমানে পর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে উন্নতির ফলে মৃত্যুহার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ফলে অধিক উই ও স্বল্প মৃত্যুহার বিশ্বের জনসংখ্যাকে এখনও প্রভাবিত করছে।
2011 সেন্সাসে ভারতে স্বাক্ষরতার গতিপ্রকৃতি(Literacy Trend of India in 2011 census):
2011 খ্রিস্টাব্দের ভারতের জনগণনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এই আদমসুমারীতে ভা স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বিশেষ করে পুরুষ জনসংখ্যার মধ্যে স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে। হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার 74-4% মানুষ স্বাক্ষর। রাজ্যগুলির মধ্যে কেরল রাজ্যে স্বাক্ষরতার (93.9%) সবচেয়ে বেশি এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে লাক্ষাদ্বীপের জনসংখ্যার স্বাক্ষরতার হার (922) সবচেয়ে বেশি।
ভারতের জাতীয় স্তরে স্বাক্ষরতার হারের (74-4%) চেয়ে বেশি স্বাক্ষরতার হার যেসব রাজ্যে পরিল হয় সেগুলি হল- মিজোরাম (91-58%), ত্রিপুরা (87-75%), গোয়া (87-4%), হিমাচল প্রদেশ (৪378 মহারাষ্ট্র (82-91%), সিকিম (82-20%), তামিলনাড়ু (80-33%), নাগাল্যান্ড (77-08%), হরিয়ানা (76-64 পাঞ্জাব (76-68%) এবং মেঘালয় রাজ্য (75-48%)।
বিহার রাজ্য স্বাক্ষরতায় ভারতের জাতীয় স্তর অপেক্ষা অনেক নীচে (63.82% স্বাক্ষরতা) অবশ করেছে। কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে দাদরা ও নগর হাভেলী (77-65%) রাজ্য স্বাক্ষরতায় সবচেয়েও পিছিয়ে আছে। জেলাগত দিক থেকে দেখা যায় যে মাত্র ভারতের দুটি রাজ্যের জেলাগুলিতে গা এর বেশি মানুষ স্বাক্ষর আছেন। ভারতের মাত্র 21টি জেলাতে স্বাক্ষরতার হার 90% এর বেশি আ আমাদের দেশের 157টি জেলাতে 80%-90% স্বাক্ষরতা হার দেখা যাচ্ছে। 2001-2011 খ্রিস্টানে মধ্যে ভারতের স্বাক্ষরতার হার খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 2001 খ্রিস্টাব্দে দেশে স্বাক্ষরতার হার 64.8% কিন্তু 2011 খ্রিস্টাব্দে বৃদ্ধি পেয়ে এই হার 74.4% এ পৌঁছায়। অর্থাৎ 10% স্বাক্ষরতার হার দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে এই সময়ে স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি ব পেয়েছে।
ভারতের পুরুষ জনসংখ্যার মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের 7 বছর বয়স্ক জনসংখ মধ্যে স্বাক্ষরতার হার প্রায় 82-14%। পুরুষ জনসংখ্যার মধ্যে স্বাক্ষরতার দিক থেকে এগিয়ে আছে পাঁচ রাজ্য। এই রাজ্যগুলি হল কেরল (96-02%), মিজোরাম (93-72%), মহারাষ্ট্র (92-81%), ত্রিপুরা (92 189 এবং হিমাচল প্রদেশ (90.85%)। দাদরা ও নগর হাভেলি ছাড়া সমস্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পুরুষ জনসংখ মধ্যে স্বাক্ষরতার হার 90%-এর চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। 2001-2011 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এদেশে পুর জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় 7% স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময় ভারতের 7 বছর বয়স পর্যন্ত জনসংখ্যার মধ্যে 65-46% স্বাক্ষরতার হার দেখা যায়। পুরুষ ও স্ত্রী জনসংখ্যার মধ্যে এই সময়ে স্বাক্ষর হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা বিবর্তনের চতুর্থ পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
প্রজনন, মরণশীলতা এবং মুমূর্ষ অবস্থা (Fertility, Mortality and Morbidity):
কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা তার গতিপ্রকৃতির অন্যতম নির্ধারক হল প্রজনন জমতা এবং মরণশীলতা। "The term 'fertility refers to the occurrence of live births among a defined population" অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট জনসংখ্যা-প্রতি জীবন্ত শিশুর জন্মানোকেই প্রজনন (fertility) বলা হয়।
কোনো অঞ্চলে নারীদের সন্তান উৎপাদন এবং জন্মদানের ক্ষমতাকে প্রজনন বলা হয়। প্রজনন স্বাভাবিকভাবে হতে পারে। আবার নিয়ন্ত্রিত ভাবেও হতে পারে। কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নারীর স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্মদানকে স্বাভাবিক প্রজনন (Natural Fertility) বলে। কিন্তু জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হল তার নিয়ন্ত্রণ প্রজনন (controlled fertility)।
উচ্চপ্রজনন প্রবাহ বিশিষ্ট দেশসমূহ (High Fertility Trend Countries):
1985 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্কুল জন্মহার (crude birthrate) 9.6% (পশ্চিম জার্মানি) থেকে 55.1% (কেনিয়া) ছিল। 40%, স্থূল জন্মহার বা তার বেশি ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে দেখা যায়।
বর্তমানে পৃথিবীর অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হার লক্ষণীয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদিভস্ প্রভৃতি দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হারের ধারা অব্যাহত আছে। তবে বিগত 25 বছরে এই সমস্ত দেশে প্রজনন হার (fertility rate) তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।
আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত উচ্চপ্রজনন প্রবাহবিশিষ্ট দেশগুলি হল- সোমালিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, জিম্বাবোয়ে, বেনিন, মালি ইত্যাদি। এই সমস্ত দেশগুলির মহিলা-প্রতি গড় প্রজননের হার 7 জন-এর বেশি। সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদগণের মতে কুসংস্কার, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতনার অভাবের জন্য প্রজনন হার এই মহাদেশের উল্লিখিত দেশগুলিতে বেশি হয়।
ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হার লক্ষণীয়। নিকারাগুয়া, বলিভিয়া, হন্ডুরাস প্রভৃতি দেশসমূহে মহিলা-প্রতি গড় প্রজনন হার থেকে 6 জন। তবে বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশকে এখানে প্রজনন হার কিছুটা কমেছে।
৭) অবস্থান প্রচেয়ে বেশি তে 90% বশি আছে। খ্রিস্টাব্দের প্রহার ছিল র হার এই বেশি বৃদ্ধি
আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতেও মহিলা-প্রতি প্রজনন হার প্রায় 7 জন। জলবায়ু, খাদ্যাভ্যাস, কুসংস্কার, স্বাস্থ্য চেতনার অভাব প্রভৃতি কারণে এখানে উচ্চপ্রজনন হার দেখা যাচ্ছে।
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হারের কারণ(Causes of high fertility in underdeveloped and developing countries):
বর্তমানে পৃথিবীর অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চপ্রজনন হার লক্ষ করা যায়। এর বহুবিধ কারণ আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন প্রভৃতি দেশে গড় প্রজনন হার।-এর কম কিন্তু আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে নারী-প্রতি প্রজননের গড় হার 4-এর বেশি হয়। এর পিছনে বহুবিধ কারণগুলি হল
(i) অত্যধিক দারিদ্র (High Poverty): দারিদ্র্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দরিদ্র বাবা-মা মনে করেন যে, অধিক সন্তান জন্ম দিলে ভবিষ্যতে বড়ো হয়ে তারা অনেক রোজগার করবে। ফলে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহী হন না। সমাজবিজ্ঞানী কাস্ত্রোর মতে দারিদ্রদ্র্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুঘটকের কাজ করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অত্যধিক দারিদ্র্য এবং বাইরে কাজকর্মের সুযোগ-সুবিধা খুব কম থাকে। ফলে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকার সুযোগ বেশি প এই কারণে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
(ii) বহুবিবাহ এবং ধর্মীয় অনুশাসন (Remarriage and Religious bondage) : এশিয়া, এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বহুবিবা প্রচলন দেখা যায়। তা ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ধর্মের বিরোধী বলে অনেকে মনে করেন। এই কারণে জন্মরবেশি হয়।
(iii) বাল্যবিবাহ (Child Marriage): ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল প্রশ্ন দেশগুলিতে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার বেশি, বিশেষ করে মেয়েদের অনেক অল্প বয়সে বিবাহ সেখা হয়। ফলে মেয়েদের প্রজনন সময় অনেক দীর্ঘ হয়। এই কারণে প্রজনন হারও বেশি হয়।
(iv) স্ত্রী-শিক্ষার অভাব (Lack of female education): স্ত্রীশিক্ষার অভাবেও নারীদের মা প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের মধ্যে যদি শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় তাহলে তাদের বিভিন্ন চাকুরি পাওজ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষিত চাকুরীজীবী ও সংস্কৃতি সম্পন্ন মহিলাগণ ভ সন্তানের জন্ম দিতে আগ্রহী হন না।
(v) কৃষিকাজে প্রাধান্য (Priority on Agriculture): ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এই সম দেশের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা হল কৃষিকাজ। নিবিড় শ্রম প্রগাঢ় পদ্ধতিতে (Intensive fermu কৃষিকাজ করা হয় বলে জমিতে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফালে কৃষক পরিবার তার নিজের সন্তানয়ে কৃষিকাজে নিয়োগ করেন। তা ছাড়া অন্যান্য পেশাগত কাজের অভাব থাকায় দরিদ্র মানুষ খুব স্বল্প মজুরি বিভিন্ন কাজে যোগ দেন। এসব কাজের মাধ্যমে কিছু রোজগার হয়। তাই দরিদ্র বাবা-মায়েরা মনে করে অধিক সন্তান তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে অধিক আয়ের মাধ্যমে।
(vi) পরিবার পরিকল্পনার ব্যর্থতা (Failure of Family Planning Programme): অনিশ্চক্ষ কুসংস্কার, অর্থাভাব, সরকারি পরিকল্পনার অভাব, সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনা প্রভৃতি আর্থসামাজি পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য 'পরিবার পরিকল্পনা' কর্মসূচি বিশেষ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ফা জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে প্রজনন হার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
(vii) উচ্চ মৃত্যুহার (High Mortality Rate): উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভা চিকিৎসার স্বল্প সুযোগ-সুবিধা, রোগ-ব্যাধি প্রভৃতি কারণে মৃত্যুহার অনেক বেশি হয়। এজন্য বাবান অধিক সন্তানে আগ্রহী হন। কারণ অধিক সন্তান থাকলে শেষ পর্যন্ত তাঁরা নিঃসন্তান হবেন না।এ ফলে প্রজনন হার বাড়ছে।
(viii) পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা (Want of male child): আমাদের মতো দেশগুলিতে পরিবারে মায়েরা কন্যা সন্তান অপেক্ষা পুত্র সন্তান বেশি পছন্দ করেন। ফলে পুত্রসন্তান লাভের আশায় বারক সন্তান জন্ম দিতে থাকেন। কারণ তাঁদের মনে হয় ছেলের হাতে তাঁদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত ও সুরক্ষি হবে এবং পুত্রসন্তান তাঁদের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করবে।
(ix) নারী স্বাধীনতা এবং তাদের অধিকার (Woman's freedom and their rights): উন্নয়নশী এবং অনুন্নত দেশগুলিতে সন্তান ধারণে নারীর নিজস্ব মতামত বা অধিকার অনেক কম আছে। কি সেই তুলনায় উন্নত দেশগুলিতে নারীরা অনেক স্বাধীনচেতা। সন্তান সংখ্যা নির্ধারণে পুরুষব্যক্তির মতে নারীদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ হয়। এজন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রজনন হার (fertility rate) বেশি হয়.