welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জনসংখ্যা: বৃদ্ধি, বন্টন ও মানবোন্নয়ন(Population: Growth, Distribution and Human Development)

জনসংখ্যা: বৃদ্ধি, বন্টন ও মানবোন্নয়ন(Population: Growth, Distribution and Human Development)


পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম প্রধান ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য। মোট জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান চতুর্থ। এই জনবসতি সর্বত্র সমানভাবে বন্টিত নয়। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম। তবে পশ্চিমবঙ্গের (১০২৯/বর্গ কি. মি., ২০১১) সব জেলার ঘনত্বই ভারতের গড় জনঘনত্বের (৩৮২/ বর্গ কি. মি.) চেয়ে বেশী। রাজ্যের জনঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশী সেই সব জেলায় যেগুলি কৃষিকাজে অপেক্ষাকৃত উন্নত বা শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যকলাপ বা এদের সান্নিধ্যে রয়েছে। কলকাতার পৌর এলাকা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা ও হুগলীতে পৌর এলাকা যথেষ্ট বেশী ও কিছু অংশ কলকাতা শিল্পাঞ্চলের অর্ন্তগত রয়েছে। এই কারণে এই জেলগুলিতে ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ কৃষিকাজে উন্নতি করায় গ্রামীণ জনবসতিও বেশ ঘন। নিম্নে পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ জনসংখ্যা বণ্টনের স্বরূপটি দেওয়া হলঃ


লোকবসতির ঘনত্বের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ্যকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়:

(১ ) অত্যধিক ঘন জনবসতি (ঘনত্ব ১৮৫০/বর্গ কিমি.-এর বেশী) অঞ্চল-অত্যধিক জনঘনত্ব দেখা যায় কলকাতা ও হাওড়া জেলায়। জেলাদুটি পশ্চিমবঙ্গের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন কলকাতা-হাওড়া শিল্পাঞ্চল নিয়ে গঠিত। কলকাতার গ্রামীণ জনসংখ্যা সামান্য এবং হাওড়া জেলায় গ্রামাঞ্চলের বিস্তার যথেষ্ট হলেও কৃষির উন্নতির জন্য ও বড় শহরের নৈকট্যে বসতির ঘনত্ব খুব বেশী। এখানকার শ্রমশক্তির এক বড় অংশ শিল্পোৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিযুক্ত। প্রযুক্তিগত দক্ষ শ্রমিকেরও অভাব নেই এখানে।

(২) অধিক ঘন জনবসতি (ঘনত্ব ১৩৫০-১৮৫০/বর্গ কিমি) অঞ্চল-হুগলী ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলাদ্বয়ে এরূপ অধিকঘন জন বসতি দেখা যায়। রাজ্যের অর্থনৈতির প্রাণকেন্দ্র কলকাতা-হাওড়ার শিল্পাঞ্চলের নৈকট্য ও তার অর্থনৈতিক সুবিধা এবং উন্নত কৃষিকাজের আকর্ষণ, এই দুই জেলায় এত অধিক ঘন জনবসতির কারণ। এখানকার শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ শিল্পোৎপাদন এবং এক বৃহৎ অংশ কৃষিজীবিকায় নিযুক্ত।

(৩ ) জনবসতি (ঘনত্ব ৮৫০-১৩৫০/বর্গ কিমি) অঞ্চল-জনঘনত্বে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা ও হুগলীর পরেই নদীয়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলা তিনটির স্থান। এই তিন জেলাই কৃষিকার্যে সমৃদ্ধ। বর্ধমানে অনেক স্বল্প ঘনজনবসতি অঞ্চল থাকলেও বর্ধমান শহর, আসানসোল ও রাণীগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের ঘনত্ব খুব বেশী বলে জেলার সার্বিক ঘনত্ব বেশী। এখানকার শ্রমশক্তির একাংশ শিল্পকাজে নিয়োজিত হলেও জেলাগুলির অধিকাংশ জনসাধারণই কৃষিজীবী।

(৪) মাঝারি ঘন জনবসতি (ঘনত্ব ৩৫০-৮৫০/বর্গ কিমি) অঞ্চল-রাজ্যের সর্বাপেক্ষা কম ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হলেও এখানকার জনঘনত্ব খুব কম নয়। পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলাই জনবিরল নয়। এমনকি পার্বত্য দার্জিলিং-এর জনবসতিও যথেষ্ট বেশী (৪২৪/বর্গ কিমি.)। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় মাঝারি থেকে ঘন জনবসতি দেখা যায়। এগুলি হল বাঁকুড়া, বীরভূম, কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি জেলাগুলিতে। সেচ ব্যবস্থার অভাবে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় কৃষির অগ্রগতি কম বলে এই জেলা দুটিতে জনবসতির ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম। এই জেলাগুলিতে সেচ-এর সুবিধার অভাবে কৃষিকাজ মূলতঃ জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক। অন্যান্য জীবিকার সুযোগের অভাবে উদ্ধৃত শ্রমশক্তির যথার্থ সদ্ব্যবহার করা যায়নি। গ্রামাঞ্চলে হস্তশিল্পী, কারুজীবী, তম্বুবায়ী শ্রমিকের অভাব হয় না।

পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা সমস্যাঃ পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত জনঘনবসতিপূর্ণ এবং জনসংখ্যার বণ্টনও ঘটেছে অনিয়মিতভাবে। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে জনসংখ্যার ব্যাপক কেন্দ্রীভবন দেখা যায়। কিন্তু রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভাবে জনবসতির ঘনত্ব অনেক কম। সম্পদের সুষম বন্টন ও উন্নয়নের ব্যবস্থা হলে জনঘনত্বের বণ্টনে বৈষম্য দূর হওয়ার সম্ভাবনা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শিল্পোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য গতি না আসায় বেকারত্ব, দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামীন কর্মসংস্থানের অভাবে গ্রাম থেকে শহরমুখী জনস্রোত শহরগুলিতে জনসংখ্যায় অতিরিক্ত কেন্দ্রীভবন ঘটাচ্ছে। এর ফলে পৌরাঞ্চলে পৌর পরিষেবা অপ্রতুল হয়ে পড়ছে এবং পৌরাঞ্চলের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রামাঞ্চলে সম্প্রসারণ, কৃষিতে জলসেচের সুযোগ বৃদ্ধি, ভূমি সংস্কার, গ্রামীন কুটীর ও ক্ষুদ্রশিল্পোদ্যোগের উন্নতির মাধ্যমে গ্রামীন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ঘটানো প্রয়োজন: পৌরাঞ্চলে বসতি বিস্তারে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষা কর্মসূচী গ্রাম ও শহরে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাবে।

পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের গতিপ্রকৃতি: স্বাধীনোত্তর ভারতে পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী আগমনের ফলে জনসংখ্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীতে অনাগ্রহ, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দীর্ঘকাল অব্যহত থাকে। নিম্নে পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের গতিপ্রকৃতি দেখানো হলঃ

জনঘনত্ব বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতিঃ পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৯৬ জন যা ২০১১ খ্রীষ্টাব্দে তিন গুনেরও অধিক বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০২৯ জন। জনঘনত্বের এই বৃদ্ধির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ১ দেশভাগের পর উদ্বাস্তু আগমন ২ দেশে শিল্পোন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান ৩ কৃষিকার্যের সম্প্রসারণ ৪ পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ৫ পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে পশ্চিমবঙ্গে শ্রমপ্রার্থীদের অধিক সংখ্যায় আগমন ইত্যাদি।

নারী পুরুষ অনুপাতের গতি-প্রকৃতিঃ স্বাধীনতার অব্যবহৃত পরে নারী পুরুষ অনুপাতের চিত্রটিতে নারী জাতীর প্রতি অবহেলার চিত্রটি পরিস্ফুট। নিম্নের পরিসংখ্যান দেখে নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটেছে বলা যায়, কারণ প্রতি হাজারে নারী জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে ৮৬৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে ৯৪৭ জন হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা স্বাধীনতার অব্যবহৃত পরে ১৯৫১ খ্রীস্টাব্দের আদমসুমারী যেখানে ছিল ২.৬৩ কোটি, পরবর্তী ৬ দশকে তা ৪ গুনের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯.১৩ কোটি। স্বাভাবিকভাবেই শরনার্থী আগমন ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচীর অভাব, শিল্পায়নের শ্রমের যোগান দিতে ভিন রাজা থেকে শ্রমশক্তির আগমন এবং স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার এরূপ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। তবে সম্প্রতিককালে শিক্ষার প্রসারে, স্বাস্থ্য কর্মসূচীর উন্নতিতে এবং পরিবার কল্যান বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।

জনসংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গের স্থান চতুর্থ (৯ কোটি ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার, ২০১১)। জনঘনত্বের বিচারে এই রাজ্যের স্থান ভারতে দ্বিতীয় (৯০৩/বর্গ কিলোমিটারে) জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১.৩৮ শতাংশ যা ভারতের সার্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (১.৭৬ শতাংশ, ২০১১)-এর থেকে কম।

দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে প্রচুর সংখ্যায় উদ্বাস্তু আগমনে ৫০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে তা এই দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখেই বোঝা যায়। পরবর্তীকালে উদ্বাস্তু আগমন ধীরে চলতে থাকে এবং স্থানীয়ভাবে পরিবার কল্যান কর্মসূচী সম্পর্কে অনাগ্রহ ও সচেতনতার অভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়নি। তবে বিগত দুই দশকে এই বৃদ্ধির হার জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01