welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জনসংখ্যার গতিশীলে জনঘনত্বের বৈশিষ্ট্য (Population Dynamics Characteristics of Population Density)

জনসংখ্যার গতিশীলে জনঘনত্বের বৈশিষ্ট্য (Population Dynamics Characteristics of Population Density)


(i) জনবসতির ঘনত্ব মানুষ এবং দেশের আয়তনের মধ্যে পরিমাণগত সম্পর্ক (Quantitative Relationship) নির্দেশ করে। এর দ্বারা কোনো দেশের বা অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা লাভ করা যায় না।

(ii) জনবসতির ঘনত্ব দ্বারা কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা সম্পর্কে জানা যায় না। চিনের জনসংখ্যা প্রায় 134 কোটি। কিন্তু সে দেশের জনঘনত্ব মাত্র 141 জন প্রতি বর্গকিমি। ভারতের জনসংখ্যা 121 কোটির বেশি। কিন্তু জনঘনত্ব 382 জন প্রতি বর্গকিমি। সুতরাং, চিনের জনসংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক হলেও ভারতের তুলনায় চিনের জনঘনত্ব কম।

(iii) জনবসতির ঘনত্ব দ্বারা কোনো দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উন্নত। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হলেও এসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয়।

(iv) জনঘনত্ব দ্বারা কোনো দেশের জনবসতির প্রকৃত বণ্টন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায় না। চিনের জনসংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্ব্বাধিক। কিন্তু এই দেশের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে মাত্র 141 জন। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র চিনে এরকম জনঘনত্ব নেই। চিনের অধিকাংশ মানুষ প্রধানত পূর্ব এবং দক্ষিণ চিনের নদীর অববাহিকা অঞ্চলে বসবাস করে। উত্তর ও পশ্চিম চিনের জনসংখ্যা অধিক নয়। মিশরের জনঘনত্ব 84 জন প্রতি বর্গকিমিতে। কিন্তু মিশরের অধিকাংশ মানুষ নীলনদের উভয় তীরে কৃষি এবং শিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চলে বসবাস করেন।

Trewartha পাঁচ প্রকার জনঘনত্বের উল্লেখ করেছেন-

(a) গাণিতিক ঘনত্ব (Arithmatic density);

(b) পুষ্টি ঘনত্ব (Nutrition density).

(c) কৃষি ঘনত্ব (Agricultural density), এ ছাড়া

(d) অর্থনৈতিক ঘনত্ব (Economic density):

(e) গৃহ ঘনত্ব (House density) উল্লেখযোগ্য।

(a) গাণিতিক ঘনত্ব: প্রতি বর্গ পরিমাপ স্খ্যানের জনসংখ্যা এবং মোট জমির আয়তনের অনুপাতকে গাণিতিক ঘনত্ব বলে। এর সাহায্যে আমরা মানুষ এবং জমির পরিমাত্রিক (intensity) সম্পর্ক বোঝাতে পারি।

(b) পুষ্টি ঘনত্ব: প্রতি বর্গ পরিমাপ কৃষি জমিতে কত সংখ্যক লোক বসবাস করে তা দিয়ে পুষ্টি ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়। মানুষ-জমি অনুপাত (Man-land ratio) নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়। তবে সমস্ত কৃষি জমির উৎপাদন শক্তি একই ধরনের এটা মেনে নেওয়ার ফলে মানুষ-জমি অনুপাতের পরিমাণ সঠিকভাবে পাওয়া যায় না।

(c) কৃষি ঘনত্ব: নির্দিষ্ট পরিমাণ কৃষিজমি এবং এর মধ্যে কৃষিকাজে নিয়োজিত লোকের সংখ্যাকে কৃষি ঘনত্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু সমস্ত দেশে কৃষিকাজ ছাড়াও অন্যান্য কাজে মানুষ নিযুক্ত থাকেন এজন্য কৃষি ঘনত্বের সাহায্যে জনঘনত্ব সম্পর্কে আমাদের মনে সুস্পষ্ট ধারণা জন্মায় না।

(d) অর্থনৈতিক ঘনত্ব: George অর্থনৈতিক ঘনত্বের উল্লেখ করেছেন। অধিবাসীর সংখ্যা মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ অর্থনৈতিক ঘনত্ব জমির আয়তন প্রতিবর্গ কিমিতে উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ

(e) গৃহ ঘনত্ব: শহরাঞ্চলে প্রতি গৃহে বসবাসকারী গড় ব্যক্তি-সংখ্যাকে গৃহ ঘনত্ব হিসেবে ধরা হয়। নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গৃহ ঘনত্ব নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষ-জমি অনুপাত (Man-Land Ratio):

জনবসতির ঘনত্ব কোনো অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারে না। তাই বর্তমানে মানুষ-জমি অনুপাতের ধারণাটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।

মানুষ-জমি অনুপাত বলতে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে মোট কার্যকর জমি বা সম্পদ সৃষ্টিকারী জমির অনুপাতকে বোঝায়। অর্থাৎ, প্রতিবর্গকিমি কার্যকর জমিতে যত জন লোক বসবাস করে তাই হল মানুষ- জমি অনুপাত। মানুষ-জমি অনুপাত মানুষ জমির মধ্যে বিদ্যমান পরিমাণগত এবং গুণগত উভয় প্রকার সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

অতএব, মানুষ-জমি অনুপাত= মোট জনসংখ্যা মোট কার্যকর জমির পরিমাণ বর্তমানে মানুষ-জমি অনুপাতকে নিম্নলিখিতভাবে প্রকাশ করা হয়- মানুষ-জমি অনুপাত মোট জনসংখ্যা তাদের কর্মদক্ষতা সংস্কৃতি মোট কার্যকর জমি জমির উৎপাদন ক্ষমতা উদাহরণস্বরূপ মিশরের মানুষ জমি অনুপাতের উল্লেখ করা যায়। 2010 খ্রিস্টাব্দে এই দেশটির জনঘনত্ব ছিল ৪4 জন প্রতি বর্গকিমি। মিশরের অধিকাংশ এলাকা মরুভূমির অন্তর্গত। তাই সমগ্র মিশরের জনবসতি খুব কম। কেবলমাত্র নীলনদের উভয় তীরে মিশরের অধিকাংশ লোক বসবাস করে। নীলনদের তীরবর্তী এই উর্বর অঞ্চলই হল কার্যকর জমি। এই জমির পরিমাণ 34815 বর্গকিমি। এই দেশের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি 44 লক্ষ 74 হাজার জন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01