welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জনসংখ্যা: বণ্টন, বৃদ্ধি, গঠন ও জনসংখ্যানীতি(Population: Distribution, Growth, Structure and Population Policy)

জনসংখ্যা: বণ্টন, বৃদ্ধি, গঠন ও জনসংখ্যানীতি(Population: Distribution, Growth, Structure and Population Policy)


ভারতে আদমসুমারী (Census): ভারতে প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা সহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলীর পরিসংখ্যান নেওয়া হয়। একে সেন্সাস (census) বলে। জনগণনা এর অন্যতম বিষয়। বলে বাংলায় একে আদম (মানুষ) সুমারী বলে।

মনুষ্য শক্তি (Man Power): তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অফুরন্ত জনশক্তি রয়েছে যে শক্তির উৎকর্ষ সাধন দেশগুলির উন্নতির মূল ভিত্তি। মানব সম্পদ উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মনুষ্য শক্তির পরিকল্পিত উন্নয়ন যা উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্ভব করে। এই মনুষ্য শক্তি হল শ্রমশক্তি যা সম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজন হয় এবং দক্ষতা, নৈপুণ্য ও বন্টনের তারতম্যে সম্পদ উন্নয়নকে প্রভাবিত করে।

মনুষ্যশক্তির উৎস জনসংখ্যার বণ্টন: ভারত একটি জনবহুল দেশ, বিপুল তার শ্রমশক্তি। কিন্তু সেই শক্তির এক উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যবহৃত বা স্বল্প-ব্যবহৃত (Un-utilised or under utilised)। কোন দেশের জনসংখ্যাই তার শ্রমশক্তির উৎস। সেজন্য ভারতের শ্রমশক্তির যোগানদার এই জনসংখ্যার বণ্টনের স্বরূপটি জানা প্রয়োজন।

ভারতের জনসংখ্যার বণ্টন ও ঘনত্বঃ

ভারত একটি জনবহুল দেশ একথা সত্য। কিন্তু ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনের চিত্রটি যদি লক্ষ্য করা যায় তা হলে দেখা যাবে যে, তা সর্বত্র সমহারে বিস্তার লাভ করেনি। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতিতে তার বিপুল জনসংখ্যা বাধা সৃষ্টি করছে ঠিকই, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন অংশে জন-বিন্যাসের তারতম্যও ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশে যথেষ্ট বাধা সৃষ্টি করছে।

ভারতের মোট জনসংখ্যা ১২১ কোটি (২০১১)। ভারতের সর্বাধিক জনসংখ্যা রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সর্বাধিক জনঘনত্ব রয়েছে বিহারে। সর্বনিম্ন জনসংখ্যা রয়েছে অরুনাচল প্রদেশে। সর্বনিম্ন জনঘনত্ব রয়েছে অরুণাচলপ্রদেশে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জনসংখ্যার বন্টন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব:

জনসংখ্যা: ভারত জনবহুল দেশ, জনসংখ্যা হিসেবে চিনের পরেই ভারতের স্থান। ২০১১ খ্রীষ্টাব্দের আদমসুমারী অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১২১ কোটি। জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীতে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। World Population Meter (2020) গণনা অনুসারে ২০২০ সালে ভারতের জনসংখ্যা ১৩৮ কোটি, যা পৃথিবীর জনসংখ্যা (৭৮০ কোটি, ২০২০)-র প্রায় ১৭.৭%.

জনসংখ্যা ঘনত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। যথা-

(ক)অতি ঘনবসতি অঞ্চল: জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০০০ জনের অধিক:

বণ্টন-বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লী, পন্ডিচেরী ও চন্ডীগড়ের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০০০ জনের অধিক।

অতিঘনত্বের কারণ-পশ্চিমবঙ্গ, বিহার কৃষিপ্রধান অঞ্চল। অধিকন্তু পশ্চিমবঙ্গঙ্গ শিল্পে সমৃদ্ধ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ জনসংখ্যার তুলনায় আয়তনে ক্ষুদ্র হওয়ায় ঘনত্বের পরিমাণ অধিক। দিল্লি ভারতের রাজধানী। সুতরাং জনসংখ্যার ঘনত্ব অধিক হওয়াই স্বাভাবিক।

(খ) ঘন জনবসতি অঞ্চল: জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০১ থেকে ১০০০ জন:

বণ্টন-এই অঞ্চলভুক্ত রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালা, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা।

ঘনত্বের কারণ-এই সকল রাজ্যগুলি কৃষিকার্যে উন্নত। কৃষিভিত্তিক শিল্পও রয়েছে। নদী-উপত্যকা ও উপকূলীয় সমভূমি কৃষি ও শিল্পে উন্নত। অধিকন্তু উচ্চভূমিতে রয়েছে বাগিচা কৃষি ও অন্যান্য শিল্প। এই কারণেই এই সকল স্থানে বসতি ঘন।

(গ) মধ্যম ঘনবসতি অঞ্চল। ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫১ থেকে ৫০০ জন্য বণ্টন-এই অঞ্চলে রয়েছে মহারাষ্ট্র, অল্পপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, ওড়িষা, ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা ও গোয়া রাজ্য।

মধ্যম ঘনত্বের কারণ- এই রাজ্যে খনিজ উত্তোলন ও শিল্পায়ন, কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার, কৃষি ও শিল্পের উন্নতি জনবসতির বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। খনি ও শিল্পাঞ্চল ব্যতীত মালভূমি অংশে জনবসতির ঘনত্ব যথেষ্ট কম। অসম ও ত্রিপুরার পার্বত্য অঞ্চল অনেকাংশে অনুন্নত ও জনবিরল।

(ঘ) নিম্ন ঘনবসতি অঞ্চল: ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০১ থেকে ২৫০ জন।বণ্টন-এই অঞ্চলে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড।

নিম্ন ঘনত্বের কারণ-এই অঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্য অনুর্বর মালভূমিময়, বনাকীর্ণ উচ্চভূমি অঞ্চল, এবং রাজস্থান শুষ্ক জলবায়ু বলে জনবিরল। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় রাজ্যের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল। চাষাবাদের সুযোগসুবিধা না থাকায় জীবনধারণের উপকরণ সংগ্রহ কষ্টসাধ্য। তাই এই রাজ্যসমূহের জনঘনত্ব অত্যন্ত কম। রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মরুভূমি। মরু অঞ্চল প্রায় বসতিশূণ্য হওয়ায় জনবসতি এত কম।

(ঙ) অতিবিরল জনবসতি অঞ্চল: জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে অনধিক ১০০ জন।

বণ্টন-অরুনাচলপ্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই অঞ্চলভুক্ত।

বিরল বসতির কারণ- উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে পর্বত সংকুল অরুণাচলপ্রদেশ, মিজোরাম এবং বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জও জনবিরল অঞ্চল। এই সকল অঞ্চল প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যে কৃষি ও শিল্পে অনগ্রসর এবং পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় রাজ্যের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল। চাষাবাদের সুযোগসুবিধা না থাকায় জীবনধারণের উপকরণ সংগ্রহ কষ্টসাধ্য। তাই এই রাজ্যসমূহের জনঘনত্ব অত্যন্ত কম। এই কারণে জনসংখ্যা অতিবিরল।

জনঘনত্ব: ভারতের আয়তন প্রায় ৩২,৮৭,৭৮২ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১২১.০২ কোটি। সুতরাং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংক্যার ঘনত্ব গড়ে প্রায় ৩৮২ (২০১১)। কিন্তু বহু বিস্তৃত ভারতে জনসংখ্যার ঘনত্ব সর্বত্র সমান নয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোকবসতি ১০২৯ জন, বিহারে ১১০২, কেরালা ৮৫৯। অপরপক্ষে অরুণাচলপ্রদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোকবসতি খুব বিরল, মাত্র ১৭ জন। ভারতের জনসংখ্যার শতকরা ৩/৪ ভাগই গ্রামাঞ্চলে বাস করেন, বাকী ১/৪ ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে থাকেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01