জনঘনত্ব অনুসারে জনসংখ্যার বণ্টন (Population Distribution Based on Density)
জনঘনত্ব অনুসারে পৃথিবীকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) অত্যল্প বসতিযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গ কিমিতে 10 জনের কম লোক বসবাস করে)।
(২) বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গ কিমিতে 11-50 জন লোক বসবাস করে)।
ঘনবসতিযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গ কিমিতে 51-150 জন লোক বসবাস করে)।
( (৪) অতান্ত ঘন বসতিযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গ কিমিতে 151 জনের বেশি লোক বসবাস করে)।
■ (১) অত্যল্প বসতিযুক্ত অন্যল (প্রতি বর্গ কিমিতে 10 জনের কম লোক বসবাস করে।) পৃথিত যেসব অঞ্চলে প্রতি বর্গ কিমিতে 10 জনেরও কম মানুষ বসবাস করে তাদেরকে অত্যল্প বসতিযুক্ত অঞ্চ বলা হয়। পৃথিবীর অত্যল্প বসতিযুক্ত এলাকাগুলি হল-
(i) মরু এবং মন্ত্রপ্রায় অঞ্চল: উত্তর আফ্রিকার সাহারা, দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি, পশ্চিম এশিয় সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আমেরিকার আটাকাম এবং প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি অঞ্চ প্রতি বর্গ কিমিতে ১০ জনেরও কম লোক বসবাস করে।
(ii) শীতল মেরু অঞ্চল: গ্রিনল্যান্ড, কানাডার উত্তরাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা, ইউরোপ এবং এশিয় সুমেরু বৃত্ত সংলগ্ন এলাকায় লোকবসতি খুব কম। প্রবল তুষার, শৈত্যপ্রবাহ, অত্যল্প বৃষ্টিপাতের জন্য বসবাসে উপযোগী পরিবেশ এসব অঞ্চলে কম।
(iii) নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য: দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকা এবং আফ্রিকা কঙ্গো অববাহিকা এবং এশিয়ার ইন্দোনেশিয়ার কিছু কিছু এলাকায় জনবসতি কম। সারাবছর ধরে অধিক উন্নতা, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা এসব অঞ্চলে বিরাজ করে। দুর্ভেদ্য অরণ্য, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অনূর মৃত্তিকা মনুষ্যবাসের অনুপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে।
(iv) পার্বত্য অঞ্চল: এশিয়ার মধ্যভাগের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল এবং পর্বতবেষ্টিত মালভূমি অঞ্চ এবং পৃথিবীর অন্যান্য উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে, শীতল আবহাওয়া এবং বন্ধুর ভূপ্রকৃতি ঘনবসতির অন্তরা হয়েছে। অত্যল্প বসতিযুক্ত এসব অঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী অনুন্নত। কোনো কোনো অঞ্চলের মানু প্রধানত ফলমূল সংগ্রহ এবং জীবজন্তু শিকার বা মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। আবার কোনে অঞ্চলের পার্বত্য ঢালে মানুষ পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
■ (২) বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গ কিমিতে 11-50 জন লোক বসবাস করে) পৃথিবীর নাতিশীতো তৃণভূমি অঞ্চল এবং ক্রান্তীয় তৃণভূমি অঞ্চলে প্রতি বর্গ কিমিতে 11-50 জন লোক বসবাস করে। প্রধান নিম্নলিখিত এলাকায় বিরল বসতি লক্ষ করা যায়-
(i) উত্তর আমেরিকার প্রেইরি তৃণভূমি, (ii) দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস তৃণভূমি, (iii) ইউরেশিয়া স্তেপ তৃণভূমি, (iv) অস্ট্রেলিয়ার ডাউনস্ তৃণভূমি, (v) আফ্রিকার ভেল্ডস তৃণভূমি এবং (vi) ক্রান্তীয় আফ্রিকা সাভানা এবং ইউরোপের সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চল। ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য বা উয় মরু অঞ্চলের মতো একট প্রতিকূল পরিবেশ না হলেও এসব অঞ্চলে মহাদেশীয় জলবায়ু এবং অল্প বৃষ্টিপাত ঘনবসতি গড়ে ওঠা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা প্রধানত পশুপালন এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক কৃষিকে কেন্দ্র করে গাই উঠেছে। এখনও তৃণভূমি অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে পশুপালক যাযাবরদের লক্ষ করা যায়। ইউরেশিয়া স্তেপ অনন্তলের কিরঘিজ এবং মোঙ্গল, দক্ষিণ আমেরিকা পম্পাস অঞ্চলের গাউচারা পশুপালক যাযাবর
■ (৩) ঘনবসতিযুক্ত এলাকা: (51 থেকে 150 জন মানুষ প্রতি বর্গ কিমিতে বসবাস করে)। ঘনবসতিয় এলাকা নিম্নলিখিত অঞ্চলে লক্ষ করা যায়- (1) দক্ষিণ এশিয়ার মায়ানমার, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দে (ii) ইউরোপ এবং আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, (iii) উত্তর আমেরিকায় প্রেইরি এবং ইউরোপের কু অঞ্চল এবং (iv) মধ্য আমেরিকার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল। প্রধানত উন্নত কৃষিকার্যের জন্য এই অ্যা জনবসতি বেশি।
■ (৪) অত্যন্ত ঘনবসতিযুক্ত অঞ্চল: (প্রতি বর্গ কিমিতে 150 জনের বেশি মানুষ বসবাস করে)।
(1) দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নদী অববাহিকা অঞ্চল। ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি মায়ানমারের ইরাবতী-সালুইন সমভূমি, চিনের ইয়াংসি-কিয়াং ও হোয়াংহো নদীর অববাহিকা অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। (ii) পশ্চিম ইউরোপের কৃষি, শিল্প এবং ব্যাবসাবাণিজ্য উন্নত অঞ্চলসমূহ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পাঞ্চল এই ধরনের এলাকা।