welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের কাগজ শিল্প(Paper Industry of India)

 ভারতের কাগজ শিল্প(Paper Industry of India)


উৎপাদনের ইতিহাস:

কাগজের ব্যবহার ভারতে প্রাচীনকাল থেকে ছিল। তবে তা ছিল হাতে তৈরি (hand-made) কাগজ। দেশের প্রথম কাগজকলটি দেড়শ বছরেরও বেশি আগে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে স্থাপিত হয়। এরপর একাদিক্রমে ১৮৭০-এ বালিতে, ১৮৮২-তে টিটাগড়ে, ১৮৮৭-তে পুনেতে এবং ১৮৮৯-এ রানিগঞ্জে কাগজের কল স্থাপিত হয়। অর্থাৎ সেই উনবিংশ শতাব্দীতেই কাগজ শিল্পে দেশ যথেষ্ট উন্নতি করে। ১৯১৮-তে নৈহাটিতে আরো একটি কাগজ কল স্থাপিত হয় এবং এভাবে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কাগজ কলের মোট সংখ্যা হয় ১টি। স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে কাগজ শিল্পের আরো উন্নতির জন্য চেষ্টা করা হয়। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে নেপানগরে ভারতের প্রথম নিউজপ্রিন্ট বা খবরের কাগজ ছাপার কাগজকল স্থাপিত হয়। বর্তমানে ভারতে ছোটো বড়ো মিলিয়ে কাগজকলের সংখ্যা ৫ শত প্রায়। তবে এর মধ্যে ২০১টি কল নানা কারণে বন্ধ রয়েছে।

অবস্থান ও অবস্থানের কারণ:

ভারতে কাগজ শিল্পে অগ্রণী রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অস্ত্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি। কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাডু, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ ও অসমেও কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে।

মহারাষ্ট্র: কাগজ উৎপাদন ক্ষমতার বিচারে বর্তমানে মহারাষ্ট্রের স্থান শীর্ষে (প্রায় ১৭%)। রাজ্যে কাগজ কলের সংখ্যা ৭১। মহারাষ্ট্রে কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে।

 পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন বাঁশ, কিছু নরম কাঠ, কাষ্ঠমন্ড ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে মুম্বাই বন্দরের সুবিধা,থেকে সুলভ বিদ্যুৎ,শিল্পাগলে ব্যবহৃত পুরনো পশ্চিমঘাট অঞ্চলের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ শিল্পাঞ্চলে উৎপন্ন রাসায়নিক কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা এবং শিক্ষা, শিল্প ও কাগজ ও ছেঁড়া কাপড়।

ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে এক বিরাট বাজারের সুবিধা ইত্যাদির দ্বারা।

বল্লারপুর, পুনে, খোপালি, কল্যাণ, নাসিক, আওরঙ্গাবাদ কাগজ শিল্পের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র।

গুজরাট: গুজরাটে ছোটো বড়ো মিলিয়ে ৬৮টি কাগজের কল আছে। মূলত সাবাই ঘাস, ইউক্যালিপ্টাস, কাঠ ও পুরনো কাপড় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাজকোট, সুরটি, ভারুচ, ভাদোদরা, সোনগাধ, ভাপি, গোন্ডাল প্রভৃতি কাগজ উৎপাদন কেন্দ্র।

উত্তর প্রদেশ: হিমালয় পাদদেশ থেকে সংগৃহীত সাবাই ঘাস, বাঁশ ও উচ্চ পার্বত্য গাত্র থেকে নরম কাঠ: চিনিকলগুলি থেকে আখের ছিবড়ে। নিকটবর্তী রাসায়নিক শিল্পকেন্দ্র থেকে রাসায়নিক পাওয়ার সুবিধে ইত্যাদি এবং লক্ষ্ণৌ, দিল্লি, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী প্রভৃতি অঞ্চলের শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নতি কাগজের চাহিদাকে বৃদ্ধি করেছে। এজন্য এই রাজ্যের সাহারনপুর, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, গোরক্ষপুর, মুজাফরনগর, গাজিয়াবাদ ও বারাণসীতে কাগজের কল স্থাপিত হয়েছে।

তামিলনাড়ু : ছোটো বড়ো প্রায় ৩১টি কাগজের কল এই রাজ্যে অবস্থিত। স্থানীয় বাঁশ এবং পুরানো ছেঁড়া কাগজ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিলামপত্তি, ইরোড, স্বামিনাথপুরম, মাদুরাই প্রভৃতি কাগজ উৎপাদন কেন্দ্র।

অন্ধপ্রদেশ: পূর্বঘাট পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন বাঁশ, ঘাস স্থানীয় জনসাধারণের ব্যবহৃত পুরনো কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, স্থানীয় সুলভ জলবিদ্যুৎ; শিল্প শহরগুলির চাহিদায় অন্ধ্রপ্রদেশের শিরপুর, রাজমুক্তি প্রভৃতি স্থানে কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে।

পাস্তাব: রাজ্যে ৩৭টি ছোটো বড়ো কাগজের কল রয়েছে। সাবাই ঘাস, বাঁশ ও পুরনো কাগজ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হোসিয়ারপুর, সাঞ্জুর, রাজপুর প্রভৃতি কাগজ উৎপাদনকেন্দ্র।

 কর্ণাটক: কর্ণাটকে ১৪টি কাগজের কল আছে। বাঁশ এবং চিনিকারখানাগুলি থেকে প্রাপ্ত আখের ছিড়ে (Bagasse) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভদ্রাবতী, বেলাগুলা, ডান্ডেলি প্রভৃতি কাগজ উৎপাদন কেন্দ্র।

মধ্যপ্রদেশঃ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যায় বুন্দেলখণ্ড মালভূমি ও রেওয়া অঞ্চলে। বনভূমিতে বাঁশ, কাঠ ও ঘাস সুলভে প্রচুর পাওয়া যায়। এই সুবিধায় নেপানগর, ভূপাল, বিলাসপুর, বিদিশা, রাজগড়, সাডোল, সিহোর-এ কাগজ কলগুলি গড়ে উঠেছে। মধ্যপ্রদেশে কাগজশিল্পে বৈচিত্র্য আছে। কারণ নেপানগরে তৈরি হয় নিউজপিন্ট, হোসেঙ্গাবাসে নোট ছাপার কাগজ (Currency Printing paper), अनमन ও শিল্পে ব্যবহৃত কাগজ তৈরি হয়।

ওড়িশা: মধ্যভারত ও ছোটোনাগপুর মালভূমিতে উৎপন্ন বাঁশ ও ঘাস-এর সাহায্যে এবং পূর্বাঞ্চলের বিরাট চাহিদা মেটাতে ওড়িশার ব্রজরাজনগর, জেকেপুর, বালগোপালপুর-এ কাগজ কল গড়ে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গঃ পশ্চিমবঙ্গো গঙ্গা নদীর তীরে টিটাগড়, কাঁকিনাড়া, নৈহাটি, দক্ষিণেশ্বর, হালিশহর, ধাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী, চাকদহ এবং বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জে কাগজ কলগুলি অবস্থিত ছিল। তবে বর্তমানে দক্ষিণেশ্বর, চাকদহ, ত্রিবেণী, ছাড়া বাকি কলগুলি বন্ধ হয়ে আছে। এই রাজ্যে কাগজশিল্পে একসময়ে শ্রেষ্ঠত্বের মূলে ছিল:

(১) কাঁচামালের সুবিধা উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার সাহায্যে কাগজ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ নিম্নগঙ্গা অববাহিকা, উত্তরবঙ্গের তরাই অঞ্চল, বিহার ও ওড়িশা থেকে, সাবাই ঘাস উত্তরপ্রদেশ ও মধ্য হিমালয়ের পাদদেশ থেকে, পুরনো কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, চট ইত্যাদি শিল্পাঞ্চল থেকেই সংগৃহীত হয়। রাসায়নিক কাঁচামাল শিল্পাঝলেই পাওয়া যায়।

(২) শক্তিসম্পদ ও জলের সুবিধা রাণিগঞ্জ ও ঝরিয়া কয়লাখনির নৈকট্য, বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা, গঙ্গা ও দামোদরের জল সরবরাহ এখানে কাগজ শিল্পের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।

(৩) বাজারের সুবিধা কলকাতা শহর ও নিকটবর্তী অঞ্চলে জনবসতি খুব বেশি। অসংখ্য স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান-এর ব্যাপক চাহিদায় কাগজের এক বিরাট বাজার হাতের কাছেই গড়ে উঠেছে।

(৪) বন্দরের সুবিধা প্রথম পর্যায়ে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করতে কলকাতা বন্দর সহায়ক হয়েছে। কাগজ শিল্পে উন্নতি ঘটিয়ে উদ্বৃত্ত কাগজ উৎপন্ন করতে পারলে রপ্তানি বাণিজ্যে এই বন্দর খুব সাহায্য করবে।

(৫) শ্রমিকের সুবিধা-অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে স্থানীয় ও আশেপাশের রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকের অভাব নেই।

বিহার: বিহারে পালামৌ ও ছোটোনাগপুর মালভূমির অন্যান্য অঞ্চল থেকে আনা বাঁশ, সাবাইঘাস এবং চিনিকলের বর্জ্য ছিবড়ে পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। ডালমিয়ানগর, রামেশ্বরনগর, সমস্তিপুর কাগজ শিল্পের কেন্দ্র।

নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন (Production of Newsprint): বর্তমানে দেশে ৪টি বৃহৎ সরকারী নিউজপ্রিন্ট বা খবরের কাগজ ছাপার কাগজ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি হল- মধ্যপ্রদেশের নেপানগরে অবস্থিত ন্যাশানাল নিউজপ্রিন্ট এন্ড পেপার মিল্স লিমিটেড (NIPA): কেরালার কোট্রায়াম-এ অবস্থিত হিন্দুস্থান নিউজপ্রিন্ট লিমিটেড (HNL): কর্ণাটকের ভদ্রাবতী-র মাইশোর পেপার মিল্স লিমিটেড (MPML); এবং তামিলনাড়ুর কাগিথাপুরম-এ অবস্থিত তামিলনাড়ু নিউজপ্রিন্ট এন্ড পেপার লিমিটেড (TNPL)। এই কলগুলির মোট উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৩-৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন। বেসরকারি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বৃহৎ নিউজপ্রিন্ট কারখানাটি গুজরাটের ভাপিতে অবস্থিত। এই কাগজ কলের নিউজপ্রিন্ট ও কাগজ উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ৭৫ হাজার মে. টন ও ৬৫ হাজার মে. টন।

বর্তমানে দেশে নিউজপ্রিন্ট-এর প্রকৃত উৎপাদন ৪ লক্ষ টন হলেও চাহিদা প্রায় ৭ লক্ষ টন-এর। এজন্য ভারতকে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করতে হয়। চিন, জাপান, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি প্রভৃতি দেশ থেকে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করা হয়।

সহজেই অনুমেয়। কৃষি বনসৃজন মাধ্যমে কাজ কাঁচামাল উৎপাদন। পুনঃব্যবহারযোগ্য কাঁচামালের রাসায়নিক কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি। পরিবহনের সম্প্রসারণ ও সুবন্দোবস্ত। • উপযুক্ত লগ্নির সাহায্যে যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ: বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে এর সরবরাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি কাগজ শিল্পের দৃঢ় অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01