welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আধুনিক নগর পরিকল্পনা (Modern city planning)

আধুনিক নগর পরিকল্পনা (Modern city planning)


কোনও একটি শহর বা নগরাঞ্চলের যাবতীয় পরিসেবা তথা পরিকাঠামোগুলিকে দীর্ঘকাল যাবৎ ব্যবহার কিংবা অপব্যাবহারের ফলে ধীরে ধীরে সেখানকার অবকাঠামো, স্থাপত্য, সৌন্দর্য, বিভিন্ন পরিসেবা এমনকি সংলগ্ন ভূমিভাগ বা স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতি বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। কোনো পৌরক্ষেত্রে এই অব্যবস্থা যদি দীর্ঘকাল বজায় থাকে, তাহলে অচিরেই সেটি একটি পৌর সমাধিস্থল বা মৃত শহরে (Necropolis)-এ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিকে সামলে উঠতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার আওতায় শহর বা নগরগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ, পুনর্বাসন এবং পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করে থাকে। এই ধরনের সংস্কারমূলক প্রচেষ্টাকেই নগর পুনন্দবিীকরণ বা নগর পুনঃউন্নয়ন (Urban renewal) বলা হয়, যা আধুনিক নগর প্রতিস্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। সাধারণত প্রতিটি দেশ তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনুযায়ী শহর বা নগর পুনর্নবীকরণ সংক্রান্ত বহুল প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে উন্নততর নগরায়িত সমাজ গঠনের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে।

মূল নীতি (Basic Principles) 1958 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে নেদারল্যান্ডের দ্যা হাগ-এ অনুষ্ঠিত প্রথম নগর পুনর্নবীকরণের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে চিহ্নিত করেছিল, যেগুলি হল-

(a) পুনঃউন্নয়ন (Redevelopment) কোনো শহর বা নগরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন জরাজীর্ণ বিল্ডিংগুলির অপসারণ, মেরামত, বসতি অঞ্চলের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ একাধিক কর্মপন্থাকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও, বেশিরভাগ পশ্চিমী সভ্যতার উন্নত দেশগুলিতে, পুরানো শহরগুলিকে পুনর্নির্মাণ করার প্রকল্প অনেকাংশে বাতিল করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও অনেক উন্নয়নশীল দেশে, পুরানো জরাজীর্ণ শহর এমনকি স্থানীয় বস্তি এলাকার পুনর্গঠনের মাধ্যমে আবাসন ব্যবস্থার উন্নতিসহ প্রতিটি বিষয়কেই যথেষ্ট প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

(b) পুনর্বাসন (Rehabilitation): নগর পুনর্বাসন আসলে এমনই একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্থানীয় বসতি অঞ্চলগুলি সংশ্লিষ্ট পরিবেশ মোতাবেক সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের সমস্ত কাজ সাফল্যের সাথে গৃহীত হয় দেওয়া হয়ে থাকে। যে কোনও নগরের পুনরুজ্জীবনে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত একটি উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হলেও, রাজনৈতিক কারণে এটি প্রায়শই অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।

(c) একত্রীকরণ (Integration): নগর পুনরুজ্জীবনের তৃতীয় নীতিগত পন্থাটি হল একত্রীকরণ দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে পুনর্বাসন এবং পূনঃউন্নয়নকে পরিপূরক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে উন্নয় পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী দিকগুলিকে বাস্তবসম্মতভাবে প্রয়োগ করা হয়। এটি অত্যন্ত একটি নমনীয় প্রক্রিয়া হওয়ায়, যে কোনও নগরের উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে এর দ্বারা যথেষ্ট সময়োপযোগী এবং লাভজনক ফল পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে, অসংখ্য ভৌগোলিক নগর পরিকল্পনার উল্লিখিত কাঠামোগত দিকটির প্রয়োগমূলক কৌশলকে একত্রে "Urian development cycle" রূপে দেখে থাকেন।

আধুনিক নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of modern urban planning):


আধুনিক নগর পরিকল্পনার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-

(1) আধুনিক সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হল নগর পরিকল্পনা, যেখানে পূর্বনির্ধারিত একাধিক নবীকরণযোগ্য এবং পুনঃসংস্কারমূলক কর্মসূচীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

(ঘ) আধুনিক নগর পরিকল্পনায় সম্প্রদায়গত অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা, ক্রমপরিবর্তনশীল সামাজিক চাহিদা, জনগোষ্ঠীর বাসস্থান, নগরের পরিবেশগত ধারণ ক্ষমতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, পরিবহণ, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, নান্দনিকতা সহ একাধিক পরিসেবা ক্ষেত্রগুলি সমানভাবে গুরুত্ব পায়।

আধুনিক নগর পরিকল্পনায় গৃহীত সমস্ত পুনগঠন এবং পুনর্নবীকরণের কৌশলগুলিকে সময় ও প্রযুস্তিগত পরিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে প্রয়োগ করা হয়।

(iv) আধুনিক প্রতিটি নগর পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং বিবিধ কর্মকৌশলের সুষ্ঠু সমন্বয় খাটিয়ে থাকেন।

(v) আধুনিক নগর পরিকল্পনায় উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন বসতি বিন্যাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(vi) পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ আধুনিক নগরায়িত ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাস ঘটাতে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বাজেট ধার্য করে থাকে।

(vii) এখানে গবেষণা, বিশ্লেষণ, আইন, নীতি, অনুশীলন এবং পূর্বাভাসের কর্মপন্থাগুলিকে আধুনিক নগর এলাকার আর্থসামাজিক এবং প্রশাসনিক সুবিধার নিরিখে প্রয়োগযোগ্য করে তোলা হয়।

আধুনিক নগর পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য মানদণ্ড(Some important criteria of urban planning):

আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিচার্য প্রধান কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মানদণ্ড হল-

(a) সুস্থ এবং নিরাপদ বাসস্থান,

(b) গতিশীল জীবনযাত্রা,

(c) সমৃদ্ধ নগর অর্থনীতি,

(d) উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা,

(e) অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ সরবরাহ। খাদ্য, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা প্রভৃতি),

(f) নগর কল্যাণকামী সুস্থ সমাজ,

(g) নিশ্চিত কর্মসংস্থান

(h) বিনোদন ও সৌন্দর্যায়ন

(i) টেকসই উন্নয়ন প্রভৃতি।

 আধুনিক নগর পরিকল্পনার বিবেচনাযোগ্য কয়েকটি বিষয়(Some notable issues to consider in Modern town planning):

বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নগর পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করে, সেখানে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মনোনিবেশ ঘটিয়ে থাকে, যেমন-

এলাকাভিত্তিক পরিবেশে মনোযোগ (Focus on the local environment): নগর পরিকল্পনায় সাধারণত তিন ধরনের পরিবেশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়-

(i) ভৌত পরিবেশ (Physical environment): নগর পরিকল্পনায় শহর বা নগরের ভৌত পরিবেশরূপে এলাকার অবস্থান, ভূমিরূপগত সংস্থান, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস, স্থানীয় জল ভান্ডার, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ এমনকি জলবায়ুগত উপাদানগুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। এখানে ভৌত পরিবেশ থেকে পাওয়া'সব ধরনের তথ্যকে অনুধাবন করে সঠিক সিদ্ধান্তগুলিকে সরাসরি নগর পুনর্গঠনে কাজে লাগানো হয়। 

(ii) সামাজিক পরিবেশ (Social environment): যে কোনও পৌর ক্ষেত্রের সামাজিক পরিবেশের উপাদান খুলি (যেমন-জন জনসংখ্যা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আচরণ প্রভৃতি) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্খা, সুচিশীলতা এবং উন্নয়ন কার্যে দায়বন্ধতা উপলব্ধিতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। সেই কারণে, সঠিকভাবে বিশ্লেষিত সামাজিক পরিবেশগুলি নগর পরিকল্পনাকে আরও সময়োচিত এবং বাস্তবসম্মত করে তোলে।

(iii) অর্থনৈতিক পরিবেশ (Economical environment): পৌরক্ষেত্রের উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতায়। পরিকল্পনাকারীরা শিল্পায়ন, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ প্রভৃতি অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতেও যথেষ্ট মনোনিবেশ করে থাকেন।

নান্দনিকতা (Aesthetics): বর্তমানে পৃথিবীর উন্নত এবং উন্নয়নশীল সমস্ত দেশেই নগর পরিকল্পনায় স্থাপত্য বা অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, ট্রাফিক, গার্ডেনিং, জোনিং, পর্যটন সহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রের নান্দনিকতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা (Safety and security): প্রাচীন বা মধ্যযুগের মতোই নগরতন্ত্রে মানুষকে নিরাপত্তা প্রদান এবং যাবতীয় সুরক্ষা প্রদানগত দায়বদ্ধতা আজকের দিনে সমানভাবে রয়ে গেছে। বর্তমানে নগর পরিচালনায় প্রশাসনিকভাবে উপযুক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, অগ্নিকান্ড, কন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি সহ একাধিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জরুরিকালীন বিভিন্ন পরিসেবা প্রদান করার বিষয়গুলিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে।

পুনর্গঠন এবং পুনর্নবীকরণ (Restructuring and renewal): পৌরক্ষেত্রের স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা বা সংস্কৃতি প্রভৃতি হল আধুনিক সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। সেই কারণে, আধুনিক নগর পরিকল্পনায় সমস্ত ঐতিহ্যবাহী ভবন, রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয় প্রভৃতির পুনগঠিন এবং পুনর্নবীকরণকে অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে কার্যকর করা হয়ে থাকে।

ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব (Feel the need for the future): বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অধিকাংশ নগর পরিকল্পনায় ভবিষ্যৎকে অনুধাবন করে পরিসেবামূলক যাবতীয় কার্যাবলীকে এগিয়ে রাখার বিষয়টিকে যথেষ্ট নজরে রাখে। বিশেষকরে, নগরমুখী উন্নয়নের পদক্ষেপগুলি কিভাবে আগামীদিনে মানুষের যাবতীয় প্রত্যাশা পূরণের উপযোগী হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন কার্যকরী সিন্ধান্ত প্রতিটি নগর পরিকল্পনায় আগেভাগেই স্থির করে রাখা হয়। এজন্য, নগর পরিকল্পনাবিদেরা পৌর বাসিন্দাদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমগুলিকে সমর্থন জানিয়ে থাকেন।

জনবসতির আকার (Size of Settlement): আধুনিক নগর পরিকল্পনায় জনবসতির আকার সংক্রান্ত বিষয়টিও সর্বাধিক মান্যতা পেয়ে থাকে। আসলে, কোনো নগর ক্ষেত্র তার নিজস্ব জনসংখ্যার দ্বারা যত বর্ষিত হয়, ততই নগরের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বেহাল দশা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সেইকারণে, আধুনিক নগর পরিকল্পনায় জনবসতির ক্রম আয়তনিক বিন্যাসবিধিকে যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।

গ্রাম্য পৌরায়ণ (Rurbanization): বর্তমানে দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীতে নগরায়ণের হাত ধরে গ্রাম আধুনিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল গ্রাম। পৌরায়ণ বা Rural urbanization পদ্ধতি। 1975 খ্রিস্টাব্দে Bauer and Roux এ প্রসঙ্গে বলেছেন- "Rarismization is the diffusion of urban activities and population in rural spaces around the metropolis. Rurbanizanen includes a caluation of the landscape and Rurbanisation the quality of moman habitat.

এই ধরনের সংস্কারমূলক প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পরিবহণ, অর্থনীতি, এবং পরিসেবাগত সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পৌরক্ষেত্রের মতোই তুলনামূলক উন্নত একটি মিশ্র অঞ্চলে উপনীত হয়। U, অনেক সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরাঞ্চলে বাসস্থান বা অন্য কোনও অর্থনৈতিক কার্যাবলীর জন্য স্থান সংকুলানের অভাব ঘটলে, সেখানকার বাসিন্দারা মূল নগরাঞ্চলের বাইরের দিকে অর্থাৎ প্রান্তিক কোনো গ্রামে থাকা অঞ্চলের চারপাশে বসতি স্থাপন করেও এই ধরনের আধাপৌর এলাকা গড়ে তোলে। গ্রাম্য পৌরকৃত এলাকাগুলি স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য বেশ কিছু মৌলিক সুবিধা প্রদান করে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হল মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানীয় জল, কর্মসংস্থানের সুযোগ, সুস্থ ও চমতিশীল সামাজিক কাঠামো, স্বাস্থ্য পরিসেবা, নতুন বাজার গঠন প্রভৃতি। এরফলে, আঞ্চলিক উন্নয়নের নিরিখে গ্রামীণ। এবং পরবে জেরে পারিনা খ্রিস্টাব্দে মার বিভাজনগত প্রেক্ষাপটটি যথেষ্য করফলে, আপনি প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১০৪। খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জনবসতি বিশেষজ্ঞ Charles Josiah Galpin সর্বপ্রথম Kurtan" শব্দটি প্রয়োগ করেছিলেন।

উদ্দেশ্য (Purpose): গ্রাম্য পৌরায়ণ প্রক্রিয়া ঘটানোর মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি হল।

 • গ্রামীণ অঞ্চলগুলিকে উন্নত পরিসেবা প্রদানকারী ক্ষেত্রে উপনীত করা।

• গ্রামীণ সম্পদের সুবিবেচনামূলক ব্যবহারের মাধ্যমে সেখানকার অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করে তোলা।

• গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলের দিকে অভিবাসন সংক্রান্ত ঘটনাগুলিকে যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।

• গ্রামীণ বসতিগুলিকে সুষ্ঠুভাবে প্রতিস্থাপন করা।

• শহর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি ঘটানো।

• গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(১) মূল নগরী থেকে গ্রাম্য-পৌর উপকণ্ঠগুলি বেশ কিছুটা দূরে অবস্থান করে।

(ii) এই ধরনের এলাকাগুলিতে কৃষিকাজের প্রাধান্য থাকলেও নগরীয় ক্ষেত্রের বেশ কিছু গুণাবলী যেমন-আধুনিক গৃহ কাঠামো, গোষ্ঠীবদ্ধ অথচ কিছুটা ছাড়া ছাড়া বাসগৃহ, দোকান-পাট, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কিং সুবিধা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র প্রভৃতির নিদর্শন মেলে।

(iii) এখানে জমির মূল্যমান ক্রমশ বাড়তে থাকে।

(iv) বেশীরভাগ গ্রাম্যপৌর এলাকায় জমির মিশ্র ব্যবহার যথেষ্টভাবে লক্ষণীয়। বিশেষত এখানকার বেশীরভাগ জমিগুলিকে নিত্য প্রয়োজনীয় ফল-মূল, শাক-সবজি, পোলট্রি ফার্ম, দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন, ছোটো-মাঝারি মাপের শিল্পকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিশেষ প্রাধান্য পায়।

• যেমন- বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ঔপনিবেশিক প্রভাব এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গ্রামা পৌরকরণের প্রভাব সমগ্র পৃথিবীতেই কম-বেশি লক্ষ করা গিয়েছিল। অবশ্য, আজকের দিনে গ্রাম্য পৌরকরণের ধারণাটিকে কাজে লাগিয়ে গার্ডেনসিটি অথবা স্থিতিশীল শহর গঠনের বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।মহানগর এলাকার জন্য পছন্দসই যে কোনও একটি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে সমসাময়িক উন্নততর পরিষেবাগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়। ভারতে কৌশলগত পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেগুলি হল-

শহর বা নগর জুড়ে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সর্বাধিক কমিউনিটি স্পেস তৈরি, নাগরিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, অথবা নগর পর্যটনক্ষেত্রের উৎসাহ বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনা (Land use planning): নগরাঞ্চলে যে পরিকল্পনার আওতায় এলাকাভিত্তিক ভূমি ব্যবহারের যাবতীয় নীতিগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সাহায্যে পরিচালিত হয়, তাকেই শহুরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা বলা হয়। নগর বা মহানগরগুলিতে এই ধরনের পরিকল্পনা নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে স্থির করা বিভিন্ন আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে, নগরাঞ্চলে আবাসিক, বাণিজ্যিক, পরিবহণ, জনপরিসেবামূলক ক্ষেত্র এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সম্পদের কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার বা বণ্টন্টন এবং পরিবেশের দক্ষ ব্যবস্থাপনারে সংক্রান্ত কেরো আধুনিক ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনায় আরও বেশ মিকেন্দ্রিক দূষণ জমির মূলাদি লে সম্প্রসারণ বোলিংকে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি।

মহা পরিকল্পনা (Master plan) মহা পরিকল্পনা বা মাস্টার প্ল্যান হল একটি দীর্ঘমেয়াদী গতিশীল পরিকল্পনা যা সাবেলের বিশেষ কয়েকটি সমস্যা নিরসন, পরিসেবা বৃদ্ধি এবং সার্বিক বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। এই ধরনের পরিকল্পনাগুলিকে বহুমাত্রিক এবং ব্যাপক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাও বলা হয়ে থাকে, যা রূপায়দের করা হয়। 10-30 অথবা, 20 - 25 বছর। জনসাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত একল মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে নগরাঞ্চলের জনসংখ্যা, অর্থনীতি, আবাসন, পরিবহণ, সম্প্রদায়গত সুযোগ-সুবিধা এবং উপযুক্ত জমি বাজারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত থাকে।

যেহেতু, মাস্টার প্ল্যানগুলি কোনও একটি শহর বা নগরাঞ্চলের বাস্তব পরিস্থিতিগুলিকে প্রতিফলিত করে, সেই কারণে, নগর পুনগঠনের সমস্ত ধরনের উদ্যোগগুলি এখানে যথাযথভাবে লক্ষ করা যায়। যদি, এই ধরনের পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনাকে ইঙ্গিত করে, কিন্তু তা সত্ত্বেও, এটিকে সময় এবং পরিস্থিতির সাথে সাথে প্রশাসনিক বা পরিস্থিতিগত সুবিধা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সান্তিয়াগোর জনসংখ্যা ভিত্তিক মাস্টার প্ল্যানের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কার্যক্ষেত্রে সেটিকে মোট 29 বার পরিবর্তন করা হয়েছিল। অবশ্য, তৎকালীন সেই পরিকল্পনায় এই ধরনের নমনীয়তা সেখানকার রিয়েল এস্টেট সেক্টর এবং হাউজিং ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকরী হয়েছে।

সাধারণত, যে কোনও নগরকেন্দ্রিক মাস্টার প্ল্যানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক সমস্যাস্থল 'অথবা সস্তাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে সনাক্ত করে, তার জন্যে যথাযথ আর্থিক বাজেট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়ে থাকে। মাস্টার প্ল্যানিংয়ের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল-

• প্রতিটি নগর পরিকল্পনার কর্মসূচীকে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিবেচনা করে তার বাস্তবায়নের জন্যে নিদিষ্ট সময়সূচী বেঁধে দেওয়া।

• পরিকল্পনার যাবতীয় কার্যক্রমগুলিকে স্থানিক সমস্যার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়িত করা।

• ক্ষেত্র বিশেষে পরিকল্পনার বাজেট বরাদ্দকরণে সরকারী এবং বেসরকারি উভয় খাতগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া।

• নগর পূর্ণসংস্করণে জনসাধারণের সুবিধা ও অসুবিধার দিকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা।

• সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনায় স্থানীয় সম্প্রদায়কে সংযুক্তকরণ এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গঠনমূলক কার্য সম্পাদন প্রভৃতি।

• যেমন-দিল্লি মাস্টার প্ল্যান, গুরুগাঁও মাস্টার প্ল্যান, ফরিদাবাদ মাস্টার প্ল্যান, নয়ডা মাস্টার প্ল্যান, গাজিয়াবাদ মাস্টার প্ল্যান প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন নগর সংস্কারে একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে।

নগর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা (Urban Revitalization Planning): নগর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা হল এমন একটি কৌশল যেখানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক জরাজীর্ণ নগরাঞ্চলের অবকাঠামো বা স্থানীয় পরিকাঠামো এবং সমস্যাসংকুল বিভিন্ন পরিস্থিতির উন্নতিকরণে একাধিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যে সমস্ত শহর বা নগর সবচেয়ে প্রাচীন সেখানে মাস্টার প্ল্যানের নিপ্রীতে সাধারণত নগর পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনাটিকে সর্বাধিক গ্রহণ করা হয়।

নগরীয় পরিবেশ পরিকল্পনা (Urban Environmental Plan- ning): অনেকসময় নগরোন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পরিসর, এমনকি নগরকেন্দ্রীক বিভিন্ন অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ পরোক্ষভাবে নগরীয় পরিবেশ রক্ষার প্রতিদ্বন্দ্বী পরিস্থিতিরূপে বিবেচিত হয়। সেই কারণে, নগর পরিকল্পনায় বর্তমানে পরিবেশগত সমস্ত ধরনের প্রেক্ষাপট এবং নগরের টেকসই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের নীতিগুলি অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। এই ধরনের নগরমুখী পরিবেশ পরিকল্পনার বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ প্রতিরোধ, জলাভূমি ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল রক্ষা, বন্যা কবলিত অঞ্চলে উচ্চ সংবেদনশীল প্রযুক্তির ব্যবহার, উপকূলীয় শহর গুলিকে সুনামী, ঘূর্ণিঝড় এবং তুমি অবনমনের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা প্রভৃতি। নগরাঞ্চলগুলিতে পরিবেশ পরিকল্পনাকে সাবেথ বাস্তবায়িত করতে পারলো, প্রাকৃতিক এবং মানবকেন্দ্রীক যাবতীয় ব্যবস্থার মধ্যে সার্বিক ভারসাম্যর সম্পর্কটির সম্পদের সীমাব্যতা, স্বাতেলটার এতি সানীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রাকে অনেকাংশে রোধ করা যায়। সেই কারণে, UNEP রীর স্বকার করে নিয়েছে পরিবেশগত সংবেদনশীলতা যে নগর পরিকল্পনায় নিশ্চিত করা হয়, সেখানে কদমও NEB স্বাদমূলক নীতি বা আদর্শ পদক্ষেপগুলি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোয়। সিটিস আলায়েন্স (CA) এবং ইন্টারন্যাশনের চ্যাট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IIED)-এর সাথে যৌথ সহযোগিতায়, UNEP বিশ্বের বেশ সবকটি দেশে নগর পরিকল্পনায় পরিবেশগত একাধিক নীতিকে কৌশলীভাবে প্রয়োগ করে থাকে। বর্তমানে, জলবায়ু শরবর্তনের নিরিখে এই ধরনের পরিকল্পনাগুলি যদিও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও অধিকাংশ দেশ নগরমুখী পরিবেশ পরিকল্পনার আওতায় "বাসযোগ্য নগর(Liveable city)"-প্রতিস্থাপনে যথেষ্ট বদ্ধপরিকায়ন

অবকাঠামোগত নগর পরিকল্পনা (Infrastructural urban planning): নগরকেন্দ্রিক অবকাঠামোমূলক পরিকল্পনাগুলি নগরের পারিসরিক বৃদ্ধি, পরিসেবাগত উন্নয়ন এবং নগর সম্প্রসারণের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আসলে, এই প্রানের পরিকল্পনাগুলি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নগরাঞ্চলগুলিতে একাধিক সুযোগ সুবিধা তৈরি করে। এটি এমনই একটি কৌশলী প্রক্রিয়া যেখানে নগর পরিসেবায় বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী যে কোনও সমস্যার পরিস্থিতিকে অতি দ্রুত মোকাবিলা করা যায়। এই পরিকল্পনার আওতায় নাগরিক সম্প্রদায়ের জন্য অবকাঠামোগত বেশকিছু মৌলিক সুবিধা প্রদান করা হয়। গোলি হল-

 জন পরিসেবামূলক অবকাঠামো যেমন জল সরবরাহ, নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ।

 সম্প্রদায়গত অবকাঠামো। যেমন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, পার্ক প্রভৃতি নির্মাণ।

 নিরাপত্তা এবং পরিবহণ সংক্রান্ত অবকাঠামো যেমন রাস্তা পুনর্গঠন, অগ্নি নিরোধক সুবিধা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।

19% খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য বার্ষিক 28,000 কোটি টাকার তহবিল ধার্য করা হয়েছিল।

■ আধুনিক নগর পরিকল্পনায় গৃহীত কৌশলী পদক্ষেপ(Tactical steps taken in modern urban planning):

একবিংশ শতকের শুরুতেই ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়ার একাধিক দেশে নগর পরিকল্পনায় বিভিন্ন কৌশলী পদক্ষেপকে যথেষ্ট সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এর ফলে, নগরীয় কাঠামোয় পরিকল্পনাকারী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি 'স্টেকহোল্ডারদের" যৌথ সমন্বয়ের নীতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আধুনিক নগর পরিকল্পনায় স্মার্ট সিটি, ইকো সিটি, ধরণযোগ্য উন্নয়নসহ একাধিক পরিকল্পিত বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। এই ভাবে, বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে নগর পরিকল্পনা বহুমুখী ধারায় সমৃদ্ধ ও পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের নগর। পরিকল্পনা প্রসঙ্গে 1946 খ্রিস্টাব্দে Lewis Mumford উল্লেখ করেছেন- "At the beginning of the twentieth century, tuve great new discoveries were mele before our eves: Aeroplane und Garden City both patrons of a new era the first gave man wings and be second promised him a better aloud অর্থাৎ- "বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের চোখের সামনে দুটি পরিনতুন আবিষ্কার ঘটেছিল-বিমান এবং উদ্যান নগরী, উভয়ই ছিল দুটি নতুন যুগের প্রতিপোষক, প্রথমটি মানুষকে ডানা দিয়েছে এবং দ্বিতীয়টি ভালো ভালো বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে"।

এখানে আধুনিক নগর পরিকল্পনার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

উদ্যান নগরের পরিকল্পনা (Garden city planning):

সৌন্দর্যপূর্ণ, সুস্থ এবং পরিবেশসম্মত একটি আধুনিক পৌরক্ষেত্রের বিশেষ রূপ হল উদ্যান নগর। 1898 খ্রিস্টাব্দে Tomorrow: A peaceful path to soial reform) নামক গ্রন্থে ইংরেজ পরিকল্পনাবিদ Sir Ebenezer Howard (1850-1928) নগরের মধ্যে উন্মস্তভাবে কেন্দ্রীয় সবুজ স্থান গড়ে তুলতে প্রথম উদ্যান নগরের ধারণাটিকে সর্বজনসমক্ষে নিয়ে এসেছিলেন।

ধারণার ভিত্তি (The basis of the concept):

ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়কালে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরেই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যিক্তি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, দুর্নীতি, শোষণ, বস্তি সমস্যা, যানজট, বিশৃঙ্খলা, কদর্যতা এবং বিভিন্ন রোগ প্রকোপের দুর্যোগমূলক পরিস্থিতিতে নগরগুলির পুনরুজ্জীবন অত্যন্ত পরিহার্য ছিল। এই পরিস্থিতিতে হাওয়ার্ডের সবুজ উদ্যান নগরীর পরিকল্পনাটি নগর সংস্কারের প্রধান স্তম্ভ গড়ে দেয়।

• মূলনীতি (principle) হাওয়ার্ড তাঁর পরিকল্পনায় নগরের প্রকৃত স্থান নির্ধারণের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে একটি আদর্শ নগরী স্থাপনের জন্যে হাওয়ার্ড মণ্ডলীকৃতভাবে সবুজ উদ্যান স্থাপনের কথা বলেছিলেন। মূলত, সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শকে সামনে রেখে গড়ে তোলা তাঁর এই পরিকল্পনায় সাধারণত কৃষি, অর্থনীতি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অবশ্য, পরিকল্পনাটিকে যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায় সেজন্য হাওয়ার্ড 1899 সালে ইংল্যান্ডে Garden City Association নামক একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছিলেন।

• বৈশিষ্ট্য (Characteristics): হাওয়ার্ডের উদ্যান নগর প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল- (1) নগরটি আয়তনে যথেষ্ট সীমিত পরিসর বিশিষ্ট হবে (আয়তনে প্রায় একহাজার একর)। (2) যৌথ মূলধনীভিত্তিক নগরটি হবে স্বতন্ত্র কৃষিজমি পরিবেষ্টিত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষেত্র। (3) এই ধরনের নগরের মধ্যে উন্মুক্ত বাগানের মতো স্থান, বাসিন্দাদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প কারখানা প্রভৃতির জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ থাকবে। (4) সংশ্লিষ্ট নগর বা শহরের মোট জনসংখ্যা 30-40 হাজার এবং জনঘনত্ব প্রতি একরে 30 জনের বেশি হবে না। (5) এখানে মূল নগরীটি চটি ওয়ার্ডে বিভক্ত থাকবে, যেখানে দ্রুত পরিবহণ সম্পন্ন চটি রাস্তা নগরের কেন্দ্র থেকে প্রসারিত হয়ে প্রান্তিক অঞ্চলে পৌঁছোবে। (6) এখানকার রাস্তার উভয় প্রান্ত হবে পুষ্প-পল্লব দ্বারা শোভিত। (7) নগর প্রান্তের প্রায় ৪০ একর জমিতে বিপণন কেন্দ্রগুলি স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। 13.000।

তাত্ত্বিক রূপ (Theoretical form): উদ্যান নগরীর আদর্শ দৃষ্টিভঙ্গি তাত্ত্বিকভাবে "Three magnet diagram -এ পরিকল্পিত হয়ে থাকে। এখানে, 15.32-এ চিত্রিত প্রতিটি চুম্বক ক্ষেত্র তিনটি নির্দিষ্ট পরিবেশের প্রতিনিধিত্ব করে, যথা- নগর, দেশ এবং নগর-দেশ। প্রথম দুটি চুম্বক শহরের এবং দেশের সামগ্রিক জীবনধারার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি তালিকাভুক্ত করে, এবং তৃতীয় চুম্বকটি শহর এবং দেশের যাবতীয় সুযোগ সুবিধাগুলিকে একত্রিত করে। তবে, এখানে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় চুম্বকটিতে বাগান বেষ্টিত নগরের প্রতিশ্রুতিমূলক বিশেষ গুণাবলী রয়েছে।

বাস্তবায়ন (Implementation): হাওয়ার্ডের পরিকল্পনাকে মর্যাদা দিয়ে 1903 খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের প্রায় 30 মাইল উত্তরে লেচওয়ার্থ (Letchworth) অঞ্চলের হার্টফোর্ডশায়ার উদ্যান নগরীটিকে সফলভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, 1920 খ্রিস্টাব্দে ওয়েলউইনে দ্বিতীয় গার্ডেন সিটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন এই ধরনের পরিকল্পনায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও অবশ্য পিছিয়ে ছিল না। এখানকার, নিউ জার্সিতে 1927-1929 খ্রিস্টাব্দে Henry Wright এবং Clarence Stin-এর পৃষ্ঠপোষকতায় - Radburn layout" ছিল উদ্যান নগরীর একটি উঠাব্দে Henry Wris প্রেথিবীর অন্যান্য দেশের একাধিক শহরেও উদ্যান নগরীর আদর্শ বাস্তবায়ন ঘটেছে। যেমন-দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম গার্ডেন সিটি হিসেবে আর্জেন্টিনার "দিয়া মুন্ডিয়াল দেল আরবানিজমো", পেরুর লিমা জেসুস মারিয়ার শরিক প্রেম ব্রাজিলের সাও পাওলো, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড, ভারতের নতুন দিল্লি প্রভৃতি।

•  ইকো সিটি পরিকল্পনা (Eco city Planning):

থিতিশীল উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যকে গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তোলা আধুনিক নগর পরিকল্পনার আরেকটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হল ইকো সিটি নির্মাণ। এটি অনেকটা উদ্যান নগরীর মতোই স্বাস্থ্যসম্মত এমন একটি বিশেষ বিরক্ষেত্র, যেখানে বসবাসনীতি এবং পরিবেশের সুস্থতা রক্ষার্থে একাধিক পরিবেশ বিধিকে অনুসরণ করা হয়। 1975 খ্রস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিখ্যাত নগর পরিকল্পনাবিদ রিচার্ড রেজিস্টার সর্বপ্রথম ইকো সিটি ধারণাটির উদ্ভাবন করেছিলেন।

ওসভাত উল্লেখ্য, পশ্চিমী উন্নত দেশগুলিতে ইকো সিটিকে একটি জীবন্ত প্রাণীর মতোই মনে করা হয়ে থাকে। এই ধরনের ইকো সিটির সার্বিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে 1990 খ্রিস্টাব্দে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলিতে প্রথম ইকো সিটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

• উদ্দেশ্যে (Purpose):

ইকো সিটি নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল-

(i) পৌর ক্ষেত্রগুলি থেকে সমস্ত দূষিত কার্বন বর্জ্য নির্মূল করা (জিরো-কার্বন সিটি তৈরি), (ii) নগরভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে পরিবেশসম্মত নিয়মনীতি মেনে উদ্দীপিত করা, (iii) পরিবেশগতভাবে বা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের স্ব-টেকসই তালিকা মাধ্যসম্মত স্থানে মানব বসতি তৈরি করা, (iv) অধিক জনঘনত্বের শহরগুলিকে সংগঠিত করে প্রেম করতে উচ্চতর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নতি ঘটানো, (v) শহর বা নগরগুলির আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা হ্রাস করতে মননশীল প্রযুক্তিকে সর্বাধিক প্রতিস্থাপন প্রভৃতি।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01