পরিব্রাজন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ (Migration related terms)
■ পরিব্রাজনের উৎসস্থল (Place of origin of migration): যখন কোনো ব্যক্তি কোনো স্থান কিংব অঞ্চল ত্যাগ করে অন্য জায়গায় চলে যান তখন ছেড়ে যাওয়া জায়গাকে পরিব্রাজনের উৎসস্থল বলে গণ করা হয়। যেমন মধ্য এশিয়া থেকে আর্যরা সিন্ধু নদের তীরে এসে বসবাস শুরু করেছিল। তাই আর্যদ্যে পরিমানের উৎসস্থল হল মধ্য এশিয়া।
■ গন্তব্যস্থল (Place of destination): কোনো ব্যক্তি যে স্থানে গিয়ে বসবাস করেন বা স্থান ত্যাগের মাধ্যমে যে নতুন জায়গায় পৌঁছান তাকে গন্তব্যস্থল (Destination) বলে।
■ বহুমুখী পরিব্রাজক এবং বহর্মুখী পরিব্রাজন (Out migrant and out migration): যে ব্যক্তি কিংব ব্যক্তিবর্গ কোনো অঞ্চল ছেড়ে সাময়িকভাবে বা চিরতরে বসবাস করার জন্য গমন করেন তাকে বহিমুী পরিব্রাজক (out migrant) বলে। উৎসস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার এই ঘটনাকে বহির্মুখী পরিব্রাজন বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, X স্থান থেকে যত সংখ্যক ব্যক্তি Y স্থানে গিয়ে বসবাস করেন। X স্থানে ক্ষেত্রে ওই সংখ্যক লোক বহির্মুখী পরিব্রাজন ঘটিয়েছেন বলে ধরা হবে।
■ অন্তর্মুখী পরিব্রাজক এবং অন্তর্মুখী পরিব্রাজন (In migrant and In migration): অন্য কোনো স্থান থেকে যে ব্যক্তি কোনো নতুন স্থানে আসেন তাকে অন্তর্মুখী পরিব্রাজক বলা হয়। নতুন গন্তব্যস্থলে তাঁর চলে আসার ঘটনাকে বলা হয় অন্তর্মুখী পরিব্রাজন। 1971 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যা মানুষ পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এটি অন্তর্মুখী পরিব্রাজনের উদাহরণ।
■ অভিবাসন এবং প্রবাসন (In migration and Emigration): বিদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি কিংব ব্যক্তিবর্গ অন্য কোনো দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য চলে আসে তখন সেই পরিব্রাজনকে অভিবাসন বলা হয়।
কিন্তু কোনো অঞ্চল থেকে কিংবা দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে বসবাস করলে তাকে প্রবাসন (Emigration) বলা হয়।
■ পরিব্রাজন সংক্রান্ত তথ্য (Migration related data):
কোনো অঞ্চলের লোকসংখ্যা হ্রাসবৃদ্ধির সঙ্গে জন্মমৃত্যুর মতো 'পরিব্রাজন' বিষয়টিও জড়িত আছে। কোনো অঞ্চল থেকে কতজন ব্যক্তি অন্য অঞ্চলে গিয়ে বসবাস করছেন কিংবা অন্য অঞ্চল থেকে কতজন ব্যক্তি ওই স্থানে এসেছেন তার হিসেব পরিব্রাজনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই পরিব্রাজন সংক্রান্ত তথ্য জানা একান্ত দরকার। অন্যথায় কোনো অঞ্চলে জনসংখ্যার চাপ, হ্রাসবৃদ্ধি এগুলি সঠিকভাবে জানা যাবে না।।
পরিব্রাজন সংক্রান্ত তথ্যের উৎস:
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কতজন লোক আকাশপথ, জলপথ কিংবা স্থলপথে একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করেছেন সে সম্পর্কে হিসাব রাখতে হবে।
(i) Census-তে নাম নথিভুক্ত করার সময় যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তির নাম পূর্বের আদমশুমারিতে পাওয়া যাচ্ছে না, অথছ বর্তমান Census-এ পাওয়া যাচ্ছে তা হলে বুঝতে হবে ব্যস্তিটি অন্য কোনো জায়গা থেকে এসেছেন।
একই ভাবে পূর্বের আদমশুমারিতে নাম আছে অথচ বর্তমান আদমশুমারিতে নাম নেই। এ থেকে বোঝা যায় যে, ব্যক্তিটি অন্য কোনো স্থানে চলে গেছেন।
(ii) প্রত্যক্ষভাবে ক্ষেত্রসমীক্ষার মাধ্যমে পরিব্রাজন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
পরিব্রাজনের হার (Migration Rate):
দেশ, স্থান এবং কালভেদে পরিব্রাজনের হার একই রকম হয় না। উন্নত সংস্কৃতি ও চেতনাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে পরিব্রাজনের হার বেশি হয়। তুলনামূলকভাবে স্বল্প শিক্ষিত ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে পরিব্রাজনের হার কম হয়। পরিব্রাজনের হার সম্পর্কে ধারণা পেতে গেলে স্থূল পরিব্রাজন (Gross Migration), নীট পরিপ্রেজেন (Net Migration), পরিব্রাজন প্রবাহ, পরিব্রাজনের পর্যায়, পরিব্রাজনে ভারসাম্য প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
■ মূল পরিব্রাজন (Gross Migration): উন্নত দেশগুলিতে পরিব্রাজনের হার অনেক বেশি হয়। ধরা যাক, X এবং Y দুটি স্থান আছে। X স্থান থেকে Y স্থানে লোকজন এলেন। আবার Y স্থান থেকে এখানে লোকজন গেলেন। তবে যতজন লোক এলেন এবং গেলেন এই দুইয়ের যোগফলকে স্থূল পরিব্রাজন (gross migration) বলে।
■ নীট পরিব্রাজন (Net Migration): কোনো অঞ্চল কিংবা দেশের ক্ষেত্রে অন্তঃপরিব্রাজন এবং বহিঃ- পরিব্রাজনের বিয়োগফলকে নীট পরিব্রাজন বলে। জনগণনার ক্ষেত্রে নীট পরিব্রাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
■ কার্যকর পরিব্রাজন (Effective Migration): দুটি স্থানের মধ্যে নীট পরিব্রাজনের সঙ্গে ওই দুইটি স্থানের জনসংখ্যার স্থানান্তরের অনুপাতকে কার্যকর পরিব্রাজন বলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, X এবং Y স্থানের নীট পরিব্রাজনের সঙ্গে X এবং Y স্থানের মোট জনসংখ্যার স্থানান্তরের অনুপাত হবে কার্যকর পরিব্রাজন। X স্থানের কার্যকর পরিব্রাজন = X স্থানের নীট পরিব্রাজন X ও Y স্থানের মধ্যে মোট স্থানান্তরিত জনসংখ্যা সুরূপভাবে, ১ স্থানের কার্যকর পরিব্রাজন Y স্থানের নীট পরিব্রাজন X ও Y স্থানের মধ্যে মোট স্থানান্তরিত জনসংখ্যা
■ পরিব্রাজনের ভারসাম্য (Balance in Migration): অন্তঃপরিব্রাজন এবং বহিঃপরিব্রাজনের পরিমাণ যদি শূন্য হয় তাহলে পরিব্রাজনে ভারসাম্য আসে অর্থাৎ নীট পরিব্রাজন তখন শূন্য হয়।