ধান চাষ পদ্ধতি (Method of Rice Cultivation)
[ক] বপন-প্রথা (Broadcast method): এই পদ্ধতিতে জমি তৈরি করে হাতে করে বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বীজ থেকে চারা হয়ে একই স্থানে বড়ো হয়ে ফসল জন্মায়।
[খ] রোপণ প্রথা (Plantation Method): এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ছোটো জমি যথেষ্ট কর্ষণ করে তাতে ধান বীজ ছড়ানো হয়। এতে ঘন হয়ে চারা গাছ জন্মায়। প্রধান জমিটি লাগাল দিয়ে বা ট্রাক্টরের সাহায্যে কর্ষণ করে চারা বপনের উপযুক্ত করা হয়। এরপর চারাক্ষেত্র (Nursery bed) থেকে করা হয়। এই পদ্ধতি শ্রমসাপেক্ষ হলেও এতে উৎপাদন অনেক বেশি হয় এবং ফসলও উৎকৃষ্ট হয়।
ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল বরাবর বিস্তীর্ণ উপকূলীয় সমভূমি, দেশের মুখ্য ব-দ্বীপ সমূহ, হিমালয়ের পাদদেশে বিস্তৃত তরাই সমভূমি, আসাম ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ সমভূমি, বিহার, পূর্ব উত্তর প্রদেশ, পূর্ব মধ্য প্রদেশ, অঞ্চপ্রদেশের উত্তরভাগ এবং ওড়িশা বিশেষ উল্লেখযোগ্য দান উৎপাদক অঞ্চল। কাবেরি ও কুয়া নদীর ব-দ্বীপ, গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, গোদাবরী ও ইছামতী নদীর ব-দ্বীপ সমূহ ধান উৎপাদনে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সমভূমি, কাশ্মীর এর পার্বত্য ঢালে ধান উৎপাদন বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
খারিফ শস্য হিসেবে ধান চাষ হয় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যে। খারিফ ও রবিশস্য হিসেবে বছরে দু'বার ধান চাষ হয় এরূপ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অঞ্চপ্রদেশ, আসাম ও ওড়িশা।
ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ধান উৎপাদনে শীর্ষে। এরপর যথাক্রমে পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, অস্ত্রপ্রদেশ, বিহার, তামিলনাড়ু ও ওড়িশার স্থান। পশ্চিমবঙ্গোর পঃ মেদিনীপুর জেলায় সর্বাধিক ধান উৎপন্ন হয়। বর্ধমান জেলা ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়। উৎকৃষ্ট ধানের জন্য বর্ধমান বিখ্যাত। হেক্টর-প্রতি ধান উৎপাদনও বর্ধমানে সবচেয়ে বেশি। বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চবিবশ পরগনা, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলায় প্রচুর ধান চাষ হয়। অন্যান্য জায়গায়ও ধান চাষই প্রধান। তবে পশ্চিমবঙ্গো চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম।
অস্ত্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর সবকটি জেলাই ধান চাষ হয়। কৃষ্ণা-কাবেরী ব-দ্বীপ অঞ্চলে দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয়। অন্ধ্রপ্রদেশে হন উৎপাদন উদ্বৃত্ত হায় বলে আন্তারাজ্য বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে উচ্চ ও মধ্য বঙ্গা অববাহিকার পলি সমৃদ্ধ অঞ্চল ধান চাষে যথেষ্ট অগ্রণী। ওড়িশার মহানদী অববাহিকা ও ব-দ্বীপে হয়েন্ট ধান চাষ হয়। পাঞ্জাব সমভূমিতে সেচের সাহায্যে ধান উৎপাদনে উল্লেখনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। ভারতে হেক্টর-প্রতি ধান উৎপাদন পাঞ্জাবে সবচেয়ে বেশি।
ভারতে ধান চাষের সমস্যাঃ ভারতে ধান শ্রেষ্ঠ ফসল হলেও ধান চাষের প্রধান সমস্যা হল হেক্টর প্রতি কম উৎপাদন। হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদন যেখানে চিনে ৬,২৬৬ কেজি, জাপানে ৬,৫৮২ কেজি., সেখানে ভারতে এই পরিমাণ মাত্র ২,৫৫০ কেজি। মূলধনের অভাব, ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যাধিক্য, উপযুক্ত পরিমাণে সেচের অভাব প্রভৃতি কারণে হেক্টর-প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ওড়িশার কটক-এ কেন্দ্রীয় ধান গবেষণা সংস্থা (Rice Research Institute) ধান চাষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।