নিম্ন প্রজনন হার বিশিষ্ট দেশসমূহ (Low Fertility Trend Countries)
প্রজনন হারের (Fertility rate) দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে প্রজনন হার অনেক কম হয়। এসব দেশগুলির আর্থসামাজিক পরিকাঠামো যেমন উন্নত তেমনি শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাও খুবই উন্নত।
নিম্ন প্রজনন হার বিশিষ্ট দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রেণিবিভাগ হল-
(i) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, সুইডেন এবং পশ্চিম ও মধ্যইউরোপের দেশগুলিতে প্রজনন হার অত্যন্ত কম। মহিলা-প্রতি গড় প্রজনন হার 2-এরও অনেক কম। এসব দেশগুলির জনসংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।
(ii) দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে যেমন গ্রিস, ইটালি, পোর্তুগাল, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশে মহিলা-প্রতি গড় প্রজনন হার ১ জন।
(iii) মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অনবরত যুদ্ধবিগ্রহ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রজনন হার কম হয়। এখানে জনসংখ্যা বেশ কম। মহিলা-প্রতি গড় প্রজনন হার প্রায় ১ জন।
উন্নত দেশসমূহে নিম্ন প্রজনন হারের কারণ(Cause of low fertility rate in the developed countries):-
ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি এশিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নত দেশে প্রজনন হার অত্যন্ত কম পরিলক্ষিত হয়। এসব উন্নত দেশগুলিতে প্রজনন হার কম হওয়ার কারণগুলি হল-
(i) জীবনযাত্রার উন্নতমান (High standard of living): উন্নত দেশগুলির অধিবাসীগণ একের বেশি সন্তান নেওয়ার একেবারে পক্ষপাতী নন, কারণ তাঁদের মনে হয় অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার অর্থ জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। একের বেশি সন্তান লালন পালন করা তাদের শিক্ষাদান, চিকিৎসা, আমোদপ্রমোদ প্রভৃতির জন্য ব্যয় ভার বেশি হবে। ফলে এই দেশগুলিতে প্রজনন হার কম হয়। লাইবেনস্টাইন, স্যাডলার প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানীগণ নিম্ন প্রজনন হারের স্বপক্ষে এই যুক্তি উত্থাপন করেন।
(ii) অধিক বয়সে বিবাহ (Late Marriage): অধিক বয়সে বিবাহের ফলে জৈবিক কারণেই দম্পতিদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ কম হয়। তা ছাড়া সন্তান ধারণের সময় স্ত্রীদের ক্ষেত্রে কম হয়। ফলে জন্মহারও কমে যায়।
(iii) নারী শিক্ষার উচ্চহার এবং সমাজ সচেতনতা (High Female Literacy and Socialawareness): উন্নত দেশগুলিতে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। ফলে ছেলেদের মতো মেয়েরাও শিক্ষাগ্রহণের অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। নারী শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় তারা স্বাস্থ্য সচেতন হয় এবং অধিক সন্তান জন্মদানে আগ্রহী হন না। তা ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কে নারীরা অত্যন্ত সচেতন হয়। তারা জানে অধিক সন্তান জন্ম দিলে স্বাস্থ্যহানি ঘটাবে এই কারণে প্রজনন হার কম হয়।
(iv) ছোটো পরিবারের প্রতি আগ্রহ (Willing for Small Family): উন্নত দেশগুলিতে বড়ো পরিবার অপেক্ষা ছোটো পরিবারের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য বাবা-মায়েরা একের বেশি সন্তান নিতে চান না। তা ছাড়া সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অধিক অর্থের সঞ্চয় তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এজন্য তারা বেশি অর্থ একাধিক সন্তানের জন্য ব্যয় করার পক্ষপাতী নন।
(v) নগরায়ণের প্রভাব (Impact of Urbanisation): নগরায়ণের মাত্রা যেসব দেশগুলিতে খুব বেশি হয় সেই সব দেশের প্রজনন হার কম হয়। কারণ নাগরিক জীবনের সচেতনতা, সন্তানের ভবিষ্যৎ, বাসস্থান সমস্যা প্রভৃতি কারণে নাগরিকদের মধ্যে প্রজনন কার্যে বেশি উৎসাহ দেখা যায় না।