ভারতের ভাষা অঞ্চল (Linguistic Regions of India)
ভারতে ব্রিটিশদের শাসনকাল থেকে ভাষাভিত্তিক সার্ভে শুরু হয়েছিল। 1903-1928 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যে ভাষাভিত্তিক সমীক্ষা করা হয় তখন 179টি ভাষা এবং 544টি উপভাষা ভারতে প্রচলিত ছিল। 1961 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি থেকে ভাষাভিত্তিক প্রচুর পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এই সময় সমগ্র ভারতে 187টি ভাষার প্রচলন ছিল। 10 হাজারেরও কম লোক 94টি ভাষা ব্যবহার করতেন। দেশের 77% লোক 23টি ভাষায় কথা বলতেন। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদে 1৪টি ভাষার উল্লেখ করা হয়। এগুলি হল- কাশ্মীরি, পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, অসমীয়, গুজরাটি, মারাঠি, কানাড়া, তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, সিন্ধি, সংস্কৃত, ওডিয়া, নেপালি, কোঙ্কনি এবং মণিপুরি।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে রাজ্য গঠনের অন্যতম ভিত্তি ছিল ভাষা। বর্তমানকালে ভারতে যে সব রাজ্য গড়ে উঠেছে সেগুলি গঠনের প্রধান ভিত্তি ছিল ভাষা এবং ভাষার বিস্তারের ধাঁচ। বর্তমানে ভারতে 12টি প্রচলিত ভাষাতেই মানুষজন বেশি কথা বলেন। ভাষা ভিত্তিক অঞ্চল এবং প্রচলিত রাজ্যকে অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নীচের সারণিতে দেখানো হল-
বিভিন্ন ভাষার গুরুত্ব সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, উনবিংশ শতকেও সংস্কৃত একটি বহুল প্রচলিত ভাষা ছিল। কিন্তু বর্তমানে সংস্কৃত আর কথ্য ভাষা নয়।
যদিও একসময় সংস্কৃতকে ভারতের ভাষার জনক বলে মনে করা হত। মোগল এবং মুসলিম শাসকদের সময় ভারতে পারসি এবং উর্দু ছিল প্রশাসনিক ভাষা। ব্রিটিশরা যখন অষ্টাদশ শতকে ভারত শাসন শুরু করল তখন ইংরেজগণ পারসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষাকে প্রশাসনিক কাজকর্মের ভাষা হিসেবে ব্যবহার নূরু করল। স্বাধীনতা লাভের ঠিক পরে আমাদের দেশে হিন্দি সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা এবং উত্তরভারতের অধিবাসীদের প্রধান ভাষায় রূপান্তরিত হল। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং হিমাচল প্রদেশে হিন্দি ভাষার প্রচলন সবচেয়ে বেশি।
বর্তমানে আমরা ভারতের যে রাজ্য সীমানা দেখি সেখানে দেখা যায় যে, প্রধানত ভাষার ভিত্তিতেই রাজ্যের বিভাজন ঘটেছে। এই প্রসঙ্গে হিন্দি ভাষাবলয়ের কথা বলা যেতে পারে। এই ভাষাবলয় বর্তমানে উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাঞ্চলে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি ও চন্ডীগড়ে প্রচলিত আছে। তবে ভারতে অনেক রাজ্যে মিশ্র ভাষার প্রচলনও দেখা যায়। ফলে ভাষা অঞ্চলের নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নির্দেশ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে হিন্দি ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভাষার ক্ষেত্রে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একাধিক ভাষায় কথা বলার অভ্যাস লক্ষণীয়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সীমানা অঞ্চলে দুই বা তার বেশি ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। বর্তমানে ভারতের 12%-এর বেশি জনসংখ্যা দুটি বা তিনটি ভাষায় কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কেরালা রাজ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হল তামিল। তামিলনাডুতে দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হল তেলুগু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে উর্দু। উর্দু ভারতের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভাষা এবং এই ভাষায় 43 মিলিয়ন মানুষ কথা বলেন। হিন্দি বলয়ের বাইরে 30 মিলিয়নের বেশি লোক হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের বাইরে ভারতের 10% লোক তেলুগু ভাষায় কথা বলেন। কসমোপলিটান নগরগুলিতে মানুষজন অনেক ভাষায় কথা বলেন।