welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

লৌহ আকরিক(leon ore)

 লৌহ আকরিক(iron ore)

ভূমিকা বর্তমানে যুগের লৌহ আকরিক ব্যবহার সর্বপেক্ষ অধিক বলা যায়। প্রাচীন যুগে ও ভারতের লোহিত ব্যবহার ছিল। ঋকবেদের এই উল্লেখ পাওয়া যায়।

ব্যবহার: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতির ফলে ভারতে লৌহ-আকরিকের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে ৬২০০০ কিমি রেলপথ, বহু সহস্র মালগাড়ি ও রেলইঞ্জিন, বহু লক্ষ মোটর, ট্রাক, লৌহ-ইস্পাত নির্মিত বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালির বাসনপত্র, আসবাবপত্র, জানলা, বাড়ি-ঘরের কাঠামো, সেতু তৈরিতে প্রচুর লোহার প্রয়োজন হয়। এ থেকে লৌহ-আকরিকের ব্যবহারিক গুরুত্ব কতখানি বোঝা যায়। লৌহ ও ইস্পাত শিল্পকে সকল শিল্পের মূল (Fundamental of all industries) বলে আখ্যা দেওয়া হয়।।

লৌহ-আকরিকের শ্রেণিবিভাগ: আকরিকে লোহার পরিমাণ অনুসারে প্রধান চার ধরনের। লৌহ-আকরিক ভারতে পাওয়া যায়। এগুলি হল-(১) ম্যাগনেটাইট (Fe,O): কালো রঙের ও সর্বোৎকৃষ্ট লৌহ-আকরিক। ৭২% লোহা থাকে। (২) হেমাটাইট (Fe,O,): লালচে এবং প্রায় ৭০% লোহা এতে থাকে। (৩) লিমোনাইট (2Fe, O, 3H₂O): হলদে-বাদামি রঙের প্রায় ৬০% এর মতো লোহা থাকে। (৪) সিডেরাইট (FeCO,): লোহার পরিমাণ প্রায় ৪৮% এবং দেখতে ধূসর বাদামি রং-এর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় ভারতেও অধিকাংশই হেমাটাইট জাতীয় লৌহ-আকরিক।

ভারতে লৌহ-আকরিকের সঞ্চয়: লৌহ-আকরিকের সঞ্চয়ে ভারতের স্থান পৃথিবীতে (৫-৫%) চতুর্থ। ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে, ভারতে প্রায় ১,৭৫৭ কোটি টন লৌহ-আকরিক সঞ্চিত আছে। এর মধ্যে, ১.১৪৭ কোটি টন উচ্চশ্রেণির হেমাটাইট ও ৬১০ কোটি টন ম্যাগনেটাইট জাতীয় লৌহ-আকরিক।

লৌহ-আকরিক উত্তোলক অঞ্চলসমূহ: ভারতের অধিকাংশ লৌহ-আকরিক ছত্তিশগড়, কর্ণটিক, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, গোয়া ও অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়।

লৌহ-আকরিক উত্তোলন: ২০১৫-১৬ সালে ভারত ১৫-৫৫ কোটি টন লৌহ-আকরিক উত্তোলন করে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করে।

ভারতের অধিকাংশ লৌহ আকরিক উপদ্বীপের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উত্তোলিত হয়। এই প্রজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অন্দ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গোয়া প্রভৃতি। নিম্নে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের লৌহ আকরিক উত্তোলক অঞ্চলসমূহের বিবরণ দেওয়া হল।

ভারতের লৌহ আকরিক উত্তোলক প্রধান অঞ্চলসমূহ

* ওড়িশাঃ ওড়িশা লৌহ-আকরিক উত্তোলনে ভারতে প্রথম স্থান (২০১৫-১৬) অধিকার করে। ময়ূরভঞ্জ এলার গুরুমহিযানী, সুলাইপাত, বাদামপাহাড় ও বোনাই এবং কেওনঝাড় জেলার বাগিয়াবুরু উল্লেখযোগ্য খনিকেন্দ্র ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার লৌহখনিগুলির গুরুত্ব এই কারণে বেশি যে পূর্ব ভারতের সবকটি ইস্পাত কেন্দ্রই এই রাজ্যগুলির লৌহখনিগুলির ওপর নির্ভর করে। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশা প্রায় ৭-৯৯ কোটি লৌহ-আকরিক উত্তোলন করে।

 ◇ ছত্তিশগড়ঃ ছত্তিশগড় লৌহ-আকরিক উত্তোলনে ভারতে তৃতীয় স্থান (২-৫০ কোটি টন) অধিকার করে।যুগ জেলার দায়ী-রাজহারা খনিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভিলাই ইস্পাত শিল্পের জন্য এই খনি থেকে লৌহ-আকরিক সংগৃহীত হয়। দক্ষিণে বস্তার জেলার রাওয়াঘাট এবং অঙ্গপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের সীমানায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বিখ্যাত বায়লাডিলার লৌহখনিটি অবস্থিত।পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ব্রডগেজ রেলপথে বায়লাভিলা খনির সাথে বিশাখাপত্তনম বন্দরটি যুক্ত। এই বন্দর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে আকরিক লোহা বিদেশে রপ্তানি

ঝাড়খণ্ডঃ লৌহ-আকরিক উত্তোলনে বিহারের স্থান বর্তমানে পঞ্চম। সিংভূম জেলার গুয়া, কুদাবুরু, পানশিরাবুর, লান্সাবুরু, নোয়ামুন্ডি, বড়জামদা প্রভৃতি খনি থেকে লৌহ-আকরিক উত্তোলন করা হয়। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২-৪৬ কোটি টন আকরিক লৌহ এই সকল খনি থেকে উত্তোলন করা হয়।

কর্ণাটক: ভারতে লৌহ-আকরিক উত্তোলনে কর্ণাটকের স্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। বেল্লারী জেলার ডোনাইমালাই,রামনদূর্গ, কুমারস্বামী, চিকুমাগালুর জেলার কুদ্রেমুখ, বাবাবুদান পাহাড়ের কেমান্ডগুন্ডি বিখ্যাত লৌহখনি। এছাড়া চিত্রদূর্গ, উত্তর কানাড়া, ধারওয়ার, টুমকুর এবং শিমোগা জেলায়ও লৌহ-আকরিক পাওয়া যায়। ভদ্রাবতীর ইস্পাত শিল্প এই অঞ্চলের আকরিক লোহার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। বিজয়নগরের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানাটিতে এই লৌহ-আকরিক ব্যবহৃত হবে। ম্যাঙ্গালোর বন্দর মাধ্যমে এই অঞ্চলের লৌহ-আকরিক বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

অন্দ্রপ্রদেশঃ নেপ্লোর, কুডায়া, কুর্মুলে লৌহ-আকরিক উত্তোলিত হয়।

মধ্যপ্রদেশঃ জব্বলপুর, পশ্চিম নিমার, ছতরপুর প্রভৃতি স্থানে লৌহ-আকরিক উত্তোলিত হয়।

গোয়াঃ মাপুসা, বিচোলিম, সাহকুয়েলিম, সাতারে, সাংপুয়েম ও পোন্ডো গোয়ার লৌহখনি।

মহারাষ্ট্রঃ রত্নগিরি, চন্দ্রপুর জেলায় লৌহ-আকরিক উত্তোলন হয়।

* রাজস্থানঃ জয়পুরে অগ্ন লৌহ-আকরিক পাওয়া যায়। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু (সালেম, হিরুচিরাপল্লী), কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গে অল্প বিস্তর লৌহ-আকরিক পাওয়া যায়।

 লৌহ-আকরিক উত্তোলনঃনতুন নতুন লৌহখনি আবিষ্কৃত হওয়ায় ভারতে লৌহ-আকরিক উত্তোলন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত ১৫-৫৫ কোটি টন লৌহ-আকরিক উত্তোলন করে। নিম্নে ভারতে প্রধান প্রধান রাজ্য ভিত্তিক লৌহ-আকরিক উত্তোলনের পরিমাণ (২০১৫-১৬) দেওয়া হল। 

ভারতে লৌহ ও ইস্পাত কারখানার সংখ্যা কম হওয়ায় এবং প্রচুর লৌহ আকরিক উত্তোলন হওয়ায় বিরাট সেতানিযোগ্য উদ্‌বৃত্ত থাকে। ফলে প্রতি বছর বিশাখাপত্তনম, পারাদ্বীপ, মার্মাগাও প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে জাপান, রমানি, পোল্যান্ড, ইতালি প্রভৃতি দেশে যথেষ্ট লৌহ-আকরিক রপ্তানি হয়। ২০০৫-০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার লৌহ-আকরিক ভারত থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়।

বাণিজ্য: ভারতে লৌহ ও ইস্পাত কারখানার সংখ্যা কম হওয়ায় এবং প্রচুর লৌহ-আকরিক উত্তোলন হওয়ায় বিরাট রপ্তানিযোগ্য লৌহ-আকরিক উদ্‌বৃত্ত থাকে। ফলে প্রতি বছর বিশাখাপত্তনম, পারাদ্বীপ, মার্মাগাঁও প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে জাপান, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইতালি প্রভৃতি দেশে যথেষ্ট লৌহ-আকরিক রপ্তানি হয়। এর অর্ধেকেরও বেশি জাপান ক্রয় করে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01