welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

দার্জিলিং-এ ভূমিধস (Landslide in Darjeeling)

দার্জিলিং-এ ভূমিধস (Landslide in Darjeeling)



দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল ধসপ্রবণ। এই ধসপ্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ছাড়াও বিজনবাড়ি, গরু বাথান, তিনধরিয়া, গিদ্দাপাহাড়, লিম্বুধরিয়া (Limbudhariya), পাগলাঝোড়া, 14 মাইল্স প্রভৃতি এলাকাসমূহে। জাতীয় রাজপথ বরাবর বিভিন্ন অঞ্চলে ধস নামার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পে পর্বতের বাস্তুসংস্থান উপেক্ষিত থেকেছে। উপযুক্ত ভূ-তাত্ত্বিক সমীক্ষার অভাব রয়েছে। পর্বতের বন্ধুরতা হ্রাসে মনুষ্য হস্তক্ষেপ শিলাস্তরের ভারসাম্য হ্রাস করছে। বসতি বিস্তারে ও কৃষিকাজের প্রসারে বনভূমির সংকোচন পার্বত্যঢালে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। ভূমিধসের প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে ৪৫° পর্বতঢালে, ব্যবচ্ছিন্ন পর্বতগাত্রে, বনশূন্য পাহাড়ী ঢালে, উচ্চতর স্থানে (>২০০০ মি.) এবং বর্ষাকালের শেষদিকে ও কখনো কখনো পাহাড়ে ভূ-কম্পনের সাথে।

প্রাকৃতিক কারণ:

(১) ভূমিঢাল: পার্বত্য অঞ্চলে শিলাস্তরের ঢাল খুব বেশি হয়। খাড়া ঢালে শিলাস্তূপের পতন ঘটলে তা প্রসরুপে নিম্নে পতিত হয়। এর গতিপথে যা কিছু থাকে তা শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুদ্ধ পর্বতগাত্রে অপেক্ষাকৃত কম খাড়া ঢালেও পুঞ্জিত দ্রব্যাদি ধসরুপে পতিত হয়। সিক্ত পর্বতগাত্রে ভূমিঢাল বিশেষ খাড়া না হলেও পিচ্ছিলতার জন্য স্খলিত ভারী শিলাপদার্থ দ্রুত নেমে এসে কখনও কখনও ধসপ্রাপ্ত হয়। এদের গতিপথে যা কিছু থাকে তা সমূলে উৎপাটিত হতে পারে।

(২) শিলাস্তরের প্রকৃতি: দুর্বল শিলাস্তর আবহবিকারের ফলে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং আবহবিকার প্রাপ্ত পদার্থের উত্তল পৃষ্ঠ অভিকর্ষের প্রভাব এড়াতে না পারলে নিম্নগামী হয়। এর অনুগামী ঘটনা হিসাবে নিম্নস্থ পদার্থও ভারসাম্য হারায় এবং ধসপ্রাপ্ত হয়। কঠিন শিলাস্তরের নীচে থাকা এরূপ শিলাস্তূপের ভারসাম্য বিনষ্ট হলে তা ধসপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সচ্ছিদ্র, যেমন বালুকাধর্মী শিলাস্তরের নিম্নে কর্দম জাতীয় শিলাস্তর থাকলে জল ঢুকে একে আর্দ্র ও সিক্ত করে তোলে। এই সিক্ত শিলাস্তর পিচ্ছিলতা প্রাপ্ত হয়ে উপরের শিলাস্তর সহ খাড়া ঢালে নিম্নে পতিত হতে পারে। পত্রায়নের নতিতল বরাবর ভূমিধস হতে পারে। পূর্ব হিমালয়ের দার্জিলিং-এ নাইস শিলাস্তরে, সিকিম হিমালয়ে ফিলাইট শিলাস্তরে এই জাতীয় ভূমিধস দেখা যায়।

(৩) ঢালের উচ্চতা: শিলাস্তরের ঢাল খাড়া এবং উচ্চ দৈর্ঘ্যের হলে এর ভরকেন্দ্র উপরে অবস্থান করে। এরূপ এবং ঝুঁকে থাকা শিলাস্তরের নিম্নে ভারসাম্য বিনষ্ট হলে উপরের শিলাস্তূপ ভেঙ্গে পড়ে ও ধস ঘটে।

(৪) চ্যুতি ও দারণ: শিলাস্তরে চ্যুতি ও দারণের উপস্থিতি ভূমিধসের অন্যতম কারণ হয়ে থাকে। চ্যুতিতল বরাবর ভূমিভাগ বসে যায়। দারণের উপস্থিতি বিশালায়তন শিলাচাই-এ শিলাপাথরটিকে বিচ্ছিন্ন করে ভারসাম্য নষ্ট করে ভূমিধস ঘটায়। তিস্তা অববাহিকায় এরূপ ভূমিধসের নমুনা রয়েছে।

(৫) পাদমূল ক্ষয়ঃ পর্বতের নিম্ন অংশে নদীতে জলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বন্ধুরতা তখনও বজায় থাকলে পাদমূলে ক্ষয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে নিম্নস্থ ভারসহাকারী শিলাস্তূপ অপসৃত হওয়ায় অবলম্বন শিথিল হয়। তখন ওপরের শিলাস্তর দুর্বল অংশ বরাবর অভিকর্ষে নিম্নগামী হয়ে ধসপ্রাপ্ত হয়।

(৬) প্রস্রবণের ন্যায় জলধারার উপস্থিতি: উচ্চ ভূমিভাগে অনেক স্থানেই ভূমিরূপে প্রস্রবণ জাতীয় জলাধারার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শিলাস্তর এই জলশোষণ করে সিক্ত হলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বাড়ে। চ্যুতি, ফাটল বরাবর সৃষ্ট ঝর্ণাও ভূমিধসের প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে।

(৭) গালি ক্ষয়ঃ উদ্ভিদ বিহীন ভূমিভাগে ছোটো ছোটো জলধারা মিলে যে গালি তৈরি করে তা স্বল্প দৈর্ঘ্যের হলেও অতি দ্রুত ভূমিক্ষয় করে ব্যাডল্যান্ড (Badland) ভূমিরূপ তৈরি করে। গালিক্ষয়ের দরুণ ভৃগুতটের পশ্চাৎ অপসরণে ভূগুতটের উর্ধ্বভাগ নীচের সঙ্গে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে ভূমিধস ঘটায়।

(৮) অতি বৃষ্টি ও ঝঞ্জাব্যাত্যা: পর্বতঢালে অতি বৃষ্টি হলে পর্বতগাত্র অতি পিচ্ছিল ও সিক্ত হয়ে পড়ে। অতি বৃষ্টিসহ ঝঞ্ঝাব্যাত্যা আবহবিকার প্রাপ্ত শিলাস্তূপে শিথিলতা আনে। ফলে পর্বতগাত্র বরাবর এগুলি নিম্নে পিচ্ছিল ভূমিভাগের উপর দিয়ে ধসপ্রাপ্ত হয়।

(৯) হৈমবাহিক কারণ:

(i) হিমানী সম্প্রপাত: হিমবাহের অগ্রভাগ ভেলো গিয়ে হিমানী সম্প্রপাত ঘটায়। এদের সামনে যে ভগ্নপ্রাপ্ত শিলাচূর্ণ বা পুঞ্জদ্রব্য পড়ে তাও এর আঘাতে নিম্নগামী হয়ে ধসপ্রাপ্ত হয়।

(ii) পর্যায়ক্রমে বরফের গলন ও জমাটিকরণ ঘটে যে অঞ্চলে সেখানে শিলাস্তূপ ক্রমশঃ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং সময় নিম্নগামী হয়ে ধসপ্রাপ্ত হয়।

(১০) ভূ-কম্পন: ভূমিকম্পে পাহাড়ের গায়ে শিথিল শিলাস্তূপ ধসে পড়ে। পূর্ব হিমালয়ে বিভিন্ন নদী অববাহিকায় ভূমিকম্পজনিত কারণে ধস ঘটেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01