ভূমির ব্যবহার (Land Utilisation)
পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশই অরণ্যময় ছিল। কিন্তু চা বাগিচার প্রয়োজনে ও ধাপ চাষে জমির প্রয়োজন পূরন করতে অনেকস্থানে ভূমির ব্যবহার পরবর্তীত হয়েছে। দার্জিলিং এ ৩৮% ভূমিভাগে এখনো অরণ্য টিকে রয়েছে। বসতি রয়েছে প্রায় ৩৪% ভূমিভাগে। চা বাগিচাগুলি অধিকার করে রয়েছে অঞ্চলের ১৭% এলাকা। এছাড়া সিঙ্কোনা চাষ হয় প্রায় ২ শতাংশের কাছাকাছি জমিতে। বর্তমানে পতিত জমির পরিমান ৩%। মোট কৃষি জমির অংশ ৪%-এর কিছু বেশি। অন্যান্য পতিত জমি ১%-এর কিছু বেশি। রাস্তাঘাট ইত্যাদি অন্যান্য ব্যবহারে রয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ ভূমি।
চা বাগিচাগুলি গড়ে উঠেছে ডুয়ার্সে ও দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে। দার্জিলিং-এর চা পৃথিবীতে সর্বোৎকৃষ্ট। বনভূমিগুলি, কৃষি, চা বাগিচা ও বসতি এলাকাসমূহকে ঘিরে রেখেছে। বস্তুতঃ অরণ্য পরিষ্কার করেই অধিকাংশ ভূমির ব্যবহার গড়ে উঠেছে। সমগ্র জেলায়ই পার্বত্যঢালে ধান চাষ হয় ধাপ চাষ করে। পাদদেশীয় সমভূমিতে এবং নদী অববাহিকায় পলি সঞ্চিত সমভূমিভাগে মূলতঃ ধান চাষ হয়। কিছু তৈলবীজ, ডাল এবং ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বিন, স্কোয়াশ ও লঙ্কা চাষ হয়। এছাড়া বিভিন্ন ফল বিশেষত কমলালেবুর চাষে পার্বত্য জলবায়ুর নাতিশীতোয় ও আর্দ্র আবহাওয়ার আনুকূল্যে উৎকৃষ্ট ফলন হয়। দার্জিলিং-এর কমলালেবুর দেশে বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ভূমির ব্যবহারে সমস্যা: দার্জিলিং-এ ভূমির ব্যবহারে প্রধান ২টি সমস্যা হল- (১) জনবসতি বৃদ্ধি-অপেক্ষাকৃত সমতল পর্বতগাত্রে জনবসতি বিস্তারের প্রবণতা। ফলে কৃষি ভূমির আয়তন বৃদ্ধি করায় পার্বত্য ঢালের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অরণ্য ও অন্যান্য ভূমির আবরণে হস্তক্ষেপ ঘটে পার্বত্য বাস্তুসংস্থানের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। (২) ভূমি ধসের সমস্যা ভূ-তত্ত্ব বিবেচনা না করেই যত্রতত্র রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণ ও শস্য নির্বাচন পর্বতগাত্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। দুর্বল শিলাস্তরে রাজপথ নির্মাণ ও যাতায়াতকারী পরিবহন যানের চাপ সহ্য করতে না পারায় পাহড়ের ঢাল উপেক্ষা করেই অট্টালিকা নির্মাণ করা, জলের প্রয়োজন বেশি এমন শিকড় বিশিষ্ট ফসল ও বেশি দিন জল দাঁড়ায় এমন ধান চাষের ফলে পার্বত্য ঢালে মৃত্তিকাক্ষয় ও জলের অতিরিক্ত অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পর্বতগাত্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে শিলাগাত্রে ধস প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।