welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

কোপেনকৃত জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ(Kopen's Classification of Climate)

কোপেনকৃত জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ(Kopen's Classification of Climate)


কোপেন প্রধানত প্রাকৃতিক উদ্ভিদের উপর ভিত্তি করে (যা জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত) ভারতকে নিম্নলিখিত জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন:

(১) ক্রান্তীয় অতি-আর্দ্র মৌসুমী অঞ্চল (Amw): এই জলবায়ু অঞ্চল ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূলভাগে দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং তা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমনে ঘটে থাকে। এই অঞ্চলের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বল্পস্থায়ী শুল্ক ঋতু, অর্থাৎ প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাত এবং সমভাবাপন্ন উত্তাপ। চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি এই অঞ্চলের প্রধান প্রাকৃতিক উদ্ভিদ।

(২) ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল (Aw): এই ধরনের জলবায়ু সমগ্র গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য ও দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের অংশবিশেষ, দক্ষিণ-বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে দেখতে পাওয়া যায়। সমগ্র অঞ্চলে শীত-গ্রীষ্মের উত্তাপের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকাল অতি উষ্ণ এবং রাতের তাপমাত্রাও বেশি। বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমনে হয়ে থাকে এবং এর পরিমাণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের (৭৫ সেমি থেকে ১২৫ সেমি) হয়ে থাকে। এই জলবায়ু অঞ্চলের পূর্বদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ অপেক্ষা সামান্য বেশি। এই জলবায়ু অঞ্চলে প্রধানত পর্ণমোচী বৃক্ষ জন্মে।

(৩) ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল (As): দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর পুবদিকের উপকূলভাগে এইরূপ জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যাবর্ত মৌসুমী বায়ুর দ্বারা এই অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৫ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার।

(৪) শুষ্কপ্রায় ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় স্টেপ অঞ্চল (BShw): এইরূপ প্রায়-শুষ্ক জলবায়ু আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমে পূর্ব রাজস্থানে, দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাবে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের অংশবিশেষে দেখতে পাওয়া যায়। এই জলবায়ু অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বল্প বৃষ্টিপাত ও জলবায়ুর চরমভাব, অর্থাৎ শীত-গ্রীষ্মের উত্তাপের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য। গ্রীষ্মকাল প্রায়-শুষ্ক, বৃষ্টিপাত অতি সামান্য এবং শীতকাল সম্পূর্ণ শুষ্ক। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২.৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটারের মতো হয়ে থাকে। শুষ্ক ক্ষুদ্র তৃণ এবং কাঁটাযুক্ত ঝোপ-ঝাড় এই অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ।

 উষ্ণ মরু অঞ্চল (BWhw): রাজস্থানের পশ্চিম অঞ্চল, যা থর মরুভূমি নামে পরিচিত, এই অঞ্চলের অন্তর্গত। সমগ্র অঞ্চল, প্রায় একবারেই শুষ্ক বলা যায়।

Amw ক্রান্তীয় অতি-আর্দ্র মৌসুমী অঞ্চল (স্বল্পস্থায়ী শুদ্ধ ঋতু), Aw ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল, As ক্রান্তীয় শুভ গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল, BShw শুদ্ধপ্রায় ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় স্টেপ অঞ্চল, BWhw উচ্চ মরু অঞ্চল, Dicউত্তর-পূ র্বের শীতল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল, দরস্থায়ী গ্রীষ্মকাল), Cwg আর্দ্র উপ-ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চল (শুদ্ধ শীতকাল), E= পার্বত্য অঞ্চল (হিমালয়ের) বা মেরু অঞ্চল।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২.৫ সেন্টিমিটারেরও কম। অধিক উত্তাপ এবং বৃষ্টিপাতের অভাব এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মে উত্তাপের পরিমাণ এত বেশি যে, বৃষ্টিপাত অপেক্ষা বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি। সামান্য কিছু কাঁটাযুক্ত ঝোপ-ঝাড় ছাড়া এখানে অন্য কোন উদ্ভিদ জলাভাবে জন্মাতে পারে না।

(৬) উত্তর-পূর্বের শীতল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল (স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্ম) (Dic): সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ এবং অসমের পূর্বাংশ এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। শীতল আর্দ্র জলবায়ু এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি এবং ইহা ৩০০-৪০০ সেন্টিমিটারের মধ্যে।

(৭) আর্জ উপ-ক্রান্তীয় মৌসুমী অঞ্চল (শুদ্ধ শীতকাল) (Cwg): শতদ্র-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি এবং মালব মালভূমির অংশবিশেষ এরূপ জলবায়ুর অন্তর্গত। প্রকৃতপক্ষে উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমির অধিকাংশই এই জলবায়ুর অন্তর্গত। বৃষ্টিপাত প্রধানত গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর আগমনে হয়ে থাকে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পূর্ব থেকে পশ্চিমে ক্রমশ কমে গেছে। মাঝারি থেকে বেশি বৃষ্টিপাত এবং উত্তাপের স্বল্প-পার্থক্য এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য। তবে পশ্চিমে উষ্ণতার চরমভাব কিছুটা অধিক পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে কখনও কখনও উত্তাপ ৪৫° সেন্টিগ্রেডের উপরে উঠে যায় এবং শীতকালে ২৭° সেঃ বা তারও কম হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে পর্ণমোচী বৃক্ষেরই প্রাধান্য। তবে মাঝে মাঝে চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমিও দেখতে পাওয়া যায়।

(৮) পার্বত্য অঞ্চল (হিমালয়ের) বা মেরু-অঞ্চল (E): সমগ্র কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলে এইরূপ জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায়। অত্যধিক শীতলতা এবং গ্রীষ্মঋতুর একান্ত অভাব এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মকালের উষ্ণতাও ০° থেকে ১০° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। শীতকালে প্রায়ই তুষারপাত হয়ে থাকে। হিমরেখার নিচে উদ্ভিদ জন্মে থাকে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ অঞ্চলে তৃণ জন্মে থাকে এবং তৃণভূমির নিচে সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়।

ভারতের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব:

ভারত মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত। অধিবাসীদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ওপর এই জলবায়ুর প্রভাব খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

[১] কৃষিকাজে:  ভারত মৌসুমি বায়ুর দেশ। এই জলবায়ুর প্রভাবেই ভারতের অধিকাংশ লোককে কৃষিজীবি করেছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের ৭৫ শতাংশ মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং কৃষিকাজের সাফল্য-অসাফল্য মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। সর্বাপেক্ষা বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলিতে সেচের সাহায্য ছাড়াই ধান, পাট, আলু, চা, কফি, তৈলবীজ, তামাক প্রভৃতির চাষ সম্ভব হয়। মাঝারি থেকে স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে যেমন- পাঞ্জাবে, রাজস্থানে জলসেচের সাহায্যে গম, মহারাষ্ট্র কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে তুলো অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ হয়।

[২] বনজ সম্পদ সংগ্রহে:  মৌসুমি বায়ুতে যেখানে খুব বৃষ্টিপাত হয় যেমন- উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে, পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিবিড় অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যবান কাঠ ও উপজাত দ্রব্য এই সকল অরণ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়।

[৩] শিল্পে: উদ্বু ও আর্দ্র জলবায়ু প্রত্যক্ষভাবে বস্তুবয়ন গড়ে তোলার উপযোগী। শুদ্ধ জলবায়ু ময়দা শিল্প এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল মৃদু সামুদ্রিক জলবায়ু চলচ্চিত্র শিল্পের (মুম্বাই) উপযোগী। পরোক্ষভাবে, কৃষিজাত শিল্পের কাঁচামাল উৎপন্ন করায় জলবায়ুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কার্পাস, পাট, আখ, তৈলবীজ উৎপাদক অঞ্চলগুলিতে যেমন- কৃয়মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাসবস্ত্র শিল্প, উচ্চ ও মধ্যগঙ্গা সমভূমিতে চিনি শিল্প, ভোজ্য তেল উৎপাদন, নিম্নগঙ্গা সমভূমিতে পাট শিল্প উন্নতি করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে চা, কফি, ফল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প বলে বিবেচিত হয়েছে।

[৪] জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পর্যাপ্ত ও সময়মত বৃষ্টিপাত নদীর জলস্রোত বজায় রেখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে (শিবসমুদ্রম, নাগার্জুনসাগর, সরাবতী বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি)।

[৫] পরিবহনে: ভারতে রাজস্থান ছাড়া প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টিপাত ভাল হয় বলে নদীগুলি প্রায় সারা বছর নৌবহনযোগ্য থাকে।

[৬] পশুপালনে: শীত প্রধান কাশ্মীরে দুধ ও পশমের জন্য যাযাবর পশুপালন বৃত্তি দেখা যায়। বৃষ্টিহীন অনুর্বর মালভূমি অঞ্চলেও মাংস ও দুধের জন্য গবাদি পশু মেষ ও ছাগল পালন হয়।

[৭] অর্থনৈতিক বিশেষকরণে: মৌসুমি জলবায়ুর বৃষ্টিপাত ও উদ্বৃত্ত জল ধরে রেখে জলসেচের ব্যবস্থা কৃষিকাজে অনেকটা নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে গম, ধান, তুলা, আখ, চা উৎপাদনে উদ্বৃত্ত অঞ্চল। বিভিন্ন অঞ্চলে কার্পাস, পাট, চিনি প্রভৃতি শিল্পের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে এই বিশেষীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01