welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চল(Industrial Regions of West Bengal)

পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চল(Industrial Regions of West Bengal)


রাজ্যের চারটি প্রধান শিল্পাঞ্চলকে চিহ্ণিত করা যায়। এগুলি হল (ক) হুগলি শিল্পাঞ্চল বা কলকাতা-হাওড়া শিল্পাঞ্চল, (খ) হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এবং (গ) আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এবং (ঘ) দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি শিল্পাঞ্চল। এই শিল্পাঞ্চলগুলিতে যে ব্যাপক শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে তা রাজ্যের কৃষি ও খনিজ সম্পদের শিল্পান্নয়নযোগ্য কাঁচামালের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব করেছে। উপরন্তু ভিন্ন রাজ্য থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে শিল্পসম্পদের উন্নয়ন ঘটিয়ে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি সংঘটিত করেছে। বিভিন্ন পশ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে এই শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন নতুন নতুন শিল্পের আবির্ভাব হয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলটি ও আসানসোল-দুর্গাপুরের শিল্পগুলির এক বড়ো অংশ পরিকল্পনাকালে গঠিত। হুগলি শিল্পাঞ্চল প্রাক্ স্বাধীন যুগে গড়ে উঠলেও বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে গৃহীত শিল্পোন্নয়নের প্রচেষ্টায় কিছু কিছু রুগ্নশিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।

[i] হুগলি শিল্পাঞ্চল (The Hooghly Industrial Region)

অবস্থানঃ

এই শিল্পাঞ্চল হুগলি নদীর উভয় তীরে উত্তরে ত্রিবেণী কল্যাণী থেকে দক্ষিণে বিড়লাপুর-উলুবেড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ৭২ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত। হুগলি নদীর উভয় তীরে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাসমূহ, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের একটি প্রধান শিল্পাঞ্চল। বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় এই শিল্পাঞ্চল অবস্থিত বলে একে কলকাতা শিল্পাঞ্চলও বলে।

হুগলি শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণসমূহঃ

(ক) ঐতিহাসিক কারণঃ 

হুগলি নদীর তীরে কলকাতা বাণিজ্য-কেন্দ্রের সুবিধা নিয়ে ব্রিটিশ ও ভারতীয় বণিকগণ উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি এই অঞ্চলে পাট কার্পাস শিল্পের মাধ্যমে আধুনিক শিল্প স্থাপনের সূচনা করেন। পরবর্তীকালে এই সকল শিল্পের লাভজনক ব্যবসা অন্যান্য শিল্পকেও এই অঞ্চলে আকৃষ্ট করে এবং অচিরেই হুগলি শিল্পাঞ্চল ভারতের শিল্পোন্নয়নে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে।

[খ] ভৌগোলিক কারণসমূহঃ

(i) কাঁচামাল -হুগলি শিল্প বলয় একটি কৃষি-সমৃদ্ধ অন্দলে অবস্থিত। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা অন্যান্য কৃষি অঞ্চল এবং কয়লা ও অন্যান্য খনিজ উৎপাদক অঞ্চলকে নৈকট্য প্রদান করেছে। বাণিজ্যকেন্দ্রিক অবস্থান কাঁচামাল সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহায়ক শিল্প গড়ে তুলেছে। এই কারণে এই অঞ্চলে পাট, কার্পাস, কাগজ, রবার, চর্ম, বিভিন্ন রাসায়নিক ও অন্যান্য শিল্প গড়ে উঠেছে।

(ii) পরিবহন-হুগলি নদী জল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এছাড়াও হুগলি নদীর দুই তীরেই রেল ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান।

(iii) বন্দরের সান্নিধ্য পণ্য রপ্তানি ও শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য কলকাতা বন্দরের সান্নিধ্য সাহায্য করেছে।

(iv) শক্তি সরবরাহ-রাণীগঞ্জ ও ঝরিয়া কয়লাখনির নিকটে অবস্থান শক্তি ও জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা দান করে। নিকটবর্তী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের অবস্থান এবং দামোদর পরিকল্পনার জলবিদ্যুতের সরবরাহ এই অঞ্চলে শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করেছে।

(v) শ্রমিক এই শিল্পাঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকের সুলভ যোগান রয়েছে। এছাড়া নিকটবর্তী বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকেও প্রচুর শ্রমিকের আগমন ঘটে।

(vi) মূলধন কলকাতার প্রচুর ব্যবসায়ী লোকের বাস এবং বাণিজ্য ও ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়ের কেন্দ্র হওয়ায় মূলধন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা রয়েছে।

(vii) চাহিদা বা বাজার কলকাতার ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, উন্নত পরিবহন ও বন্দরের নৈকট্য এতদ অঞ্চলের শিল্পসমূহকে দেশে ও বিদেশে বিরাট বাজারের সুবিধা দান করে।

(viii) জলসম্পদ হুগলি নিত্যবহা হওয়ায় সারা বছর শিল্পসমূহের জন্য অফুরন্ত জলের যোগান থাকে।

(ix) উষ্ম, আর্দ্র জলবায়ু এখানকার উষ্ম আর্দ্র জলবায়ু বিশেষতঃ পাট ও কার্পাসবস্ত্র উৎপাদনের উপযোগী।

বিভিন্ন শিল্প

[ক] পাট শিল্প

ভারতের প্রথম পাট কলটি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার রিষড়ায় স্থাপিত হয়। বর্তমানে ভারতের ৭৩টি চালু পাটকলের মধ্যে ৫৮টি (প্রায় ৮০৭) হুগলি শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত।

অবস্থানের কারণ: হুগলি নদীর তীরে রাজ্যের পাটশিল্পের ব্যাপক একদেশীয়ভবনের কারণ-

• পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের কাঁচাপাট ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে জলপথে অতি সহজেই উৎকৃষ্ট কাঁচাপাট আমদানির সুবিধা। সুলভ শ্রমিকের সুবিধা। কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আমদানি ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানির সুবিধা। রেল, সড়ক ও জলপথে উন্নত যোগাযোগ।কলকাতা বাণিজ্যিক কেন্দ্রে মূলধনের সুবিধা। দেশে-বিদেশে বাজারের সুবিধা এবং উম্ম আর্দ্র জলবায়ু।

পাট শিল্পের অবস্থানঃ বাঁশবেড়িয়া, হালিশহর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল, শ্যামনগর, বৈদ্যবাটি, টিটাগড়, খড়দহ, রিষড়া, বালি, বেলুড়, হাওড়া, বজবজ প্রভৃতি পাটশিল্পের কেন্দ্র।

পাটজাত পণ্যঃ পাট থেকে চট বা হোসিয়ান, গানি ব্যাগ, বস্তা, দড়ি, সাধারণ ব্যাগ, কার্পেট এবং পাটের সঙ্গে সিন্থেটিক মিশিয়ে পোশাকের কাপড় প্রভৃতি তৈরি হয়।

সমস্যা ও সম্ভাবনা: চটকলের পুরাতন যন্ত্রপাতির দরুণ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবর্ত দ্রব্যের ব্যবহারের দেশ-বিদেশে চটের বাজার সংকোচন। কাঁচাপাটের অনিশ্চিত সরবরাহ, দুর্বল চটকলের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রধান সমস্যা।

পাটকলের আধুনিকীকরণ, জুট কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাজার প্রসারের প্রচেস্টা, কাঁচাপাটের উপযুক্ত মূল্য প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে।

বাণিজ্যঃ ২০০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দে পাটজাতদ্রব্য রপ্তানি করে ভারত যে ১,১৭৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছিল তার অধিকাংশ আসে হুগলি নদীর তীরের পাটগুলি থেকে।

[খ] কার্পাসবস্ত্র শিল্প

ভারতের প্রথম সূতাকল কলকাতার কাছে ঘুষুড়ীতে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়। কাঁচা তুলার জন্য এই শিল্পকে পশ্চিমাঞ্চলের ওপর নির্ভর করতে হয়।

অবস্থানের কারণ: কলকাতার বিরাট বাজার। কলকাতা বন্দরের সুবিধা। উন্নত যাতায়াতের ব্যবস্থা। ঝরিয়া ও রাণীগঞ্জের কয়লাখনি নৈকট্যে জ্বালানি ও শক্তি পাওয়ার সুবিধা,স্থানীয় মূলধন। সুলভ শ্রমিক। উন্মু, আর্দ্র আবহাওয়া।

শিল্পকেন্দ্র: শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর, সোদপুর, বেলঘরিয়া, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, মৌড়িগ্রাম, ফুলেশ্বর প্রভৃতি স্থানে সূতা ও কাপড়ের কলগুলি গড়ে উঠেছে।

সমস্যাঃকাঁচা তুলার সরবরাহে অনিশ্চয়তা।কাঁচা তুলা উৎপাদক অঞ্চলের বস্ত্রকেন্দ্রগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা। বিদ্যুৎ-ঘাটতি। সূতাকলগুলির আধুনিকীকরণ-এর অভাব। কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি প্রভৃতি। বস্ত্রকলগুলির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে এবং কাঁচা তুলার সরবরাহে নিশ্চিত করতে পারলে কার্পাস বস্ত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

[গ] কাগজ শিল্প

ভারতের প্রথম কাগজের কলটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কাছে শ্রীরামপুরে স্থাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ কাগজ কল হুগলি শিল্পাঞ্চলেই গড়ে উঠেছে।

অকস্থানের কারণ: উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার সাহায্যে কাগজ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ নিম্নগণের অববাহিকা, উত্তরবঙ্গোর তরাই অঞ্চল, বিহার ও ওড়িশা থেকে সংগ্রহ করার সুবিধা। শহর ও শহরতলী থেকে সংগৃহীত পুরানো কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, চট ইত্যাদিও কাগজ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য ও এখানে সহজে পাওয়া যায় এছাড়া শক্তি সম্পদ। জলের প্রাচুর্য রয়েছে। কলকাতা বন্দরের সুবিধা। সুলভ শ্রমিকের সুবিধা। কলকাতার বিরাট বাজার প্রভৃতির সুবিধায় কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে।

শিল্পকেন্দ্রঃ বর্তমানে আলমবাজার, চাকদহ, ত্রিবেণীতে কাগজের কলগুলি চালু রয়েছে। ত্রিবেণীতে টিসু কাগজ উৎপন্ন হয়।

সম্ভাবনাঃ রাজ্যের বিরাট বাজার-এর সুবিধা নিয়ে। কাগজকলগুলিতে উন্নতর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। কাঁচামাল-এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উন্নতি ঘটিয়ে কাগজ শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটানো সম্ভব।

কাগজশিল্পের সমস্যাঃ রাজ্যে কলেজের বিরাট বাজার থাকা সত্ত্বেও কাগজ কল-এর টিটাগড়, নৈহাটি, হালিশহর, রাণীগঞ্জ কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচামাল বাঁশ ও সাফাই ঘাড় সরবরাহে অনিশ্চয়তা, বিদ্যুৎসংকল, শ্রমিক, অসন্তোষ, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের কলগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গে কাগজকলগুলি টিকে থাকতে না পেরে পর পর কষ হয়ে গেছে।

[ঘ] রাসায়নিক শিল্প

পশ্চিমবঙ্গ রাসায়নিক শিল্পে ভারতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে এবং পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শিল্পাঞ্চলেই এই শিল্প কেন্দ্রীভূত। এই শিল্পাঞ্চলে নানাবিধ রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুত হয়। এর মধ্যে অ্যাসিড, কস্টিক সোডা, সোডা অ্যাশ, ব্লিচিং পাউডার, ক্লোরিন, বিভিন্ন প্রকার রং, বেনজিন প্রভৃতি প্রধান। রিষড়া, কোন্নগর ও কলকাতার চারদিকে বহু জায়গায় রাসায়নিক দ্রব্য উৎপন্ন করা হয়। রিষড়ায় 'অ্যালকালি কেমিক্যালস্ কর্পোরেশন' এবং পানিহাটিতে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র প্রতিষ্ঠিত 'বেঙ্গাল কেমিক্যাল' নামে বৃহদাকার রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে নানারকম ওষুধ ও প্রসাধন দ্রব্যের কারখানা গড়ে উঠেছে।

[ঙ] চর্ম শিল্প

চর্ম শিল্পে এই শিল্পাঞ্চল ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে। কলকাতার উপকণ্ঠে ট্যাংরায় প্রায় শতাধিক ট্যানারিতে চামড়া পাকা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিচালনাধীনে 'বেঙ্গল ট্যানারি' সর্বাপেক্ষা বৃহৎ কারখানা। চামড়া থেকে জুতো, সুটকেশ, ব্যাগ প্রভৃতি দ্রব্য প্রস্তুত হয়। কলকাতার উপকণ্ঠে বাটানগরে 'বাটা সু কোম্পানি' আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। কুটির শিল্প হিসেবেও নানাবিধ চর্মদ্রব্য এই শিল্পাঞ্চলে উৎপন্ন হয়।

[চ] ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে হুগলি শিল্পাঞ্চল ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। এই শিল্পে বিভিন্ন শ্রেণির দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। এই সকল শিল্পদ্রব্যের মধ্যে পরিবহন সংক্রান্ত দ্রব্য, ভারি যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, সেলাই কল, বৈদ্যুতিক পাখা, রেফ্রিজারেটার, পাম্প মেশিন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

পরিবহন সংক্রান্ত দ্রব্যের মধ্যে স্টিমার, মোটর, লঞ্চ ও জাহাজ গার্ডেনরীচে (গার্ডেনরীচ শিপ বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড) ও মেটিয়াবুরুজে, মোটর গাড়ি (এ্যাম্বাসেডর) ও লরি হিন্দ-মোটর-এ. সাইকেল কল্যাণীতে, রেলওয়াগান তৈরির কারখানা খিদিরপুরে ও দমদমের জেসপে গড়ে উঠেছে।

কাপড়ের কলের যন্ত্রপাতি বেলঘরিয়ার টেক্সম্যাকোতে, পাটকলের যন্ত্রপাতি দমদমে ও শ্রীরামপুরে, ভারি যন্ত্রপাতি নির্মাণের ব্যবস্থা খিদিরপুরে এম.এম.সি. কারখানায় ও দমদমের জেসপে উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও সহায়ক দ্রব্য হাওড়া, খিদিরপুরে এবং কলকাতা শহর ও তার উপকণ্ঠে গড়ে উঠেছে। ওরিয়েন্ট, জি.ই.সি., ক্রম্পটন, পোলার কোম্পানির বৈদ্যুতিক পাখা: উষা সেলাইকল, ফিলিপস্, জি.ই.সি., বেঙ্গল এর টিউব ও বাল্ব নির্মাণ; শীততাপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র, রেডিও, টি. ভি. সেট, গ্রামোফোন, ছাপাখানার মেশিন, ঢালাই লৌহ থেকে বিভিন্ন প্রকার লৌহদ্রব্য প্রভৃতি নির্মাণের কারখানা গড়ে উঠেছে।

ইছাপুর ও কাশীপুরে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করা হয়। অন্যান্য শিল্পের মধ্যে যাদবপুরে 'ন্যাশানাল ইনস্ট্রুমেন্ট'স কারখানায় সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ও দূরবীণ, ক্যামেরা, জরিপ-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি নির্মাণের ব্যবস্থা রয়েছে।

[ছ] অ্যালুমিনিয়াম শিল্প

বেলুড়ের অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ওড়িশার হীরাকুঁদ থেকে প্রেরিত অ্যালুমিনিয়াম পিন্ড ব্যবহার করে অ্যালুমিনিয়াম পাত এবং তা থেকে নানাবিধ দ্রব্য প্রস্তুত করে বাজারে প্রেরিত হয়।

[জ] তথ্য প্রযুক্তি শিল্প

হুগলি শিল্পাঞ্চলের অন্যতম শিল্প বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে সল্টলেকে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। TCS, কগনিজেন্ট, প্রাইসওয়াটার, ইনফোসিস-এর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি এই শিল্পে নিযুক্ত আছে। সল্টলেকে সেক্টর- V এই শিল্পের মুখ্য কেন্দ্র। রাজারহাটে নিউটাউনে গড়ে উঠছে সফ্টওয়‍্যার টেকনোলজি পার্ক। এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়।

[ঝ] অন্যান্য শিল্প

সাহাগঞ্জে ডানলপ, কল্যাণীতে ইনচেক টায়ার এবং আগরপাড়ায় বেলাল ওয়াটারপ্রুফ ওয়ার্কস নামক রবারের কারখানাগুলি অবস্থিত। ময়দা থেকে পাউরুটি, বিস্কুট প্রভৃতি প্রস্তুতের কারখানা, তেল ও চালকল গড়ে উঠেছে। এছাড়া পুস্তক প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্প (কলেজ স্ট্রীট), অলঙ্কার প্রস্তুত (বউবাজার), কাচ চিনামাটির বাসন প্রস্তুত, চশমার লেন্স (সোদপুর), ইট নির্মাণ প্রভৃতি শিল্পও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

হুগলি শিল্পাঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনাঃ

● কার্পাস, কাগজ প্রভৃতি কয়েকটি শিল্পে কাঁচামালের সমস্যা। কার্পাস, পাট, কাগজ, রাসায়নিক,ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি শিল্পে আধুনিকীকরণের অভাব। ঘনবসতি গড়ে ওঠায় উপযুক্ত পরিকাঠামোযুক্ত অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের উপযোগী ভূমির অভাব ও উচ্চমূল্য। বিদ্যুৎ ঘাটতি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের অবনতি। আন্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

বিভিন্ন শিল্পে আধুনিকীকরণ, কাঁচামাল সরবরাহে সুনিশ্চয়তা, নতুন ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প স্থাপন, অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতি অঞ্চলে পরিকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি, বিদ্যুৎ সরবরাহে উন্নতি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নতি এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি প্রচেষ্টা সফল হলে হুগলি শিল্পাঞ্চলের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01