welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ইন্দো-ইরানীয় ভাষাসমূহ (Indo-Iranian Languages)

ইন্দো-ইরানীয় ভাষাসমূহ (Indo-Iranian Languages)


প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে ইন্দো-ইরানীয় ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। এই ভাষাভাষীর মানুষজন খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে ভারতে চলে আসেন। ফলে তখন থেকেই ভারতে এই ভাষার প্রচলন ঘটেছিল আমাদের দেশে যেসব অনার্য (প্রধানত দ্রাবিড় সম্প্রদায়) বসবাস করেন তাঁরা এই ভাষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহদ করেন। ভারত ও পাকিস্তানের ভাষাগুলি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীভুক্ত। এই ভাষা ইন্ডিক এবং ইরানী উপগোষ্ঠীতে বিভন্ত। ভারতেই এই ভাষার প্রচলন খুব বেশি দেখা যায়। বর্তমানে পাকিস্তান, নেপাল এমনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলে থাকেন। উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, গুজরাতি ওডিয়া এই ভাষাগুলি ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবার থেকেই এসেছে। আফগানিস্তানের মানুষের ভাষা হল পারি এবং ইরানের অধিবাসীদের ভাষা হল ইরানী। ইরানী উপগোষ্ঠীর মধ্যে পাশতো, বালুচি, তাদজিক, কুরদি প্রভৃতি ভাষার প্রচলন আছে।

আর্মেনীয়, গ্রিক, আলবেনীয় ভাষা: আর্মেনীয়ার অধিবাসীগণ আর্মেনীয় ভাষা, গ্রীস দেশের অধিবাসী গ্রিক ভাষা, গ্রীক এবং আলবেনীয়ার কিছু লোকজন আলবেনীয় ভাষার ব্যবহার করেন। গ্রীস যখন সর বিশ্বে একসময় প্রভুত্ব দেখিয়েছিল সেই সময় সমগ্র বিশ্বের বিস্তীর্ণ এলাকাতে গ্রীক ভাষার প্রচলন দেখা গিয়েছিল গ্রীক ভাষা ও সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী ছিল। গ্রীক ভাষাতেই বাইবেলের 'New Testamen' একসা রচিত হয়েছিল।

রোমান্স ভাষা: ল্যাটিন হল রোমান্স ভাষাগুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এই ভাষার আবার উপগোষ্ঠ আছে- পূর্ব উপগোষ্ঠী এবং পশ্চিম উপগোষ্ঠী। ইতালী পূর্ব উপগোষ্ঠীর ভাষা। তবে দেখা যায় যে আজেন্টিন ক ফ্রান্স, ব্রাজিল, যুগোশ্লাভিয়া, সুইজারল্যান্ডে যেসব ইতালীয় নাগরিক বসবাস করেন তাঁরা এই ভাষায় বহু বলেন। রোমান্স ভাষার অনেক উপভাষা আছে। যেমন- রাহেতো-রোমানিক ভাষার সঙ্গে ল্যাটিন ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে বসবাসকারী মানুষজন রাহেতো-রোমানিক ভাষায় কা বলেন।

পশ্চিম উপগোষ্ঠীর ভাষার মধ্যে অনেক ভাষা আছে। স্প্যানিশ ভাষায় পৃথিবীর কয়েকলক্ষ মানুষ কথ বলেন। স্পেন, কিউবা, পোর্টারিকো, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মরক্কো এবং আফ্রিকার স্প্যানিশ উপনিবেশগুলিয়ে আমেরিকা প্রজাতন্ত্রের মানুষজন স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। ক্যাস্টিলিয়া একটি স্থানীয় ভাষা যা স্প্যানিশে চেয়ে আলাদা।

পোর্তুগিজদের উপনিবেশ অঞ্চল যেখানে আছে, যেমন- অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, তিমোর এই অঞ্চলগুলিতে পোর্তুগিজ ভাষার প্রচলন আছে। ইহুদি সম্প্রদায় ল্যাডিনো উপভাষার মাধ্যমে কথা বলেন। স্প্যানিশ হিঃ গ্রীক এবং তুর্কির সংমিশ্রণে বিকাশ লাভ করেছিল। ফ্রান্স, দক্ষিণ বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ প্রভৃতি দেশের মানুষ ফরাসি ভাষায় কথা বলেন।

কেলটিক ভাষা (Celtic Language): একদা মধ্য এবং দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় এই ভাষার প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ভাষাতে খুব কম লোক কথা বলেন। আয়ারল্যান্ডে এবং ইংল্যান্ডের কাউনি প্রদেশগুলোতে কেলটিক ভাষা এখনও চলছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড অধিবাসীদের এটি সরকারি ভাষা। স্কটল্যান্ড উচ্চভূমি, প্রিন্স এডোয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে স্কটিশ গেঁয়ো ভাষায় (Scottish Gaelic Language) মানুষ কথা বলেন ওয়েলস্ এবং ব্রিটন উপভাষা যথাক্রমে ওয়েলস্ ও ব্রিটানিতে প্রচলিত আছে।

টিউটোনিক ভাষা: টিউটোনিক চারটি উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত, যথা- ইংরেজি, ডাচ, জার্মান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে ইংরেজি ভাষার চল দেখা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুরে ইংরেজি সরকারি ভাষা হিসেবে প্রচলিত আছে। আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত অনেক দেশে, যেমন- কেনিয় তানজানিয়া, নাইজেরিয়া, থানা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, যেমন- মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ওশিয়ানিয়ার অন্তগত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ইংরাজি ভাষা ব্যবহৃত হয়। এমনকি ভারতে সরকারি স্তরে কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য ইংরেজী ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সরকারি ভাষা হল ইংরেজি। ব্রিটেনে স্যান্ডার্ড ভাষায় উচ্চবর্ণের লোকেরা কথা বলেন। BBC সংস্থাটি এই ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।

জার্মান ভাষাও পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে প্রচলিত আছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স। এবং ডেনমার্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ জার্মান ভাষায় মনের ভাব বিনিময় করেন।

নেদারল্যান্ডে ডাচ ভাষা এবং বেলজিয়ামে ফ্লেমিশ ভাষায় মানুষ কথা বলেন। ডাচ ও বান্টু ভাষার মিশ্রণে আফ্রিকানস ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। এই ভাষা দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসোয়ানা এবং লোসোথোতে প্রচলিত আছে।

প্রধান স্ক্যান্ডিনেভিয় ভাষা হল আইসল্যান্ডিক, সুইডিস, নরওয়েজিয়ান এবং ডানিশ। আইসল্যান্ডিক ভাষার প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অধিবাসীগণ স্ক্যান্ডিনেভিয় ভাষায় কথা বলেন। তবে যেসব স্ক্যান্ডিনেভিয় অধিবাসী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছেন তাঁরা ইংরেজিতে কথা বলেন।

বাল্টিক ভাষা (Baltic Language): বাল্টিক ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে দুটি উপভাষা আছে- ল্যাটভিয়া এবং লিথুনিয়া। ল্যাটভিয়া উপভাষা ল্যাটভিয়া দেশে এবং লিথুনিয়া উপভাষা লিথুনিয়া দেশে প্রচলিত রয়েছে।

শ্লোভিক ভাষা (Solvic Language): স্লোভিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলি ইউরোপের মধ্যভাগ থেকে কমনওয়েলথ্ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস্-এর মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব অঞ্চলে প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে খুব মিল খুঁজে পাওয়া যায়। জাতিপুঞ্জের সরকারি ভাষা হল শ্লোভিক ভাষা। ইউক্রেন দেশে স্লোভিক ভাষার প্রচলন রয়েছে। চেকোস্লাভাকিয়া দেশের দুটি প্রধান ভাষা হল 'চেক' এবং 'স্লোভাক'। আগেকার পূর্ব জার্মানিতে 'লুসাটিয়া' এবং পূর্বতন যুগোস্লাভিয়ায় 'সার্বোক্রেটিয়া', স্লোভেনিয়া ও ম্যাকিডোনিয়া ভাষার প্রচলন আছে। স্লোভিয়া রিপাবলিক এবং তার পার্শ্ববর্তী অংশে স্লোভানিয়া, ম্যাকিডোনিয়া, বুলগেরিয়ার পশ্চিমপ্রান্তে এবং গ্রিস দেশের উত্তরভাগে ম্যাকিডোনিয়া ভাষা প্রচলিত আছে। রাশিয়া এবং হাঙ্গেরিতে অধিকাংশ মানুষ 'বুলগেরিয়ান' ভাষা ব্যবহার করেন।

■ চিন-তিব্বতীয় ভাষা চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে চিন-তিব্বতীয় ভাষা প্রচলিত আছে। 'মান্দারিন' হল চিনাদের প্রধান ভাষা। এই ভাষায় চীনদেশের প্রায় 75% মানুষ কথা বলেন। চীনে আরও কয়েকটি ভাষার প্রচলন দেখা যায়। এগুলি হল- ক্যান্টোস, মিন, য়ু এবং হাক্কা।

■ সেমিটো-হামোটিক ভাষা আরবি, হিব্রু এবং উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কিছু ভাষা এই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। বাইবেল ও কোরান-এই দুটি প্রধান ধর্মগ্রন্থ আরবি ও হিব্রু ভাষায় রচিত হয়েছে। আরবি হল এই ভাষা পরিবারের প্রধান ভাষা। দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা এবং উত্তর আফ্রিকার 19টি দেশের সরকারি ভাষা হল আরবি। বাইবেলের 'ওল্ডটেস্টামেন্ট'-এর বেশির ভাগ অংশ হিব্রুতে লেখা। ইস্রায়েল দেশটিতে বর্তমানে হিব্রু ভাষা প্রচলিত আছে।

■ আফ্রিকা মহাদেশের ভাষাসমূহ: আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় 1000টি ভাষা এবং কয়েক হাজার উপভাষার প্রচলন আছে। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরভাগে আরবি ভাষার প্রচলন দেখা যায়। সাহারা মরু অঞ্চলের দিকে নিগ্রো-কঙ্গো ভাষা ব্যবহৃত হয়। এই ভাষার কয়েকটি শাখা হল মান্ডে, গুর, আদাবামা, কা, বেনেউ-কঙ্গো। দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকায় থাইসান ভাষার প্রচলন রয়েছে। নাইজেরিয়ায় অসংখ্য ভাষার প্রচলন আছে। এর মধ্যে প্রধান ভাষা হল হাউসা। সাইলি হল তানজানিয়ার সরকারি ভাষা। এই ভাষার ওপর আরবীয় প্রভাব রয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01