দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের পরিব্রাজন(World Population Migration After 2nd World War)
1945 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনের ক্ষেত্রে এক নতুন পট পরিবর্তন লক্ষ। যায়। এই সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের বিধিনিষেধ অনেক তীব্র হওয়ায় সামরিকভা আন্তজাতিক পরিব্রাজনের মাত্রা কমে যায়। Beaujeu-Garnier (1966)-এর মতে, এই সময় আন্তর্জরি আইন (International Law) এবং বর্ণভেদ প্রথা (Castism) অতান্ত তীব্র ছিল। ফলে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনে ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়েছিল।
1947 খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই ভারতের স্বাধীনতালাভের ফ ভারত থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। বর্তমানের পাকিস্তান রাষ্ট্রটির নাম হয় পশ্চিম পাকিস্তান এ বর্তমানের বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির নাম পূর্ব পাকিস্তান। দেশ বিভাগের ফলে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু বা শরণার্থী পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে এবং ভারতের অসম সহ অন্যান্য রাজ্যে প্রবেশ করে। এর ফলে একনিয় যেমন আমাদের দেশের জনসংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়, তেমনি কৃষি, জমি এবং অর্থনীতিতে এর প্রভা পড়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায় পাঞ্জাব ও রাজস্থান সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে আসেন। একইভাবে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বেশ কিছু সংখ্যক লোক পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় দেন। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান-এর জনগণের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনে এক নতুন এর বাক করা যায়। এই পরিরাজন ছিল বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন (Force International প্রায়)। পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, উত্তর ও বরগুনা, মালদহ, জলপাইগুড়ি। দক্ষিণ চবিংশ ও কলকাতায় এসে বসবাস করতে থাকেন। তবে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এই যে পূর্ববঙ্গোর হাজার হাজার কৃষক সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গোর কৃষিপ্রধান অঞ্চলে এসে বসবাস করে ধান ও পাই চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইজরায়েল কৃষি এবং শিল্পে বিশেষ উন্নতিলাভ করে। এর ফলে ইউরোপের প্রমানি সহ অন্যান্য দেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ ইহুদি সম্প্রদায় ইজরায়েলে এসে বসবাস শুরু করেন। ঠিক এই সময়ে পশ্চিমি সভ্যতায় বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশে আন্তর্জাতিক পরিব্রাজনে এক নতুন ঘটনা দেখা দিল। গ্রেট ব্রিটেন, ইটালি, নেদারল্যান্ড, স্পেন, পোর্তুগাল থেকে দলে দলে মানুষ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, ইজরায়েল, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাতে এসে বসবাস করতে শুরু করল।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন কাজে যোগদানের জন্য চলে আসেন। বহরিন, ইরাক, জর্ডন, কুয়েত, লিবিয়া, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী প্রভৃতি দেশে গুর সংখ্যক শ্রমিকের আগমন ঘটে, প্রধানত বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি চুক্তির মাধ্যমে এসব দক্ষ শ্রমিকদের নিয়ে আসত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও শ্রমিকের জোগান দেওয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। প্রধানত জিম্বাবোয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা-এই দুটি দেশেই শ্রমিকের দল এসেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার স্থানীয় শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে সোনার খনি এবং অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে শিল্পকর্ম পরিচালনা করছে। ফলে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন কিছুটা কমে যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তজাতিক পরিব্রাজনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একটি বড়ো সংখ্যক উদ্বাস্তুর দল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 1973 খ্রিস্টাব্দে এরকম উদ্বাস্তুদের সংখ্যা পৃথিবীতে ছিল 1.৪ মিলিয়ন। 1973 খ্রিস্টাব্দের পর এই উদ্দ্বাস্তুর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় 6,8 মিলিয়ন। এই ধরনের পরিব্রাজনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে উদ্বাস্তুগণ একই রকম প্রতিবেশী দেশগুলিতে বাধ্য হয়ে বেআইনি শরিয়াজনে যুক্ত হচ্ছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির ফলে আন্তজাতিক রাজনৈতিক অবস্থা আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিক নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিল। ফলে এসব পরিব্রাজনের মূল কারণ ছিল জীবনের নিরাপত্তা জনিত সমস্যা