হলদিয়া শিল্পাঞ্চল (Haldia Industrial Complex)
অবস্থানঃ
মেদিনীপুর জেলার হলদি নদীর তীরে কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে হলদিয়া বন্দর অঞ্চলে একটি বিরাট শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। এই নবগঠিত শিল্পাঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেকগুলি শিল্প গড়ে উঠেছে এবং উঠছে।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণঃ
[i] হলদিয়া বন্দরের সান্নিধ্য-হলদিয়া বন্দর মাধ্যমে একদিকে যেমন আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন কাঁচামাল, বিশেষতঃ পেট্রোলিয়াম আমদানি সহজ হয় তেমনি এখানকার শিল্পজাত দ্রব্য বাইরে সহজে প্রেরণ করা যায়।
[ii] কাঁচামালের সহজলভ্যতা-খনিজ তেলসহ বিভিন্ন কাঁচামাল জলপথে যেমন আমদানি করা যায় তেমনি হলদিয়া তৈলশোধনাগারে যে সকল উপজাত দ্রব্য পৃথক করা হয় সেগুলি বিভিন্ন পেট্রো-রসায়ন শিল্প, সার প্রস্তুত ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
(iii) শক্তি সম্পদ কয়লা, খনিজ তেল এবং তাপবিদ্যুৎ এখানে সহজলভ্য।
[iv] শ্রমিক স্থানীয় শ্রমিক এবং কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহ থেকে আগত সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
[v] মূলধন-নতুন শিল্পাঞ্চল ও আধুনিক পরিকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি মূলধন বিনিয়োগ করছে।
[vi] পরিবহন-জল, সড়ক এবং অধুনা রেলপথে এই শিল্পাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত।
[vii] বাজার-কলকাতার সাথে উন্নত যোগাযোগ থাকায় এবং বন্দরের সুবিধা থাকায় বিরাট বাজারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
[viii] জল-হুগলি হলদি নদীর জল শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজন মেটায়।
[ix] প্রশস্ত ভূমি নবীন শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রচুর প্রশস্ত এবং সুলভ জমি, বড়ো বড়ো শিল্প গঠনের সহায়ক।
[x] সরকারি উদ্যোগ-এখানে একটি আধুনিক পেট্রো-রসায়ন কমপ্লেক্স গঠনের সরকারি ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এখানে নতুন নতুন শিল্প গঠনে সরকার উৎসাহ দিচ্ছেন।
বিভিন্ন শিল্পঃ
(ক) খনিজ তেল পরিশোধনঃ আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের সাহায্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন হলদিয়ায় একটি খনিজ তেল শোধনাগার গড়ে তুলেছে। পরিশোধনের পরিমাণ বহু সরে প্রায় ৪০ লক্ষ টন।
(খ) রাসায়নিক সার উৎপান: হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন এর সার কারখানাটিতে খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য ন্যাপথা-ভিত্তিক সার উৎপাদন হবে। টাটার উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি ফসফেট সার তৈরির কারখানা।
(গ) 'শ' ওয়ালেশ-এর কীট নাশক উৎপাদন কারখানা রয়েছে।
(ঘ) হিন্দুস্থান লিভারের সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।
অন্যান্য শিল্প: এ্যাক্সাইড ব্যাটারি, হিন্দুস্তান লিভারের সাবান তৈরি এবং নানাবিধ খাদ্য ও ফল সংরক্ষণ, মৎস্য সংরক্ষণ প্রভৃতি শিল্প উল্লেখযোগ্য।
পেট্রো-কেমিক্যাল কমপ্লেক্সঃ সরকার ও চ্যাটার্জি, টাটা, গোয়েঙ্কা প্রভৃতি শিল্প গোষ্ঠীর সাহায্যে এই প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। এই ধরনের শিল্পের মধ্যে প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু, কৃত্রিম রবার, পেট্রোলিয়াম উপজাত দ্রব্য-ভিত্তিক সার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য।
সমস্যাঃ প্রকল্প রূপায়নে মাঝে মাঝে মূলধন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ সংকোট, পরিবহন ব্যবস্থায় দ্রুততার অভাব প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
পাটকলের আধুনিকীকরণ, জুট কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাজার প্রসারের প্রচেস্টা, কাঁচাপাটের উপযুক্ত মূল্য প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে।
বাণিজ্যঃ ২০০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দে পাটজাতদ্রব্য রপ্তানি করে ভারত যে ১,১৭৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছিল তার অধিকাংশ আসে হুগলি নদীর তীরের পাটগুলি থেকে।