ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (Growth Rate of Indian Population)
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে ২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী ১.৭৬ শতাংশ প্রতি বছরে। জনসংখ ।। বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ২.২%। ১৯৮১ সালেও এই হার স্থির ছিল অর্থাৎ ২.২%। ১৯৯১ থেকে বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। ১৯৯১ এ ২.০% থেকে কমে ২০০১ এ ১.৭৭ শতাংশ হয় এবং ২০১১-এ তা দাঁড়ায় ১.৭৬ শতাংশে। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রচার এবং উৎসাহ দান, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি সারাদেশে যাতে হসপিটালগুলির মাধ্যমে এবং গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মাধ্যমে রূপায়িত হয় সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হয়েছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে নিম্নগামী।
ভারতে জন্মহার, মৃত্যুহার এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথেষ্ট বেশি। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১০২-৭ কোটি। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে এটি বার্ষিক প্রায় ১-৭৬% হারে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২১-০২ কোটি জনসংখ্যা। এই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অচীরেই ভারতের জনসংখ্যা চিনের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশে পরিণত হবে।
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখে ধারণা করা যায় যে, বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। কারণ এই হার ১৯৯১-২০০১-এ যেখানে ছিল বার্ষিক ২-১৫%, তা ২০০১-১১ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১-৭৬%। তবে প্রকৃত জনসংখ্যা বৃদ্ধি যে যথেষ্ট তা বোঝা যায় দেশে জনঘনত্ব বৃদ্ধির হার দেখে। ২০০১ সালে জনঘনত্ব যেখানে ছিল ৩২৫/বর্গকিমি, তা ২০১১ সালে বেড়ে হয়েছে ৩৮২/বর্গকিমি। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে জনঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭/বর্গকিমি এবং প্রকৃত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে এই ১০ বছরে প্রায় ১৯ কোটি।
যদি জনসংখ্যার রাজ্যভিত্তিক বিন্যাস লক্ষ্য করা যায় প্রদত্ত চার্টটি থেকে, তবে দেখা যায় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম (০১৬%)। ১০ বছরে (২০০১-১১) এই বৃদ্ধির হার অন্ধ্রপ্রদেশে ১১-১%), কর্ণাটকে ১৫-৬৭%, তামিলনাডুতে ১৫-৬% ও কেরালায় ৪-৮৬%। পশ্চিম ও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে এই বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত বেশি। পশ্চিম ও উত্তর ভারতের সমতল অধিকাংশ রাজ্যগুলিতে এই বৃদ্ধির হার ২০%-এর বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম নাগাল্যান্ডে (০-৪৭%) এবং কেরালায় (৪-৮৬%)। কেরালায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ০-৫%-এর কম। এই রাজ্যে সাক্ষরতার হার সারা দেশে সবচেয়ে বেশি (৯৩-৯১%)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি বিহার (২৫-০৬%), অরুণাচলপ্রদেশ (২৫-৯২%), মেঘালয় (২৭-৮২%)- এই রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাঝারি (১৩-৯৩%)।
■ ভারতে অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণঃ
• শিক্ষার নিম্নহার: দেশে সার্বিক শিক্ষার নিম্ন মান জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণার অভাব ঘটে। সচেতনতা সামাজিক সচেতনতার অভাব, বুসংস্কার ইত্যাদি অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। • শ্রমের চাহিদা: অত্যধিক শ্রমভিত্তিক কৃষিনির্ভরতার জন্য দরিদ্র মানুষ পরিবার সংকোচনে আগ্রহী হয় না। নীতি রূপায়ণ ছোটো পরিবার সুখী পরিবার এই সরকারি নীতি রূপায়ণে বিশেষ সাফল্য আসে নি। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অনাগ্রহ: পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনসংখ্যার অনাগ্রহও জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিম্ন জীবনযাত্রার মান : দারিদ্র্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ বলে অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন। নিম্ন জীবনযাত্রার মান দরিদ্র জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য। সুতরাং দারিদ্র্য দূরীকরণ আশু প্রয়োজন। ধর্মীয় কারণ: কোন কোন ধর্মে পুত্র সন্তানের প্রতি অগ্রহ এবং কোন কোন ধর্মের জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হয়। কুসংস্কার ও নারীর প্রতি অবহেলার কারণে অধিক সন্তানের জন্মদানে নারীর স্বাস্থ্যের অবনতির কথা চিন্তা করা হয় না। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পরিবার কল্যাণ সম্পর্কে ঔদাসীন্য ও ভোট সর্বস্ব রাজনীতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পরিপন্থী। অনুন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বুম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। • ভ্রান্ত ধারণা: অনেক পরিবার মনে করে অতিরিক্ত সন্তান অধিক নিরাপত্তা এবং অতিরিক্ত শ্রম বা আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি। এই ধারণাও ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শিল্পোন্নতি কৃষিজ, খনিজ ও বনজ ভিত্তিক শিল্পাঞ্চলগুলি। ঘনবসতিপূর্ণ। যেমন- কলকাতা, হাওড়া। পরিবহন ব্যবস্থা রেল সড়ক ও জলপথের সুযোগে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। যেমন-কলকাতা। ঐতিহাসিক কারণ ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান যেমন আগ্রা, মুর্শিদাবাদ জনবহুল শহর। ধর্মীয় কারণ ধর্মস্থানগুলি যেমন পুরী, বারাণসী, মথুরা জনবহুল। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কারণ-শিক্ষা ও গবেষণা এবং সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ জনগণকে আকৃষ্ট করে। যেমন-শান্তিনিকেতন। সরকারি নীতি রাজধানীর স্থানান্তর (দিসপুর) নতুন শিল্পাঞ্চল (হলদিয়া), উপনগরী (কল্যাণী), মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (ফলতা), জনবসতির বিকেন্দ্রীকরণে সাহায্য করেছে।