welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের ভৌগোলিক অঞ্চল(Geographical Regions of India)

ভারতের ভৌগোলিক অঞ্চল(Geographical Regions of India)


ভারতের মতো সুবিশাল দেশে ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ুর বৈচিত্র্য এত অধিক এবং আর্থ-সামাজিক জীবনযাত্রাও এত বৈচিত্র্যপূর্ণ যে, ভৌগোলিক অঞ্চলে সমগ্র দেশকে ভাগ করা সহজসাধ্য নয়। স্ট্যাম্প (L.D. Stamp), স্পেট (C. H. K. Spate), বেকার (Baker), কাজী আহমেদ প্রমুখ ভূগোলবিদ ভারতকে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করেন। তবে পরবর্তীকালে এইগুলিও সমালোচিত হয়েছে। একই প্রকার জলবায়ু অঞ্চলে ভূ-প্রকৃতিরও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমিকে একটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলভুক্ত করা গেলেও পশ্চিমে জলবায়ুর শুদ্ধতায় থর মরুভূমি এবং পূর্বদিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে গাঙ্গেয় সমভূমি সৃষ্ট হয়েছে। দুইটি অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপেও ভিন্নতা রয়েছে।

ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল (R. L. Singh অনুসারে)(Physiographic Regions of India according to R. L. Singh)

R. L. Singh প্রখ্যাত ভৌগোলিক, যিনি স্তরায়নতত্ত্ব, ভূ-গাঠনিক তত্ত্ব এবং ভূমিরূপ ও ক্ষয়প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ভারতকে প্রাথমিকভাবে ৪টি ভূ প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করেছেন ১. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল ২. বিশাল সমভূমি অঞ্চল ৩. উপদ্বীপীয় উচ্চভূমি ৪. ভারতের উপকূল ও দ্বীপভূমি। পরে তিনি ভারতকে বিভিন্ন বৃহৎ (Macro), মাঝারী (Meso), প্রথমক্রম (First Order), দ্বিতীয়ক্রম (Second Order) ইত্যাদি বড় থেকে ছোটো বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। উক্ত শ্রেণীবিভাগটি এই আলোচনার শেষে চার্টে প্রদত্ত হয়েছে।

(১) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northra Mountains): এই পার্বত্য অঞ্চল ভারতের উত্তর সীমা কতাবর পশ্চিম পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্ত থেকে পূর্বদিকে মায়াম্মার সীমান্ত পর্যন্ত, প্রায় ২০০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং পূর্ব-পশ্চিমে বেধ গড়ে ২৪০ কিলোমিটার যা হিমালয় পর্বতশ্রেণি ও পর্বতপ্রসূত পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কঠিত। এটি প্রায় ৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। ৩টি প্রধান ভাগ- এটির প্রতিনিধিত্ব করছে। হিমাদ্রি (গ্রেটার হিমালয়), হিমাচল (লেসার হিমালয়) ও শিবালিক (বহিঃ হিমালয়)- যেগুলি প্রায় অবিঘ্নিতভাবে দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। শক্তিশালী অথচ প্রাচীন নদীগুলি সিন্ধু, শতদ্র, কালী, কোশি ও ব্রহ্মপুত্র আানে স্থানে গভীর খাড়া গিরিখাত কেটে সমভূমিতে এসে পড়েছে এবং পূর্ববর্তী নদী হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছে। শৈলশ্রেণীর মধ্যবর্তী উপত্যকা দেশ দৈঘ্য বরাবর নদীগুলি দ্বারা অধিকৃত। মুখ্য একতা সূচক বৈশিষ্ট্য হল ৩টি ভাঁজ-অক্ষই পূর্ব-পশ্চিমে পরস্পর সমান্তরালে বিস্তৃত।

হিমাদ্রি বা গ্রেটার হিমালয় এর অন্তঃভাগ গ্রানাইট দিয়ে গঠিত যার বহিরাবরণে রয়েছে রূপান্তরিত পলল সঞ্চয়। পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্ট (৮৮৪৮ মি) পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত। অপ্রতিসম এই শৈলশ্রেণির তুষারাবৃত শৃঙ্গ ও হিমাবাহগুলির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অতুলনীয়।

হিমাচল কেন্দ্রীয় পর্বতশৃঙ্খলা গঠন করেছে এবং এলগনকিয়ন বা প্রি-ক্যাম্বিয়ান থেকে এয়োসিন যুগের সংনমনের অন্তর্গত ও পরিবর্তীত শিলা নিয়ে গঠিত। সাধারণভাবে শৈলশিরা ও উপত্যকা সমূহ পর্যায়ক্রমে ৫০০০ মিটার ও ১০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর গঠনগত অপ্রতিসমতার জন্য কোথাও কোথাও একে 'হগ ব্যাক' (Hog back)-এর মত দেখায়। এর সঙ্গে হিমাদ্রির পার্থক্য হ'ল হিমাদ্রি অনেক বেশি নিয়মিতভাবে এবং নিম্নতর উচ্চতা নিয়ে বিস্তৃত।

শিবালিক পর্বতশ্রেণি হিমালয় পর্বতশৃংখলের বহিরতম শ্রেণিটি নিয়ে গঠিত। এটি মোটামুটি 'হগ বাক' সদৃশ। দক্ষিণদিকে খাড়া ঢালে এবং উত্তরদিকে মৃদু ঢালে নেমে গেছে। উত্থানশীল হিমালয় থেকে ক্ষয়িত নবীনতম ও নদীবিধৌত সঞ্চয় হল হিমালয় পর্বত গঠনের সাম্প্রতিকতম পর্যায় যা মধ্য-মায়োসিন থেকে নিম্ন প্লায়েস্টোসিন পর্যন্ত সময়কালে বিস্তৃত। শৈলশ্রেণিটির উত্তর সীমানায় সমতল ভূ-গাঠনিকভাবে দৈর্ঘ্য বরাবর ক্ষয়জাত উপত্যকাসমূহ অবস্থিত। এগুলিকে দুন (Duns) বলে। চ্যুতি-ভূগূতট, উত্তল গাঠনিক উপত্যকা (An-ticlinal Valleys) ও অবতল গাঠনিক শৈলশিরা (Synclinal Ridge) এদের বৈশিষ্ট্য।

দৈর্ঘ-বরাবর এই উপ-বিভাগ ছাড়াও হিমালয় যে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে তার উপর ভিত্তি করে R.L.. Singh হিমালয়কে নিম্নলিখিত আঞ্চলিক বিভাজন করেছেন:-

ক. পশ্চিম হিমালয়

১. কাশ্মীর হিমালয়।

২. হিমাচল হিমালয়

খ. মধ্য হিমালয়

৩. উত্তরপ্রদেশ হিমালয়

৪. নেপাল হিমালয়

গ. পূর্ব হিমালয়

৫. দার্জিলিং-ভুটান-আসাম হিমালয়

৬. পূর্বাচল

২. বিশাল সমভূমি (The Great Plains): প্রধান নদীবিন্যাস গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নিয়ে গঠিত এবং তাদের পলি সঞ্চয়ে উত্তর ভারতের এই বিশাল সমভূমি অঞ্চল গঠিত হয়েছে, যার সমগ্র আয়তন ৭,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার। পলল সঞ্চয়ের গভীরতা স্থান বিশেষে আলাদা এবং গাঙ্গেয় সমভূমিতে এটি সর্বাধিক। গভীরতার পার্থক্য মূলতঃ নির্ভর করে পলি-গঠন প্রক্রিয়া (Alluvial - morphological processer)-র উপর। উত্তরে কোশি এবং দক্ষিণে শোন নদীর পলিশঙ্কু অধিকতর গভীরতা বিশিষ্ট এবং অন্তবর্তী পলিশঙ্কুগুলির গভীরতা অপেক্ষাকৃত কম। ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অতি-আর্দ্র থেকে নাতি-আর্দ্র ভূমিরূপ রাজস্থান সমভূমিতে এবং আর্দ্র থেকে অতি-আর্দ্র ভূমিরূপ পূর্বদিকে বদ্বীপ ও অসম উপত্যকা অঞ্চলে। দিল্লী শৈলশিরাটি আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির ক্ষয়িত বিস্তৃত অংশ। ভূ-প্রাকৃতিক সাদৃশ্য শুদ্ধ পশ্চিম রাজস্থান ছাড়া সর্বত্র সাধারণভাবে লক্ষিত হয়। তবে যদিও নদী বাহিত পলল সঞ্চয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হয়, যার ফলে স্থায়ীভাবে ভূমিরূপীয় তারতম্য লক্ষিত হয়। ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদী পলি অপেক্ষা বেশি বালুকা বহন করে আনে এবং নদী বরাবর দীর্ঘ স্বাভাবিক বাঁধ গঠন করেছে ও নদীবঞ্চ উচু হয়েছে। বন্যার সময় এরূপ স্বাভাবিক বাঁধের আংশিক অপসারণে বিস্তীর্ণ নিম্নভূ মি জলপ্লাবিত হলে জীবন ও সম্পত্তিহানি ঘটে। এই সমভূমির গড় উচ্চতা ১৫০ মিটার যা ব-দ্বীপ অংশে প্রায় শূন্য থেকে পাঞ্জাব ও উর্ধ গাঙ্গেয় সমভূমিতে হিমালয় পাদদেশীয় অংশে ৩০০ মিটার উঁচু এবং এই বিশাল সমভূ মির ভূমিরুপীয়  ঢাল অতি অল্প। 

সমভূমির উত্তরাংশের সংকীর্ণ প্রান্ত বরাবর দুটি সুস্পষ্ট ভূমিবিন্যাস রয়েছে (১) ভাবর ও (ii) তরাই।

ভাবর (Bhabar) এটি একটি পাদদেশীয় সমভূমি, ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত। এটি গঠিত হয়েছে হিমালয় থেকে আগত অ-বাছাই নদী সঞ্চয় থেকে। ভূপৃষ্ঠস্থ নদীসমূহ বোল্ডার ও বালুকা সঞ্চয়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।

তরাই (Terai) ভারর শেষ হলেই শুরু হয়ে যায় অপেক্ষাকৃত নিম্নে অবস্থিত, ১৫-৩০ কিলোমিটার প্রশস্ত তরাই অঞ্চল। এই অঞ্চলের বৈশিষ্য সুক্ষতর পলল সঞ্চয়, সুগঠিত, অ-সংগঠিত জলনিগম, স্বপ্ন ঢালু ভূ মিরূপ এবং উচ্চ ভৌমজলপৃষ্ঠ (অনধিক ৫ মিটার) যা বিস্তীর্ণ জলাভূমি সৃষ্টি করেছে। জলাভূমি ও স্বাভাবিক অরণ্য তরাই এর বৈশিষ্ট্য।

• গঙ্গোদ (Gangodh) বা গাঙ্গেয় পলিগঠিত ভূমির দুটি উপ-বিভাগ চিহ্নিত করা যায়।

(i) খাদার (Khadar) এটি গঠিত হয়েছে সাম্প্রতিক পলল সঞ্চয়ে এবং ঘনঘন এই অঞ্চল প্লাবিত ও পলি সঞ্চয়ের অন্তর্গত হয়।

(ii) ভাঙ্গার (Bhangar) এটি প্রাচীন পলি সন্বয়ে গঠিত এবং নদী থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে ও উচুতে অবস্থিত হওয়ায় কদাচিত প্লাবিত হয়।

নদীর গতি পরিবর্তনশীলতার জন্য ঘনঘন বন্যা সমভূমির ভূমিরূপ প্রক্রিয়ায় আগ্রহজনক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। সমভূমির দক্ষিণ অংশ দক্ষিণের উচ্চভূমির প্রান্তদেশ সংলগ্ন হওয়ায়, প্রায়শঃ উপদ্বীপীয় শিলাপ্রবিষ্ট দেখা যায়, যা কখনো কখনো গঙ্গায় তীর পর্যন্ত অধোক্ষিপ্ত হয়েছে (উদা: চুনার)

৩. উপদ্বীপীয় উচ্চভূমি (The Peninsular uplands):  ভূমিরূপগতভাবে বহুধা কারণে উৎপন্ন (Polygenetic) এবং জটিল, অপেক্ষাকৃত সৃস্থিত এই ভূভাগ গঙ্গা সমভূমির দক্ষিণ প্রান্ত থেকে দেশের উপকূল প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি প্রায় ১৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়, উচ্চ সমভূমি, সংকীর্ণ ও সঞ্চয় প্রক্রিয়ার অন্তর্গত প্রশস্ত।

পরপর মালভূমি, সমপ্রায়ভূমি ও অন্যান্য ক্ষয়জাত ভূভাগ নিয়ে গঠিত। একটি অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক উপকরণ হল দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বত, যা পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাঁজ পর্বতের অবশিষ্টাংশরূপে, অনুচ্চ, বিচ্ছিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। মধ্যবর্তী অংশে বানস ও লুনি নদীদুটি দ্বারা ক্ষয়িত ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এটি পাখার মত বিস্তৃত হয়ে উত্তরে অভিক্ষিপ্ত হয়েছে আলোয়ার ও সংলগ্ন অঞ্চলে এবং দক্ষিণে উদয়পুর অঞ্চলে যেখানে রয়েছে আরাবল্লীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট আবু (১৭২২ মি.)। বিন্ধ্য-সাতপুরা পার্বত্যভূমি এর খাড়া ভুগুতট এবং নর্মদা উপত্যকার দিকে শৈলশ্রেণির ন্যায় বিস্তৃত বলে পশ্চিমে সহাদ্রি থেকে পূর্বে মাইকাল পর্বত পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। সাতপুরা-বিন্ধ্য অঞ্চলের অধিকাংশ, পশ্চিমে দাক্ষিণাত্যের লাভা আবৃত অঞ্চল যা সাধারণভাবে অনুভূমিক স্তরে সঞ্চিত এর অন্তর্গত। বিন্ধ্য কতকটা ভাঁজ-গঠন বিশিষ্ট, বিশেষতঃ পশ্চিমাংশে।। বিন্ধ উত্তরে মৃদু ঢালু এবং দক্ষিণের উপত্যকা অংশে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট, সাতপুরা উত্তরে নর্মদা উপত্যকার দিকে এবং দক্ষিণে তাপ্তি নদী উপত্যকার দিকে খাড়া ঢালে নেমেছে। উচ্চভূমির গড় উচ্চতা ৩০০ মিটার থেকে স্থানে খ্যানে বিচ্ছিন্ন শৈলশীর্ষ ১০০০ মি-এরও বেশি উঁচু। উদাহরণ, অমরকন্টক ও পাঁচমারি পাহাড়। বিন্ধ্য পর্বত উত্তরের বিশাল সমভূমির দিকে এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রবাহী নদীগুলির মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা রূপে চিহ্নিত হয়।

সহ্যাজি পর্বতশ্রেণী প্রাচীন বিস্তীর্ণ ভূমিভাগের একটি মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা রূপে ছিল। সহ্যাদ্রিতে এ খলঘাট, ভোরঘাট ও পালঘাট তিনটি প্রধান ফাঁক (Gaps) উপকূলভূমি ও পর্বতের বন্ধুর মালভূমির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। খাড়া দেওয়ালের মতো পশ্চিম উপকূল অভিমুখে অধিষ্ঠিত থেকে সহ্যাদ্রি পূর্বদিকের মালভূমি অঞ্চলে কতকগুলি অভিক্ষেপ প্রেরণ করেছে। যেমন বালাঘাট, মহাদেব শৈলশ্রেণি প্রভৃতি, যেগুলির মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো ছেদ লক্ষ করা যায়। এর সর্বাধিক উচ্চ অংশে রয়েছে দক্ষিণদিকে যেখানে এটি পূর্বঘাট পর্বতমালার সঙ্গে নিলগিরি গ্রন্থি (২৬৩৬ মি.) এবং আনাইমালাই পালনি পাহাড়শ্রেণী (সর্বোচ্চ অংশ ২৬২৫ মি)-তে মিলিত হয়েছে।

পূর্বঘাট পর্বতমালা উপদ্বীপ-এর পূর্ব উপকূল বরাবর বিচ্ছিন্নভাবে কিন্তু অনুরূপ শৈলশ্রেণিরূপে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ থেকে দক্ষিণে নিলগিরি পর্বতের চানোকাইট পাহাড় শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত। গোদাবরী, কুস্না, কাবেরী প্রভৃতি প্রধান নদীগুলি পশ্চিমঘাট পর্বতে উৎপন্ন হয়ে উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে পূর্বঘাট শৈলশ্রেণি কর্তৃত করে বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে। এই শৈলশ্রেণিগুলির মধ্যে রয়েছে বহু গিরিখাত, জলপ্রপাত, প্রশস্ত পলিগঠিত উপত্যকা, (ওয়ার্ষা-ওয়েনগঙ্গা সমভূমি), ভূগাঠনিক ও ক্ষয়জাত অববাহিকা (ছত্তিশগড়-কুড্ডাপ্পা) অঞ্চল। গোদাবরী অববাহিকা কয়লা সঞ্চয়ে সমৃদ্ধ।

৪. ভারতের উপকূলভাগ ও ব-দ্বীপ অঞ্চল (Indian Coasts): ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল ভূ-গাঠনিক ও ভূমিরূপীয় বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে ব্যাপক তারতম্য প্রদর্শন করে। পশ্চিম উপকূল পূর্ব উপকূল অপেক্ষা অনেক সংকীর্ণ। কেবলমাত্র কাম্বে ও কচ্ছ উপসাগরীয় উপকূল অঞ্চল পলল সঞ্চয় ও সমস্থিতি জনিত কারণে বেশ প্রশস্ত। গিরনার পাহাড় ও আগ্নেয় শঙ্কু গুলি প্রাচীনতম উপদ্বীপীয় উচ্চভূমি অংশ যা বিচ্ছিন্ন হয়ে এখানে অবস্থান করেছে। দুটি উপসাগর বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্ভবতঃ গুজরাট সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলের পশ্চাতে ব্যাকওয়াটার (Backwater) বা কয়লাগুলি উপকূলীয় অঞ্চলের বৈশিষ্ট।।

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত, নদীগুলির সঞ্চয় কার্যের সঙ্গে যুক্ত, নদীগুলির ক্ষয়সীমার পরিবর্তন এজন্য অংশতঃ দায়ী। পূর্ব উপকূলের বৈশিষ্ট্য এর অন্তর্গত বিস্তৃত ব-দ্বীপীয় সমভূমি মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর ব-দ্বীপ সমূহ। ব-দ্বীপ গঠন সমুদ্রের দিকে এখনো ক্রিয়াশীল। ভূপ্রকৃতিকভাবে R.L. Singh ভারতের উপকূল ভূমিকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল- ১. গুজরাট উপকূল ২. পশ্চিম উপকূল এবং ৩. পূর্ব উপকূল।

বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরে সৃষ্ট দুটি দ্বীপপুঞ্জশ্রেণীই উৎপত্তিগতভাবে এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে পৃথক। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপসমূহ টার্সিয়ারি যুগের ভাঁজ গঠনের প্রসারিত অংশ যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর ৭৫০ মি. পর্যন্ত উচ্চতা (Saddle Peak) অর্জন করেছে। অগভীর খাড়ি বা প্রণালী দ্বারা দ্বীপগুলি পরস্পর থেকে এবং মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। উত্তর আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ একটি মধ্যবর্তী স্বল্পোচ্চ শৈলশিরা ও অন্তবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকাসমূহ নিয়ে গঠিত। মধ্য ও দক্ষিণ আন্দামান অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত সমতলভূমি গঠিত। লিটল আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চল ব্যতীত সর্বত্রই প্রায় সমতল। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সমুদ্র তলদেশের শৈলশিরার উত্থিত অংশ যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে ৭০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চ হয়েছে। এটি পাহাড়ী ও অসম ভূমিরূপযুক্ত। পাহাড়ী নদীগুলি দ্বারা ভূমিরূপ ব্যাবচ্ছিন্ন হয়েছে। নিম্নভূমিগুলি পলি সঞ্চয়ের ফলে সমতল ভূপৃষ্ঠ গঠন করেছে। সামুদ্রিক বালুকা ও প্রবাল সঞ্চয়ে গঠিত হয়েছে দ্বীপপুঞ্জগুলির বহিঃবলয়, যেটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমদিকে বেশি উচু; অন্যত্র উপকূলরেখা ১৩ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত খাঁড়া উঠে গেছে।

প্রখ্যাত ভূগোলবিদ R. L. Singh তাঁর India: A Regional Geography (1971) গ্রন্থে ভারতবর্ষের যে উপরিউক্ত মতো আঞ্চলিকিকরণ করেছেন তার অতিরিক্তও তিনি সমগ্র ভারতের একটি বিস্তারিত বৃহৎ, মাঝারী, প্রথমক্রম, দ্বিতীয়ক্রম হিসেবে বড় থেকে ছোটো এইভাবে আঞ্চলিকিকরণ করেছেন। উক্ত আঞ্চলিকিকরণটি National Geographical Society of India, Varanasi কৃত প্রকাশনায় বিবৃত করেছেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01