ভারতীয় নগরের কার্যভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ(Functional Classification of Indian Cities):
শহরের শ্রেণিবিভাগের বিভিন্ন পদ্ধতি কিংবা ভিত্তিগুলি প্রধানত আমেরিকার শহরের শ্রেণিবিভাগকে সরণ করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ ঘটেছে। ভারতীয় শহরগুলির ক্ষেত্রেও এর ক্রিম হয়নি। ভারতীয় সমাজবিজ্ঞানীগণ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ এবং অর্থনীতিবিদগণ ভারতীয় রের কার্যভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
• অশোক মিত্রর শ্রেণিবিভাগ: 1964খ্রিঃ অশোক মিত্র ভারতীয় শহরগুলিকে নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণিতে ভক্ত করেছেন। তাঁর শ্রেণিবিভাগ 1973 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। 1961 খ্রিস্টাব্দের 'Census data'-র পর ভিত্তি করে তিনি এই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। 1981 খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার বিশদভাবে এবং নতুন জুদৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে ভারতীয় শহরগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর দ্বিতীয় শ্রেণিবিভাগের ইতি ছিলেন 1961 এবং 1971 খ্রিস্টাব্দের 'Census data'-র ব্যবহার।
• 1964 খ্রিঃ শ্রেণিবিভাগ: ভারতের Census Commission-এর Registrar General হিসেবে 64 খ্রিস্টাব্দে অশোক মিত্র বিভিন্ন কার্যাবলির ওপর নির্ভর করে ভারতীয় শহরগুলির শ্রেণিবিভাগ করেছেন। প্রধানত 'শিল্পের বিভিন্ন শ্রেণিতে কী ধরনের শ্রমিক কাজ করেন তার ওপর নির্ভর করে তিনি 1961 এবং 1971-এর Census data থেকে তথ্য নিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করেছেন।
কৃষি, বনসৃজন, বাগিচা চাষ, খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং আহরণ শহুরে এবং গ্রামীণ দুই এলাকাতেই গড়ে ওঠে। বাগিচা কৃষিকাজ এবং খনিজ সম্পদ আহরণ পরবর্তীকালে শহরকেন্দ্র গঠনে সাহায্য করে। 7টি Census Industrial category-র শহরকে তিনটি প্রধান কার্যাবলির এককে ভাগ করা যায়। এগুলি হল-
(i) শ্রমশিল্প (Manufacturing Work)
(ii) ব্যাবসা এবং পরিবহণ (Trade and Transport)
(iii) পরিসেবামূলক কর্ম (Services)
সমস্ত শ্রেণির কাজের শ্রমিককে একশো শতাংশ ধরে, কোনো একটি শহরে একটি কাজে কত শ্রমিক নিযুক্ত আছেন তা বের করা হয়। এরপর কোনো শহরের প্রধান কার্যাবলিকে চিহ্নিত করা হয়। যেমন-শ্রমশিল্প মূলক শহর (Manufacturing Town), ব্যাবসা-পরিবহণভিত্তিক শহর (Trade-Transport Town) এবং পরিসেবামূলক শহর (Service Town)।
শ্রমশিল্পমূলক শহর এবং ব্যাবসা ও পরিবহণকেন্দ্রিক শহরকে আরও তিনটি ও দুটি উপশ্রেণিতে যথাক্রমে ভাগ করা হয়েছে.।
অশোক মিত্র শহরের মধ্যে বিভিন্ন কার্যাবলির শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে ত্রিভুজাকার চিত্র ব্যবহার করেছেন। একটি সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা বাহুগুলিকে যথাক্রমে A. B ও C বিন্দুতে ছেদ করেছে। A, B ও এই তিনটি প্রধান কাজের শ্রেণি, প্রত্যেকটি শ্রেণির মধ্যে নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা মোট কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের এর অংশ সেটি তিনটি বাহুর (Axis) দেখানো হয়েছে। ত্রিভুজের কেন্দ্রে কাজের ধরনের মধ্যে বৈচিত্র্য @sersification) সবচেয়ে বেশি। ওই নির্দিষ্ট বিন্দু যত দূরবর্তী বৃত্তচাপ অঙ্কন করা হয় সেখানে নির্দিষ্ট এজের প্রাধান্য বেশি মাত্রায় দেখা যায়। ত্রিভুজটির কেন্দ্র থেকে 2 6.11를 এবং 16 একক ব্যাসার্ধ হয়ে বৃত্ত অঙ্কন করলে কাজের speciallisation ধরা পড়ে। কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে ক্রমশ 40%, 45% এবং 50% করে কর্মবৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।
কোনো শহর কর্মের নিরিখে যদি সমবাহু ত্রিভুজের কেন্দ্রের ১ম বৃত্তে অবস্থান করে তবে ওই শহরে কাজের মধ্যে ভারসাম্য সবচেয়ে বেশি হবে। কারণ ওই শহরের মোট কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের 40% কোনো নির্দিষ্ট কর্মে নিযুক্ত হয়। এর বেশি কখনও হবে না, শহরগুলির মধ্যে যেগুলি ১ম ও ২য় বৃত্তের মধ্যভাগে অবস্থান করে সেখানে মাঝারি মানের কর্ম ভারসাম্য দেখা যায়। এখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে নিযুক্ত শ্রমিক মোট বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের 40%-45% হয়। যেসব শহর ২য় এবং ৩য় বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করে সেখানে একটি কাজ প্রধান কর্ম হিসেবে (dominant function) পরিগণিত হবে। এখানে নির্দিষ্ট একটি কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি মোট বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তির 45%-50% হবে। তৃতীয় বৃত্তের বাইরে অবস্থিত শহরগুলিতে নির্দিষ্ট একটি কাজে নিযুক্ত ব্যক্তির পরিমাণ মোট বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের 50% হবে। এই শহরটিকে নির্দিষ্ট কর্মকেন্দ্রিক শহর (Speciallised functional town) আখ্যা দেওয়া হয়েছে।