welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে জনঘনত্বের তারতম্যের কারণসমূহ(Factors Controlling the Density of Population)

ভারতে জনঘনত্বের তারতম্যের কারণসমূহ(Factors Controlling the Density of Population)


ভারতের সর্বত্র জনবসতির একরকম নয়। কোনো কোনো অঞ্চলে অত্যধিক ঘনবসতি লক্ষ করা যায়। রাজধানী শহর, বাণিজ্য কেন্দ্র, বৃহৎ বন্দর, খনি ও শিল্পাঞ্চল এবং উর্বর মুত্তিকা যুক্ত কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চলে ঘনবসতি লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে অনুর্বর মরু অঞ্চল বা বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চলে বিরল বসতি লক্ষ করার যায়। ভারতে জনসংখ্যার বিচারে উত্তরপ্রদেশ প্রথম স্থান অধিকার করে। অন্যদিকে সিকিমের জনসংখ্যা সর্বনিম্ন। জনসংখ্যার এই অসম বণ্টনের জন্য কিছু প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ দায়ী। আবার জনঘনত্বের বিচারে বিহার (1,102) প্রথম এবং অরুণাচল প্রদেশে।


■ প্রাকৃতিক কারণ:

জনঘনত্বের তারতম্যের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক কারণগুলি হল- (i) ভূ-প্রকৃতি, (ii) জলবায়ু, (ii) মৃত্তিকা, (iv) নদনদী, (৮) স্বাভাবিক উদ্ভিদ ইত্যাদি। এসব প্রকৃতি কারণ ভূ-প্রকৃতি, (জেলা বাধ করা).

(i) কৃতকৃতি: বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চল বা মালভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব সাধারণভাবে কম হয়। এনদিকে নদী অববাহিকা, প্লাবন এ সমভূমি, বদ্বীপ সমভূমি, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে এবং পার্বত্য অপেক্ষাকৃত করলে ক্ষেত্রে ঘনবসতি লক্ষ করা যায়। সমতল ক্ষেত্রে কৃষির উপযোগী জমি তৈরি করা সহজ হয়। তা মারা যানবাহন ব্যবস্থা সহজে গড়ে তুলে ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ব্যাপ্তি বিস্তৃত করা পাসও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্ধুর পার্বত্যভূমির অন্তর্গত রাজ্যসমূহ, যেমন- জম্মু ও কাশ্মীর (124), হিমাচল উদাহরণ- ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের উর্বর সমতল ক্ষেত্র এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে জনসংখ্যা অধিক। কারণ এইসব অঞ্চল কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে ভারতের সাদ্ধ এল /123), মণিপুর (122), নাগাল্যান্ড (119) সিকিম (86), মিজোরাম (52), অরুণাচল প্রদেশে (17) জলবাসিত খুব কম।

(ii) জলবায়ু : জলবায়ু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোনো অঞ্চলের জনবসতিকে প্রভাবিত করে। এরমভাবাপন্ন আবহাওয়া যুক্ত এলাকায় বিরল বসতি লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে মনোরম আবহাওয়া যুক্ত এলাকায় ঘনবসতি লক্ষ করা যায়। মধ্য ভারতের মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থানের জলবায়ু ভামভাবাপন্ন। এসব অঞ্চলের দিনরাতের মধ্যে উদ্বুতার পার্থক্য অনেক বেশি। আবার পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় শ্রীপ অঞ্চলের জলবায়ু প্রধানত সমুদ্র সান্নিধ্যের কারণে মনোরম। একই কারণে পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের মকটবর্তী সমভূমি অঞ্চলও মনোরম। ফলে গাঙ্গেয় বদ্বীপ এবং ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল অবসতিপূর্ণ।

(iii) মৃত্তিকা: মৃত্তিকার উর্বরতার ওপর কোনো অঞ্চলের কৃষির উন্নতি নির্ভর করে। আবার কৃষি জনবসতির ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ- ভারতের গঙ্গা-সিন্ধু-ব্রহ্মপুত্রের মরুভূমি অঞ্চলের উর্বর মৃত্তিকা এই অঞ্চলের ঘনবসতির অন্যতম প্রধান কারণ। অন্যদিকে রাজস্থানের মধ্যবর্তী অঞ্চলের বালুকণা সমৃদ্ধ মৃত্তিকা এবং পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশের ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা খুব কম। ফলে এসব অঞ্চলের কৃষি বিশেষ উন্নতি লাভ করেনি। স্বাভাবিক কারণে এসব অঞ্চল বিরল বসতিযুক্ত।

(iv) নদনদী: নদনদী এবং হ্রদকে কেন্দ্র করে জনবসতির বিস্তার লক্ষ করা যায়, নদনদী এবং হ্রদ থেকে পানীয় জল ও শিল্পে ব্যবহৃত জল মানুষ সংগ্রহ করে। কোনো অঞ্চলের শিল্পায়ন এবং পরিবহণ স্বাবস্থায় নদনদী ও হ্রদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ- গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত কলকাতা, হাওড়া শহর ঘনবসতিপূর্ণ। কলকাতা-হাওড়া শিল্পাঞ্চলের নানাবিধ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে কেন্দ্র করে একসময় ধৃত বসতি গড়ে উঠেছিল। হুগলি নদীর সুলভ জল পরিবহণ এবং জলের জোগান এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহায়তা করেছে। বর্তমানে কলকাতা মহানগরের জনসংখ্যার পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। প্রধানত হুগলি শিল্পাঞ্চলের (যা প্রধানত কলকাতা, হাওড়া মহানগর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল) বিভিন্ন শিল্পের অবনমনের ফলে।

(v) স্বাভাবিক উদ্ভিদ: স্বাভাবিক উদ্ভিদ থেকে মানুষ সম্পদ সংগ্রহ করে। ফলে অরণ্য থেকে সাগৃহীত সম্পদের পরিমাণ এবং গুণমানের ওপর জনবণ্টনের প্রকৃতি অনেকাংশে নির্ভর করে। উদাহরণ-পশ্চিমবঙ্গোর পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার ইলাভেদা, ও দলচুয়া, ধাঙ্গিকুসুম প্রভৃতি গ্রামে মূলত বনজ সম্পদ নির্ভর জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।


অর্থনৈতিক কারণসমূহ:

(1) শক্তি সম্পদ ও খনিজ সম্পদ, (ii) যোগাযোগ ব্যবস্থা, (iii) শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, (iv) রাজনৈতিক ইস্থত্ব, (৮) ধর্মীয় গুরুত্ব, (vi) ঐতিহাসিক গুরুত্ব, (vi) অনুপ্রবেশ, (viii) নগরায়ণ।

(ⅰ) শক্তি সম্পদ এবং খনিজ সম্পদ: প্রতিকূল জলবায়ু ও বন্ধুর ভূপ্রকৃতিযুক্ত এলাকায় ঘনবসতি গড়ে ওঠে, যদি সেই সব অঞ্চল খনিজ ও শক্তি সম্পদের সমৃদ্ধ হয়। উদাহরণ- ভারতের ছোটিন মালভূমি অঞ্চলে কয়লা, লৌহ-আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, অভ্র, তাম্র, বক্সাইট প্রভৃতি খনিজ সম্পদ পাওয়া ওইসব অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই সব শক্তি সম্পদ এবং খনিজ সম্পনারে দে করে একের পর এক ধাতব শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, সার শিল্প গড়ে উঠেছে।ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের কয়লাকে কেন্দ্র করে পাত্রাতু, বোকারো, চন্দ্রপুরা প্রভৃতি স্বানে চাপরি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ফলে একদা স্বল্প বসতিযুক্ত এই মালভূমি অঞ্চলটি বর্তমানে জনবহুল।

(i) যোগাযোগ ব্যবস্থা: উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাযুক্ত এলাকা দ্রুত ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রে ও সড়কপথের সংযোগস্থল এবং বিমানবন্দর বা নদী ও সমুদ্রবন্দর সংলগ্ন এলাকায় জনসংখ্যা অধিক হয়। উদাহরণ- পশ্চিমবলোর একটি উল্লেখযোগ্য রেলওয়ে স্টেশন খঙ্গাপুর, রেলপথ ও সড়কপথের সংযোগখ্য অবস্থিত। এই ব্যস্ত বাণিজ্য কেন্দ্রটির জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(iii) শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র: কোনো দেশের বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক বিদেশের শিক্ষানুরাগী ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক মানুষকে আকৃষ্ট করে। স্বাভাবিক কারণে ওইসব স্যান জনবসতি গড়ে ওঠে।

পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর-শান্তিনিকেতন তাই অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বস বিভাগে দেশ-বিদেশের ছাত্রছাত্রী পাঠ গ্রহণ করে। তাদের অনেকেই এই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শূরকার এভাবেই নতুন দিল্লি, বারাণসী, আলিগড় এবং পুনায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে।

(iv) রাজনৈতিক গুরুত্ব : রাজধানী শহরে অফিস, আদালত এবং সরকারি দপ্তরে বিপুল সংখ্যক মান কাজকর্ম করে। স্বাভাবিক কারণেই তাই রাজধানী শহরগুলি জনবহুল হয়। 1911 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত কলতায় সমগ্র ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল। ফলে কলকাতার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। একই কারণে মহারাষ্ট্রের Sour রাজধানী মুম্বাই এবং সমগ্র ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ।

(v) ধর্মীয় গুরুত্ব: ভারতের যে সকল স্থানের ধর্মীয় গুরুত্ব অধিক, সেইসব স্থানের জনসংখ্যাও অধিক। ভারতের পুরী, মথুরা, কাশী, বৃন্দাবন, হরিদ্বার, হৃষিকেশ, কামরূপ, তারকেশ্বর, দক্ষিণেশ্বর প্রভৃতি শহর তীর্থক্ষেত্রে জন্য বিখ্যাত। বহু পুণ্যার্থী এইসব তীর্থক্ষেত্রে পুণ্যার্জনের জন্য আগমন করেন। তীর্থযাত্রীদের প্রয়োজনে বাজা এবং হোটেল গড়ে ওঠে। ফলে তীর্থক্ষেত্রগুলি জনবহুল হয়ে পড়ে।

(vi) ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ভারতের আগ্রা, দিল্লি, জয়পুর, পাটনা, মহীশুর প্রভৃতি স্থানগুলি ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস প্রসিদ্ধ ওই স্থানগুলিতে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন, সৌধ, দুর্গ ইতাটি আছে। বহু ভ্রমণার্থী তাই এসব শহরে যান। ফলে এসব শহরে স্বাভাবিক কারণেই জনসংখ্যার পুনর্বিনাস ঘটে।

(vii) অনুপ্রবেশ : অনুপ্রবেশের কারণে কোনো দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারতবর্ষো জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণও অনুপ্রবেশ। উদাহরণ- বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী।

1947 খ্রিস্টাব্দের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে বহু শরণার্থী ভারতবর্ষে (পশ্চিমবঙ্গে। চলে আসে। 1971 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও বহু মানুষ ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশ করে। অনুপ্রবেশের জন্যই ভারতবর্ষের সীমান্তবর্তী শহরগুলিতে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে।

(vii) নগরায়ণ: শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রকে ঘিরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগর গড়ে ওঠে। আবার যেয়ো। নগরে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রামের তুলনায় বেশি, তাই ক্রমাগত নগরে জনবসতির ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01