welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতীয় নগরগুলিতে গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার বিবর্তন:(Evolution of Rural-Urban Fringe in Indian Cities)

ভারতীয় নগরগুলিতে গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার বিবর্তন:(Evolution of Rural-Urban Fringe in Indian Cities)


মধ্যযুগে ভারতবর্ষের শহরগুলির বাইরের সীমানা সাধারণত গ্রামীণ এলাকা থেকে পৃথক করার জন্য বহু উচু প্রাচীর (wall) দেওয়া হত। শহরে প্রবেশের ও প্রস্থানের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রবেশদ্বার (gateway) ছিল। শহর সীমান্তের দেওয়ালের ভিতরের দিকে শহুরে সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতেন। শহরের বাইরের সীমানায় বসবাসকারী মানুষজন শুধুমাত্র কৃষিকাজে নিযুক্ত থাকতেন। এ ছাড়া পশুপালন, মৎস সম্পদ আহরণ, এমনকি বনজ সম্পদ সংগ্রহের কাজও তাঁরা করতেন। গ্রাম এবং শহরের নির্দিষ্ট সীমানা থাকত। এমনকি যেখানে প্রাচীর থাকত না, সেখানেও গ্রাম-শহরের নির্দিষ্ট সীমারেখা চিহ্নিত থাকত।

ভারতীয় শহরগুলির ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার উৎপত্তি খুব প্রাচীন নয়। যদিও পাশ্চাত্য দেশগুলিতে গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার উৎপত্তি বেশ অনেক আগেই ঘটেছিল। 1950-এর দশকে ব্রিটিশ ভারতে বড়ো বড়ো মেট্রোপলিটান শহরগুলি গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময় শহরগুলির চারপাশে যেসব গ্রাম থাকত সেখানে cantonment তৈরি করা হত। ব্রিটিশদের সময় শহর এবং নগরগুলির সম্প্রসারণ নতুন নতুন cantonment অ্যাপনের মাধ্যমে ঘটত। "They developed the civil lines and cantonments in the vicinity of old towns স্বাধীনতালাভের পর শহরের সীমান্ত এলাকাগুলিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই সময় প্রায় এক লক্ষ শহর খুব দ্রুত আয়তনে সম্প্রম্প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে শহারের বাইরের সীমানা বৃদ্ধি পেতে পেতে গ্রামের দিকে চলে আসে। গ্রামের মধ্যে শহরের বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষজন শিল্প র‍্যামেরা দানা, বাণিজ্যিক অফিস, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য দপ্তর প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্মে নিযুত্ব হতে শুরু করে। যেসব কৃষক সম্প্রদায় তখনও কৃষিকাজে নিযুক্ত থাকেন, তারা শাকসবজি, দুধ এবং অন্যান্য কৃষিজ পণ্যের খুব ভালো বাজার পান। ক্রমশ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যেও পরিবর্তন আসে। এসব মানুষ আধা-শহুরে জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। সমগ্র বিশ্বজুড়ে গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকায় এই রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ভারতীয় ভৌগোলিকগণ গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকা নিম্নলিখিত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করেছেন। যেমন-

(ক) জনবসতির ঘনত্ব।

(খ) বিগত দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি।

(গ) প্রতি 1000 পুরুষ জনসংখ্যায় 800 জন স্ত্রী-জনসংখ্যার উপস্থিতি।

(ঘ) কৃষিকাজে নিযুক্ত কর্মীসংখ্যা 50%-এর কিছু কম।

(ঙ) স্থানীয় ট্রেন (Local Train) বা বাসের মাধ্যমে নগরকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন প্রভৃতি।

গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার আকৃতি বৃত্তাকার, আয়তাকার, রৈখিক হতে পারে। শহরের বাইরের সীমানায় সবুজ বলয় গড়ে ওঠে। গ্রাম-শহর সীমান্তে বর্তমানে অনেক উপনগরী গড়ে উঠছে। যেমন- রাজারহাট-নিউটাউন, ডানকুনি।

গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকা এমন একটি অঞ্চলে বেড়ে উঠতে থাকে যেটি সর্বদা নগর সম্প্রসারণের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। নগরের ছায়াযুক্ত অঞ্চলে (Urban shadow area) সর্বদা জমির দাম বাড়তে থাকে, অনবরত বড়ো বড়ো অট্টালিকা নির্মাণ চলে, জনসংখ্যা ও জনবসতির ঘনত্ব দুটোই বৃদ্ধি পায়। ভিতর সীমান্ত (inner fringe) হল গ্রামের শহরকেন্দ্রিক সীমানা যেখানে জমির চরিত্রের পর্যায়ক্রমে আরও উন্নততর অবস্থায় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। নগর বা পৌরবোর্ডের অনুমতিক্রমে এখানে সর্বদাই বিভিন্ন শ্রেণির বাড়ি এবং বাজার গড়ে উঠতে থাকে।

Outer fringe বা বাইরের সীমান্ত হল rural fringe area বা গ্রামীণ সীমান্ত অঞ্চল। প্রাথমিক নগর সীমান্তের (Primary rural fringe) চারপাশে outer fringe গড়ে ওঠে। এখানে গ্রামের মতো করে জমির ব্যবহারের ধরন গড়ে উঠলেও শহর পরিকল্পনার কেন্দ্র হিসেবে এখানে বিমানবন্দর নির্মাণ, shopping mall নির্মাণ, আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ প্রভৃতি চলতে থাকে।

নগর এবং তার চারপাশে দুধরনের প্রশাসনিক ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। (a) মিউনিসিপ্যাল শহর বা নগর পঞ্চায়েত এবং (b) রাজস্ব গ্রাম বা গ্রাম পঞ্চায়েত। মিউনিসিপ্যাল শহর প্রধান শহরের খুব নিকটে অবস্থিত হয়। ছোটো মিউনিসিপ্যাল শহরগুলি সর্বদা তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে শহরের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। প্রধান শহরের মতোই মিউনিসিপ্যাল শহরগুলিতে পৌর পরিসেবা পাওয়া যায়। প্রধান নগরকেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততই পৌর পরিসেবার মাত্রা খারাপ হতে শুরু করে। অপরদিকে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর ক্ষেত্রে কিছু জটিল ও মিশ্র প্রকৃতির বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। এদের কিছু কিছু এলাকা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শহরে পরিণত হয়। কৃষিজমিগুলি বর্তমানে নগরায়ণের কবলে পড়ে। ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন ব্যাবসা ও শিল্পকর্মের জন্য জমির ব্যবহার এখানে বাড়তে থাকে। আরেকটি ক্ষেত্র আছে যেখানে শহরের প্রভাব খুব সামান্য পড়েছে। এখানে জমির ব্যবহার এখনও গ্রামের মতোই আছে। সড়ক বা রেলপথে এই এলাকা নগরকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সুতরাং গ্রাম-শহর সীমান্ত এলাকার গঠনপ্রক্রিয়া বেশ জটিল প্রকৃতির। এটি সর্বদা পরিবর্তনশীলও

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01