ভারতীয় জনগণের জাতিগত গঠন (Ethnic composition of India)
ভারতীয় জনগণের জাতিগত শ্রেণিবিভাগের অন্যতম কারিগর হলেন স্যার রবার্ট রিজলে। তিনি 1901 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জনগণনার সময় মানুষের বহিরাকৃতিগত এবং পরিমাপযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভারতীয় জনগণের ওপর সমীক্ষা করে ভারতীয় জনগণকে সাতটি জাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেন। পরবর্তীকালে ড. বিরাজশঙ্কর গৃহ (B. S. Gula) ভারতীয় জনগণকে জাতিগত গোষ্ঠীতে ভাগ করেন। এই দুই জন সমাজবিজ্ঞানীর শ্রেণিবিভাগই অধিক প্রচলিত আছে।
রিজলের শ্রেণিবিভাগ (Classification according to Risley):
বিজলে জাতিগত বৈশিষ্টের ওপর নির্ভর করে ভারতীয় জনগণকে সাতটি জাতি গোষ্ঠীতে বিভত্ব করেছ।
(i) ইন্দো-এরিয়ানস (ভারতীয় আর্য) [Indo-Aryans]: এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত মানুষ সুন্দর স্বত গাঢ় চোখের রঙ এবং পর্যাপ্ত শশ্মশ্রু বিশিষ্ট। এদের মস্তকাকৃতি দীর্ঘ (মস্তকাকে 72.4-74.4 cm), না সরু থেকে মাঝারি (নাসিকাংক 66.9-75.2 cm) ধরনের হয়। এদের উচ্চতা খুব বেশি (165.8 cm-11 cm) হয়। এমনকি এরা সকল গোষ্ঠীর চেয়ে লম্বাটে ধরনের।অদেরকে আর্য ঔপনিবেশিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়। রাজপুতানা, পাক্কার এবং কাশ্মীরের রাজল ক্ষত্রী এবং জাঠ সম্প্রদায় এই ধরনের গোষ্ঠীর উদাহরণ।
(ii) দ্রাবিড়ীয় (Dravidians): এই গোষ্ঠী গাঢ় ত্বকবর্ণ, গাঢ় চক্ষু বর্ণ এবং কোঁচকানো কেশ সদ হয়। এরা সাধারণত হ্রস্ব প্রকৃতির (উচ্চতা 153cm-170cm) হয়। মাথার আকৃতি মাঝারি ধরনের হয়। ছ দীর্ঘ মস্তকের প্রবণতা লক্ষণীয় (মস্তকাংক 71.7-76.6)। এদের নাক খুব চওড়া হয় (নাসিকাংক 82.6-% cm) এবং নীচু নাসামূল লক্ষ করা যায়।শ্রীলঙ্কা থেকে গালোয় উপত্যকা পর্যন্ত এই গোষ্ঠী বিস্তৃত। ভিল, গন্ড, টোডা, জুং প্রভৃতি উপজা দ্রাবিড় গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
(iii) মোঙ্গলীয় (Mongoloids): এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত মানুষের মস্তকাকৃতি চওড়া (মস্তকাংক 84.3), নাক মাঝারি থেকে চওড়া (নাসিকাংক 67.2-84.5) এবং উচ্চতায় বেঁটে হয় (156.4 cm-16) cm), এদের গায়ের রঙ পীতাভ।হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল, খাসি এবং জয়ন্তিয়া পার্বত্য অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর লোকেরা বসবাস করা লাহুল, কুলু, লেপচা, লিম্বু, গুরুং, বোড়ো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত।।
(iv) আর্য-দ্রাবিড় (Aryo-Dravidians): এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত মানুষের ত্বকবর্ণ হালকা থেকে।বাদামি বর্ণের হয়। উচ্চতা কম থেকে মাঝারি (158 cm-166 cm) মস্তকাকৃতি দীর্ঘ (মস্তকাংক 72.1-761 নাসিকা চওড়া থেকে মাঝারি (নাসিকাংক 73.0-88.7) হয়।
ভারতীয় আর্যগোষ্ঠী এবং দ্রাবিড়দের সংমিশ্রণে এই গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। তবে আর্যদের বৈশি অধিকমাত্রায় প্রকট হয়।
উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার ও শ্রীলঙ্কায় এই গোষ্ঠীর লোকের বসবাস করছে।
(v) মোঙ্গলীয়-দ্রাবিড়ীয় (Mongolo-Dravidians): এই গোষ্ঠীর ত্বকবর্ণ গাঢ় এবং পর্যাপ্ত বিশিষ্ট। এদের উচ্চতা মাঝারি ধরনের (159 cm-167 cm). মস্তকাকৃতি চওড়া (মস্তকাংক 79.0-83 এবং নাসিকা সরু থেকে চাওড়া (নাসিকাংক 70.3-84.7) ধরনের হয়।দ্রাবিড়, মোঙ্গল এবং কিছু ভারতীয় আর্যের সংমিশ্রণে এই গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। বাঙালি ব্রাহ্মণ সম্প্রদা কায়স্থ, বাংলাদেশের মুসলমান এবং ওডিশার ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধি।
(vi) সাইদো-দ্রাবিড়ীয় (Seytho-Dravidians): এই গোষ্ঠী সুন্দর ত্বকবর্ণ হালকা শ্মশ্রুসম্পন্ন হয়। এতে মস্তকাকৃতি চওড়া (মস্তকাংক 76.9-79.9), নাসিকা মাঝারি ধরনের (নাসিকাংক 72.0-81.9) এবং দীর্ঘ হাশক্ এবং দ্রাবিড় গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে এই জাতীয় জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। পশ্চিম ভারতের মারা ব্রাহ্মণ, কুনবি এবং কুর্গরা সাইদো-দ্রাবিড় গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
(vii) টাকো-ইরানীয় (Turko-Iranians): এই গোষ্ঠী সুন্দর ত্বকবর্ণ, গাঢ় কিংবা ধূসর চক্ষুবর্ণ ঐ পর্যাপ্ত শ্মশ্রু বিশিষ্ট হয়। এদের উচ্চতা খুব বেশি (162 cm-172 cm) হয়। এদের মস্তাকাকৃতি চওড়া (মন্তকার 80-85), নাসিকা সরু থেকে মাঝারি, উন্নত এবং দীর্ঘ হয় (নাসিকাংক 67.8-80.5)
তুর্কি এবং পারসিকদের দৈহিক সংমিশ্রণে এই গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। আফগানিস্তান, বালুচিস্তান এর উত্তর-পশ্চিম ভারতের বালোচ, ব্রাহই এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধি।