ভারতে নগর বসতির প্রভাবে পরিবেশগত সমস্যা(Environmental Problems of Urban Settlement in India):
ভারত পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নগরায়ণের হারে বেশ পিছিয়ে আছে। মাত্র 27.78% মানুষ এদেশে শহরে বসবাস করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বায়ন, নগরায়ণের প্রভাবে শহরগুলিতে বসতির সংখ্যা খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নগরবসতির প্রভাবে প্রাকৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 2030 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের 50% লোক শহরে বসবাস করবেন যার ফলে পরিবেশগত সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে।
■ প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রভাব (Impact on Physical Environment): ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শহরবসতির দ্রুত বিস্তারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
• প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ (Environmental Pollution): দ্রুত হারে নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং বসতির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বায়ু, মাটি, জল দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের প্রভাব উদ্ভিদজগৎ, প্রাণীজগৎ এবং মানুষের ওপর পড়ছে। উন্নত দেশগুলির প্রযুক্তিবিদ্যা অনেক উন্নতমানের। ফলে দূষণ প্রতিরোধে ওই দেশগুলি প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। কিন্তু অনুন্নত বা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির এই উন্নতমানের প্রযুক্তি যেমন নেই। তেমনি তাদের দূষণ প্রতিরোধে ব্যয় করার মতো অর্থনৈতিক কাঠামো নেই। ফলে দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
• বায়ুদূষণ (Air Pollution): বড়ো বড়ো শহরগুলিতে গাড়ির সংখ্যা খুব দ্রুত হারে বাড়ছে।এর প্রনবাহন থেকে কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয়ে চলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, বিয়ে এড়র যথেচ্ছ ব্যবহার ভারতের শহরগুলিতে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়াও বিভিন্ন এর Taxic উপাদান, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ও অন্যান্য দূষক বাতাসে মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষিত। শিল্প কলকারখানা যত বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• জলদূষণ (Water Pollution): ভারতের অপরিকল্পনামাফিক শহর গঠনের ফলে একদিকে যেমন উটেশান সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তেমনি আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থের যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে জল ও তাতে দূষণ ছড়ায়। শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালীর আবর্জনা যে-কোনো স্থানে ফেলার ফলে ভৌমজলে ভূণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন- সামান্য বর্ষায় কলকাতার রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এর কারণ জলনিকাশী রাখা ভালো নয়। নদীর জলে (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কৃষ্ণা, গোদাবরী ইত্যাদি নদী) কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ মাশন করা হয়, এর ফলে জলদূষণ এবং মৎস সম্পদ ধ্বংস দুটোই একসঙ্গে ঘটে।
• শব্দ দূষণ (Sound Pollution): শহরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে এলি পেয়েছে। কলকারখানার শব্দ এবং যানবাহনের তীব্র অভিয়াজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শব্দের তীব্রতা 65 ডেসিমেল ছাড়িয়ে যায়। ফলে শহরের অধিবাসীদের দৈহিক ও মানসিক জটিল অসুখ দেখা দিচ্ছে
• গ্রিন হাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Green House Effect and Global Warming): পৃথিবীর মহানগরগুলিতে, বায়ুদূষণের হার সবথেকে বেশি। এমনকি উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এসব দেশগুলিতেও শিল্প-কলকারখানা থেকে দূষণ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে বাতাসে মিশছে। বিভিন্ন ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উল্লায়ণ ঘটছে। ফ্রিজ, এয়ারকুলার-এর ব্যবহার, ঘরবাড়ির জানালায় অতিরিক্ত কাচের ব্যবহার, পাকা রাস্তা থেকে তাপের বিকিরণ, যানবাহন থেকে য়। নির্গত গ্যাস প্রভৃতি মিলিতভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটাচ্ছে। কলকাতা, মুম্বাই শহরে দূষণের মাত্রা অত্যন্ত অশি বেশি। ভারতের কোচি, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম এসব শহরগুলি আগামী দিনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়ব
• জলসম্পদের ঘাটতি (Scarcity of Water Resource): কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই এই মহানগরগুলিতে জনসংখ্যা এত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, বসতি স্থাপনের জায়গা ও পানীয় জলের সংকট অত্যন্ত প্রকট হচ্ছে। আগামী দিনে পরিবার প্রতি এবং মাথাপিছু পানীয় জলের পরিমাণ অনেক কমে যাবে।
বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। পানীয় জলে আর্সেনিক এবং অন্যান্য বিষাক্ত ধাতুর বিষক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। 2025 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের বড়ো শহরগুলিতে 67% মানুষ জলসম্পদের অভাবের শিকার হবেন। পানীয় জল, রান্নার জল, স্নানের জল এবং শিল্পক্ষেত্রে জলের বিপুল চাহিদা থাকলেও তার পরিমাণ কমে যাবে।
• প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট (Loss of Balance on Physical Environment): ভারতে নগরায়ণের হার বৃদ্ধি, জলাশয় ভরাট, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণে বনভূমি ধ্বংস। শিল্প, কলকারখানা স্থাপন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জায়গা প্রভৃতির জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন শহরে যে পরিমাণ উদ্ভিদ আবরণ থাকা প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম আছে। ফলে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য থাকছে না। আবহাওয়া জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরগুলিতে গড় তাপমাত্রা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রীষ্মকালে তাপ প্রবাহের মাত্রা খুব তীব্র হয়। শহরের আয়তনের তুলনায় জলাশয়ের আয়তন অনেক কমে যাচ্ছে। কারণ পুকুর বুজিয়ে বড়ো বড়ো বাড়ি নির্মীত হচ্ছে। আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লাগছে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।