welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য(Environment and Biodiversity of Sundarban)

সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য(Environment and Biodiversity of Sundarban)


ভূমিকা: পশ্চিমবঙ্গের একেবারে দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে সুন্দরবন প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। এলাকায় ১০৬টি ছোটো বড়ো দ্বীপ মিলিয়ে ব্যাপ্ত। ক্রান্তীয় বনভূমি, লবণাক্ত জলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (World Heritage Site) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য বন্য ও জলজ প্রানী; প্রায় ৩৫৬ প্রজাতির পাখি, প্রায় ৩৫০ প্রজাতির মাছ, এগারো প্রজাতির কচ্ছপ, ৩৭প্রজাতির সর্প এবং অসংখ্য প্রজাতির টিকটিকি, ব্যাঙ ও কাকড়া আরোও ধরণের প্রাণী এবং সর্বপরি সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ ও সুন্দরবন বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষে থাকা রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ (Sunderbans' Natural Environment):

সুন্দরবন অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাদ্বয়ের দক্ষিণতম অংশ নিয়ে গঠিত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর প্রায় ৪,২৬২ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত নদী-নালা-খাড়ি অধ্যুষিত ম্যানগ্রোভ অঞ্চল বঙ্গোপসাগর উপকূলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুন্দরবনের অপেক্ষাকৃত বড় অংশ (৫.৩৩৮ কি. মি.) পড়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান। বা বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে। সুন্দরবন অঞ্চলের প্রকৃত সীমারেখা, যা Dampier and Hodges-এর কিছুটা সংশোধিত আকার, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাদ্বয়ের মোট ১৫ টি থানা নিয়ে গঠিত। অঞ্চল হিসাবে সুন্দরবনের সীমারেখা যথেষ্ট স্পষ্ট। সুন্দরবনের আরণ্যক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সমন্বিত পরিবেশের আভাস, এর নামেরই ইঙ্গিতবহ। বন্যাঞ্চলের এইরুপ নামকরণের সর্বাপেক্ষা সম্ভাব্য কারণ সুন্দরী বৃক্ষের (Heritiera Littovalis) উল্লেখযাগ্যে উপস্থিতি। এই অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী বৃক্ষ সমধিক উল্লেখযোগ্য ।

বিস্তার (Location): সুন্দরবন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের সর্বনিম্ন অংশ যা ২৪ পরগণা জেলাদ্বয়ের দক্ষিণাংশের ১৫ টি থানা, যথা-সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, মধুরাপুর, পাথর প্রতিমা, জয়নগর, কুলতলী, ক্যানিং, বাসন্তী,হাড়োয়া, মীনাখা, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাসনাবাদ এবং হিলালগঞ্জ নিয়ে গঠিত। সুন্দরবনের পশ্চিমদিকে মেদিনীপুর জেলা, পূর্বদিকে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Topographical Features): সুন্দরবন একটি বিস্তীর্ণ পলল গঠিত সমভূমি, যা পশ্চিমবঙ্গের সক্রিয় ব-দ্বীপের (Active Delta) অন্তর্গত। অবনমিত ভূমি ও জলাভূমি ক্রমাগত জোয়ারের জলবাহিত বালুকারাশি এবং নদীবাহিত পলি ও কর্দম দ্বারা ভরাট হচ্ছে। ভূ-প্রকৃতিগত দিক থেকে সুন্দরবন অন্যান্য ব-দ্বীপীয় সমভূমির ন্যায় সমতল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতি সামান্য উচুতে অবস্থিত। সুন্দরবন নদী-নালা, খ এঁড়ি-অধুষ্যিত এবং বহু দ্বীপের সমষ্টি। ভূমিভাগ সমুদ্রের দিকে ক্রমনিম্ন এবং বেশ কয়েকশত বর্গ কিলোমিটার স্থান জোয়ারের সময় কোনারেকমে জলের উপর জেগে থাকে। নবীন ব-দ্বীপ গঠনের এটি এক আদর্শ উদাহরণ।

নদ-নদী (Rivers): পিয়ালী, বিদ্যাধরী, ইচ্ছামতী, মাতলা, বড়তলা, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, রায়মঙ্গল,কালিন্দী প্রভৃতি নদী সুন্দরবন অঞ্চলে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখ াসহ প্রবাহিত হচ্ছে। অধিকাংশ নদীই অসংখ্য শাখা-প্রশাখা দ্বারা পরস্পরযুক্ত এবং সমগ্র অঞ্চলে জালের ন্যায় বিস্তারলাভ করেছে। এই নদীনালা এবং খাঁড়িগুলি বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনের বহু সংখ্যক দ্বীপকে বেষ্টন করে আছে।

জলবায়ু (Climate): পশ্চিমবলোর অন্যান্য অংশের ন্যায় এই অঞ্চলের জলবায়ুও মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সকল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, অর্থাৎ শুদ্ধ শীত ও আর্দ্র গ্রীষ্মযুক্ত। এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০০ সেমি.। জলভাগের প্রাধান্য থাকায় জলবায়ুর চরমতা অপেক্ষাকৃত কম। বৃষ্টির প্রাবল্য এত অধিক যে, নিম্নভূমিগুলিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য জল দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রীষ্মে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহকালে বৃষ্টি, জলপূর্ণতা এবং মেঘাচ্ছন্নতার কারণে উষ্ণতার চরম ভাব হয় না। শীত মৃদু ও আরামপ্রদ। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবাযুযুক্ত এই ক্রান্তীয় ব-দ্বীপটিতে বহু ধরণের বৃক্ষ ও বন্যজন্তর সমাবেশ দেখা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01