welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অর্থনৈতিক আঞ্চলিকীকরণ- পি সেনগুপ্ত(Economic Regionalisation of India after P. Sengupta)

অর্থনৈতিক আঞ্চলিকীকরণ- পি সেনগুপ্ত(Economic Regionalisation of India after P. Sengupta)


আঞ্চলিকীকরণে গৃহীত চলকসমূহ ও পদ্ধতি:

ভারতকে প্রাকৃতিক অঞ্চলসমূহের ভিত্তিতে অঞ্চলসমূহের একতা (homogeniety), কেন্দ্রপ্রবণতা (nodality), উৎপাদন, বিশেষীকরণ, শক্তিসম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি ভিত্তিতে এবং আঞ্চলিক সীমানাসমূহকে মেনে নিয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ শ্রীমতী সেনগুপ্ত (১৯৬৮) বলেছেন, যে মধ্যম আয়তনের (meso) অঞ্চল সমুহের কাঠামোর মধ্যে ক্ষুদ্র আয়তনের অঞ্চলসমূহের সম্পদ উন্নয়ন ঘটতে পারে। তিনি উক্ত উপকরণসমূহের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে ৭টি বহৎ অঞ্চলে এবং ৪২টি মধ্যম আয়তনের অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন।

ম্যাকো এবং মেসো অঞ্চলসমূহ (Macro and Meso Regions):

(ক) উত্তর-পূর্বাঞ্চল |NEFA-North-Eastern Region (Assam, Manipur, Nefa, Nagaland and Tripura)]: অসম, মণিপুর, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশের নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা নিয়ে গঠিত। উক্ত ম্যাক্রো অঞ্চলের অন্তর্গত ৪টি মেসো অঞ্চল। এগুলি হল- (১) উর্ধ্ব ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা (Upper Brahmaputra Valley), (২) নিম্ন রয়পুত্র উপত্যকা (Lower Brahmaputra Valley), (৩) খনিজ মালভূমি (Mineralised Palcan), (৪) পূর্ব ও উত্তরের পাহাড়ী অঞ্চল (Eastern and Northern Hills)

পি. সেনগুপ্ত কৃত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলসমূহের প্রাকৃতিক পরিবেশ আমরা জানি যে, এটি আর্দ্র, উদ্বু মৌসুমী জলবায়ু গঠিত। এর অন্তর্গত একদিকে যেমন উর্বর পলিগঠিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, অন্যদিকে ঘন ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণা পরিকৃত ক্রান্তীয় বৃষ্টি বনভূমি। এখানেই রয়েছে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি থেকে ভূ-প্রাকৃতিক অতীতে বিচ্ছিন্ন মেঘালয় মালভূমি (Meghalaya Plateau)। উত্তর-পূর্বের পাহাড়ী অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও দেশের অন্যান্য অনেক স্থানের চেয়ে পশ্চাদপট রয়েছে। উর্বর পাহাড় ঢালে ও পর্বত পাদদেশীয় ঢালবিশিষ্ট সমভূমিতে সমৃদ্ধশালী চা-বাগিচা গড়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায়। খনিজ তেল উত্তোলন ছাড়া কৃষি ও শিল্পের বিকাশ বিশেষ ঘটে নি। মেঘালয়ে কিছু টার্সিয়ারি কয়লা উত্তোলন হয়। স্থানীয় অধিবাসীগন প্রথাগত সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নির্ভর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত।

সাম্প্রতিককালে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করা যায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গতি আসবে।

(খ) পূর্বাঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা) | Eastern Regions (West Bengal, Bihar and Orissa)]: পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চল একটি ম্যাক্রো অঞ্চল। এই ম্যাক্রো অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হল ৬টি মেসো অঞ্চল। এগুলি হল- (১) কলকাতা হুগলী অঞ্চল (Calcutta-Hoogly region), (২) দামোদর উপতাকা অঞ্চল (Damodar Valley region), (৩) ছোটোনাগপুর এবং উত্তর ওড়িশা মালভূমি (Chotanagpur and Northern Orissa Plateau), (৪) দক্ষিণে পাহাড়ী এবং ওড়িশা মালভূমি অঞ্চল (Southern Hills and Plateaus of Orissa), (৫) নিম্ন গঙ্গা সমভূমি, ব-দ্বীপ এবং উপকূলীয় সমভূমি (Lower Ganga Plain, Deltas and Coastal Plain), (৬) দার্জিলিং পাহাড়সমূহ এবং পাদদেশীয় অঞ্চল (Darjeeling Hills and Sub-mountain tracts-Duars)!

শ্রীমতি সেনগুপ্ত কৃত বর্ণনায় পূর্বাঞ্চলসমূহের প্রাকৃতিক পরিবেশ মাঝারি আর্দ্র থেকে আর্দ্রতর এবং মৌসুমী জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। এই অঞ্চল কৃষি (গঙ্গা, মহানদী অববাহিকা ও ব-দ্বীপসমূহ এবং উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে ধান, পাট, ডাল ও তৈলবীজ চাষ উল্লেখযোগ্য), খনিজ (ছোটোনাগপুর মালভূমিতে লৌহ আকরিক, কয়লা, বক্সাইট প্রভৃতি খনিজ সমৃদ্ধ) ও শিল্পে সমৃদ্ধ (কলকাতা-হুগলী অঞ্চল)। এছাড়া দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল ও ডুয়ার্স সমভূমি চা শিল্পে সমৃদ্ধ অর্থনীতি। দার্জিলিং -এর চা পৃথিবীতে সর্বোৎকৃষ্ট এবং দার্জিলিং চা-এর রপ্তানি বাজার দেশে ও বিদেশে ব্যপৃত। দার্জিলিং পর্যটন শিল্পেও বিখ্যাত। সমভূমি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। রেল-সড়ক ও নৌপথে এই অঞ্চল ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তদাপী পূর্ব ভারতবর্ষের কলকাতা বন্দরের সান্নিধ্যে (১৯৬৮ সালে কৃত এই শ্রেনীকরণকালে কলকাতা বন্দরের নাব্যতাও ভাল ছিল) এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রসরতার কারণ। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতিরও বিকাশ ঘটেছে এই অঞ্চলে প্রাক্ স্বাধীন যুগ থেকেই।

(গ) উত্তর-মধ্য অঞ্চল (উত্তরপ্রদেশ) [North Central Region (Uttar Pradesh)]: ভারতবর্ষের উত্তরে হিমালয়ের দক্ষিণভাগে ও উত্তরের সমভূমি অঞ্চল নিয়ে গঠিত তদানিন্তন অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশ এই সমগ্র অঞ্চল অধিকার করে রয়েছে (১৯৬৮ খ্রীস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশ অবিভক্ত ছিল, উত্তরাখণ্ড সৃষ্টি হয় নি) এই ম্যাক্রো অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ৩টি মেসো অঞ্চল। এগুলি হল- (১) উত্তরদিকের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল (Northern Himalayan Area), (২) পশ্চিমে গাঙ্গেয় সমভূমি (West Ganga Plain), (৩) পূর্ব গালোয় সমভূমি (Eastern Ganga Plain)।

পি. সেনগুপ্ত কৃত উত্তর-মধ্য অঞ্চলটির বৈশিষ্ট্য এর একদিকে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতের নাতিশীতোয় জলবায়ু এবং দক্ষিণের সমভূমির আর্দ্র উদ্বু মৌসুমী বায়ু প্রভাবিত জলবায়ু। অরণ্যময় পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি মূলতঃ অরণ্য দ্রব্য সংগ্রহ, ধাপ-কৃষি এবং পর্যটন শিল্প নির্ভর। গাঙ্গেয় সমভূমির উর্বর পলিময় মৃত্তিকা অঞ্চলে স্বাধীনতার আগে ও পরে বহু জলসেচ প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। ফলে জলসেচ ও উর্বর মৃত্তিকার সুবিধায় এই অঞ্চল কৃষিকাজে খুব উন্নত। ধান, গম, আখ, তৈলবীজ, বিভিন্ন প্রকার ডাল উৎপাদনে এই অঞ্চল ভারতবর্ষে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থানে রয়েছে। আঞ্চলিক অর্থনীতি উন্নয়নশীল, তবে উন্নয়নে বৈষম্য রয়েছে পার্বত্য অঞ্চল ও সমভূমির মধ্যে এবং সমভূমির বিভিন্ন অংশে। রেল, সড়ক ও জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। কাপাস শিল্প, সার শিল্প, চিনি শিল্পে উন্নতি ঘটেছে তবে যথেষ্ট শিল্পোন্নতির অভাবে তখনও (১৯৬৮ সালে কৃত শ্রেণিবিভাগের পূর্বে) কাঙ্খিত অর্থনৈতিক উন্নতি হয় নি। তবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত উজ্জ্বল।

(ঘ) মধ্য অঞ্চল (মধ্যপ্রদেশ) [Central Region (Madhya Pradesh)]: দেশের মধ্যবর্তী অবস্থান জড়ে রয়েছে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশ (১৯৬৮ সালে মধ্য মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড় সৃষ্ট হয় নি)। এই ম্যাক্রো অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত মেসো অঞ্চল সংখ্যা হল ৩টি। এগুলি হল- (১) পূর্ব মধ্যপ্রদেশ (Eastern Madhya Pradesh), (২) পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ (West Madhya Pradesh), (৩) বস্তার অঞ্চল, কেন্দ্রীয় মধ্যপ্রদেশ Bastar Area, Central Madhya Pradesh)।

নি. সেনগুপ্ত কৃত মধ্য অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবে নাতিশুদ্ধ, নাতি-আর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্গত। মধ্যভারতের উচ্চ ভূমি এবং সংলগ্ন সমভূমি অঞ্চল নিয়ে এটি গঠিত। উচ্চভূমিতে অরণ্য সম্পদ সংগ্রহ এবং খনিজ দ্রব্য উত্তোলন, শমতর অঞ্চলে জন্মায় এরূপ দানাশস্য এবং সমভূমি অঞ্চলে আর্দ্রতর আবহাওয়ায় ধান, তৈলবীজ, বিভিন্ন প্রকার ডাল ভাল উৎপন্ন হয়। কয়লা, বক্সাইট ও ম্যাঙ্গানীজ উত্তোলনেও এই অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। ভিলাই-এ লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, গোয়ালিয়ার বস্ত্রশিল্প বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

(ঙ) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল (রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশ) [North Western Region (Rajastan, Punjab, Haryana, Jammu and Kasmir and Himachal Pradesh)]উত্তর-পশ্চিম ম্যাক্রো অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশ নিয়ে। এই ম্যাক্রো অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে মেসো অঞ্চল। এগুলি হল- (১) পাঞ্জাব সমভূমি (Punjab Plain), (২) কেন্দ্রশাসিত দিল্লী (The Union Territory of Delhi), (৩) পশ্চিম রাজস্থান (Western Rajasthan), (৪) পূর্ব রাজস্থান (Eastern Rajasthan), (৫) দুনসহ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল (Himalayan Hills including Dun Arca), (৬) কাশ্মীর উপত্যকা এবং পার্শ্ববর্তী পার্বত্য অঞ্চল (Kashmir Valley and its surrounding Hills)।

মিসেস সেনগুপ্তকৃত উক্ত অঞ্চলটি নাতিশুদ্ধ ও নাতিআর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্গত এবং সমভূমি ও সংলগ্ন হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এটি নাতিশুষ্ক অঞ্চল হলেও রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় জলসেচের সুযোগ সৃষ্টি করায় গম ও তুলা চাষে উন্নতি করেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ধান চাষও যথেষ্ট হয়। খনিজ সম্পদের অভাব রয়েছে এই অঞ্চলে। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশের অর্থনীতি মূলত অরণ্য ও বাপচাষ ও পশম শিল্প নির্ভর। কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশের আপেল অত্যন্ত উৎকৃষ্ট এবং রপ্তানীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। দিল্লী ভারতের রাজধানী এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও বটে। দিল্লীকে ঘিরে স্থানীয় কাঁচামাল ও প্রযুক্তি নির্ভর অনেক ছোট, মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সমভূমি অঞ্চলে উন্নত, তবে পার্বত্য অঞ্চলের অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি পিছিয়ে আছে।

(চ) পশ্চিমাঞ্চল (মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ) [Western Region (Maharastra, Gujrat, Dadra and Nagar Haveli, Daman and Diu)] এই ম্যাক্রো অঞ্চলটি বিস্তৃত মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ নিয়ে। এর অন্তর্গত ১টি মেসো বা মাঝারি আয়তনের অঞ্চল রয়েছে। এগুলি হল-(১) বম্বে শহর ও শহরতলি এলাকা (Bombay City and its sub-urban area), (২) বম্বে ও নাগপুরের অস্তবতী রেলপথ বরাবর বিস্তৃত অঞ্চল (Intervening area along the railway between Bombay and Nagpur), (৩) মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী অঞ্চল (Coastal Part of Maharastra), (৪) পশ্চিম মহারাষ্ট্র, মূলত: মালভূমি এলাকা (Western Maharastra mainly plateau Area), (৫) পূর্ব মহারাষ্ট্র (Eastern Maharastra), (৬) মধ্য মহারাষ্ট্র (Central Maharastra), (৭) গুজরাট সমভূমি (Gujrat Plain), (৮) সৌরাষ্ট্র (Sourastra) ও (৯) কচ্ছ অঞ্চল (Kutch)।

পি. সেনগুপ্তকৃত এই অঞ্চলটির জলবায়ুদ: পঃ মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত উষ্ণ ও আর্দ্র। ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে সমভূমি ও ক্ষয়জাত মালভূমি এবং উপকূলবর্তী সমভূমি নিয়ে গঠিত এই অঞ্চল। বম্বে একটি বৃহৎ শিল্পাঞ্চল। মহারাষ্ট্রের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলের তুলা, তৈলবীজ, আখ, খনিজ দ্রব্যের মধ্যে কয়লা, লৌহ আকরিক প্রভৃতি এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার সাহায্যে এই অঞ্চলের বম্বে, নাগপুর, কোলাপুর, আমেদাবাদ, সুরাট, বরোদা, ভাবনগর প্রভৃতি শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কৃষি ও শিল্প অর্থনৈতিক উন্নতির অনুকূল অবস্থা থাকায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি দ্রুত ঘটেছে।

দাক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে কৃষি ও খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে। ধান, তুলা ও কফি দক্ষিণ ভারতে উল্লেখযোগ্য। ধানচাষে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরালা উল্লেখযোগ্য। কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও কেরালায় তুলা ও কফি এবং তামিলনাড়ু ও কেরালায় উৎকৃষ্ট মসলাপাতি উৎপন্ন হয়। লৌহ-আকরিক (অস্ত্র ও গোয়া), কয়লা (তামিলনাড়ু) উল্লেখযোগ্য খনিজ সম্পদ।

দাক্ষিণাত্যের মালভূমির অধিকাংশ ও উপকূলবর্তী অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল, উপকূলবর্তী সমভূমি ও দ্বীপপুঞ্জগুলির জলবায়ু উয় ও অতি আর্দ্র। অতি প্রাচীন মালভূমি শুষ্কতর এবং বৃষ্টিছায় অঞ্চলে অবস্থিত। দাক্ষিনাত্যের অধিকাংশ অঞ্চল উচ্চ ও ক্ষয়জাত মালভূমিময়।

(ছ) দক্ষিণাঞ্চল (অস্ত্রপ্রদেশ, মাইসোর, তামিলনাড়ু, কেরালা, পন্ডিচেরী, ইয়ানম, গোয়া, আন্দামান ও নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপ, মিনিসার ও আমিনদিভি) [Southern Region (Andhra Pradesh, Mysore, Tamilnadu, Kerala, Pondichery, Yanam, Goa, Andamans and Nicobar and Laccadive, Minicoy and Amindivi): দাক্ষিণাঞ্চলের অর্ন্তগত হল অন্ধ্রপ্রদেশ, মহিশুরু, তামিলনাড়ু, কেরালা, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, গোয়া, আন্দামান ও নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপ, মিনিকয় ও আমিনদিভি। এই ম্যাক্রো অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ৯ টি মেসো বা মাঝারি আয়তনের অঞ্চল। এগুলি হল- (১) অস্ত্র উপকূল (Central Plain of Andhra Pradesh), (২) তেলেঙ্গানা অঞ্চল (Telengana Area), (৩) রয়ালাসিমা (Royalascema Area), (৪) দক্ষিণ মধ্য শিল্পাঞ্চল (South Central Industrial Area), (৫) দক্ষিণ পূর্ব উপকূল অঞ্চল (South Central Area), (৬) আন্নামালাই, কার্ডামম ও নিলগিরি পর্বত এবং পশ্চিম উপকূল (Annanmalai, Cardamom and Nilgiri Hills and Western Coast), (৭) মালনাদ ও পশ্চিমঘাট অঞ্চল (Malnad and Western Ghat Area), (৮) ময়দান অঞ্চল (Maidan Area), (৯) প্রবাল দ্বীপপুঞ্জ (Coral Island)।

পশ্চিম উপকূলে সংকীর্ণ ও পূর্ব উপকূলে প্রশস্ত সমভূমি রয়েছে। নদীবিধৌত অঞ্চলগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীগুলিতে বর্ষাকাল ব্যতীত জলের সমস্যা। ফলে কৃষিকার্যে জলসেচে অসুবিধা হয়। পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল অরনাময়। খরস্রোতা নদীগুলির জন্য জলবিদ্যুৎ শক্তির প্রাচুর্য আছে। সমভূমি অঞ্চলগুলির জনঘনত্ব অধিক। কৃষি ও খনিজ কাঁচামালের সহজ লভ্যতায় বস্ত্র শিল্প, চিনিশিল্প, লৌহ ও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি শিল্পোন্নতি ঘটেছে। ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, মাদ্রাজ (চেন্নাই), মাদুরাই, ত্রিবান্দ্রম, কোচি প্রভৃতি শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ। তবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নতিতে বৈষম্য প্রকট হয়েছে অভ্যন্তরীন মালভূমি ও নদীগঠিত এবং উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলগুলির মধ্যে। মালভূমির শুষ্কতর জলবায়ু, নিত্যবহা নদীর অভাব, কৃষিকাজের প্রতিকূল ভূপ্রকৃতি স্থানে স্থানে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01