welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্ধারণ (Determinants of World Population Growt)

4 min read

পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্ধারণ (Determinants of World Population Growt)


বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা 700 কোটি (2012) অতিক্রম করেছে। জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্ব জুড়েই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই হারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে 2025 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের জন্য 825 কোটি এবং 2050 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর জনসংখ্যা 830 কোটি অতিক্রম করে যাবে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তার মতো জনবিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।


তাই দেখা যায় যে, পৃথিবীর জনসংখ্যার বৃদ্ধি কিংবা গতিপ্রকৃতির কতগুলি নির্ধারক আছে। বিশ্ব জনসা গতি প্রকৃতির নির্ধারকগুলি হল-


(i) জনসংখ্যার গঠন (Population Structure): জনসংখ্যার গঠনের (নারী-পুরুষ অনুপাত্র অনুসারে নারী-পুরুষ গঠন) ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকাংশে নির্ভর করে। পৃথিবীর যে সমস্ত 18 থেকে 35 বছরের নারী-পুরুষের জনসংখ্যা বেশি ওই সমস্ত দেশগুলিতে জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি কারণ এই সময়টা মানব জীবনে সন্তান উৎপাদন বা জন্ম দেওয়ায় সেরা সময়। কোনো দেশের মোট জনসা বেশির ভাগ যদি শিশু ও বয়স্ক জনসংখ্যা হয় তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক কম হয়।


(ii) অর্থনীতি (Economy): নিবিড় জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষিব্যবস্থায় ফসল উৎপাদনের জন্য। পরিমাণে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই কৃষিতে উন্নত এবং কৃষিকাজে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে ধরনের অঞ্চলে কৃষক পরিবার শ্রমিকের প্রয়োজনে প্রচুর সন্তানের জন্ম দেয়। এজন্য দেখা যায় যে. পূর্ব এশিয়ার কৃষি অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি।


যেসব অঞ্চলের অর্থনীতি ব্যাবসাবাণিজ্য কিংবা পরিসেবামূলক সেখানে শ্রমিকের প্রয়োজন কম তাই এই সমস্ত অঞ্চলে পরিবার প্রতি জনসংখ্যা কম হয়।


(iii) সামাজিক নিয়ম (Social Rituals): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মের প্রচলন দেখা যায়। কোথাও বাল্যবিবাহ, কোথাও একাধিক বিবাহের প্রচলন থাকায় স্বাভাবিক সেইসব অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হয়। একদা বাল্যবিবাহ ভারতে প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমান আইন করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে।


(iv) শিক্ষা (Education): শিক্ষা মানুষের মধ্যে চেতনা আনে। শিক্ষার প্রভাবে মানুষ অধিক জনসংখ্যার কুফল সম্পর্কে অবহিত থাকেন। শিক্ষা বিাহের বয়স পিছিয়ে দেয়। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে। শিক্ষার প্রভাবে মানুষ তার জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটায়। শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে পরিবার ছোটো রাখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফলে বেশি সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা জাগে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে শিক্ষার অভাবে জনবিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।


(v) দারিদ্র্য ও অপুষ্টি (Poverty and Malnutrition): আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার ofteগুলিতে অপুষ্টির হার খুব বেশি। ফলে এরা তাড়াতাড়ি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং শেষে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। বাবা-মা এর ফলে অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। এই কারণে ছেলে-মেয়েরা বড়ো হয়ে বাবা-মাকে দেখাশুনা করবে এই আশাতে তাঁরা সন্তানদের মানুষ করতে থাকেন।


(vi) শিক্ষা, দারিদ্র্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্ক কোন দেশের মানুষের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটা নির্ভরশীল। শিক্ষা মানুষকে সচেতন ও প্রগতিশীল করে গড়ে তোলে। শিক্ষিত ব্যক্তি অধিক বয়সে বিবাহ করেন। ফলে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। আবার শিক্ষিতব্যক্তি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন হন। ফলে শিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে ছোট পরিবারের ওপর আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। অধিক সন্তান ধারণ করলে স্বাস্থ্যহানি, এমনকি মৃত্যুরও সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মনিযুক্তি এবং কর্মক্ষেত্রে অতিবাহিত সময়ের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। মাতা যদি চাকুরিজীবি হন তা হলে তাঁকেও একইভাবে প্রায় সারাদিন কর্মে নিযুক্ত থাকতে হয়। ফলে ওই পরিবারে পিতা-মাতার মধ্যে সাক্ষাতের সময় অনেক কমে যায় যা কম সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এইজন্য পৃথিবীর যেসব দেশে শিক্ষার হার খুব বেশি সেইসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি খুব ধীর গতিতে হয়। কিন্তু অশিক্ষিত সমাজব্যবস্থায় কিংবা স্বল্প শিক্ষিত সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুব বেশি।


একইভাবে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির নির্ভরশীল। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় অশিক্ষিত এবং দরিদ্র পিতা-মাতা ভাবেন যে, তাঁদের বেশি সন্তান থাকলে বেশি অর্থ আয় করে গৃহে নিয়ে আসবে। এই ধ্যান ধারণা থেকে তাঁদের বেশি সন্তান নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আবার যেসব অনুন্নত। ও দরিদ্রদ্র্য দেশে মৃত্যু হার বেশি সেইসব দেশের পিতা-মাতা মনে করেন অধিক সন্তানের জন্ম দিলে তাঁদের মৃত্যুর সময় কোন একজন সন্তান অনন্ত জীবিত থাকবে। ফলে ঐ সন্তান পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করবে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি দারিদ্র্যের কারণ নয়। দারিদ্র্যই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন অনেকে করতে সক্ষন হন না। ফলে দেখা যায় যে, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে দারিদ্র্য সমস্যা যেমন প্রকট, তেমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও এইসব দেশে বেশি। কেনিয়া, জিম্বাবোয়ে, উগান্ডা, সোমালিয়া প্রভৃতি দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্য জনিত সমস্যা প্রকট।


(vii) পুত্র সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতের হিন্দু সমাজে হিন্দুদের মধ্যে বাবা-মায়ের পারলৌকিক কাজ ছেলে করে। এর ফলে মানুষ পুত্রসন্তান লাভের আশায় বারবার সন্তানের জন্ম দেন.


(viii) নারীদের সামাজিক গুরুত্ব প্রদান: হিন্দু এবং ইসলাম সমাজে নারীদের সামাজিক মর্যাদা অনেক কম। কারণ এখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রচলিত আছে। নারীশিক্ষার অনগ্রসরতা এখানে সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নারীদেরকে কেবল সন্তান লালন পালনের কাজ হিসেবেই দেখা যায়। এসব ঘটনা সমাজে পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে।


(xi) জনবসতির ধরন: গ্রাম্য এবং শহুরে দুই ধরনের বসতি হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের বসতিতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি হয়। কিন্তু শহরে স্থানের অভাব, অর্থনৈতিক কারণ, শিক্ষার প্রভাব, বেকারত্ব প্রতীয়মা


জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হয়। সংখ্যা রমিও মৃত্যু হারের পার্থক্য (Differences between Birth and Death Rate) দিভিঃ জয় ও সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম নির্ধারক হল জন্ম ও মৃত্যুহার। উচ্চ জন্মহারের ফলে মেখে


মুক্তিশোর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 2001 খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, উগান্ডা, রোয়ান্ডা প্রভৃতি প্রতি তাজারে ১০ জন জন্মহার ছিল। ভারতে এই সময় জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে 24 জন। কিন্তু খুলতে পোর্তুগাল, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশগুলিতে এই সময়ে জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে 15 জনের মতো। বদায়হার ও মৃত্যুহারের মধ্যে পার্থক্য যত বেশি হবে জনসংখ্যার তত বৃদ্ধি ঘটে। কারণ বর্তমানে পর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে উন্নতির ফলে মৃত্যুহার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ফলে অধিক উই ও স্বল্প মৃত্যুহার বিশ্বের জনসংখ্যাকে এখনও প্রভাবিত করছে।


এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01