উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাস (Delimatation of Umland):
শহর এবং উমল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন উপাদান পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়। উমল্যান্ডের অস্তিত্ব দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যথা-
প্রবরাহ যোগ-
(1) শহর তার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে (Umland) যেসব জিনিস সরবরাহ এবং পরিষেবা প্রদান করে সেগুলির স্থায়িত্বের ওপর উমল্যান্ডের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এসব উপাদানগুলি হল- বাস-যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংবাদপত্র পাঠানোর সুবিধা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগ-সুবিধা, বিনোদন, প্রশাসন প্রভৃতি।
(2) শহরের বাইরের এলাকা থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, যেমন খাদ্যশস্যের সরবরাহ, শাকসব্জি ও দুধ সরবরাহ, কাঁচামালের জোগান, শ্রমিকের জোগান প্রভৃতি।
জনসংখ্যা ও বসতি ভূগোল-
বিভিন্ন শহরে উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাসে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। যেমন-
(1) পুণগত পদ্ধতি (Qualitative Methods): উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে গবেষকের ব্যক্তিগত পর্যবেক ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে একটি কিংবা একাধিক নিয়ন্ত্রক বিবেচনা করা হয়।
(E, Dickinson (1914), উমল্যান্ড পুনর্বিন্যাসের জন্য পাইকারী ব্যাবসা, খুচরো ব্যাবসা, বিমা, খবরে কাগজ সরবরাহ, সুগম্যতা প্রভৃতি উপাদানগুলিকে বিবেচনা করেছেন।
p.Harris (1940), 12টি কার্যাবলিকে সল্টলেক নগরের উমল্যান্ডের সীমানা নির্ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বিভিন্ন উপাদানগুলির মানচিত্র তৈরি করে তাকে Superimpose করে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করেছেন।
ভারতীয় ভৌগোলিকগণের মধ্যে R.L. Singh (1955) সর্বপ্রথম বেনারস (বারাণসী) শহরের উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাস নির্ধারণ করেছেন। তিনি পাঁচটি প্রধান উপাদানাকে ব্যবহার করেছেন এই উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাসের জন্য। এগুলি হল- সবজি সরবরাহ, দুধ সরবরাহ, খাদ্যশস্য ও কৃষিজাত দ্রব্যের ব্যাবসা, বাস পরিসেবা এবং খবরের কাগজ সরবরাহ।
(2) পরিমাণগত পদ্ধতি (Quantitative Methods): H.C. Carey, 1958-59 খ্রিস্টাব্দে উমল্যান্ডের পুনর্বিন্যাসের জন্য 'Gravity Model'-এর ধারণা দেন। এটির অন্য নাম 'Interaction Model দুটি শহরের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া
= (P_{1}*P_{3})/D
যেখানে P_{i} = বড়ো শহরের জনসংখ্যা
P_{2} = ছোটো শহরের জনসংখ্যা
D = শহর দুটির মধ্যে দূরত্ব
1931 খ্রিস্টাব্দে, William J. Reilly. "Law of Retail Gravitation"-এর ধারণা দিয়েছেন। তিনি নিম্নলিখিত সূত্র উল্লেখ করেছেন-
Ba / B * b = [(Pa)/(Pb)] * [(Db)/(Da)] ^ 2
যেখানে, Ba = A শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যাবসার পরিমাণ
Bb = B শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যাবসার পরিমাণ
Pa = A শহরের জনসংখ্যা
Pb = B শহরের জনসংখ্যা
Da = A শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে A ও B শহরের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব
Db = B শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে A ও B শহরের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব
P.D. Converse (1949) খ্রিস্টাব্দে 'Breaking Point Model'-এর ধারণা দেন। প্রকৃতপক্ষে এটি "Gravitational Model"-এর সামান্য সরলীকৃত রূপ। এই ধাবণা অনুসারে A ও B শহরের মধ্যবর্তী দূরব যথাক্রমে Da এবং Db.
(a) Da = d/(1 + sqrt(Pb / P * a))
(b) Db = d/(1 + sqrt(Pa / P * b))
যেখানে,
Da = A শহর থেকে breaking point-এর দূরত্ব
Db = B শহর থেকে breaking point-এর দূরত্ব
Pa = A শহরের জনসংখ্যা
Pb = B শহরের জনসংখ্যা
d = A B শহরের মধ্যে দূরত্ব
(3) Graphical Method: 1911 খ্রিস্টাব্দে A.H. Thiessen নগরের প্রভাবিত অঞ্চল সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে "Graphical Method"-এর ধারণা দিয়েছেন। এই মডেলের অন্য নাম "Thiessen Polygons Method"। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে D.J. Boque (1949) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের 67টি শহরের উমল্যান্ডের সীমা নির্দেশ করেছেন।
এই পদ্ধতি অনুসারে, কোনো শহরের সঙ্গে তার প্রতিবেশী শহরকে সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়। এই রেখার মধ্যবিন্দু দিয়ে, উল্লম্বরেখা টেনে বহুভুজ (Polygon) তৈরি করা হয়। এই Polygonকে পৌরক্ষেত্রের (Urban ficld) সীমানা হিসেবে ধরা হয়।