আখ চাষের উপযোগী অবস্থা ও ব্যবহার (Conditions of Growth for Sugarcane and uses )
> প্রাকৃতিক অবস্থা:
(১) জলবায়ু (Climate): আখ চাষের জন্য উচ্চ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। উচ্চতা ২৫০-৩০° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে এবং বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেমি. হওয়া বাঞ্ছনীয়। ১০০ সেমি.-এর কম বৃষ্টিপাতে জলসেচের প্রয়োজন হয়। আখ পাকার সময় শুদ্ধ রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন। সামুদ্রিক আবহাওয়ায় আখ চাষ ভাল হয়। কুনাশ ও তুহিন আখ চাষের ক্ষতি করে।
(২) মৃত্তিকা (Soil): চুন ও লবনমিশ্রিত দো-আঁশ মৃত্তিকা আখ চাষের উপযোগী। আখ চাষ জমির উর্বরাশস্ত্র হ্রাস করে বলে নিয়মিত সার দেওয়া প্রয়োজন।
[৩] ভূমিরূপ (Land form): জল নিকাশের সুব্যবস্থা সম্পন্ন সমতলভূমি ইক্ষু চাষের জন্য প্রয়োজন। কারণ জমিতে জল দাঁড়ালে আখ গাছের ক্ষতি হয়।
> অর্থনৈতিক অবস্থা:
[১] শ্রমিক (Labour): আখের চারা রোপণ, জমি পরিষ্টার রাখা, সময়মত সার ও কীটনাশকের ব্যবধা করা এবং ফসল কাটার জন্য প্রচুর সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন।
[২] পরিবহণ (Transportation): আখ কাটার পর থেকে পরবর্তী দিনের মধ্যে আখের রস না নিষ্কাশন করলে আখে রসের পরিমাণ কমে যায়। তাই আখক্ষেত্রের সঙ্গে চিনি কলগুলির বা গুড় উৎপাদন কলের দূত পরিবহণ গড়ে ওঠা দরকার। এই কারণে চিনিকলগুলি আখ উৎপাদন অঞ্চলে গড়ে উঠতে দেখা যায়।
[৩] মূলধন (Capital): আখ চাষে যথাসম্ভব বৃহদায়তন জমি, অধিক শ্রমনিযুক্তি, সার ও সেচের বন্দোবস্ত এবং প্রয়োজনে কীটনাশকের ব্যবস্থা করতে হয় বলে যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আখের সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে উচ্চ বিনিয়োগ ক্ষমতাসম্পন্ন চিনিকল মালিকগণ অনেক সময় বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত্র ক্রয় করেন বা ইজারা নিয়ে নেন।
[৪] চাহিদা বা বাজার (Demand or Market): আখ গুদামজাত করা যায় না, কেননা রস শুকিয়ে যায়, তাই আখ কাটার পর অবিলম্বেই তা বিক্রয়ের ও ব্যবহারের ব্যবস্থা করা দরকার। এজন্য একটি নির্ভরশীল ও বিকাশযোগ্য বাজার আখ চাষের উন্নতিকল্পে প্রয়োজন হয়।
আখ উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ স্থান (৩০-৬৭ কোটি টন, ২০১৬-১৭) অধিকার করে। ভারতের পলল সমৃদ্ধ গাঙ্গেয় মৃত্তিকায় এবং দাক্ষিনাত্যের খনিজ সমৃদ্ধ উর্বর মৃত্তিকায় ও উপকূলে লবন মিশ্রিত জমিতে সামান্য সেচের ব্যবস্থায় আখ চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে গড়ে ওঠেছে। ভারতে আখ চাষের সবচেয়ে বেশী জমি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে এবং ভারতের সর্বাধিক আখ উৎপন্ন হয় উত্তরপ্রদেশে। সমবায় প্রথায় বহু চিনিকল গড়ে ওঠায় উত্তরপ্রদেশে আখের চাহিদাও প্রচুর। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর, মিরাট, মোরাদাবাদ, সাহজানপুর, ফৈজাবাদ, আজমগড়, বালিয়া, গোরক্ষপুর, জৌনপুর, বারাণসী, বুলন্দশহর, বিজানার, লক্ষৌ, কানপুর, দেরাদুন প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর আখের চাষ হয়। উত্তরপ্রদেশের পর আখ উৎপাদনে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, ও বিহারের স্থান। মহারাষ্ট্রে আহমেদনগর, পুনে, সাতারা, নাসিক, শোলাপুর, কোলাপুর। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর, অম্বাসমুদ্রম, তিরুচীরাপল্লী, উত্তর ও দক্ষিণ আর্কট, মাদুরাই, রামনাথপুরম, তিনেভেলী। কর্ণাটকের বিজাপুর, বেল্লারি, সান্দুর, বেলগাঁও। অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী, অববাহিকায় পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, রাজমুক্তি, বিশাখাপত্তনম, নিজামাবাদ। গুজরাটের ভাবনগর, জুনাগর, জামনগর, সুরাট, রাজকোট: হরিয়ানার আম্বালা, গুরুগাঁও, রোহটক, কর্নাল, হিসার: পাঞ্জাবের গুরুদাশপুর জেলা, জলর, রোপার, পাতিয়ালা: বিহারের দ্বারভাঙ্গা, সারণ, চম্পারণ, মজঃফরপুর, গয়া, ছাপরা প্রভৃতি জেলায় উল্লেখযোগ্যভাবে আখ চাষ হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় আখ গবেষণা সংস্থা উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে অবস্থিত।
ভারত আখ উৎপাদনে উত্তরপ্রদেশ দীর্ঘকাল ধরেই শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে। ভারতের প্রায় ২/৫ ভাগ আখ উৎপন্ন হয় এই রাজ্যে।
ভারত আখ উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ দেশ হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা খুব বেশি বলে ভারতকে মাঝে মাঝে চিনি আমদানি করতে হয়।
সমস্যা: ভারতে আখ চাষের প্রধান কয়েকটি সমস্যা হল হেক্টর-প্রতি আখের কম উৎপাদন,রসের কম পরিমাণ এবং জলসেচ ও সার-এর ব্যবহারজনিত ক্রমবর্ধমান ব্যয়। এছাড়া গরীব চাষীদের চিনি ক্রয় করার ক্ষমতা সামান্য বলে উৎপন্ন আখের এক বিরাট অংশ গুড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফলে আখের উপযুক্ত মূল্য সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে আখ চাষে চাষীর উৎসাহে ভাঁটা পড়ে।