মানবসম্পদ সম্পর্কিত ধারণা (Concept of Human Resource)
পৃথিবীতে যত সম্পদ আছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল মানবসম্পদ (Human resource)। মান সম্পদ বলতে মানুষের বিদ্যাবৃদ্ধি, সংস্কৃতি, জনবসতি, জনঘনত্ব, মানুষের দৈহিক শ্রম ইত্যাদিকে বোঝানে হয়।সম্পদ হল বস্তু বা পদার্থের কার্যকারিতা যা মানুষের চাহিদা বা অভাব পূরণ করে এবং মানবসভ্যতা অগ্রগতি ঘটায়। অবস্তুবাচক বিষয়ও সম্পদ বলে গণ্য হয়। যেমন-মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান বিজ্ঞান
প্রকৃতি মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করে, সম্পদ ভোগ করে এবং সম্পদ ধ্বংস করে। অর্থাৎ মানুষের দ্বৈর ভূমিকা এখানে বর্তমান (Dual Role)। মানুষ তাঁর বৃদ্ধি, কলাকৌশল প্রয়োগ করে প্রকৃতির অনেক নিরপেক্ষ উপাদানকে সম্পদে পরিণত করে। যেমন- কয়লা আগে সম্পদ ছিল না, কিন্তু মানুষ খনি থেকে করছ আহরণ করে সেই কয়লাকে যখন কাজে লাগাল তখন কয়লা সম্পদে পরিণত হল।
আবার অরণ্য ধ্বংস করে, পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে মানুষ সম্পদ নষ্ট করে চলেছে। এভাবে মানুষ সম্পদে ভোগকারী ও ধ্বংসকারীর ভূমিকা পালন করে।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নয়নের সহায়ক হয়। অধিক জনসংয
কোনো দেশের উন্নয়নমূলক কার্যাবলিকে ত্বরান্বিত করে। কারণ-
(i) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সম্পদ উৎপাদন প্রধান উপাদান অর্থাৎ শ্রমিকের জোগান বৃদ্ধি পায় কৃষি, শিল্প এবং ব্যাবসাবাণিজ্যে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয় না।
(ii) শ্রমনিবিড় অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রয়োজন সর্বদা অনুভূত হয়। কার্পাস বস্তুশিয় পাটশিল্প প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকের চাহিদা খুব বেশি।
(iii) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সম্পদ সৃষ্টিকারী যুবক-যুবতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সম্পদ উৎপাদনো হার এভাবে ত্বরান্বিত হয়।
(iv) অধিক সম্পদ উৎপাদনের অর্থ দেশ অধিক মূলধনের ভাণ্ডার।
কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশে নানাবিধ সম্যসা ডেকে আনতে পারে। সম্পদ উৎপাদনের হারের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। দেশের পরিবেশের ওপরও অতিরিক্ত জনসংখ্যা। চাপ বাড়ে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে যেমন সম্পদ উৎপাদনকারী জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পায় তেমনি সম্পদ উৎপাদনে অক্ষম মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে অধিক হলে দারিদ্রদ্র্য এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। দেশের পরিবেশে ওপরও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ বাড়ে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে যেমন সম্পদ উৎপাদনকারী জনগোষ্ঠী বৃশি পায় তেমনি সম্পদ উৎপাদনে অক্ষম মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে অধিক জনসংখ্যা জনসম্পাদ (human resource) পরিণত না হয়ে দেশের নিকট বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চিন, ভারতে জনসংখ্যা অধিক। জনসংখ্যা বিচারে চিন ও ভারত পৃথিবীর দুটি সর্ববৃহৎ দেশ। 2000 খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুসারে চিনের জনসংখ্যা প্রায় 133 কোটি 97 লক্ষ। অন্যদিকে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 121 কোটি ২ লক্ষ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চিন নানাবিধ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং চিকিৎস ব্যবস্থার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারতে এসব কর্মসূচি যথেষ্ট সফল হয়নি। ফলে বিশেষজ্ঞদের মতে ভারত শীঘ্রই বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনবহুল দেশে পরিণত হতে চলেছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোটেও কাম্য নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই বৃদ্ধি সম্পূর্ণ পরিপন্থি। শিক্ষা, স্বামা জীবনযাত্রার মানের উন্নতি, জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।