ম্যাকেঞ্জির শ্রেণিবিভাগ (Classification of Mackinzee):
অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর নির্ভর করে ম্যাকেঞ্জি শহরের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। তাঁর শ্রেণিবিভাগ হল নিম্নরূপ-
(i) প্রাথমিক কার্যাবলি ভিত্তিক শহর (Town based on Primary Economic Activity): প্রাথমিক কার্যাবলির ওপর নির্ভর করে এই ধরনের শহরগুলি গড়ে ওঠে। কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস শিকার প্রভৃতি প্রাথমিক অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্গত। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, জুনপুট শহর এর উদাহরণ।
(ii) ব্যাবসাবাণিজ্য ভিত্তিক শহর (Town based on Trade and Commerce): ব্যাবসাবাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে এই জাতীয় শহরের পত্তন হয়। উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রির জন্য স্থানীয় বাজারের ওপর নির্ভর করে বাণিজ্যিক নগর তৈরি হয়। মুম্বাই, কলকাতা, শিলিগুড়ি বাণিজ্যিক শহরের উদাহরণ।
(ii) শিল্প শহর (Industrial Town): প্রাথমিক কার্যাবলির মাধ্যমে যেসব দ্রব্য সংগ্রহ করা হয় সেগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্যে পরিণত করা হয়। এরপর এগুলির নতুন মূল্য আরোপ করে বাজারে শিল্পজাত দ্রব্যরূপে বাজারে বিক্রি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, হলদিয়া শিল্প শহর।
(iv) অনুৎপাদনমূলক কার্যাবলিভিত্তিক শহর (Non-production activity based town): শিক্ষা, ডেৎসা, সামরিক, অবসর বিনোদন প্রভৃতি অনুৎপাদনমূলক কার্যাবলির ওপর নির্ভর করে এই জাতীয় শহরগুলি এক ওঠে। দার্জিলিং, শান্তিনিকেতন ইত্যাদি এই ধরনের শহরের উদাহরণ।
নেলসনের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Nelson):
1950 খ্রি. H. J. Nelson মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরের ওপর জরিপ করেন এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যা সাতগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তিনি 10 প্রকার শহরের উল্লেখ করেন।
নেলসন শহরের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যান সংগ্রহ এবং সেগুলির বিশ্লেষণের মাধ্যমে গাণিতিক (Arithmatic Mean), আদর্শবিচ্যুতি (Standard Deviation). Coefficient of Variation প্রভৃতির নাহান নির্ণয় করেন এবং সেই মান থেকে নগরগুলিকে যেমন বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন, তেমনি নগরে স্ত্রী ধরনের কাজ বিশেষায়িত হচ্ছে তার উল্লেখ করেন
নেলসনের মতে প্রধান প্রধান শহরগুলি হল-
(i) খনি শহর (Mining Town): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় 46টি নগর এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। এই ধরনের কাজে কম শ্রমিক প্রয়োজন বলে গড় শ্রমিকের পরিমাণ কম হয়।
(ii) শিল্প শহর (Industrial Town): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের নগরের সংখ্যা অনেক বেশি। লৌহ ইস্পাত, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্মের প্রাধান্য এই জাতীয় শহরে দেখা যায়।
(iii) পরিবহণ ও যোগাযোগ শহর (Transport and Communication Town): পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত হলে শিল্পকর্মের সঙ্গো এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কোনো শিল্পকেন্দ্র যত বেশি সুগম্য (Accessible) হবে সেখানে শিল্পের প্রাধান্যের সঙ্গে সঙ্গে পরিবহণ ও যোগাযোগের উন্নতি ঘটে।
(iv) পাইকারী ব্যাবসাকেন্দ্রিক শহর (Wholesale trade town): বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের পাইকারী - ব্যাবসার ওপর নির্ভর করে এই ধরনের শহর গড়ে ওঠে। ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি এই ধরনের শহর। (v) খুচরো ব্যাবসাকেন্দ্রিক শহর (Retail trade centre): কিছু নগর আছে যেখানে খুচরো ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে ছোটো ছোটো শহর বা নগর গড়ে উঠেছে।
(vi) আর্থিক কেন্দ্রভিত্তিক শহর (Financial Estate): অর্থ, বিমা প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃহদায়তন ভূসম্পত্তি প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিগণ বসবাস করায় এর মাধ্যমে ছোটো ছোটো নগরের পত্তন ঘটে।
(vii) ব্যক্তিগত কর্মভিত্তিক শহর (Personal service centre): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগণ নানা-ধরনের কর্মে নিযুক্ত আছেন। ব্যক্তিগত পরিসেবায় নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি ক্যালিফোর্নিয়াতে।
(viii) বৃত্তিমূলক শহর (Professional Management): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় 11টি শহরে বৃত্তিমূলক কর্ম খুবই প্রাধান্য পেয়েছে।
(ix) সরকারি প্রশাসন ভিত্তিক শহর (Government Administrative town): সরকারি প্রশাসনিক কাজের ওপর ভিত্তি করে বেশকিছু নগর গড়ে উঠেছে। যেমন কলকাতার কাছেই গড়ে উঠেছে বিধাননগর ও রাজারহাট শহর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের রাজধানী নিয়ে সরকারি স্তরে হিসেব করা হয়।
(x) বৈচিত্র্যময় শহর (Diversified Town): যেসব শহর নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বিশেসায়িত হয় সেগুলি এই শ্রেণিতে পড়ে।