ভারতে নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Urbanisation in India):
(1) পৃথিবীর অন্যান্য উন্নতদেশগুলির তুলনায় ভারতে নগরায়ণ খুব কম ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানকার নগরকেন্দ্রিক জনসংখ্যা পৃথিবীর বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম।
(2) আমাদের দেশে শহরের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশ বেশি হলেও পৃথিবীর বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় তা নিতান্ত কম।
(3) চিন এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে আমাদের দেশের নগরায়ণের মিল লক্ষণীয়।
(4) অর্থনৈতিক কাজকর্মের পরিমাপ বিচারের ক্ষেত্রে ছোটো শহর ও বড়ো শহরগুলির মধ্যে ভারসাম্য নেই।
(5) মহানগরগুলিতেই নতুন নতুন শিল্পকেন্দ্র এবং ব্যাবসাবাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
(6) শহরগুলির পরিকাঠামো আন্তর্জাতিক মানের নয় বলে নাগরিক পরিসেবা এখনও ব্যাহত হচ্ছে।
(7) ভারতে প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রশাসন, রাজধানী ও ব্যাবসাবাণিজ্যের কেন্দ্রের সঙ্গেঙ্গ নগরায়ণ জড়িত ছিল।
(৪) ভারতে ইউরোপীয়দের আগমনের ফলে নগরায়ণের হার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
(9) দক্ষিণ ভারতে নগরায়ণের হার সবচেয়ে বেশি। কারণ এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ এবং অন্যান্য শিল্পের প্রসার ঘটছে।
(10) আমাদের দেশে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তরের পরিমাণ বেশি।
পৌরপিণ্ড (Urban Agglomeration):
জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সঙ্গ্যে 'পৌরপিণ্ড' (urban agglomeration) ধারণাটি ক্রমশ যুক্ত হয়। "Erban agglomeration is a continuous urban spread constituting a town and its adjoining urban outgrowths, or two or more physical contignous towns together and any adjoining urban out growths of such towns." (Census of India, 2001), অর্থাৎ, নগরকেন্দ্রীভবন হল একটি ধারাবাহিকভাবে নগরের বাইরের দিকে প্রসার ও বিস্তার, বিশেষ করে একটি প্রধান মহানগর ও তার পার্শ্ববর্তী শহরের পরস্পরযুক্ত হওয়ার ফলে নগরের কেন্দ্রীভবন ঘটে, এভাবে কোনো নগর এবং তার পক্ষে অবস্থিত শহরের মিশ্রণের ফলেনি পৌরপিন্ডের উদ্ভব ঘটে।
কোনো রেলওয়ে কলোনির বাইরের দিকে বিস্তার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বন্দর এলাকা, মিলিটারি ক্যাম্পাস প্রভৃতির কোনো নগরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা Statutory Town (সমস্ত এলাকা মিউনিসিপালিটি, করপোরেশান, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, নোটিফায়েড টাউন)-এর অঞ্চল যা কোনো আইনের মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছে সেটি এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
কোনো গ্রামের শহরের দিকে প্রসার ঘটে শহরে রূপান্তরিত হওয়া হল নগরকেন্দ্রীভবন (urban agglomeration)।
ভারতীয় আদমশুমারি, 2011 অনুসারে, একটি প্রধান নগর এবং তার সংলগ্ন ছোটো শহরকে কেন্দ্র করে পৌরপিন্ডের উৎপত্তি ঘটেছে। এখানে জনসংখ্যা 20,000-এর কম কখনো হবে না।
বৈশিষ্ট্য:
(i) একটি শহর কিংবা নগরের বাইরের দিকে সম্প্রসারণ ঘটে। (ii) দুটি বা তার বেশি সংলগ্ন শহরের একসঙ্গে বিস্তার ঘটতে থাকে। (iii) ধারাবাহিকভাবে একটি নগর এবং তার সংলগ্ন একটি বা একটির বেশি শহরের বাইরের দিকে প্রসার ঘটতে থাকে।
ভারতে লক্ষাধিক বসতিযুক্ত নগরসমূহ:
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার 17.5% এদেশে বসবাস করেন। 2001 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে 35টি মহানগরী ছিল। এর মধ্যে মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা এবং চেন্নাই শহরে সবথেকে বেশি জনসংখ্যা ছিল।
2011 খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় দেখা যায় যে, ভারতে এক লক্ষ বা তার বেশি লোক বসবাস করেন এমন নগরের সংখ্যা 53টি। ভারতে শহুরে জনসংখ্যার 43% 53টি নগরে বাস করছেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শ্রীনগর হল প্রথম নগর যেখানে জনসংখ্যা এক লক্ষ অতিক্রম করেছে। কোচি শহরের পর কেরল রাজ্যে আরও 6টি নগর সৃষ্টি হয়েছে।